• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তায় তারুণ্য ও যুবশক্তির ভাবনা   

  বেল্লাল আহমেদ ভূঞা অনিক

৩০ আগস্ট ২০২১, ২১:০৩
ssdf
বেল্লাল আহমেদ ভূঞা অনিক (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তরুণ প্রজন্মের কাছে এক আদর্শের নাম এবং যুবশক্তির অন্তহীন প্রেরণার উৎস। তারুণ্যদীপ্ত যুবসমাজ একটি জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার যাদের মেধা, প্রজ্ঞা, সৃজনশীলতা, সাহস ও প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে একটি দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব গুণ ছিল তারুণ্যনির্ভর, যিনি তরুণ ও যুবসমাজকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে তরুণদের সঞ্জীবনী শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন।

বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রদত্ত ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষণ, আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি, ১৯৭০ এর নির্বাচনি ইশতেহার, ১৯৭২-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনায় তার গৃহীত পদক্ষেপ, তার গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়া চীন’ সহ বিভিন্ন গবেষণাধর্মী পত্রিকা ও নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তার রাষ্ট্রচিন্তায় তরুণ ও যুবকদের নিয়ে পরিকল্পনা ও প্রায়োগিক দিকগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।

তারুণ্যের প্রতি বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ছিল অবিচল। বঙ্গবন্ধু প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই ছাত্র-তরুণ-যুবকদের সম্পৃক্ত করেছেন। ’৪৮ থেকে ’৫২ ভাষা আন্দোলন, ’৫০ থেকে ’৫৪ জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ, ’৫৪ থেকে ’৫৬ সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন, ’৬৪-তে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িকতা, ’৬৬ র ৬ দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০ এর নির্বাচন এবং ’৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা- সবই বঙ্গবন্ধু তরুণ ও যুবক থাকা অবস্থায়ই করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তার রাজনৈতিক ও অন্যান্য ঘটনা প্রবাহ, নীতি-আদর্শ-নেতৃত্ব, রাষ্ট্রদর্শন, জীবনদর্শনের বিভিন্ন ঘটনাবলি তুলে ধরা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাষ্ট্রদর্শনের মূলে ছিল মানবপ্রেম। এ গ্রন্থটিতে ফুটে ওঠেছে শেখ মুজিবের তরুণ বয়সে বাংলার গণমানুষের মুক্তি ও সামগ্রিক কল্যাণ নিয়ে ভাবনা। আত্মপ্রত্যয়ী তরুণ, সাহসী যুবক শেখ মুজিবের ভাষায়- “ যে কোনো মহৎ কাজ করতে হলে ত্যাগ ও সাধনার প্রয়োজন। যারা ত্যাগ করতে প্রস্তুত না, তারা জীবনে কোন ভালো কাজ করতে পারেনি, এ বিশ্বাস আমার ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম এদেশে রাজনীতি করতে হলে ত্যাগের প্রয়োজন আছে।” (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ- ১২৮)

শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার শোষিত বঞ্চিত মানুষকে শোষণের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে ন্যায়ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তার ২০ হাজার ২৩৬ দিনের জীবনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারেই কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু রচিত ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটি তরুণ ও যুবসমাজের জন্য অতি মূল্যবান দলিল। তার দীর্ঘ কারাগারের জীবনে তিনি নিজে কষ্ট করলেও কারাগারের অন্য কয়েদিদের তার আন্তরিকতা, উদারতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যা আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির পথপ্রদর্শক। এ ভাষণ তরুণ ও যুবসমাজের ধমনিতে শিহরণ তোলা মন্ত্রধ্বনি। প্রেরণা জাগানিয়া বজ্রধ্বনি যুবসমাজের প্রেরণার উৎস। এ ভাষণ বর্তমান প্রজন্মকে অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হবার শিক্ষা দেয় এবং নব উদ্দ্যমে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা দেয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তরুণ প্রজন্মের জন্য দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত শাসনতন্ত্র বা সংবিধান রেখে গেছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সুস্পষ্টবোধ তরুণ-যুবকদের চিত্তে জাগ্রত করে তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। ১২ অক্টোবর ১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু বলেন- “শাসনতন্ত্র ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য নিদেশনামা।” সংবিধানের আদশের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শোষণহীন ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলবে।

বাঙালিত্ব, বাংলা ভাষা, বাংলার মাটি ও মানুষের সাথে একাকার হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭১ সনের ৪ জানুয়ারি ঢাকার রমনা গ্রিনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন: “বাংলার মানুষ বিশেষ করে ছাত্র এবং তরুণ সম্প্রদায়কে আমাদের ইতিহাস এবং অতীত জানতে হবে। বাংলার যে ছেলে তার অতীত বংশধরদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে না সে ছেলে সত্যিকারের বাঙালি হতে পারে না।” মাতৃভাষায় শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চচায় বঙ্গবন্ধু তরুণদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষা, কারগরিসহ সব ক্ষেত্রে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. কুদরত-এ-খুদার নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘প্রথম শিক্ষা কমিশন’ গঠন করেন। শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক রূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা এবং মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে সুসমন্বিত কল্যাণধর্মী ব্যক্তিজীবন ও প্রগতিশীল জীবনসৃষ্টির সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন করা হয়েছে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অস্থির যুবসমাজকে সৃজনশীল ও মননশীল চর্চায় আত্মনিয়োগের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার সম্প্রসারণ, অসাম্প্রদায়িক ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশে যুব-রাজনীতির নবদিগন্তের সূচনা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের দর্শন বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, বৈষম্যহীন শোষণমুক্ত সমাজ ও ধর্মনিরপেক্ষতা অর্থাৎ ১৯৭২ সালের সংবিধানের চারটি মূলনীতিকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক শেখ মনি বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের সকল শ্রেণি-পেশার যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদের রাজনৈতিক শিষ্টাচারে প্রশিক্ষিত করেন। বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে যুবসমাজকে আত্মনিয়োগ করিয়ে এ দেশের যুবসমাজের আইকনে পরিণত হন এবং তিনি হয়ে ওঠেন যুব-রাজনীতির অনুপ্রেরণার উৎস।

ইতিহাসের পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু তনয়া, মানবতার জননী, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে শেখ ফজলুল হক মনির জ্যেষ্ঠ পুত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক, মননশীল পরিমার্জিত যুবসংগঠক শেখ ফজলে শামস পরশকে যুবলীগের দায়িত্ব প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলার যুব-রাজনীতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মনির দেখানো স্বপ্নকে ধারণ করে মেধা ও তারুণ্যদীপ্ত, প্রতিশ্রুতিশীল, নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাবেক ছাত্র সংগঠকদের সমন্বয়ে এক অনন্য ধারার মানবিক যুবলীগ এগিয়ে যাচ্ছে।

পরিশেষে বলা যায় যে, বাঙালি জাতির আবহমানকালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে জন্ম নেওয়া এক মহামানব শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি তার বাঙালিত্ব, অসাম্প্রদায়িকতা, মানবতাবাদ ও জাতিরাষ্ট্র গঠনের জন্য তরুণ- যুবসমাজের মননে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তরুণ প্রজন্মের মনোজগতে বঙ্গবন্ধু এক অবিনশ্বর সত্তা। তারুণ্যের শক্তিই বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে পারে। অমিত সম্ভাবনা আর প্রাণশক্তিতে ভরপুর তারুণ্যদীপ্ত যুবসমাজকে চর্তুথ শিল্পবিপ্লবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়নসহ বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়-

“চাহি না জানিতে-বাঁচিবে অথবা মরিবে তুমি এ পথে, এ পতাকা বয়ে চলিতে হইবে বিপুল ভবিষ্যতে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনদর্শন ও রাষ্ট্রদর্শন থেকে শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা নিয়ে তরুণ-যুবকরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে রূপকল্প ২০২১, ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সুখী সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ সোনার বাংলাদেশ গড়বে, এই প্রত্যাশা রইল।

লেখক: বেল্লাল আহমেদ ভূঞা অনিক, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।

ওডি/

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড