• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তাদের কোনো ছুটি নাই

  মাহবুব নাহিদ

২৮ মার্চ ২০২০, ১৬:০২
অধিকার
ছবি : সংগৃহীত

উৎসব মানেই আনন্দ, কারণ উৎসব যাদেরই হোক না কেন ছুটি আমরা সবাই পাই। ছুটি যখন ঘোষণা হয়ে যায় তখন তা সবার জন্যই হয়। উৎসবের পাশাপাশি কোনো দুর্যোগ আসলেও একইভাবে সবাই আমরা ছুটি পেয়ে যাই। কিন্তু বিশেষ কিছু পেশা আছে যেই পেশার মানুষেরা ছুটি উপভোগ করতে পারে না। হয়তো কেউ কেউ ছুটি পান, কিন্তু সেই পেশার কাজ কখনো বন্ধ হয় না। অর্থাৎ সবসময় সব উৎসবে তারা ছুটি পায় না। কখনো না কখনো তাদের ছাড় দিতেই হয়। কোনো না কোনো সময় তাদের আনন্দ বিসর্জন দিতে হয়। কারণ তারা দেশের জন্য কাজ করেন, দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন। এমন কিছু পেশার মানুষ আছে যারা ছুটিতে গেলে আমরা আসলেই বিপদে পড়ে যাব।

যেমন ডাক্তার। দুনিয়ায় যত যা কিছু হয়ে যাক ডাক্তাররা কখনোই পুরোপুরি ছুটি নিয়ে নিতে পারবেন না। দেখা যায় একটি হাসপাতালে যত রোগী থাকে তার ওপর ভিত্তি করে ডাক্তারদের ছুটি দেওয়া হয়। সবসময় ছুটি নেওয়ার ক্ষমতা ডাক্তারদের হাতে থাকে না। কারণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ছুটি নির্ধারণ করা হয়। ডাক্তারদের মতো নার্স ও অন্যান্য সবার একই অবস্থা। অর্থাৎ চিকিৎসা পেশার সাথে জড়িত সবার এই একই অবস্থা। তারা চাইলেই ছুটি নিতে পারে না। বিশেষ করে কোনো ইমার্জেন্সি কিছু হলে তো আরও পারে না। জীবন হাতে নিয়েও অনেক সময় তাদের লড়াই করতে হয়। আমরা গত বছর ডেঙ্গুর সময় দেখেছি আমাদের দেশের ডাক্তাররা বীরের মতো লড়াই করেছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাদের।

তবুও তাদের কথা শুনতে হয়। কারণ, ভালো আর মন্দ মিলিয়েই তো মানুষ। পৃথিবীতে সবাই যদি ভালো হতো তাহলে তো পৃথিবীটা কত সুন্দর চলতো। ডাক্তারদের মধ্যেও যে খারাপ নেই তা আমি বলতে চাচ্ছি না। খারাপ অবশ্যই আছে, খারাপ তো সব পেশায়ই আছে। তবে শুধু কেন ডাক্তাররাই কথা শুনবে? আমরা ডাক্তারদের কসাই ও বলতে শুনি। আসলে কিছু খারাপ মানুষের জন্য আমরা পুরো একটা গোষ্ঠীকে তো একইভাবে বিচার করতে পারি না। আমরা সহজেই এতো জাজমেন্টাল যে কেন হয়ে যাই কে জানে! আমি নিজেও হয়তো নিজের পেশায় সঠিকভাবে কাজ করছি না। নিজের টা খারাপ বলবো না আর নিজে কত খারাপ কাজ করি তাও আমরা বলি না। আমরা শুধু পরের টা নিয়েই পরে থাকি। পরের সমস্যা নিয়েই আমাদের বেশি বিশ্লেষণ। কিন্তু এমন তো নাও হতে পারতো। প্রত্যেকে যদি আমরা নিজের সমস্যাগুলোকে নিয়ে কাজ করতাম। নিজের সমস্যাগুলোকে নিয়ে বিশ্লেষণ করতাম, সেগুলোকে সমাধান করার চেষ্টা করতাম তাহলে কিন্তু এমন হতো না।

আজ আসলে সেই বিশ্লেষণে যাচ্ছি না যে কতজন ভালো আর কতজন খারাপ। কারণ আজ তা করার সময় নয়। দেশের এই চরম মুহূর্তে আজ শুধুই লড়াই করার সময়।

পৃথিবীজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে মরণঘাতী করোনা ভাইরাস। সারা পৃথিবী এখন করোনা মোকাবিলায় ব্যস্ত। আমাদের দেশেও করোনা রোগী পাওয়া গেছে, ইতোমধ্যে ৫জন মারাও গেছে। স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের লোকেরা বাসায় বসে অফিস করা শুরু করেছে। হয়তো দেশে জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে বা দেশ লকডাউন হয়ে যেতে পারে। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে লকডাউন করার পরামর্শ দিয়েছেন।

সেহেতু ধারণা করা হচ্ছে হয়তো তেমন পরিস্থিতি হয়েও যেতে পারে। তেমনটা যদি হয় সবাই হয়তো ঘরে বসে নিরাপদে থাকতে পারবে। কিন্তু ডাক্তারদের কি হবে? সেটা কি কেউ ভেবেছে? ডাক্তাররা তো অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েই কাজ করতে হবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যেতে হবে তাদের। ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় তো ছুটিও বাতিল করা হয়েছে তাদের।

এটার অবশ্য অন্য আরেকটা দিক রয়েছে। অনেক জায়গায় এমন দেখা গেছে যে রোগীদের কাছে ডাক্তাররা যাচ্ছে না। এটা নিয়ে অনেকের অনেক ধরনের মন্তব্য। কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছি যে বাঘের সাথে লড়াই করতে কখনো কি আমরা খালি হাতে যেতে পারি? ডাক্তারদেরও তো জীবন। করোনা যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ তাই তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী না থাকলে তারা কীভাবে চিকিৎসা করবে? আমাদের অধিকাংশ মেডিকেলেই তো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কিট নেই। সেগুলো কে দেখবে? আর হ্যাঁ, ডাক্তাররাও হয়তো এতদিন প্রাইভেটে ডিউটি আর চেম্বার করতে করতে এসবের প্রতি খেয়াল দেয়নি। তাই যদি না হবে তাহলে দেশের প্রথম শ্রেণীর মেডিকেল কলেজে নিরাপত্তা মাস্ক নেই তা কেন কেউ খেয়াল করেনি? কোনো ধরণের বড় সমস্যা যে কোনো সময় চলে আসতে পারে তা কী কেউ বোঝেনি? আর করোনা তো এসেছে বহুদিন হয়ে গেছে। আমাদের দেশে নতুন হলেও আশঙ্কা করা হচ্ছিলো যে যেকোনো সময় চলে আসতে পারে করোনা। তাহলে সচেতনতা কেন আসার পরে? আগে আমরা কি করেছি? তাহলে কী এক্সিডেন্ট হবার পর হেলমেট পড়বো?

আর ধরুন, জরুরি অবস্থা হয়েই যায়, আমরা সবাই বাড়ি ঘরে বসে থাকতে পারব কিন্তু সেও অবস্থা কার্যকর করবে কে? এগুলো করতে হলে করবে প্রশাসনের লোকেরাই। তাদেরও কখনো ছুটি হয়না। ছুটি হয়তো হয় কিন্তু ওই সবাই সবসময় পায় না। আমি উৎসবের সময় বাড়িতে যাই, শপিংয়ে যাই, আমাদের নিরাপত্তার জন্য তাদের রাস্তায় লেগে থাকতে হয়। তবে হ্যাঁ, এখানেও অসাধু মানুষের সংখ্যা কম নয়, তবে ভালোও কিন্তু রয়েছে।

এবার দেখুন সংবাদ কর্মীদের কথা ভাবুন। সব ছুটি হয়ে গেলেও আমরা খবর কিন্তু ঠিকই চাইবো। কোথায় কি হচ্ছে জানতে চাইবো। পড়তে চাইবো আবার নিউজও দেখতে চাইবো অর্থাৎ আমাদের খবর পেতে হবেই। আমাদের কাছে খবর পৌঁছে দেয়ার জন্য একদম সংবাদ কর্মী সর্বদা নিয়োজিত থাকে। মাঝে মাঝে হয়তো পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু অনলাইন বা টিভি চ্যানেল কিন্তু বন্ধ হতে পারে না, আর পত্রিকাও খুব বেশি সময়ের জন্য বন্ধ হতে পারে না।

এ তো গেলো দাপ্তরিক কাজের মানুষগুলোর কথা। আমাদের সমাজে এমন আরও কিছু মানুষ আছে যারা কখনোই ছুটি নিতে পারে না। আসলে পেটের দ্বায়ে তাদের ছুটি নেওয়া সম্ভব না, যদিও তাদের ছুটি নিজেদের হাতেই তবুও তাদের ছুটি মেলে না। যারা রিকশা চালায়, রাস্তায় বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে, ফেরী করে তাদের ছুটি মেলে না। ছুটি হলেও খুবই কম। কারণ উৎসবের সময় রিকশা চালালে বা কাজ করলে তাদের উপার্জন বেশি হয়। সেজন্য তারা কাজ করতে চায়। করোনার জন্য যদি সবকিছু বন্ধ হয়েও যায় যারা দিন আনে দিন খায় তাদের কি হবে, একবার ভেবে দেখেছি? তারা কীভাবে তাদের সংসার চালাবে? পেট চালাবে কীভাবে? হয়তো অনেকের না খেয়ে দিন যাপন করতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবশ্যই এই বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। তাদের যেন সমস্যা না হয়। আমাদের সমাজের প্রত্যেকের দায়িত্ব তাদের পাশে দাঁড়ানো। আমরা নিজেরা খাবার মজুদ করছি কিন্তু ওরা তো পারছে না। ওরা কী দিয়ে মজুদ করবে? এটা কখনো কী আমরা ভেবে দেখেছি?

আর হ্যাঁ, এখানেও কিছু অসাধু লোক আছে যারা সুযোগের অপব্যবহার করে অধিক অর্থ উপার্জন করে। তবুও আমরা সবাই যে মানুষ। আর মানুষের মধ্যে ভালো ও খারাপ দুই ই তো থাকবে।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড