• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হিউম ও কান্টের দুটো বই : একটা পর্যালোচনা

  ড. সিদ্ধার্থ শংকর জোয়ার্দ্দার

৩০ অক্টোবর ২০২০, ১৪:১৫
ড. সিদ্ধার্থ শংকর জোয়ার্দ্দার
ড. সিদ্ধার্থ শংকর জোয়ার্দ্দার (ছবি : সংগৃহীত)

কোন সন্দেহ না রেখে বলা যায় জ্ঞানের ইতিহাসে দু’টো বই মানুষের চিন্তার ওপর সাঙ্ঘাতিক প্রভাব ফেলেছে। বই দুটো হচ্ছে স্কটিশ দার্শনিক ডেভিড হিউম (১৭১১-১৭৭৬)-এর A Treatise of Human Nature ও জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট(১৭২৪-১৮০৪)-এর Critique of Pure Reason। ব’ই দুটো প্রকাশিত হয় যথাক্রমে ১৭৩৯ ও ১৭৮১ সালে। আলোচনার সূত্রমুখে বলে রাখি ডেভিড হিউম ব্রিটিশ অভিজ্ঞতাবাদের একটা চূড়ান্ত পরিকাঠামো দেয়ার চেষ্টা করেছেন, অন্যদিকে জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট বুদ্ধিবাদ আর অভিজ্ঞতাবাদের একটা যৌথ সম্মীলন ঘটানোর প্রচেষ্টা চালালেও শেষমেশ তাঁর পাল্লা বুদ্ধিবাদের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছে। সে কারণে বলতেই হবে, হিউম ও কান্ট ছিলেন পুরোপুরি আলাদা ঘরানার মানুষ যদিও কান্ট তাঁর বইয়ের ভুমিকার প্রথম লাইনে বলেছেন, “কোন সন্দেহ নেই যে আমাদের সকল জ্ঞানের সূত্রপাত ঘটে অভিজ্ঞতা থেকে”। এবং কান্ট নিজেই স্বীকার করেছেন হিউম তাঁর “চিন্তার তন্দ্রাচ্ছন্নতা” থেকে জাগিয়ে তুলেছেন। অষ্টাদশ শতকের এই দুই দার্শনিক পরবর্তীতে প্রায় সব জ্ঞানজ ভাবনাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করেছেন। ডেভিড হিউমের Treatise বইটা তিনটা সেকশনে বিভক্ত। আকৃতিতে বেশ ঢাউশ সাইজ এবং এটাকে হিউম বিভক্ত করেছেন তিনটা ভাগে । প্রথম ভাগের নাম দিয়েছেন Of the Understanding যেটাকে তিনি আবার চারটা উপভাগে ভাগ করেছেন, দ্বিতীয়টার নাম দিয়েছেন Of the Passions যার উপভাগ তিনটা এবং শেষ ভাগের নাম Of the Morals যার উপভাগও তিনটা। পাঠকের সুবিধার জন্য প্রায় ৭০ পৃষ্ঠার ইনডেক্স দেয়া আছে যার প্রেক্ষিতে বইয়ে ব্যবহৃত অধিকাংশ টার্মগুলোর একটা ব্যাখ্যা এখানে পাওয়া যায়। দর্শনের ইতিহাসে এটা একটা আকর গ্রন্থ এবং অবশ্যই অভিজ্ঞতাবাদী দর্শনের বেশ মজবুত একটা ভিত। গত শতাব্দীর সবচেয়ে রোমাঞ্চকর দার্শনিক আন্দোলন যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদ এই হিউমেরই ঔরসজাত। যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীরা ভীষণভাবে সে ঋণ স্বীকারও করেছেন। বলতেই হবে প্রথম সারির বিজ্ঞানীরা বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞানীরা যে দার্শনিক ভাবনার অনুসারী ছিলেন তা কিন্তু এই প্রত্যক্ষবাদ বা অভিজ্ঞতাবাদ। আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটির দার্শনিক উপাত্ত কিন্তু হিউমের কাছ থেকে পাওয়া। আইনস্টাইন স্বীকার করেছেন স্কুলিং এর সময় হিউমের দর্শন তাঁকে খুব অনুপ্রাণিত করে। মূলত স্পেস টাইম যে অভিজ্ঞতাপূর্ব বা অ্যাপ্রাওরি নয় সেটা আইনস্টাইন শিখেছিলেন হিউমের কাছ থেকে। তা ছাড়া হিউমের অভিজ্ঞতাবাদ এবং সংশয়বাদ পরবর্তীতে দর্শন ভাবনার ওপর প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছে। ফ্রান্সিস বেকন থেকে শুরু থেকে ব্রিটিশ অভিজ্ঞতাবাদ যে ধারায় প্রবাহিত হয়েছে তার একটা কালমিনেটিং পয়েন্টে ঠেকেছে হিউমের দর্শনে। একই সাথে চিন্তার যে আরোহী অনুমান তার দার্শনিক ভিত্তির ওপর বিরাট একটা প্রশ্নবোধক চিহ্নও এঁকে দিয়েছেন হিউম। একারণে হিউমকে অনেকে ঘরের শত্রু বিভীষণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কারণ যে অভিজ্ঞতাবাদকে তিনি গ্রহণ করেছেন সেই অভিজ্ঞতাবাদকেই তিনি আবার সন্দেহ করেছেন।

সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষের মনে উঁকি দিয়েছে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, জ্ঞানের উপাদান কি? অর্থাৎ কীভাবে জ্ঞান হয়। এ নিয়ে চিন্তাবিদদের মাঝে বেঁধেছে বুদ্ধিবৃত্তিক দ্বন্দ্ব আর ভাবনার মনকষাকষি। কেও বলছেন জ্ঞানের উপাদান পুরোপুরি ‘বুদ্ধি’ কেন্দ্রিক অর্থাৎ স্বজ্ঞা বা ইন্টিউশন থেকে আমাদের জ্ঞান হয়, যদিও বুদ্ধি আর স্বজ্ঞার মাঝে কিঞ্চিত ধারণাগত পার্থক্য আছে। প্লেটো, ডেকার্ত, স্পিনজা, লাইবেনিজ, এরা সবাই ছিলেন এই ঘরানার। তাঁদের কথা হলো, মানুষের চিন্তা জগতের মূল উপাদান আসে তার চেতনা থেকে। আর এর পুরো অংশটাই মানুষ আগের থেকে মনের ভেতর নিয়ে আসে, বলতে গেলে জন্মের সাথে সাথে এই বোধও মানুষের সাথে চলে আসে। যেমন ঈশ্বর, স্পেস, টাইম, কার্যকারণ, দ্রব্য, এমনকি ভালো-মন্দের ধারণা একটা শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে সাথে নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। ডেকার্ত এই ধারণার নাম দিয়েছেন সহজাত ধারণা বা ইনেট আইডিয়া। অন্যদিকে অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকরা এটাকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন অভিজ্ঞতা ছাড়া জ্ঞান অসম্ভব। জ্ঞানের এক এবং একমাত্র উৎস হলো মানুষের অভিজ্ঞতা। জন্মান্ধ কোন ব্যক্তিকে কোনদিনও লাল, কালো সাদা কিম্বা সবুজ রঙ চেনানো সম্ভব নয়। চেনানো সম্ভব নয় হাতি কিম্বা প্রজাপতির চেহারা। কারণ প্রতিটা জিনিসের ধারণা হতে গেলে তার একটা অভিজ্ঞতা লাগবেই। যার জিহ্বা অকার্যকর হয়ে গেছে তার পক্ষে কোন কিছুর স্বাদ পরীক্ষা করা সম্পূর্ণ অসম্ভব। যে আমেরিকা যায়নি বা কোন ধরণের ছবিও দেখেনি তার পক্ষে আমেরিকার ধারণা পাওয়া কিছুতেই সম্ভব না। কাজেই পরিষ্কার করে বলা যায়, অভিজ্ঞতা ছাড়া যে জ্ঞান হয় সেটা কল্পনা বা ফ্যান্টাসি ছাড়া কিচ্ছু না। প্রাচীন কালের সোফিস্টসহ আধুনিক কালের লক, বার্কলি ছিলেন এই ধারণার অগ্রদূত যার পুরোপুরি বিকাশ ঘটেছে হিউমের কাছে এসে। আমাদের আলোচিত বই Treatise সেই অভিজ্ঞতাবাদেরই এক চমৎকার প্রকাশ।

হিউম শুরু করেছেন অভিজ্ঞাতাবাদের পক্ষে সাফাই দিয়ে। তিনি বলেন আমাদের যে কোন জটিল ধারনাকে বিভাজন করলে অনেক সরল ধারণা পাওয়া যায়। আর সরল ধারণাগুলো আসে একটা ইন্দ্রিয় ছাপ থেকে। প্রতিটা ধারণার থাকে এক একটা ইন্দ্রিয় ছাপ; আর ইন্দ্রিয় ছাপ হচ্ছে বস্তুর সাথে আমাদের ইন্দ্রিয়ের এক অবধারিত মিথস্ক্রিয়া। তিনি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেন যে সব বিষয়ের ইন্দ্রিয় ছাপ নেই, তার ধারনাও নেই। এজন্য তিনি আধিবিদ্যক ধ্যান ধারণাকে কল্পনাপ্রসূত মনে করে বাতিল করে দেন। তিনি মনে করেন “মেটার অব ফ্যাক্ট” হচ্ছে সমস্ত অভিজ্ঞতাপ্রসূত ব্যাপার যা থেকে আমাদের জ্ঞান হয়। স্পেস, টাইম, এবং গণিতের সবকিছু ব্যাখ্যা করতে গেলে হয় “মেটার অব ফ্যাক্ট” নয় “রিলেশন অব আইডিয়াস” প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ আমাদের অভিজ্ঞতাজাত যাবতীয় বিষয়গুলো মেটার অব ফ্যাক্টের অন্তর্ভুক্ত আর গণিতের সবকিছু রিলেশন অব আইডিয়াস সংক্রান্ত। যেমন পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান কিম্বা সামাজিক বিজ্ঞানের বাক্যগুলো নিশ্চিতভাবে আমাদের অভিজ্ঞতার থেকে পাওয়া, অন্যদিকে যুক্তিবিজ্ঞান কিম্বা গণিতের বাক্য সম্পূর্ণরূপে অভিজ্ঞতাপূর্ব। হিউম তাঁর An Essay Concerning Human Understanding বইয়ে বলেছেন, কোন বইয়ে যদি এই দুই ধরণের বাক্য সংক্রান্ত বিষয়ের একটাও খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে সে বই আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কী সাঙ্ঘাতিক কথা? কেন বললেন হিউম এ কথা?

এ কাজ করতে গিয়ে হিউম তাঁর দার্শনিক পদ্ধতির মধ্যে তিনটা অস্ত্র ব্যবহার করেন। এই তিনটা অস্ত্রই আমাদের ধারণা পরিষ্কারকরণের জন্য খুবই জরুরী বলে তিনি মনে করেন। অস্ত্র তিনটা হলো “মাইক্রোস্কোপ”, “রেজার” এবং “ফর্ক” বা কাঁটা। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে আমরা যেমন অতি ক্ষুদ্র আর সরল জিনিসগুলো পরীক্ষা করি ঠিক তেমনি কোন চিন্তার জটিল অংশগুলোকেও আমরা অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করে ভাবতে পারি। তারপরেও যদি কোন সরল ধারণা অস্পষ্ট আর আজগুবি মনে হয় তাহলে সেই ধারণাকে আবারও পরীক্ষা করতে হবে কোন না কোন ভাবে এর সাথে ইন্দ্রিয় ছাপের সংযোগ আছে কিনা। চূড়ান্তভাবে যদি সেটা ব্যর্থ হয় তাহলে অবশ্যই সে ধারণাকে বাতিল ঝুড়িতে ফেলে দিতে হবে নিঃসংকোচে। অন্যদিকে রেজার দিয়ে যেমনি আমরা আবর্জনা আর অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে ছেঁটে ফেলি ঠিক তেমনিভাবে অধিবিদ্যা আর কাল্পনিক বিষয়গুলোকে বর্জন করতে হবে দ্বিধাহীনভাবে। পরিশেষে তিনি যে ফর্ক ব্যবহার করেছেন তা দিয়ে মূলত তিনি পরীক্ষা করেছেন “মেটার অব ফ্যাক্ট” আর “রিলেশন অব আইডিয়াস” –এর বাক্যগুলো। মনে রাখতে হবে যে কোন আধিবিদ্যক বাক্য, কাব্যিক প্রকাশ এমনকি নৈতিক বাক্যগুলোও এই দু’ভাগের কোন অংশেই পড়ে না। তাই জ্ঞানের জগতে এসবের কোন মানেই নেই বলে হিউম মনে করেন।

হিউমের আগে ডেকার্ত মনে করতেন আমাদের মৌলিক ধারণার বড় একটা অংশ সহজাত। লক ডেকার্তের এই শিশুসুলভ চিন্তাকে বাতিল করে বলেন, কোন ধারণা যদি সহজাত হয় তাহলে তো এই বিশ্বজগতে সবার একই রকম ধারণা হওয়ার কথা। আদতে সেটাতো হয়না। শিশু, পাগল, বৃদ্ধ, যুবা, নারি, ইত্যাদি সব ধরণের মানুষের কি একই রকম ধারণা? কেও মেধাবী, কেও অমেধাবী, কেও স্টুপিড। কেও ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, কেও করে না, কেও সংশয়ী, কেও আধা-সংশয়ী ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে ইনেট আইডিয়া বা সহজাত ধারণার জায়গা কোথায়? লক তাঁর যুক্তিতে দু’ধরণের প্রক্রিয়ার কথা বলেনঃ আমরা প্রথমে কোন বস্ত সম্পর্কে সংবেদন লাভ করি, এবং সেই পরবর্তীতে মানুষিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে একটা প্রতিফলন ঘটে। হিউম তাঁর থিওরি অব আইডিয়াসে লকের এই ধারণাকে ব্যবহার করেন। এবং বলেন ইন্দ্রিয় ছাপকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যার নাম সেন্সেশান ও রিফ্লেকশান। এ’দুটো ভাগই বলতে গেলে বস্তুর সাথে আমাদের ইন্দ্রিয়ের মিথস্ক্রিয়ার মাত্রাগত ভাগ।

হিউম পরবর্তী অংশ Of the Passions-এ এই ইন্দ্রিয়ছাপকে দুই ভাগে ভাগ করেছেনঃ মৌলিক বা প্রাথমিক ইন্দ্রিয়ছাপ ও মাধ্যমিক বা গৌণ ইন্দ্রিয়ছাপ। তিনি মনে করেন আমরা যে আনন্দ, বিষাদের অভিজ্ঞতা পায় সেগুলো যেহেতু বাইরের থেকে আসে এবং সরাসরি ইন্দ্রিয়ের সাথে সংযুক্ত তাই এগুলো মৌলিক। মাধ্যমিক বা গৌণ ইন্দ্রিয়ছাপ হয় মৌলিক ছাপ থেকে আসে না হয় ধারণা থেকে আসে। প্যাসন্স বা অনুভূতিগুলো আসে এই মাধ্যমিক বা গৌণ ইন্দ্রিয়ছাপ থেকে। তিনি মনে করেন ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, অনুরাগ, আনন্দ, বিষাদ, ভয় কিম্বা আশা-নিরাশাগুলো প্রাথমিক ইন্দ্রিয় ছাপের থেকে পাওয়া, অন্যদিকে গর্ব, ঘৃণা, ভালোবাসা কিম্বা অপমান হচ্ছে গৌণ ইন্দ্রিয়ছাপের উপজাত। হিউম এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন, মানুষের প্রবল অনুভূতিগুলোর সাথে বুদ্ধির কোন সংযোগ নেই। এগুলো শুধুমাত্র আমাদেরকে কোন কাজে উদিপ্ত করে। মানুষের বুদ্ধি তার অনুভূতির দাস। তাঁর কথায়, reason is and should be the “slave” of passions।

সবশেষ অংশ Of the Morals এ মানুষের নৈতিকতা, ভালো, মন্দ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন। আগেই বলেছি নৈতিকতা নিয়ে হিউমের অবস্থান কী ছিল। তিনি পাপ ও পুণ্য এই দুটো ধারণাকে ভাগ করেছেন যার উৎস সেই ইম্প্রেশন, আইডিয়া নয়। কিন্তু এই ইম্প্রেশন ঠিক আগের মতো রঙ বা শব্দের ইম্প্রেশনের মতো নয়। যেমন পাপের ইম্প্রেশন হচ্ছে কষ্ট অন্যদিকে পুণ্যের ইম্প্রেশন আনন্দ। এছাড়াও তিনি বলেন পাপ বা পুণ্যের ব্যাপারটা সম্পূর্ণরূপে দেখা হয় সামাজিক ব্যাপার হিসেবে। কোন কাজ পাপের নাকি পুণ্যের সেটা এই সমাজ থেকে নির্ধারিত হয়। কোন মানুষকে আমরা যখন ভালো বলি তখন বিষয়টা অন্যকিছু নয়, আমি মানুষটাকে ভালো গুণ আরোপ করছি তাই সে ভালো, সবার কাছে সে নাও ভালো হতে পারে। কাজেই ভালো বা মন্দ হচ্ছে সম্পূর্ণরূপে কাওকে অনুমোদন বা অননুমোদন। এমনকি ‘হত্যা করা”ও সবসময় খারাপ নয়। প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শত্রুর নিধন করতে তাঁর দেশ যেসব সেনাকে হত্যা করেছে সেসব রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রশংসনীয় উদ্যোগ ছিল। ১৯৭১ সালে বীর বাঙালি অস্ত্র ধরে পাকিস্তানীদের হত্যা করেছে। সেগুলো ছিল আমাদের গর্বের বিষয়। তাহলে হত্যা কি সবক্ষেত্রে আনজাস্টিফাইড? নিশ্চয় হিউমের এই অবস্থান আমাদের আরও চিন্তার খোরাক যোগায়। তাই বলে হিউম হত্যাকাণ্ড কে সমর্থন করেননি। বরং বলেছেন এটা অনৈতিক বলা যাবে না বরং বলতে হবে অবৈদ্ধিক।

এই বই সম্পর্কে মোটা কথায় বলা যায়, হিউম মনে করেন আমাদের সমস্ত জ্ঞানের উৎস ইম্প্রেশন বা ইন্দ্রিয়ছাপ ও আইডিয়াস বা ধারণা। ইম্প্রেশন ধারণা থেকে অনেক শক্তিধর, এবং জীবন্ত। আমরা আমাদের স্মরণশক্তি এবং কল্পনা দিয়ে ধারণাগুলোকে সংরক্ষণ করি এবং সেগুলোকে সাজিয়ে নিই। কোন ধরণের ‘সার্বিক ধারণা’ বা ‘বিমূর্ত ধারণা’ কিছুতেই সম্ভব না। আমাদের মানসিক প্রত্যাশা থেকে নিশ্চয়তার বোধ আসে। এবং এটা হয় ধারণার মাঝে সাযুজ্য ও বিরোধের প্রতি স্বাজ্ঞিক অনুমোদনের জন্য। কার্যকারণ বলে আদতে কিছু নেই, দুটো ঘটনার দীর্ঘ পারস্পার্য থেকে একটা অনিবার্যতা মনের ভেতর আসার ফলে একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়। এই প্রত্যাশাই হলো কার্যকারণ। এ কারণেই জ্ঞানের সংবৃত্তিতে, তা সে বুদ্ধিই হোক কিম্বা অভিজ্ঞতাই হোক, সংশয়ী না হওয়ার কোন কারণ দেখেন না হিউম।

মনে রাখতে হবে হিউমের এই বই প্রকাশিত হয় তরুণ বয়েসে। যখন তিনি চিন্তার একটা নতুন জানালার খোঁজ করছিলেন তখন এই বই লেখা। কিন্তু এতো খাটাখাটুনির পর ফলাফল বেশি একটা আশাব্যঞ্জক হয়নি। ১৭৬৪ সালে টমাস রিড এর নিদারুণ সমালোচনা করেন। ইতোমধ্যে হিউম History of England (১৯৫৪-১৭৬২)লিখে অনেক নামিদামি হয়ে উঠেছেন। সে জন্য পেছন ফিরে আর এ বইয়ের দিকে আর নজর দেননি।

কান্টের Critique of Pure Reason জ্ঞানের ইতিহাসে আরেকটা মাইলফলক কারণ অনেকেই স্বীকার করেছেন এই বই পৃথিবীর অন্যতম দুর্বোধ্য ও ভালো বইয়ের একটি। Paul Guyer ও Allen Wood বইয়ের ভুমিকায় লিখছেন বইটা ১৭৮১ সালের মে মাসে প্রকাশিত হওয়ার পর দু’শ বছরের বেশি সময় ধরে মানুষের জ্ঞানের রাজ্যে অন্যতম একটা চিন্তার উৎস হিসেবে কাজ করেছে, এবং দার্শনিকরা উদ্ভাবনমুখী দর্শনের অনেক রসদ এর থেকে পেয়েছেন।

দর্শন কিম্বা বিজ্ঞানের আলোচনাতেও এ বইয়ের নাম এসেছে। স্টিফেন হকিং তাঁর A Brief History of Time বইয়ের শুরুতে কান্টের এই বইয়ের নাম উল্লেখ করেছেন। প্রকাণ্ড এই বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিকতা মেলানো অতি কঠিন একটা কাজ। আলোচনার সুবিধার্থে বইটাকে মোটা দাগে দু’টো ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ Transcendental Doctrine of Elements আর Transcendental Doctrine of Method। Elements দিয়ে কান্ট মূলত অভিজ্ঞতাপূর্ব জ্ঞান ও এর সীমানা বুঝিয়েছেন অন্যদিকে Method দিয়ে বুঝিয়েছেন এর পদ্ধতিতাত্ত্বিক ব্যঞ্জনা। প্রকৃতপক্ষে এখানে তিনি গাণিতিক ও দার্শনিক প্রমাণ, তাত্বিক ও ব্যবহারিক বৈদ্ধিক ক্রিয়া, পরীক্ষণমূলক ও সংশায়ত্মক পদ্ধতি ইত্যাদির মধ্যে পার্থক্য দেখান। Doctrine of Elements কে আবার দু’টো উপভাগে ভাগ করেছেন, Transcendental Aesthetic আর Transcendental Logic । Aesthetic এর ভেতর আমাদের অভিজ্ঞতাপূর্ব জ্ঞানের আকার যেমন স্পেস টাইম কীভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করেন। Logic অংশে ব্যাখ্যা করেন বুদ্ধির অভিজ্ঞতাপূর্ব বিষয় যেখানে দেখান জ্ঞানের ওপর সত্য ও মিথ্যা উভয় ক্ষেত্রে কি অবস্থা হতে পারে।

Critique of Pure Reasonকে ফার্স্ট ক্রিটিক বলা কারণ এর পরপর তিনি আরও দু’টো ক্রিটিক লেখেন, Critique of Practical Reason (1788) ও Critique of Judgment (1790)। অবশ্য পরের দুটো বই নীতিবিদ্যা সংক্রান্ত যেগুলো এরই ধারাবাহিকতায় রচিত হয়েছে। কান্ট তাঁর বইয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে বলেন, “আমি ক্রিটিক বলতে কোন বই বা কোন সিস্টেমের কথা বোঝায়নি, সাধারণত এটা দিয়ে আমি আমাদের বুদ্ধির যাবতীয় ফ্যাকাল্টিকে বুঝিয়েছি যা কিনা অভিজ্ঞতার বিপরীতে পুরোপুরি স্বাধীনভাবে কোন জ্ঞানের অস্তিত্ব অবস্থান করে কিনা সেটাই”। সে কারণে বিষয়টা দাঁড়িয়েছে এই যে একটা নীতিকে সামনে রেখে আমরা বলতে পারবো সাধারণভাবে অধিবিদ্যার উৎস, বিস্তৃতি, সীমানা তথা এর সম্ভব্যাতা কিম্বা অসম্ভব্যতা কতটুকু”(প্রিফেইস টু ফার্স্ট এডিশন)। প্রথমেই তিনি অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক যেমন লক, হিউম এবং বুদ্ধিবাদী দার্শনিক লাইবেনিজ, খ্রিস্টিয়ান উলফ প্রমুখদের চিন্তার ধারাকে বিশ্লেষণ করেন। বিশেষ করে কার্যকারণ সংক্রান্ত হিউমের সংশয় ও বহির্জগৎ সম্পর্কে ডেকার্তের ধারণার একটা অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেন। এর পর তিনি স্পেস ও টাইম নিয়ে তাঁর নিজস্ব ধারণা ব্যাখ্যা করেন। কান্টের এই দার্শনিক বিশ্লেষণকে বলা হয় ট্রান্সেন্ডেন্টাল আইডিয়ালিজম। তিনি দেখান, যে জ্ঞান অভিজ্ঞতা নিরপেক্ষ তা অ্যাপরাওরি অন্যদিকে অভিজ্ঞতা সাপেক্ষ জ্ঞান অ্যাপষ্টটারিওরি। তিনি বলেন, অ্যাপরাওরিমূলক জ্ঞান সদাসত্য তথা ইউনিভার্সাল। এবং এর ওপর গড়ে ওঠে যে বাক্য বা বচন তার নাম অ্যানালেটিক প্রপোজিশন যাকে অস্বীকার করলে শুরু হয় স্ববিরোধীতা। যেমন ‘একজন বুদ্ধিমান মানুষ নয় বুদ্ধিমান’ অথবা ‘একজন বুদ্ধিমান মানুষ নয় মানুষ’ ইত্যাদি।

অন্যদিকে অভিজ্ঞতার ওপর নির্মিত বাক্যগুলোকে বলে সিনথেটিক প্রপোজিশন, যা সবসময় আমাদের একটা নতুন তথ্য দিতে পারে। যেহেতু এগুলো পুরোপুরি অভিজ্ঞতা নির্ভর তাই এ ধরণের বাক্যগুলোর উদ্দেশ্যের ভেতর বিধেয় পাওয়া যায়না। আর এ কারণেই এর বৈশিষ্ট নিয়ে একটা ‘অনিশ্চয়তা’ থাকে। কান্ট তাঁর দর্শনে এই চারধরণের বাক্যের একটা সম্ভবনা খতিয়ে বলেন ‘সিনথেটিক অ্যাপ্রাওরি জাজমেন্ট ইজ পসিবল’। চার ধরণের বাক্য হল সিনথেটিক অ্যাপ্রাওরি, সিনথেটিক অ্যাপষ্টটারিওরি, অ্যানালেটিক অ্যাপ্রাওরি, অ্যানালেটিক অ্যাপষ্টটারিওরি। আমরা জানি কোন বাক্য সিনথেটিক হলে তা কোন সময় অ্যাপ্রাওরি হবে না, হওয়ার কথাও না। কিন্তু কান্ট এ দুটোকে কীভাবে একত্রিত করলেন সেটাই তাঁর দর্শনের মূল কথা।

কান্টের আগে অন্তত হিউম বলেছিলেন যেসব জ্ঞান অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া যায় সেগুলো পুরদস্তুর সম্ভাবনাময় কারণ সেগুলোর ভেতর কোন নেসেসারি কানেকশন থাকে না। অর্থাৎ এগুলো কন্টিনজেন্ট। কার্যকারণের ভেতর কোন ধরণের অবশ্যম্ভাবী সম্পর্ক নেই, থাকা উচিৎ না। এগুলো নিতান্তই আমাদের সাইকোলজিক্যাল ডিস্পজিশনের কারণে মানসিক সংশ্লিটতা ছাড়া কিছু নয়। এ কথাটা কান্টের খুব ভালো লেগেছিল, তাই তিনি বলে ফেলেছিলেন, হিউম আমার তন্দ্রাচ্ছন্নতা থেকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু জাগিয়ে তুললেও শেষমেশ তিনি জেগে উঠে ভিন্ন পথে হাঁটতে শুরু করেন। ব্যাপারটা দেখা যাক।

কার্যকারণ সম্পর্ক থেকে প্রাপ্ত কোন বাক্য নেসেসারি হতে পারেনা, এটা কান্ট স্বীকার করে নিলেন। যেমন নিউটনের পদার্থবিজ্ঞান, জ্যামিতি ইত্যাদি। কিন্তু আমরা জেনে আসছিলাম ৭ + ৫ = ১২ এর মতো বাক্যগুলো ভীষণ নেসেসারি তথা টটলজি। কিন্তু কান্ট বললেন, বিশুদ্ধ গণিত হচ্ছে সংশ্লেষনাত্মক কারণ ১২ প্রত্যয়টা কিছুতেই ৭ এবং ৫ এ দুটো প্রত্যয়ের মাঝে খুঁজে পাইনা। শুধু এগুলোই না যেকোন গণিতের চারিত্রিক বৈশিষ্টই এমন। এভাবে কান্ট একটা নতুন সমস্যা তৈরি করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি অধিবিদ্যার ওপর এই সিনথেটিক অ্যাপ্রাওরি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন। সেই প্লেটো থেকে শুরু করে কান্ট অবধি সকল আধিবিদ ঈশ্বর, আত্মা, জগত ইত্যাদি সম্পর্কে যে বাক্যগুলো গড়ে তুলেছেন সেগুলো সেলফ-এভিডেন্ট না। কিন্তু সেসব বাক্যগুলো আবার অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্তও না। কান্ট এ জন্য যুক্তি দিয়ে বললেন, সকল কার্তেসীয়উত্তর অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকরা ভুল করেছেন এই বলে যে, আমাদের কোন জ্ঞানই অভিজ্ঞতার সীমানা ছেড়ে কোথাও যাওয়া সম্ভব না। অন্যদিকে গোঁড়া দার্শনিকরা বিশেষ করে বুদ্ধিবাদীরা বলেন তাত্বিক জ্ঞানের মাধ্যমে অভিজ্ঞতার সীমানাকে টপকানো সম্ভব। এইবার তাহলে কান্ট নিজের জায়গায় এসে বললেন, তাহলে অধিবিদ্যা বলে যদি সত্যিকার কিছু থেকে থাকে তাহলে সেটা কীভাবে সম্ভব?

হিউম বলেন, অধিবিদ্যাকে একটা বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অভিজ্ঞতাপূর্ব সংশ্লেষণ সত্যকে সম্ভব করে তুলতে হবে। অভিজ্ঞতাপূর্ব সংশ্লেষণ সত্য আবশ্যিকভাবে সত্য, কিন্তু মনে রাখতে হবে এই আবশ্যকতা সত্য বিশ্লেষণের পূর্ববর্তী দার্শনিকদের মতো গতানুগতিক নয়। অর্থাৎ সংশ্লেষনাত্মক ধারণার হিউমিয়ান ব্যাখ্যার মতো নয়। তিনি বলেন, জ্ঞানের দুটো উৎসঃ সেন্সসিবিলিটি ও আন্ডারস্ট্যান্ডিং। স্পেস ও টাইম সেন্সসিবিলিটির একটা অ্যাপ্রাওরি ফর্ম যেটাকে তিনি ইন্টিউশন বলেছেন। আমরা এই ফর্মের বাইরে কোন কিছুই দেখিনা। অন্যদিকে আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এর অ্যাপ্রাওরি ফর্মকে বলে ক্যাটাগরি অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং। এগুলোকে কান্ট চারটা ভাগে ভাগ করার পর তিনটা করে উপবিভাগ করেছেন, অর্থাৎ মোট ক্যাটাগরির সংখ্যা ১২-টা। পরিমাণের মধ্যে তিনটাঃ একত্ব, বহুত্ব ও সমগ্রতা; গুণের মধ্যে তিনটাঃ বাস্তবতা, নেতিবাচকতা ও সীমাবদ্ধতা; সম্পর্কের মধ্যে তিনটাঃ সাংসিদ্ধিকতা, কার্যকারণ ও নির্ভরতা; সাধনপ্রণালীর মধ্যে তিনটা ভাগঃ সম্ভব্যতা-অসম্ভব্যতা, অস্তিত্বশীলতা-অনঅস্তিত্বশীলতা, অপরিহার্যতা–আকস্মিকতা। এই ক্যাটাগরিস গুলো বস্তুর অবভাসিক চেহারার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সুনির্দিষ্ট একটা ঘটনার সাথে এগুলোর সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সময়ের সাথে যোগ রেখে অবশ্যই এগুলোকে প্রয়োগ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছেন কান্ট স্কিমা।

পরিশেষে বলা যায় কান্ট ব্রিটিশ অভিজ্ঞতাবাদ আর কন্টিনেন্টাল বুদ্ধিবাদের হার না মানা দ্বন্দ্বের ফলে এক ধরণের সমন্বয়বাদী চিন্তা থেকে নতুন জ্ঞানের প্যারাডাইম তৈরি করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি মনে করেন চরম অভিজ্ঞতাবাদ ও চরম ভাববাদ দুটোই অগ্রহণযোগ্য। আদতে জ্ঞান হতে গেলে দুটো জিনিস লাগে একটা বুদ্ধির আকার অন্যটা বুদ্ধির উপাদান। বুদ্ধির থেকে পাওয়া যায় এই আকার বা জ্ঞানের ছাঁচ, অন্যদিকে অভিজ্ঞতা সরবরাহ করে জ্ঞানের উপকরণ। এটাই কান্টের ক্রিটিক্যাল থিওরি অব নলেজ।

লেখক: ড. সিদ্ধার্থ শংকর জোয়ার্দ্দার, অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড