• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৪০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কে মালিক? কে কর্মচারী!

  মাহবুব নাহিদ

০৮ এপ্রিল ২০২০, ২৩:৫৬
মাহবুব নাহিদ
মাহবুব নাহিদ

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন "তোমার বেতন হয় ওই গরীব কৃষকের টাকায়" কিন্তু আফসোস হয় এই বাংলাদেশ জানেনা তাদের মাটির ঠিকানা। আমরা জানিনা আমাদের আসল অস্তিত্ব। হয়তো সকলেই একদিন কৃষকের ছেলেই ছিলো। আমাদের দেশের প্রত্যেকটা ধনবান পরিবারকে যদি বিশ্লেষণ করতে যাই, খুব বেশি দূর যেতে হবে না। দুই পুরুষ বা তিন পুরুষ আগে গেলেই দেখা যাবে কৃষক পরিবার। অথচ আমাদের ধনী হবার কত গর্ব, একটু উপরে উঠে গেলে নিচের তলার কাউকে চোখে পড়ে না। কি অদ্ভুদ আমাদের বিচারশক্তি!

মাত্র কয়েকদিন আগে এক এসিল্যান্ড যেভাবে বৃদ্ধ ব্যক্তিদের কান ধরে উঠবস করিয়েছেন তা হৃদয়ে কাঁপন ধরিয়েছে পুরো দেশের। এমন দৃশ্য কেউ দেখতে চায় না। আসলে ওই মহিলা জানেন না যে তিনি কতটা বড় অপরাধ করেছেন! কারণ একজন খেটে খাওয়া মানুষকে শাস্তি দেয়ার আগে তার ভাবা উচিত যে তিনি তার জীবনে কি করেছেন এই মানুষগুলোর জন্য? তিনি হয়তো ভেবেছেন যে তার দায়িত্ব পালনে তিনি যথেষ্ট সফল। তিনি হয়তো তিনি চিন্তা করেছেন এই ছবি ভাইরাল হয়ে তার চাকরি আরো পোক্ত হবে। তিনি হয়তো নিছক চাটুকারিতার জন্যও করেছেন এই কাজ। কিন্তু দেশে এখনও ভালো মানুষ আছে। দেশে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনেক ক্ষমতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং তার সাথে সংবাদ মাধ্যম একটা প্রতিবাদ করেছেন৷ সবাই মিলে একসাথে গড়ে তুলেছেন জনমত। যার ফলে সেই এসিল্যান্ডকে প্রত্যাহারও করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে একজন ডিসিকে দেখা গেলো এর চেয়ে জঘন্য একটি কাজ করতে। তার সেই কাজের বর্ণনা দেয়াও কঠিন।

আসলে তারা এমন কেন করছে? তারা এসব পদে চলে গিয়ে নিজেদের অনেক বড় কিছু মনে করে ফেলছে! মাটিতে পা পড়ছে তাদের। কিন্তু তারা হয়তো ভুলে যায় দেশের জনগণ ছাড়া যে তাদের কোনো মূল্য নাই। তারা যে আমাদের সেবক। মানুষের সেবায় নিয়োজিত হয়ে তাদের উপরই খড়গ চালানোর দুঃসাহস তারা কীভাবে করে!

পঞ্চগড়ের সেই সাংবাদিকের অবস্থা দেখা যাক, কিংবা বরগুনার সেই লোকটি, থানায় যার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে? কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয়, এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?

একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্র থেকে সুবিধা পাওয়া আমাদের অধিকার। যেকোনো বিপদ আসুক, কিছু মানুষ থাকবে যারা মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবে না। তাদেরকে সাহায্য করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সারাদেশ লকডাউন হয়ে যাওয়ার কারণে খেটে খাওয়া মানুষেরা কিছুই করতে পারছে না। তাদের পেটের ক্ষুধা তাও আর লকডাউন হয়নি। ক্ষুধা তো আর অন্য কিছু মানে না। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তারা অবশ্যই রাষ্ট্র থেকে সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে কিন্তু পাচ্ছে কয়জন? সরকার থেকে অনুদান আসে, সেই অনুদান বিভিন্ন হাত ঘুরে তলানি পর্যন্ত আসতে পরিমানও তলানিতে পড়ে যায়। নেতাদের বাড়িতে পাওয়া যায় ত্রাণের সামগ্রী। রাষ্ট্রের মালিকরাই যদি ক্ষুধায় মরে তাহলে এই রাষ্ট্রের কি হবে?

এই যে গার্মেন্টসের শ্রমিকরা, এদের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু তাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে খোলা হলো গার্মেন্টস।মালিকদের জীবন যদি হুমকিতে চলে যায় তাহল রাষ্ট্র থেকে কি লাভ হবে?

আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, জনগণই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তারা রাষ্ট্রের কর্মচারী। তাহলে কেন এত অহমিকা? কেন এই ক্ষমতার বড়াই? নিজের পদকে নিয়ে কেন এত অহংকার? হয়তো তারা জানেই না যে অহংকার পতনের মূল! যে ক্ষমতা জনতার আছে, সেই ক্ষমতা তারা যদি একবার দেখায় তখন ছিটকে পড়বে সকল অসাধু ব্যক্তিরা। জনতার বিস্ফোরণ হবার রাষ্ট্রের মালিকদের সাথে যথাযথ আচরণ করুন, সঠিক দায়িত্ব পালন করুন।

(মতামত বিভাগে প্রকাশিত মন্তব্য একান্তয় লেখকের নিজস্ব)

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড