• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মহামারিতে কোন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ

  রহমান মৃথা

২৯ জুলাই ২০২০, ১৮:৪৭
অধিকার
ছবি : প্রতীকী

গত বছর খবরে দেখেছি খালকাটা শিখতে সরকারি চাকরিবিদরা বিদেশে যাবেন। কাজ করবে দেশের সাধারণ মানুষ আর বিদেশ ভ্রমণ করবে সরকারি চাকরিবিদরা। কভিড-১৯ এর কারণে আমরা লকডাউন, শাটডাউন বা আতঙ্কে আছি। এর ফলে আমাদের করোনা ছাড়া অন্য বিষয়ের ওপর ভাবার সময় নেই। ছোট বেলায় শুনেছি মুরব্বিরা বলতেন "হাড়ি ভেঙে দই পড়লে বিড়ালের হয় বাহার।” মনে হচ্ছে করোনার এই দুর্যোগে অনেক দেশের বাহার হয়েছে। এর মধ্যে যাদের নাম আমার ভাবনায় এসেছে চীন তাদের মধ্যে অন্যতম। তবে চীনের বিষয়টি আলোচনা করার আগে জানা দরকার বাংলাদেশের কী অবস্থা।

আজ দৈনিক যুগান্তরের খবরে দেখলাম, “তেলজাতীয় ফসলের চাষ শিখতে ও মৌ পালনে প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশে যাবে ৪০ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে তেলজাতীয় ফসলের চাষ শিখতে শিক্ষা সফরে যাবে ৩৬ জন। এই সফরের পেছনে ব্যয় হবে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ ছাড়া মৌ চাষের ওপর বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেবে আরও ৪ জন কর্মকর্তা। এদের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ৪০ কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণ বাবদ খরচ হবে ২ কোটি টাকা। মৌ চাষে উচ্চতর প্রশিক্ষণে বিদেশ সফরের জন্য ৩০ জন কর্মকর্তার নাম প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির কারণে তা কমিয়ে ৪ জন করা হয়। একই সঙ্গে পরামর্শকদের বিদেশে শিক্ষা সফরসহ বিভিন্ন খাতের ব্যয় এখান থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্পে ঘটেছে এমন ঘটনা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পটি গত ১৬ জুলাই অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২৭৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্পের সারসংক্ষেপ পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ঘটনার তদন্তে পরিকল্পনামন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বলেছে এত খুঁটিনাটি বিষয় দেখা তার পক্ষে সম্ভব না। তবে প্রকল্পটি অনুমোদন হলেও বিষয়টি দেখার সুযোগ আছে। তিনি খতিয়ে দেখব। প্রয়োজনে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবে।”

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিদেশ ভ্রমণ এখন যেন একটি অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সবাই কী একটি বিষয় লক্ষ্য করেছেন কিনা, সেটা হলো অবসরে গেলে সবাই মুখ খোলে কিন্তু চাকরিতে থাকতে কেউ কিছুই বলে না। এটা একটি নতুন বাহানা। ইদানীং শিক্ষা সচিব, আর্মি অফিসার বা বিভিন্ন কর্মস্থানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা বিভিন্ন টকশোতে এসে অনেক কিছু বলছে কিন্তু তারা চাকরি থাকাকালীন কী করেছে বা বর্তমানে কর্মরত চাকরিবিদরা কী করছে তা জানার সুযোগ জনগণ কখনও পায়নি, পাবে বলেও মনে হয়না।

চীন থেকে করোনার উৎপত্তি। শেষ হবে কখন, কোথায় এবং কীভাবে আমরা তা জানি না। গোটা বিশ্ব লকডাউন, শাটডাউন, এবং সবশেষে স্লোডাউনে। এমতাবস্থায় চীন গ্লোবাল একটি মজবুত অর্থনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করেছে। বিশ্বের সর্বত্রই অর্থনৈতিকভাবে বেশ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে।

অনেক দেশ যেমন আমেরিকা এবং এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অর্থনৈতিকভাবে আতঙ্কিত হয়ে তাদের বিজনেস প্লানের পরিবর্তন করতে উঠেপড়ে লেগেছে। কারণ তাদের ভয় চীন অর্থনৈতিকভাবে ইউরোপ বা আমেরিকায় বিশাল প্রভাব বিস্তার করবে। আসলে চীন অলরেডি প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। সুযোগ পেলেই বড় বড় কম্পানির অংশবিশেষ বা পুরো কম্পানিই কিনে নিচ্ছে। যেমন তারা সুইডেনের ভলভো গাড়ির মালিক হয়েছে, নরওয়ের নরওয়েজিয়ান এয়ারলাইন্সের পার্টনার হয়েছে। এছাড়া আফ্রিকার অনেক দেশের ল্যান্ড প্রপার্টির চাষাবাদ বর্তমানে চীনের দখলে।

আরও পড়ুন : আশার ওপর ভরসা রাখতে হবে

চীন বড় দেশ, প্রচুর জনসংখ্যার বসতি। দিন দিন অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশ ডিফেন্ডিং পজিশনে যেতে শুরু করেছে। যেমন কয়েকদিন ধরে দেখছি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতারা ট্যাকটিকালি মিটিং-এর পর মিটিং চালিয়ে যাচ্ছে কীভাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একতা বদ্ধতা জোরালো করা যায়। কীভাবে চীন এবং রাশিয়া থেকে দূরে থাকা যায় ইত্যাদি।

খেলাধুলার জগতে দেখা যায়, খেলোয়াড়দের মধ্যে ডিকেন্সিভ এবং অফেন্সিভ খেলোয়াড় থাকে। অনেকে দুটোতেই দক্ষ। টেনিসে যেমন দেখা যায় যারা যত ফিজিক্যালি শক্তিশালী এবং ডিফেন্সিভ তাঁরাই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হতে পেরেছে। সুইডেনের বিয়ন বর্গ তার মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে শুধু ডিভেন্সিভ এবং শক্তিশালী হলেই সেরা স্থানটি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে অফেন্সিভও হতে হবে বিশ্ব সেরা হতে হলে, যদি বিশ্ব তারকা রজার ফেদেরার, নোভাক জোকভিচ এবং রাফায়েল নাদালকে দেখি।

চীনের সঙ্গে বিজনেসে টিকে থাকতে হলে শুধু বিশ্ব ডিফেন্ডিং পজিশনে চিন্তা করলে চলবে না অফেন্সিভও হতে হবে।

বিশ্ব বিজনেসে শুধু অংশগ্রহণ নয়, সক্রিয়ভাবে খেলে জেতার মন মানসিকতা তৈরি করতে হবে। পৃথিবী যখন এমনটি চিন্তা চেতনায় ঠিক তেমন একটি সময় বাংলাদেশ দুর্নীতির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। এটা জেনেশুনেও যদি কিছু না করি তবে দেশকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। দেশের এই দুর্দিনে আর দর্শক নয় আসুন সক্রিয় অংশগ্রহণ করি, সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করি। সচেতন জাতি অজুহাত নয় খোঁজে সমাধান। আমি বিশ্বাস করি আমাকে, আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষকে। আর তুমি?

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, [email protected]

মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখা একান্ত লেখকের মত। এর সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি মালার কোন সর্ম্পক নেই।
চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড