• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিদেশফেরতদের জন্যই কি করোনা?

  মাহবুব নাহিদ

২২ মার্চ ২০২০, ১৫:০৭
করোনা
স্ক্যানিং শেষে বিমানবন্দর ত্যাগ করছেন যাত্রীরা (ছবি : সংগৃহীত)

আসলে আমাদের চিন্তা চেতনা বুদ্ধি বিবেক তো গেছে একদম। সে আমরা যতই আধুনিক দেশেই থেকে আসি না কেন। আমরা বাংলাদেশি তো বাংলাদেশিই। যেখানেই যাই আমরা তো আর আমাদের আচরণ বদলাতে পারব না।

পোশাক বদলাতে পারব, বাড়ি বদলাতে পারব কিন্তু চরিত্র কীভাবে বদলাব? এটা কখনোই সম্ভব নয়। আমাদের মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় হয়েছে যার ফলে আমরা আসলে চোখে ভালো কিছু দেখি না। আমাদের হৃদয়, মন ভালো কিছুই ভাবে না। ভাবে না আর করেও না।

অনেকেই এখন বলে বেড়াচ্ছে, যারা বিদেশ থেকে এসেছে তাদের জন্যই করোনা ছড়িয়েছে। আসলে অভিযোগটা কিন্তু ফেলে দেওয়ার মতো নয়। কারণ এখন পর্যন্ত অফিশিয়াল যতগুলো হিসাব দেখানো হয়েছে তার অধিকাংশই বিদেশফেরত কারও সংস্পর্শে ছিল। এটা হচ্ছে একদম নির্মম বাস্তবতা।

এখন কথা হচ্ছে তারা বিদেশ থেকে কেন আসলো? আর আসতেই পারে তাহলে কেন এভাবে আসলো? এসে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তার দায় কার!

আসি ইটালি ফেরতদের হট্টগোল নিয়ে। তারা বিমানে জার্নি করে এসেছে। মানুষগুলোর একটু বিশ্রাম বা খাওয়া দাওয়ার অবশ্যই প্রয়োজন, তার কতটুকু ব্যবস্থা ছিল সেই হজ ক্যাম্পে। এগুলো বিবেচনায় এনেছে কেউ? আগে থেকে কি কোনো প্রস্তুতি নেওয়া ছিল?

মন্ত্রী মহোদয় এদেরকে নবাব বললেন। এই কথাটুকু কতটা যৌক্তিক? তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকায় আমাদের দেশের অর্থনীতি সচল হয়। তারা আমাদের অর্থনীতিতে অনেক বড় একটা ভূমিকা রাখে, অর্থাৎ যারা দেশের বাহিরে থাকে, তারা। তাদের কি আমরা সামান্য সম্মানটুকু দিব না? হুট করে একটা মানুষকে তো ফ্লোরে শোয়ার ব্যবস্থা করে রাখা যায় না। তবে হজ যাত্রীরা কিন্তু ওই একইভাবে এখানে থাকে। সবই মানসিকতার ব্যাপার। যে যেভাবে নেয় আরকি।

বিদেশ থেকে তারা কেন আসল? অনেকেই বাহিরের দেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে। তারাই মূলত ফিরে এসেছে। তারা এই মুহূর্তে না আসলে, সেই দেশে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা সেবা পেতো না। ওই দেশের সরকার থেকে যে সমস্ত সুবিধা দেওয়া হতো সেগুলোও তারা পাবেন না। সেই সমস্ত দিকগুলো বিবেচনা করে দেখলে তাদের তো আসতেই হতো।

বেশিরভাগ লোক এসেছে আবার ইতালি থেকে। ইতালি এখন করোনার দ্বারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ। চীন প্রথমে আক্রান্ত হয়ে চীন এখন অনেকটা ফিরে এসেছে। চীন তাদের অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। আসলে অবস্থা থেকে বের তো একদিন হয়ে আসতে হবেই। কিন্তু তার আগে কতটা ক্ষতি হয়ে যায় সেটা হচ্ছে দেখার বিষয়। ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা চীনকে ছাড়িয়েছে যা আসলেই অবাক করার মতো। তারা এত কেন যে আক্রান্ত হচ্ছে বোঝাও যাচ্ছে না।

অনেকেই এসব দেশ থেকে এসেছে বন্ড সই দিয়ে। অর্থাৎ তারা আর ফিরে যাবে না। দেশের সাধারণ মানুষের কথা হচ্ছে তাদের কেন দেশে ফিরিয়ে আনা হলো। কি প্রয়োজন ছিল দেশে আনার। এখনো কেন ফ্লাইট বন্ধ করছে না! আসলে মানুষের এই প্যানিক হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তিরা যেহেতু বিদেশ ফেরতদের সংস্পর্শে ছিল তাই এই অস্থিরতা। কিন্তু আমরা কি এই অবস্থার বিপরীতে থাকতে পারতাম না।

বিদেশ থেকে যারা আসলো তাদের কেন সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হলো। আমাদের কি এই ক্ষমতা ছিল না যে তাদের আটকে রাখবো। নাকি কোনো প্রস্তুতি ছিল না? তাদেরকে কেন কোয়ারেন্টিনে রাখা হলো না। হোম কোয়ারেন্টিন যে কি জিনিস সেটা কয়জন জানতো? এভাবে তাদের ছেড়ে দেওয়াটা কখনোই ঠিক হয়নি। আমরা কিন্তু করোনা নিয়ে প্রস্তুতির জন্য অনেক সময় পেয়েছিলাম কিন্তু সেই সময় আমরা কাজে লাগাইনি। আমরা একটুও প্রস্তুতি নেয়নি। মাত্র দুইটি কোয়ারেন্টিন আমরা স্থাপন করলাম। এতগুলো ফ্লাইট আসল কিন্তু তাদের কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হলো না। অনেককে শুধুমাত্র জ্বর পরীক্ষা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। খাল কেটে কুমির আনার মতো অবস্থা। এতো মানুষ আসার পরে আমরা বলছি যে হোম কোয়ারেন্টিন না মানলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া।

আগে তো আমাদের জানতে হবে যে এই হোম কোয়ারেন্টিন জিনিসটা কি। কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন এই শব্দগুলোর সাথে তো আমরা পরিচিত নয়। আমাদের এই বিষয়গুলো তো ক্লিয়ার করতে হবে।

সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে যারা বাহির থেকে আসল তাদের মধ্যে ৩০ জন নাকি নিজ স্থানে থেকেছে। আর কাউকে তাদের স্বস্থানে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা কোনো ধরনের নিয়মকানুন মানেননি। এটা আসলেই লজ্জাজনক। বাসায় এসে সবার হাসিখুশি মনে মিশতে তো তাদের বলা হয়নি। তাদের নাকি আত্মীয় স্বজনেরা ফলমূল নিয়ে দেখতেও এসেছে। অনেকেরই মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। কেউ আবার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিয়ে পর্যন্ত করে ফেলেছে।

জোর করে কোয়ারেন্টিনে রাখা কেউ কেউ আবার পালিয়ে গেছে নিজের জায়গা ছেড়ে। কেন কিসের এত তাড়াহুড়া আপনাদের? আপনার শরীরে যে ভাইরাস নেই তা কি করে নিশ্চিত হলেন? দক্ষিণ কোরিয়ার পেশেন্ট ৩১ এর ঘটনা দেখেননি? যিনি একাই অধিকাংশ মানুষকে আক্রান্ত করেছেন। আমাদের দ্বারাও এমন হচ্ছে কিনা সেটা কেন ভাবলেন না আপনারা। কেন আপনার নিজ পরিবারকে মৃত্যুপুরী বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন? শুধু যে পরিবার তা তো নয়। ছড়াবে তো সবার কাছেই। আমাদের মূল্যবোধের এমন অবক্ষয় আমরা চাইনি।

এই আমরাই আবার বাহিরের দেশে খুব সুন্দরভাবে নিয়ম কানুন মেনে চলি। সমস্যা আমাদের দেশে আসলেই। আমাদের অবস্থা হয়ে গেছে যেখানে যেমন সেখানে তেমন। তাহলে তো লাঠিপেটা করে সমুদ্র সৈকত থেকে উঠানোই ঠিক আছে! মানুষ এর মধ্যেও কীভাবে সমুদ্র বিলাস করতে যায়?

আসলে এই যে কোয়ারেন্টিন থেকে পালানো কিংবা সমুদ্রে ঘুরতে যাওয়া এসব কেন যেন আমাদের এই বাংলাদেশ নামের উপত্যকায় শুধু সম্ভব!

মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখা একান্তই লেখকের মত। এর সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।

ওডি/আরএডি

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড