• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও আমাদের শিক্ষা

  মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন

০৭ নভেম্বর ২০২০, ১০:০৯
রুশ বিপ্লব

বিপ্লব শুধুই একটি শব্দসমষ্টি নয়, স্বপ্নসমষ্টি।শত শত বছরের গ্লানি দূর করার এটি একটি সুদীর্ঘ রাস্তা বা ঠিকানা যাকে আঁকড়ে ধরে চলে স্বপ্নের পথে যুগ থেকে যুগের পরিবর্তন। এক কথায় আলোর দিকে, শুভ, সুন্দরের দিকে কোটি মানুষের অগ্রযাত্রার নাম বিপ্লব। নিজেকে পরিবর্তন,ভিতর এবং বাহিরকে পরিবর্তন, পৃথিবীর মানুষকে বিকশিত করার লক্ষ্যই বিপ্লব। বিপ্লব এসেছে যুগে যুগে কালের দাবিকে এক ধাক্কায় মেটাতে। আজকের এই পৃথিবী তো অনেক বিপ্লবেরই ফসল। এ পৃথিবীর সবচেয়ে মাদকতাময় আর আলোকময় শব্দ বিপ্লব যার টানে জীবন দেয় হাজারো তাজা তরুণ প্রাণ।অক্টোবর বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লব পৃথিবীর ইতিহাসের এক আলোকিত এবং আলোচিত তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লব। ভালেন্টিনা টেরিস্কোভার কথাই যদি ধরা হয় তিনি শুধু প্রথম মহিলা মহাকাশচারী নন!তিনি বিশ্ব সাম্যবাদের প্রতীক! প্রতীক এমন এক সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থার যার সম্পর্কে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন: "আমি নিজের চোখে না দেখলে কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারতুম না যে, অশিক্ষা ও অবমাননার নিম্নতল থেকে আজ কেবলমাত্র দশ বৎসরের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষকে এরা শুধু ক খ গ ঘ শেখায়নি মনুষ‍্যত্বে সম্মানিত করেছে।"(রাশিয়ার চিঠি)

এই বিপ্লবকে বলা যায় একটা পুঁথিগত দর্শনের বাস্তব মূর্ত সমাজতান্ত্রিক স্বপ্নের সূচনা।সাম্য,মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব, নারী স্বাধীনতা এতোদিন মানুষ দেখেছে স্বপ্নে-দিবাস্বপ্নে। রুশ বিপ্লব দেখালো বাস্তব জীবনে।বলশেভিক বিপ্লব পৃথিবীর রক্ত মাংসের হাজার কোটি মানুষকে স্বপ্ন দেখায় সাম্যের পথে,সমতার পথে। মার্কস-এঙ্গেলস, লেনিন পরবর্তী বিশ্বে মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে আত্মস্থ করে বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনে দুনিয়া পালটানোর সংগ্রামে এগিয়ে এসেছেন মহামতি স্ট্যালিন, মাও সেতুং, ফিদেল কাস্ত্রো, চে গুয়েভারা,হোচিমিন,কমরেড শিবদাস ঘোষসহ অসংখ্য বিপ্লবী।রুশ বিপ্লব দেখিয়েছে দর্শন, বিজ্ঞান,ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতির গতিপথ কি হবে.? জার শাসিত রাশিয়াতে ১৯১৭ সলের ২৫ই অক্টোবর শুরু হয় বিপ্লবের অগ্নি যুগ যাকে বলা যায় ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের ২য় অংশ। এই বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি ছিল প্রলেতারিয়েট বা শ্রমিক শ্রেণী।যাদেরকে রাজনৈতিক আদর্শিক এবং সাংগঠনিক আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেছিলেন মহানতি কমরেড লেনিন।মার্কসবাদের ভাবাদর্শে গোটা রাশিয়ার পঁচাত্তর শতাংশ নারী পুরুষকে সংগঠিত করতে পেরেছিলেন লেনিন।নিজের উর্বর মস্তিষ্কের সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন রুশ বিপ্লবের অগ্নিগর্ভে।সাজিয়েছেন বিপ্লবের রূপরেখা। বিপ্লবের নেতৃত্বেই ছিলেন কমরেড লেনিন।রুশ বিপ্লবের গোটা সময় জুড়ে লেনিনের নিকটে শক্ত হাতে হাতিয়ারটা ধরেছিলেন কমরেড স্ট্যালিন।শাসক গোষ্ঠীর উপর প্রত্যক্ষ আঘাত করার ক্ষেত্রে স্ট্যালিন লেনিনের যোগ্য উত্তরসূরী। ১৯১৬ সাল পরবর্তী সময় জার শাসনের রাশিয়াতে নেমে আসে মহা দুর্যোগ। উৎপাদন হ্রাস পায় ৩৬%।৫০% কল কারখানা কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। জীবিকা হারায় বিশাল শ্রমিক শ্রেণী। রাশিয়াতে বেড়ে যায় বৈদেশিক ঋণ।বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই লুট করে রাশিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা জার সরকার।

চরম মন্দা মহামারি দেউলিয়াত্বের ঘেরাটোপের দিকে এগিয়ে যায় দেশটি।অন্যদিকে রাশিয়ার জার শাসন শোষণ নিপীড়ন এবং গণমানুষের উপর অত্যাচার আক্রমন তীব্র আকার ধারণ করে।মানুষের জীবন মান চলে যায় অচলায়তনে। জার শাসিত অপশাসনের বিরুদ্ধে ১৯১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খনি, ধাতু আর রেল শ্রমিকেরা গড়ে তুলে অবরোধ আর ধর্মঘট যার অগ্রভাগে নেতৃত্বে ছিলো লেনিনের রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত একদল বিপ্লবী ।যাঁরা মার্কসবাদের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আত্মস্থ করেছিলেন রাজনৈতিক সংগ্রামে। রাশিয়ার প্রায় ১০লাখ শ্রমিক অংশ নেয় এতে।মহান নেতা লেনিনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় কারখানার নিয়ন্ত্রণ নেয় শ্রমিকেরা । দাবানলের অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে বিপ্লব। শ্রমিক কৃষক ক্ষেতমজুর দিনমজুর শোষিত শ্রেনীর কাছে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে বলশেভিকদের জনপ্রিয়তা।লেনিন হয়ে উঠেন রাশিয়ার অবিসংবাদিত নেতা।

"রুশ বিপ্লব" ১৯১৭ সালে সংগ‌ঠিত দুইটি বিপ্লবের মিলিত নাম। এই বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় জার শাসনের অবসান হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান হয়। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে (গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী মার্চ মাস) সংগঠিত প্রথম বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ার সাম্রাজ্য ভেঙে পরে এবং শেষ সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাসকে উৎখাত করে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে অন্তর্বতীকালীন সরকারকে উৎখাত করে বলশেভিক (কমিউনিস্ট) সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফেব্রুয়ারি বিপ্লব (মার্চ ১৯১৭) এর কেন্দ্রবিন্দু ছিল তৎকালীন রাজধানী পেট্রোগ্রাদ (বর্তমানে সেইন্ট পিটার্সবার্গ) ও তার আশেপাশের অঞ্চল। বিশৃঙ্খলার মধ্যে, দ্যুমা ইম্পেরিয়াল সংসদ সদস্যরা একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করে।সেনা নেতৃত্ব অনুধাবন করে যে, সম্রাটের উৎখাতের ফলে যে জনদ্রোহ দেখা দিয়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করার উপায় তাদের হাতে নেই। সোভিয়েতরা (শ্রমিক কাউন্সিল), অন্তরবর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিলেও তাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করে শ্রমিকদের সংগঠিত করে তারা সরকার‌কে প্রভাবিত করতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর (১৯১৪-১৮) সামরিক বিপর্যরের প্রেক্ষাপটে ফ্রেব্রুয়ারি বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল। এ সময় সেনাবাহিনী বিদ্রোহন্মুখ অবস্থায় ছিল।

তৎকালীন রা‌শিয়ায় একটি দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা চলতে থাকে যেখানে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের হাতে ছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আর সোভিয়েতদের হাতে ছিল জাতীয় পর্যায়ে সমাজের শ্রমিক শ্রেণী ও বামপন্থীদের প্রাপ্ত ক্ষমতা। কেন্দ্র সরকারের বিশৃঙ্খল পরিবেশে ঘন ঘন বিদ্রোহ, প্রতিবাদ ও ধর্মঘট সংগঠিত হতে থাকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন জার্মানির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত, তখন বলশেভিক ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক জোটগুলো সংঘাত বন্ধের জন্য প্রচার প্রচারনা চালায়।অন্তর্বতীকালীন সরকারকে উচ্ছেদ করার জন্য বলশেভিকরা শ্রমিক মিলিশিয়াদের রেড গার্ডস, পরবর্তীতে রেড আর্মিতে রূপান্তরিত করে এবং তাদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।১৯১৭ সালে অক্টোবর বিপ্লবের (গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জী অনুসারে নভেম্বর) মধ্য দিয়ে বলশেভিক পার্টি ও শ্রমিক সোভিয়েতরা পেট্রোগ্রাদের অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করে রাশিয়ান সোভিয়েত ফেডারেশন সোস্যালিস্টিক রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা করে। সেই সাথে রাজধানী মস্কোতে স্থানান্তর করা হয়। বলশেভিকরা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের প্রধানের দায়িত্ব নেয় এবং গ্রামাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। শাসক গোষ্ঠীর গুপ্তচরদের দমনে তারা সর্বত্র চেকা প্রতিষ্ঠা করে। মার্চ ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার অংশগ্রহণ সমাপ্ত করার জন্য বলশেভিক নেতারা ট্রিটি অব ব্রিস্ট-লিটভস্ক স্বাক্ষর করে।

বলশেভিক (‘‘রেড”)সমাজত্রন্ত্র বিরোধীদের (‘‘হোয়াইট”) ও অন্যান্য অ-বলশেভিক সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে মতপার্থক্যের সূচনা হয়। এই মতপার্থক্যের যুদ্ধ বেশ কয়েকবছর ধরে চলে এবং বলশেভিকরা তাদের বিরোধীদের পরাজিত করে। বলশেভিকদের এই জয় ১৯২২ সালে ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোসালিস্ট রিপাবলিক (ইউএসএসআর) প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে।১৯০৫ সালের রাশিয়ার বিপ্লবকে ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রধান নিয়ামক কাজে লাগে। ব্লাডি সানডের ঘটনাগুলো ছিল প্রতিবাদের শুরু। একটি শ্রমিক কাউন্সিল সেইন্ট পিটার্সবার্গ সোভিয়েত আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল। সেই সাথে কমিউনিস্ট সংঘ গুলোর ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু হয়।প্রথম বিশ্বযুদ্ধ রাশিয়ার জনগণকে জার দ্বিতীয় নিকোলাসের প্রতি আস্থাহীন করেছিল। রাজকীয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কমিউনিস্টদের আন্দোলন এবং জনপ্রিয়তা পাওয়ার পিছনে এটি একটি অন্যতম কারণ। ১৯১৪ সালে কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় উসমানিয় সাম্রাজ্যের আবির্ভাবের ফলে তুর্কী সাম্রাজ্যের সাথে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ বাধা প্রাপ্ত হয়। এর ফলে সামান্য অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়, ফলশ্রুতিতে রাশিয়া ১৯১৭ সালে যুদ্ধে তাদের অগ্রবর্তী সেনাদলকে সমরাস্ত্র ও রসদ প্রেরনে ব্যর্থ হয়। এটি একটি প্রশাসনিক সমস্যা ছিল মাত্র যেখানে জার্মানি তার দুইটি যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য প্রচুর সমরাস্ত্র ও রসদ উৎপাদন করতে থাকে।যুদ্ধে, শহরাঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ ব্যবহত হয়। খাদ্যাভাব রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসাবে দেখা দেয়। তবে এর জন্য ফলনকে খুব বেশি দায়ী করা যায় না কারণ যুদ্ধে কৃষিজমির খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পরোক্ষ কারণ হিসাবে বলা যায় যে, সরকার যুদ্ধের ব্যয় বহন করার জন্য প্রচুর কাগুজে নোট (রুবল) বাজারে ছাড়ে। এর ফলে বাজারে ১৯১৪ সালের তুলনায় ১৯১৭ সালে মুদ্রাস্ফীতি চার গুন বৃদ্ধিপায়,অন্যদিকে শ্রমিক শ্রেণীর শাসন প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন জোর কদমে এগিয়ে চলে। প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রমিকদের শাসন। প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজতান্ত্রিক সমতার রাষ্ট্র । জার শাসনের অবসান হয়। এর পর এগিয়ে যেতে থাকে সোভিয়েত রাশিয়া। পরিণত হয় বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রে। বিপ্লব সর্বশেষে সফল কিনা তা অনেক প্রশ্নের; কিন্তু যে স্বপ্ন তা দেখিয়েছে তা বেঁচে থাকবে চিরকাল। তাই আজও নিপীড়িত মানুষ স্বপ্ন দেখে, এই বিপ্লবের কথা মনে করে আর গর্জে উঠে “দুনিয়ার মজদুর, এক হও!“।রাশিয়ান ক্যালেন্ডার বছরের ২৫ অক্টোবর অনুসারে রাশিয়ান বিপ্লবকে অক্টোবর বিপ্লব বলা হলেও, ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে ৭ নভেম্বর বিপ্লব রূপে এ বিপ্লব অভিহিত। এটি জুলিয়ান বর্ষপঞ্জী অনুসারে ২৫ অক্টোবর ১৯১৭ এবং গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জী অনুসারে ৭ নভেম্বর ১৯১৭ তারিখে সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। এ বিপ্লব অজেয়, অমর ও অক্ষয় বলেই সমগ্র পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব, বিশ্ব মন্দায় বিপর্যস্ত হলেও, চীন-ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি ছিল অপ্রতিরোধ্য। আজ হতে ৯৬ বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের মহান জনগণ সর্বহারা শ্রেণীর স্বার্থরক্ষাকারী বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে দুনিয়া কাঁপানো দশ দিনের এক বিপ্লবের মাধ্যমে জারতন্ত্র রাশিয়া রাষ্ট্রকে উচ্ছেদ করে দুনিয়ার বুকে প্রথম নবীন সমাজতান্ত্রিক দেশ ও রাষ্ট্রের গোড়া পত্তন করে। সোভিয়েত বিপ্লবের ৭০ বছর পর সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সাময়িক বিপর্যয় ঘটলেও, সমগ্র বিশ্ব আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের দিকে দিকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের পতাকা হাতে নিয়ে এবং অক্টোবর বিপ্লবের আদর্শে বলিয়ান হয়ে বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশ, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার জনগণ পুঁজিবাদ তথা সাম্রাজ্যবাদী জাতীয় নিপীড়ক বিরোধী লড়াই অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।”ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯) থেকে অক্টোবর বিপ্লব (১৯১৭) এর মানে বুর্জোয়া বিপ্লব থেকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব উত্তরণের এক কালপর্ব। এই সময়কালের ইতিহাস, বুর্জোয়া বিপ্লব,শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলন ও বিপ্লব, প্যারি কমিউন ও রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের আদিপর্বের ইতিহাস। তবে ইতিহাস বলতে শুধু ঘটনা প্রবাহই নয়, আরো আছে এই কালের দর্শন, অর্থ শাস্ত্র, সমাজ চিন্তা, বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও সমাজতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা বিকাশের একটি চিত্র।১৯০৫-১৯০৭ সালের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলেও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে তিক্ত সংগ্রামে শ্রমিকশ্রেণীর লব্ধ অভিজ্ঞতা ব্যর্থ হয় নি। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে ১৯১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারীতে রাশিয়ায় বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন হয়। সেই সময় চলছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। যাতে অযৌক্তিকভাবে জার সরকার এইযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো শুধুমাত্র ধনীক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষায়। এবং যুদ্ধের ব্যয় মেটানো হত সাধারণ জনগণের টাকায়। গণতান্ত্রিক বুর্জোয়া বিপ্লবে রুশ সোশ্যাল-ডেমোক্র্যাটিক শ্রমিক পার্টি (বলশেভিক) মিত্র হিসেবে কাজ করেছিলো মেনশেভিক ও সোশ্যালিস্ট-রেভলিউশনারি পার্টির সাথে যেগুলো মূলত পেটি-বুর্জোয়া পার্টি। বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য এটিই ছিলো সঠিক। বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবই অক্টোবরের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটায়। অন্যান্য বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের সাথে বলশেভিক পার্টির এই ধরনের কৌশলী অবস্থানের মধ্য দিয়ে অর্জিত জয় পার্টির মূল লক্ষ্য অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক সমাজে পৌঁছানোকে বহুগুণে তরান্বিত করে। রাশিয়ায় অস্থায়ী দ্বৈত ক্ষমতার আত্মপ্রকাশ ঘটে। গঠিত হয় শ্রমিক ও সৈনিক প্রতিনিধিদের সোভিয়েতসমূহের।বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পর বলশেভিক পার্টি তার মূল লক্ষ্য সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য নতুন লড়াই-গংগ্রামে অবতীর্ন হয়। কিছুদিন পূর্বের মিত্র মেনশেভিকও সোশ্যালিস্ট-রেভলিউশনারি পার্টিগুলোর সাথে বলশেভিক পার্টির নতুন দ্বন্দ্ব দেখাদেয়। এই পেটি-বুর্জোয়া পার্টিগুলোর মতে, “সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটতে পারে একমাত্র সেই সব দেশেই যেখানে উৎপাদন-শক্তিসমূহ উচ্চ স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে এবং প্রলেতারিয়েত যেখানে জনসমষ্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ।” রাশিয়ার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের এই ধরনের ভূল বিশ্লেষণের বিরুদ্ধে বলশেভিক পার্টির নেতা ভ. ই. লেনিনকে শুধু বাহিরের পার্টিগুলোর সাথেই নয় সাথে সাথে তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালাতে হয়েছে পার্টিরে অভ্যন্তরেও। বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও প্রস্তাবে লেনিন দেখান যে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য বিষয়গত অবস্থা একচেটিয়া পুঁজিবাদের দ্রুত রাষ্ট্রীয়-একচেটিয়া পুঁজিবাদে পরিণত হওয়ার দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে।লেনিন লিখেছেন, “বুর্জোয়া রাষ্ট্রযন্ত্র-কর্মকর্তারা, পুলিশ, আদালত ও সেনাবাহিনী শোষকদের বিশ্বস্ত প্রহরী, শ্রমজীবী জনগণের প্রতি এবং প্রলেতারীয় বিপ্লবের লক্ষ্যের প্রতি আপোষহীনভাবে বৈরিভাবাপন্ন; ক্ষমতার এই যন্ত্রটিকে ভাঙতে হবে এবং প্রলেতারিয়েতকে গড়ে তুলতে হবে এক নতুন রাষ্ট্রযন্ত্র, যা জনগণের সেবা করবে।”

ফেব্রুয়ারি বিপ্লবে জনগণের অর্জিত গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে বলশেভিকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন লাভের জন্য ব্যাপক অভিযানের কাজে লাগায়। কলকারখানায়, সেনাবাহিনীর ব্যারাকে, রণাঙ্গনের পরিখায় এবং সোভিয়েতসমূহে তারা বোঝায় যে নতুন সরকারের আমলে যুদ্ধের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র বদলায়নি, দেখায় যে অস্থায়ী সরকার বুর্জোয়া নীতি অনুসরণ করছে এবং সোশ্যালিস্ট-রেভলিউশনারি ও মেনশেভিকদের আপসকামী মনোভাব তাদের বৃহৎ বুর্জোয়াশ্রেণীর সঙ্গে মৈত্রীবন্ধনের দিকে নিয়ে গেছে। শ্রমিক, সৈনিক, কৃষকদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তাদের একথা বুঝতে সাহায্য করল যে বলশেভিকরা সঠিক। জীবন, দ্রুত ঘটমান বিপ্লবী ঘটনাবলী তাদের শত্রু আর মিত্রের পার্থক্য নির্ণয় করতে শেখাচ্ছিল। খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে ও খাদ্যদ্রব্য কিনে মজুত করে রেখে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে শ্রমিকদের অনাহারে রাখা হয়। কোটিপতি রিয়াবুশিনস্কি বিদ্বেষভরে ঘোষণা করেছিলেন যে ক্ষুধার অস্থিসার বাহুই বিপ্লবের গলা টিপে ধরে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করবে। রাশিয়ায় শিল্প-লগ্নি পুঁজি কেন্দ্রীভবনের এক উচ্চ স্তরে উপনীত হয়েছিল, একচেটিয়া সমিতিগুলি যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করছিল এবং বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে পরিণত হতে শুরু করেছিল রাষ্ট্রীয়-একচেটিয়া পুঁজিবাদে।বুর্জোয়াশ্রেণীর সাথে এক চূড়ান্ত নিয়ামক লড়াই দরকার, শ্রমিকদের এই উপলব্ধির ফলে শ্রেণী সংগ্রামের ধরন ও পরিসরের পরিবর্তন-সংশোধন ঘটে। ইতস্ততবিক্ষিপ্ত, ঘন ঘন স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘটের জায়গায় আসে এক একটি গোটা শিল্প অথবা বড় বড় জেলার স্তরে সংগঠিত সংগ্রামী তৎপরতা। চর্ম-শ্রমিক, রেল-কর্মী, তৈল-কর্মী, বিপ্লবী সৈনিক, নাবিক, সুতাকল-শ্রমিক, খনি-শ্রমিক ও কৃষকদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে লাগাতার ও একমুখী আন্দোলন সংগ্রাম চলতে থাকে। নিপীড়িত জাতিসমূহও অনুরুপভাবে এবং তাশখন্দ ওফিনল্যান্ডেও জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম তীব্র হয়ে উঠেছিলো। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যেবলশেভিকরা ক্রমবর্ধমান মর্যাদা লাভ করতে থাকে। বহু ক্ষেত্রে সৈন্যরা চাষীদের জমির দাবি সমর্থন করে তাদের পক্ষালম্বন করে। কৃষকদের দমন করার জন্য নির্ভরযোগ্য সৈন্য পাওয়া যাচ্ছে না।শ্রমিক কৃষকদের বিপ্লবী তৎপরতায় অস্থায়ী দ্বৈত ক্ষমতা শেষ হয়। দ্বিতীয় কোয়ালিশন সরকারের কর্মসূচীর আসল কথা ছিলো – সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে চূর্ণ করা। সরকারের প্রধান কেরনস্কি হুকুম দিলেন সৈনিকদের মধ্যে বলশেভিক সংবাদপত্রগুলির প্রকাশনা ও প্রচার বন্ধ করার। সৈনিকদের সভা, কংগ্রেস ও সমাবেশ নিষিদ্ধ হল। অবসান হল বিপ্লবের শান্তিপূর্ণ কালপর্বের।দুটি সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর প্রধান বাহিনীগুলো আটকে ছিলো যুদ্ধের ময়দানে, তখনই তারা রুশ প্রতিবিপ্লবের সমর্থনে এগিয়ে আসতে পারত না। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিণত হয়েছে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, এবং তার দ্বারারাশিয়ায় বিপ্লব সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছে। সময়ের সঠিকতার উপর জোর দিয়ে লেনিন বলেন, “অপেক্ষা করা হবে বিপ্লবের প্রতি অপরাধ।” রাশিয়ার বিরুদ্ধে রুশ ও বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের মৈত্রী চূর্ণো করার এবং বিপ্লবকে দমন করার জন্য বুর্জোয়াশ্রেণী যে রক্তস্নানের প্রস্তুতি চালাচ্ছিল তা এড়ানোর একমাত্র উপায় ছিল সশস্ত্র বিপ্লবী অভ্যুত্থান।প্রথমে পেত্রগ্রাদে শ্রমিক, নাবিক, ও বিপ্লবী সৈনিকদের সশস্ত্র অভ্যুত্থানে ২৫ অক্টোবর তারিখে জয়যুক্ত হয় বলশেভিকরা। পেত্রগ্রাদে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের বিজয়এবং পৃথিবীর সর্বপ্রথম শ্রমিক-কৃষক সরকার গঠনের সংবাদ প্রতিনিধিরা বহন করে নিয়েযায় বিশাল দেশের সকল প্রান্তে। এরপর মস্কোসহ প্রতিটি অঞ্চলে তীব্র লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বলশেভিকরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। সমগ্র রাশিয়ায় সোভিয়েত ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কাজটি খুব সহজ ছিলো না। বিপ্লবের প্রতিটি স্তরে সতর্কভাবে এগিয়ে যাওয়া ও বিজয় অর্জন করা ছিলো খুবই দুরুহ এবং দুঃসাধ্য । কিছু কিছু ছোটখাট ভুলত্রুটি থাকলেও তার দ্রুত সংশোধনের মাধ্যমে বিজয়ের দিকে অগ্রসর হয়েছিল বলশেভিক পার্টি।পৃথিবীতে রুশ বিপ্লব পুঁজিবাদের অবিসংবাদিত শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। এই বিপ্লবের ফলে পৃথিবী বিভক্ত হয়ে গেছে দুটি সমাজ ব্যবস্থায়, সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদে। সোভিয়েত সরকার ফিনল্যান্ডকে স্বাধীনতা প্রদান করেছিল। সেই ফিনল্যান্ডে শ্রমিকশ্রেণী বুর্জোয়া সরকারকে উচ্ছেদ করে জানুয়ারি ১৯১৮’র শেষ দিকে ফিনল্যান্ডসমাজতান্ত্রিক শ্রমিক প্রজাতন্ত্র সৃষ্টি করেছিল। জার্মানীতে ১৯১৮ এ এক বিপ্লব রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়েছিল। অক্টোবর ১৯১৮ এ অস্ট্রো-হাঙ্গেরি জুড়ে বয়ে গিয়েছিল এক বিপ্লবের জোয়ার এবং তা রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়েছিল। এবং একই বছরের শেষ দিকে বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব হাঙ্গেরিতে জয়যুক্ত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমজীবী জনগণের সংগ্রামে বলিষ্ঠ উদ্দীপনা যুগিয়েছিল। লাতিন আমেরিকার বহু শহরে বিপ্লবী রাশিয়ার সঙ্গে সংহতিসূচক বিরাট বিরাট মিছিল ও সমাবেশহয়েছিল। চীনের উপরে অক্টোবর বিপ্লব প্রচন্ড প্রভাব বিস্তার করেছিল। চীনা বুদ্ধিজীবি সমাজের প্রগতিশীল অংশ শ্রমিকশ্রেণী তাকে ইতিহাসে মহত্তম ঘটনা বলে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছিল। পরবর্তীতে চীনেও সশস্ত্র বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বিপ্লব সংগঠিত হয়। ভারতের জনমতকে আলোড়িত করেছিল রুশ বিপ্লবের খবর। মধ্যপ্রাচ্যের জাতিসমূহ যেমন মিশর, সিরিয়া, ইরাক ও লেবাননে মুক্তি-সংগ্রামকে অক্টোবর বিপ্লব এক বলিষ্ঠ উদ্দীপনা যুগিয়েছিল। ইরানের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চালিত সমস্ত চুক্তি বাতিল করা হয়েছিল। অক্টোবর বিপ্লব প্রাচ্যের সমস্ত জাতির ইতিহাসে আরম্ভ করেছিল এক নতুন অধ্যায়। তা সূত্রপাত করেছিল ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার পতনের, ঔপনিবেশিক ও পরাধীন দেশগুলিতে নিয়ে এসেছিল জাতীয় মুক্তি বিপ্লবের যুগ।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দ্রুত পুরো বিশ্ব ব্যবস্থা দুটো ব্লকে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে মার্কিন নেতৃত্বে পুঁজিবাদীদের উন্মুক্ত বাজার নীতি। অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সাম্যবাদের আদর্শবাদ। শুরু হয় ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগ। ১৯৪৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এ মেরুকরণ চলতে থাকে। দ্বিমেরু বিশ্ব ব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্য থাকায় কোন জাতিক নিষ্ঠুরভাবে নিগৃহীত হতে হয়নি। একটি পক্ষের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করতে পারেনি অন্য পক্ষকে। ফলে বিশ্ব বড় ধরনের যুদ্ধ বিগ্রহ ও বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পায়। কোরিয়াকে দখল করে নিতে পারেনি এককভাবে যুক্তরাষ্ট্র। ভিয়েতনাম যুদ্ধ লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে কিন্তু পরাধীনতা মেনে নেয়নি তারা। সেই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সক্রিয় উপস্থিতি না থাকলে ভিয়েতনামিদের একার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে টিকে থাকা সম্ভব হতোনা।এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য হয়ে ভিয়েতনাম ছাড়তে হয়। সীমান্তে অবস্থিত কট্টর মার্কিন বিরোধী সমাজতন্ত্রী ক্ষুদ্র রাষ্ট্র কিউবাকে কখনো সরাসরি আক্রমনেরসাহস করেনি আমেরিকা।পার্টিতে সুবিধাবাদের প্রশ্রয় ও গণতান্ত্রিক চর্চা কমে যাওয়ায় এবং প্রতিনিয়ত পুঁজিবাদী বিশ্বের নানামুখী ষড়যন্ত্রে প্রায় ৭০ বছর স্থায়ী সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয় ১৯৯১ সালে। এই পতন কিছু ব্যক্তি ও পার্টির সমস্যা। মার্ক্সবাদের ভুল নয়। সোভিয়েতের পতন পুঁজিবাদী সংকটকে কমায়নি বরং পুঁজিবাদ আরো বেশি আগ্রাসী হয়েছে। ফলে তার সঙ্কট বেড়েছে ও পতন অনিবার্য হয়ে উঠেছে আর তার বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজন আরো সুতীব্র হয়ে উঠছে।সোভিয়েত পতনের পর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আরো নগ্নভাবে তার আধিপত্য বিস্তার করছে।সে তার অভ্যন্তরীন চরম সংকট মেটাতে দেশে দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ বাঁধিয়ে রাখার মরনপণচেষ্টা করছে। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া সহ বিভিন্ন দেশে এসব হামলা ও দখলদারিত্বকায়েম করেও সে তার সংকট কাটাতে পারছে না। সম্প্রতি আমেরিকায় শুরু হওয়া পুঁজিবাদবিরোধী “ওকুপাই ওয়াল স্ট্রীট” আন্দোলন এখন সারা বিশ্বের প্রায় হাজারখানেক শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সরকারি সেবা খাতেব্যয় সংকোচন নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী শুরু হয়েছে তীব্র আন্দোলন-সংগ্রাম। এসকল বৈশ্বিক বাস্তবতা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে পুঁজিবাদ নয়সমাজতন্ত্রই হবে সঙ্কট মোচনের একমাত্র উপায়।মানুষ বুঝতে শুরু করেছে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের কাছে সে এবং তার দেশ কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। তাই বিশ্বের দেশে দেশে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম তীব্র হচ্ছে। নিরন্তর আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বিশ্বদানব সাম্রাজ্যবাদকে রুখে সমাজতন্ত্রের অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে হবে। মহান অক্টোবর বিপ্লবের বিপ্লবী চেতনাকে ধারণ করে আমাদেরকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।যতই দিন যাচ্ছে অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক রুশ বিপ্লবের তাৎপর্য ততই বাড়ছে। অন্যান্য বহু বিপ্লবের চেয়ে অক্টোবর বিপ্লব সকল দেশ ও জাতির রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিক জীবনে যে গুণগত পরিবর্তন এনেছে তা পরিমাণে অনেক বেশি ও ব্যাপক। এটি শুধু দাবি করার বিষয় নয়। এই বিপ্লবের পটভূমি, বিপ্লবী কৌশল ও নীতি, সকল শ্রেণীরস্বতঃস্ফূর্ত আত্মদান, দোদুল্যমানতার বিরুদ্ধে সচেতন তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক লড়াই, সকল আশংকা কাটিয়ে বিজয়ী হওয়া, ও বিজয় পরবর্তীতে বিপ্লবের মূল চেতনা অর্জনে কর্মসূচী প্রণয়ন এই সকল কারণেই রুশ বিপ্লব অনন্য। সামন্তবাদী সমাজ ভেঙ্গে নতুন রুপে শোষণকে হাজির করে যখন পুঁজিবাদী সমাজ-ব্যবস্থা তার ডাল-পালা মেলেছে রুশ বিপ্লব তার মূল ধরে টান দিয়েছে। রুশ বিপ্লবই শিখিয়েছে মানবিক রাজনীতির বিজয় অর্জন করা সম্ভব। বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে শোষণমুক্ত শ্রেণীহীন সমাজ গঠন সম্ভব। এই সকল বহুমাত্রিক পরিবর্তন ও বিশ্বাস একটি বিপ্লবী তত্ত্বের যথার্থতারই প্রমাণ। যে তত্ত্ব আমাদের ডাক দেয় মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ গঠনের। যে তত্ত্বের নাম মার্কসবাদ-লেনিনবাদ।গত দুই দশক জুড়ে আওয়ামী-বিএনপি দ্বিদলীয় শাসন চালু রয়েছে বাংলাদেশে। এই দুই দলের সীমাহীন দুঃশাসন ও লুটপাটে গণতান্ত্রিক প্রতিটি প্রতিষ্ঠান পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এখন দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নেই বললেই চলে। দুই দলের প্রতি মানুষের যে মোহ ছিল তা কাটতে শুরু করেছে। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জনের মধ্য দিয়ে পরবর্তী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। এই মূহূর্তে বাংলাদেশের আশু কর্তব্য হচ্ছে গণতান্ত্রিক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করা। আর তার জন্য দরকার দেশের সকল দেশপ্রেমিক জনতাকে সাথে নিয়ে একটি বাম-গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে তোলা। জনগণের সামনে দুই দলের বাহিরে এই শক্তিকে দৃশ্যমান করে বিকল্প রাজনীতির জন্ম দেয়া এখন সময়ের চাহিদা।৯০ পূর্বের সোভিয়েত এবং আমেরিকার স্নায়যুদ্ধ চলাকলীন সময়টাতে বিশ্ব রাজনীতির দিকে একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, অখন্ড রাশিয়া বা সোভিয়েতথাকাকালীন সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি, একচেটিয়াভাবে বিশ্ব মোড়ল বলে কিছু ছিল না। পৃথিবী ছিল ভারসাম্যের রাজনীতিতে। তর্জন গর্জন ছিল সবপক্ষ থেকেই! পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরিন রাজনীতিও অনেকখানি নির্ভর করতো এই দুই পরাশক্তির লেজুড়বৃত্তি কিংবা অনুসরনে। বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম ছিল না বললে, সত্যকে অস্বীকার করা হবে। ৯০ পরবর্তী সময়ে মিখাইল গরভাচেভের সময় সোভিয়েত পতনের পর, বাংলাদেশে সাময়িক ধস নামে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে।অনেকেই হাতাশাগ্রন্ত হন, অনেকেই সুবিধা বঞ্চিত হবেন বা আর সোভিয়েত বৃত্তি পাবেন না মনে করে নিজ নিজ আখের খোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও, হাল ধরে ছিলেন কিছু আবেগী এবং স্বপ্নবান ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া মানুষ। এই স্বপ্নবানদের অপরিপক্কতা, অদূরদর্শীতা থাকা সত্বেও সামজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন এখনও টিকেআছে তাদের মগজে এবং রক্তমাংসে। তারুণ্যের রোমন্টিসিজম না থাকলে বিপ্লবের পথে কেউ আসতে পারে না।একজন মানুষ কতটুকু রোমান্টিক তা খুজতে দেখতে হবে মানুষটি কতটুকু বিপ্লবী!এই কথাটা হৃদয়ে ধারণ করা ব্যতীত মানুষের দুঃখ ঘোচানোর কাজ করা যায় না।সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সাম্যের রাষ্ট্র তৈরির বিষয়ে এখনও আমি স্বপ্নবুনি প্রতিদিন-প্রতিরাতে-প্রতিটি মুহূর্তে, মনে ধারন করি বাংলাদেশে সমৃদ্ধশালী কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের।

ফেডারিক এঙ্গেলসের মৃত্যুর পর বিজ্ঞানের বিশেষ করে প্রকৃতি বিজ্ঞানের নতুন ও সর্বাধুনিক আবিষ্কারগুলিকে সংযোজিত ও সাধারণীকৃত করে মহামতি লেনিন মার্কসবাদের উন্নত উপলব্ধি গড়ে তুলেছিলেন,বিপ্লবী দল গঠনের মৌলিক নিয়ম নীতি গড়ে তুলেছিলেন এবং বিজ্ঞানের সমস্ত শাখার দার্শনিক অসারতা উৎকর্ষতা ব্যাখ্যা করে রচনা করেছিলেন -Materialism and Empirio-Criticism গ্রন্থটি।মহামতি লেনিনের মৃত্যুর পর কমরেড স্ট্যালিন শিশু সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে চোখের মনির মতো রক্ষা করেছেন।যা মানব সভ্যতাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছিল।সাম্রাজ্যবাদী ঘেরাটোপের মধ্যে একদেশে সমাজতন্ত্র গড়ে তুলেছেন নির্ভীক সাহস নিয়ে।অত্যন্ত পশ্চাৎপদ একটা দেশকে শিল্প সমৃদ্ধ সর্বাধুনিক দেশে পরিনত করেছেন।যেখানে ছিল না কোন অশিক্ষিত মানুষ, ছিল না কোন বেকার ভিক্ষুক, ছিল না কোন পতিতা দেহ ব্যবসা।সমাজের সমস্ত অনাচার সমূলে উৎপাটন করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। ট্রটস্কি -কামেনেভ-জিনোভিয়েভ-বুখারিনের সংশোধনবাদী মার্কসবাদ-লেনিনবাদ বিরোধী চিন্তার বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম করে লেনিনের মর্মবস্তু ও প্রান সত্ত্বাকে রক্ষা করেছেন।শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সোভিয়েত সমাজতন্ত্রকে সর্বোচ্চ শিখরে পৌছে দিয়েছেন।যা ছিল পশ্চিমা বিশ্বে অভাবনীয়। মানব সভ্যতার ঘৃন্যতম শত্রু হিটলারের নাৎসি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন।সমর নীতিকে সমৃদ্ধ করেছেন।

ঔপেিবেশিক দেশ গুলোর ক্ষেত্রে নিপীড়ন শাসন শোষণ এবং জনগণের মুক্তি আন্দোলনে সঠিক পথ নির্দেশ করেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নকে বিজ্ঞানের জগৎ যাতে ভাববাদী আবিলতায় আচ্ছন্ন না হয়ে যায়, সে দিকেও তিনি সজাগ দৃষ্টি রেখেছিলেন।বিজ্ঞানের সমস্ত নতুন আবিষ্কারকে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদসম্মত উপলব্ধিতে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। বিজ্ঞানের জগতকে এমন একটি স্তরে উপনীত করেছেন যাতে বিজ্ঞানের আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরা স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে জনগণের সেবা করেন । দায়ে পড়ে নয় স্বতঃস্পূর্ত ভাবেই জনগনের কল্যাণের সাথে যাতে মিলেমিশে যায় বিজ্ঞান, সেই রকম উপলব্ধি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞান জগতে।সমস্ত রকম সৃজনী শক্তিকে উৎসাহিত করেছেন,তর্ক বিতর্ক, আলাপ আলোচনা, যুক্তি, সমালোচনা, আত্মসমালোচনাকে স্বাধীন সার্বজনীন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, তার ফসল হিসেবে পাওয়া যায়-"বিভিন্ন মতের মধ্যে সংগ্রাম ছাড়া,সমালোচনার স্বাধীনতা ছাড়া,কোন বিজ্ঞানই বিকশিত হতে পারে না" এরকম উক্তি। সমস্ত রকম দর্শনগত মতবিরোধকে উৎসাহিত করেছেন।দর্শন জগতে আলেকজান্দ্রভের The History of Western European philosophy পুস্তককে কেন্দ্র করে যখন তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছিল তখন কমরেড স্ট্যালিন এই বিতর্ককে উৎসাহিত করেছিলেন। চিন্তার সংঘর্ষের মধ্য দিয়েই সত্যে উপনীত হওয়ার রাস্তা গ্রহণ করেছিলেন।

গর্ভাচেভ আর ইয়েলৎসিন দেখানো মুক্ত বাজার অর্থনীতির রঙিন স্বপ্নে বুঁদ হয়ে তখন ভাঙ্গছে সোভিয়েত। জনৈক মিখাইল’র সেই সময়ের অভিজ্ঞতা তাঁর নোবেল জয়ী “সেকেন্ড-হ্যান্ড টাইমঃ দ্য লাস্ট অফ দ্য সোভিয়েতস” বইয়ে লিখেছেন বেলারুশিয়ান সাংবাদিকা স্বেতলানা অ্যালেক্সিভিচ -“সোভিয়েত ভাঙ্গার খুশিতে আমি মস্কোর হোয়াইট হাউসের সামনে মানব বন্ধনে হাত মিলিয়ে ছিলাম। কমিউনিজম আর যাতে কোনদিন ফিরে না আসে তার জন্য জীবন বাজি রেখেছিলাম। আমরা বলেছিলাম কমিউনিজম চিরকালের জন্য মৃত। তারপর কেটে গেছে ২৫টা বছর। আমার ছেলে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। কদিন আগে গিয়েছিলাম তার হোস্টেলে। দেখি ডেস্কের উপর পড়ে আছে মার্ক্সের দাস ক্যাপিটাল। আড়ি পেতে শুনলাম আমার ছেলে আলোচনা করছে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো নিয়ে। নিজের চোখ, আর কান’কেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে হয়েছিল নিজের হাতে যে মার্ক্স কে কফিন বন্দী করে এসেছিলাম সেই মার্ক্সই কি আবার ফিরে এল?” আজ্ঞে হ্যাঁ, মার্ক্স ফিরে এলো। ফিরে এলো কারণ, তামাম দুনিয়া জুড়ে আবার দেউলিয়া মুক্ত বাজার অর্থনীতির। ফিরে এলো, কারণ উদারনীতির বধ্যভূমি আমেরিকাতেও মানুষের প্রাণের থেকে সস্তায় বিক্রি হচ্ছে মানুষ মারা বন্দুক। ফিরে এলো কারণ, শ্রমিক ধর্মঘটে, কৃষক বিক্ষোভে, চাকরির দাবী তে, মজুরি আদায়ের লড়াইয়ে আবার উত্তাল বিশ্বের অলি-গলি।

আপনি একটা কেন একশটা পার্টি অফিস ভাঙ্গুন; একশটা কেন হাজারটা কমরেড মারুন; হাজরাটা কেন লক্ষ রক্ত পতাকা পোড়ান; কিন্তু যতদিন অন্যের শ্রমের বিনিময়ে পুৃঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মুনাফা লুটবে, যতদিন হাঙ্গার স্ট্রাইকে ধনকুবেরা পকেট ভরবে, ততদিন মার্ক্স ঠিক ফিরে ফিরে আসবে। ইতিহাস সাক্ষী, মার্ক্স কোনদিন কফিন বন্দী থাকেনি, থাকতে পারে না!

মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন

লেখক ও কলামিস্ট

[email protected]

মতামতের জন্য লেখকই দায়বদ্ধ থাকিবেন। মতামতের বক্তব্য সম্পাদকীয় নীতির সাথে নাও মিলতে পারে।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড