রহমান মৃথা
সুইডিশ ভাষায় যে কথাটি অনুভব করার জন্য সবাই খুব ডেডিকেটেড এবং মোটিভেটেড তা হলো- ‘Jag är super lycklig’অর্থাৎ আমি খুব সুখি। Lycklig বা সুখি একটি দারুণ শব্দ যার মধ্যে অনেক আবেগ জড়িত রয়েছে।
আচ্ছা বলুন তো সুখের ডেফিনিশন কী? ডেফিনিশন থাকলেও সেটা কি সবার জন্য একই অনুভূতি বহন করে? আমার কাছে যেটা সুখ তা কি অন্যের ক্ষেত্রেও তাই? আমি শত প্রশ্ন করতে পারি এর ওপর। প্রশ্ন করার কারণ একটিই তা হলো আমরা সবাই সুখি এবং ধনী হতে চাই। বিলাসবহুল জীবন পেতে চাই। ভালো শিক্ষা, ভালো স্বাস্থ্য, ভালো বাসস্থান, ভালো পরিবেশ, ভালো খাবার, ভালো পোশাক ইত্যাদি পেতে চাই। কেউ খারাপ পরিবেশ পেতে চাই না অথচ সেটা না চাইতেই পাই।
এখন আমি যেটা চাই তা হলো একটি কোয়ালিটি লাইফ। কোয়ালিটি লাইফে ধনী বা গরীব বলে কথা নেই। সে আবার কী? যে লাইফে কোনো জটিলতা নেই, কোনো অর্থনৈতিক সমস্যা নেই, তবে নিঃসঙ্গতা এবং মানসিক অশান্তিতে ভরা, সে লাইফকে আমরা কোয়ালিটি লাইফ বলতে পারি না।
আবার যে লাইফে জটিলতা আছে, অর্থনৈতিক সমস্যা আছে, তবে নিঃসঙ্গতা এবং কোন মানসিক অশান্তি নেই, সেটাকেও কোয়ালিটি লাইফ বলতে পারি না।
একজন দিনমজুর বা রিকশাচালক কোয়ালিটি লাইফ যাপন করতে পারে। যদি তাদের মাঝে সময় সচেতনতা, সততা, নিষ্ঠা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়া, সুশিক্ষা এবং সুচিন্তার মন-মানসিকতা থাকে।
দুর্নীতি করে বড় লোক হয়ে সেই অর্থে যাই করা হোক, প্রতিটি বিনিয়োগ মনে করিয়ে দেয় তাদের অপরাধের কথা। সেক্ষেত্রে ব্যক্তি তার মনের পবিত্রতা, মানসিক ভারসাম্য সেই সঙ্গে হারিয়ে ফেলে তার কোয়ালিটি লাইফ।
আবার যার প্রচুর অর্থ রয়েছে, রাজকীয় প্রাসাদ রয়েছে তা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত তাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়, এ ধরনের মানুষও কোয়ালিটি লাইফ থেকে বঞ্চিত।
আবার দেখা যায় কারো বাড়িজুড়ে সুস্থ পরিবেশ বিরাজমান কিন্তু বাইরের পরিবেশ জঘন্য। এই জঘন্য পারিপার্শ্বিকতার কারণে কোয়ালিটি লাইফ যাপন করা সম্ভবপর হয় না। এমতাবস্থায় সমাজের পরিকাঠামো রক্ষার্থে সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। এ ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে নিজের সুখ সুখ নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না অন্যের জীবনকে সুখি করা যায়।
আমরা সামাজিক জীব। সেক্ষেত্রে আমাদের আচরণ এবং কর্ম সমাজে দারুণভাবে প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব যদি পজিটিভ আউটকাম না জোগায় তবে সমাজে সেটা নেগেটিভ প্রভাব বিস্তার করে।
বেশির ভাগ সময় এই নেগেটিভ প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে দেশের সব রিসোর্স ব্যয় হয়ে থাকে। একটি উদাহরণ যেমন প্রতিনিয়ত দেশে গ্যাস সিস্টেমের অপরিকল্পিত ডিস্টিবিউশনের কারণে আগুনে পুড়ে প্রায়ই বড় ধরণের ক্ষতি হচ্ছে। দেশের সব ধরণের রিসোর্স ব্যয় করে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
এই ধরণের কর্মকে বলা যেতে পারে রিএক্টিভ এক্টিভিটিস। এই রিএক্টিভ এক্টিভিটিসের পিছনে সময় দিতে গিয়ে কর্মকর্তাদের সম্ভব হয় না দেশের জন্য প্রোএক্টিভ কিছু করা। যার কারণে দীর্ঘ মেয়াদি প্লানের উন্নতিতে ব্যাঘাত ঘটে এবং দেশের সর্বাঙ্গীণ কোয়ালিটির ওপর বিশাল প্রভাব পড়ে।
কোয়ালিটি লাইফ পেতে হলে আমাদের শুধু ঘটে যাওয়া ঘটনার ওপর কাজ বা অ্যাকশন নিলে হবে না। সে ক্ষেত্রে অতীতের বিচ্ছিন্ন ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
কোয়ালিটি নিয়ন্ত্রণের ওপর বেস্ট প্রাক্টিসই দিতে পারে কোয়ালিটি লাইফ। অর্থাৎ ‘Right first time and right from me’- কনসেপ্টের ব্যবহার করা শিখতে হবে। ‘Let us make BANGLADESH proud.’
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, [email protected]
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড