• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

করোনা চলে গেলে

  মাহবুব নাহিদ

২২ এপ্রিল ২০২০, ২৩:২২
মাহবুব নাহিদ 
মাহবুব নাহিদ 

কোয়ারেন্টিন শেষ হয়ে গেলে কার সাথে লাঞ্চ করতে যাব কি খাব তা ভেবেছি! একবার কি ভেবেছি যে আসলেই আমরা এই কোয়ারেন্টিন শেষ করতে পারব কিনা! কতটা লাশের কফিন দেখে শেষ হবে মরণযাত্রা! আর কত স্বজনকে কেড়ে নিবে এই ভয়াল ভাইরাস।

ভাবুন তো, দুই মাস পরে। রাস্তা দিয়ে হাটছি, রাস্তাগুলো চিনি না। পুরো দেশ আমার কাছে অচেনা। এ এক শশ্মানঘাট। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লাশ। কবর দেয়ার জায়গা নেই, সৎকার করার কারো সাহস নেই। তবে চলে গেছে করোনা! নিয়ে গেছে লাখো কোটি প্রাণ!

ঘুমের ঘরে হঠাৎ শুনতে পাচ্ছি চিৎকার, হাহাকার। চারিদিকে শুধু মৃত্যু মৃত্যু আর মৃত্যু। এদিকে লাশ পড়ছে, ওদিকে লাশ পড়ছে। আমার চতুর্পাশে শুধু লাশ আর লাশ। লাশের স্তুপ হয়ে যাবে আমাদের প্রিয় জায়গাগুলো। পার্কগুলোয় প্রেমিক প্রেমিকার বসার কথা, কিন্তু বসে আছে লাশেরা! সুপারসপের সেলসম্যান আপনার ডাক শুনতে পাচ্ছে না, সে মরে ভুত হয়ে গেছে। রাস্তায় ট্রাফিক পথ দেখাচ্ছে না, কারণ সে রাস্তায় নেই, সেও লাশের মিছিলে যোগ দিয়েছ। গণপরিবহন চলছে না, বাসগুলো খালি পড়ে আছে, ভিতরে ড্রাইভার আর হেলপারদের লাশ! এত লাশের বোঝা বইতে পারছে না প্রিয় স্বদেশ!

ভাবতে পারি আর দুইমাস পরে আমাদের কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে? কি হবে আমাদের ভবিষ্যৎ? কি লেখা আছে আমাদের ভাগ্যে? নিয়তির সেই নির্মম পরিহাস দেখার জন্য প্রস্তুত আছি তো সবাই?

লকডাউন শেষ হলে কোন গোরস্থানে যাবেন? আমাকে খুঁজতে কোন শশ্মানে যাবেন? নাকি হাসপাতালের মর্গে যাবেন? নাকি ডাস্টবিনের স্তুপের মাঝে খুঁজবেন? নাকি রাস্তায় এবড়োখেবড়ো হয়ে পড়ে থাকা লাশের মাঝে চেহারা মিলানোর চেষ্টা করবেন! চেহারাটা নাও মিলতে পারে, হয়তো মুখটা কেউ খেয়ে নিয়েছে! কোনো জন্তু হতে পারে! ক্ষুধার জ্বালায় যে কেউ খেতে পারে!

বাসায় গ্যাস নেই, পানি নেই, এগুলোর জন্য ফোন করবেন? তাতেও চার্জ নেই, বিদ্যুৎ নেই। বাহিরে এম্বুলেন্সের শব্দ, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসমাইলের লাশের গাড়িতে জায়গা হচ্ছে না, লাশ ভর্তি হয়েছে ট্রাকে। ট্রাক বের হয়ে যেতে পারছে না কারণ যেতে হলে যে লাশের উপর দিয়েই যেতে হবে। বাতাসে অক্সিজেন নেই, শুধুই লাশের গন্ধ!

কোয়ারেন্টিন শেষে কোন রেস্টুরেন্টে যাবেন? সেখানে চুলা জ্বলবে তো? নাকি আমার ঘরের মতো সেখানেও চুলা জ্বালানোর মানুষটাকেই খুঁজে পাওয়া যাবে না! চিকেন ফ্রাই, ফিশ ফ্রাই, কাটলেট আহ আরো কত কি! কিন্তু খুঁজতে হবে পারে কয়টা ভাত! অথবা দুটো মুড়ি! একটি চিবিয়ে খাওয়ার জন্য যদি শক্তিটা থাকে! অথবা ডাস্টবিনে পঁচা বাসি যা হোক কোনো একটা কিছু হলেই চলবে! চালিয়ে নিতে হবে!

অনেকদিন জামাতে নামাজ পড়িনি, কোয়ারেন্টিন শেষে মসজিদে যাব। কিন্তু আজান দেয়ার মানুষটা বেঁচে আছে তো, নাকি আমি নিজেই দিব আজান! নিজেকেই পড়তে হবে নামাজ, জামাতের সঙ্গী আমি একাই। বাকিরা সবাই লাশের মিছিলে যোগ দিয়েছে! এমন হলে সহ্য করতে পারব তো!

ভাবুন তো এমন যদি হয়, স্বজনহারা থাকতে হবে পরের জীবনটা! আমি আছি হয়তো টিকিয়া! কিন্তু আর কেউ নেই! একা বেঁচে থেকে কি লাভ আছে জীবনে! লাশগুলো সরিয়ে রেখে জীবন শুরু করতে হবে আবার! পারব তো সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে!

একবার ভেবেছি কতটা লাশ নিয়ে থামবে এই করোনা? কবে ওর মৃত্যুক্ষুধা শেষ হবে কে জানে! আমিহীন আমার স্বজনদের পৃথিবী কিংবা স্বজনহীন আমার পৃথিবী, এ আমি চাইনা। আমি চাইনা একা বেঁচে থাকতে।

ভাবতে পারেন, করোনা চলে যাবে কিন্তু সকালে পাখিরা আর ডাকবে না। ডাকবে শকুনেরা, কুকুরেরা! বাহিরে লাশগুলো নিয়ে বেদম হৈহল্লা করবে তারা৷ আপনার লাশ কিংবা আমার লাশ কিংবা আমার স্বজনদের।

আপনি অসুস্থ, আমি অসুস্থ কিংবা আমার স্বজন! কিন্তু কে চিকিৎসা করবে? ডাক্তাররাও যে করোনার সাথে লড়াই করতে করতে বিদায় নিয়েছে! আমি মরে গেছি কিংবা আপনি, কিন্তু কবর দেবার কেই নেই, জানাজা দেবার কেউ নেই, সৎকার করার কেউ নেই। লাশটাকে যাদের কাঁধে তোলার কথা, তারা নিজেরাও লাশের মিছিলে যোগ দিয়েছে। সামান্য দোয়াটুকু করার কি কেউ থাকবে না!

ভাবুন তো আপনার আলিশান বাড়ি, অনেক দামী গাড়ি পড়ে আছে, আপনি পড়ে আছেন! সুইমিংপুলে কেউ নেই এখন। কেউ আর আমের জুস এগিয়ে দিচ্ছে না। কারণ তারাও বিদায় নিয়েছে।

করোনা চলে গেছে, এখন কি করব আমরা? আবার আমাদের নাইটক্লাবে আনন্দ ফুর্তি করতে চলে যাব? বারগুলোতে মদের বোতলের টুংটাং আওয়াজ পাওয়া যাবে? শরনার্থী শিবিরে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাবে? বিমান হামলা, ক্ষেপনাস্ত্র হামলা সবকিছুই কি আগের মতো চলবে? এতদিনের রক্তক্ষুধা কি একবারে মেটাবো? আমার সম্পদের প্রাচুর্যতা বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় কি আবার নেমে যাব? দলিতদের উপর খড়গ চালানো শুরু করব?

ভোরবেলা যদি ঘুম থেকে উঠে শুনি, করোনা বিদায় নিয়েছে, তাহলে মনে করব বেঁচে গেছি? অমরত্ব লাভ করেছি? আর মরব না?

মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য! করোনায় যদি বেঁচেও যাই, মৃত্যু থেকে বাঁঁচব না। মৃত্যু করোনার থেকেও কাছে হতে পারে, ভেবেছি কখনো?

তবে এমন মৃত্যু চাই না যেখানে আমার প্রিয়জন আমার লাশটা দেখার সুযোগ পাবে না। আমাকে কাঁধে করে গোরস্থানে নিতে পারবে না।।

আমরা একটু সচেতন হই। আমি হয়তো নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করি, এসব তোয়াক্কা করি না। কিন্তু আমার জন্য তো অন্য কারো জীবন যেতে পারে!

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড