রহমান মৃধা
কারও কোনো বিশেষ গুণ বা কৃতিত্ব অন্যদের দ্বারা প্রশংসিত বা স্বীকৃতি প্রাপ্ত হওয়াকে সম্মান বা রেসপেক্ট বলা হয়।
ভাইরাসও রেসপেক্ট দেখাতে ভুল করেনি গরিব দেশগুলোকে। বাংলাদেশ তিন মাসের বেশি সতর্ক সময় পেয়েছে যা তারা হেলায় হারিয়েছে, সরকারের ঊর্ধ্বতন চামচারা দিব্যি বলছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে থাকতে পারে না।
দেশে কেউ আবার করোনাভাইরাসের ওপর ওষুধ তৈরি করে বিক্রি শুরু করেছে। যেখানে গোটা বিশ্ব এখনও শতভাগ নিশ্চিত নয় এর প্রতিকার কি। হঠাৎ দেখা যাবে স্বল্প সময়ের মধ্যেই হারিয়ে যাবে স্বাভাবিক প্রতিরোধটুকুও। বিপদের সময়টুকুর আন্দাজ করাও কঠিন হবে যদি ভয়াবহ সময়টি এসে পড়ে।
ইতালি, স্পেন ইত্যাদি ইউরোপের উষ্ণতর, আলোকোজ্জ্বল দেশ। সেখানকার ভূপ্রকৃতিতে রয়েছে প্রচুর পাহাড় এবং সাগর। অন্যদিকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া এবং জার্মানি কিছুটা ভিন্ন ধরনের। আবার স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের দেশগুলো আরও ভিন্ন সত্ত্বেও এদের সবার জীবনযাপনে রয়েছে সুন্দর পরিবেশ, সুস্থ খায়, সুস্থ চলে, সুস্থ থাকে।
সামার আসতে বেশি দিন বাকি নেই। পর্যটকদের ভিড়ে দেশগুলো সব সময়ই ব্যস্ত থাকে। বুঝতেই পারছে না যে করোনা সবকিছু এভাবে শেষ করে দেবে। মনে হচ্ছে করোনা সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। এ সময়ে করোনা নিয়ে মাতামাতি করতে কারোও আর ভাল লাগছে না। কিন্তু গোলাম হোসেন উপায় নাই।
করোনা যখন চীনে বিষ বাষ্প ছাড়ছে তখনো গোটা বিশ্ব ছিল নির্বিকার! বাংলাদেশের ভণ্ড মৌলভীরা বলেছে পাপের শাস্তি। সেই পাপ এখন হাটিহাটি পা পা করে সারা পৃথিবীতে।
এখনও অনেক দেশ শাক দিয়ে মাছ ঢাকছে। সেরে যাবে! চলে যাবে! কিছুই হবে না! এভাবে চলছে করোনাকে নিয়ে তামাশা এবং ভণ্ডামি।
শুরুতেই জানা গেল, করোনা গরম, ঠাণ্ডা, সুস্থ, অসুস্থ, পুরুষ, নারী, বুড়ো, গুড়ো, শিশু হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্ট, ইহুদি, আস্তিক নাস্তিক কিছুই মানছে না। করোনার কাছে নেই কোন করুণা। বিদ্যুতের বেগে ছড়াচ্ছে, যাকে পাচ্ছে তাকে ধরছে এবং অনেককে মেরে ফেলছে!
মরার পর কেউ ছুতে পারছে না। দেখতে পারছে না। মরার বুকে আছড়ে-পাছড়ে কাঁদতে পারছে না। জানাজায় লোক হচ্ছে না, ফিউনারেল হচ্ছে না। দাফন হচ্ছে না। চলছে ভয়াবহ সময় সবার জন্য।
আমি সুইডেন থেকে লিখছি। কয়েকদিন হলো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। রাস্তায় তেমন কেউ নেই শুধু দরকারে সবাই বাইরে যাচ্ছে যেমন খাদ্য কেনা, ওষুধ কেনা।
নিজ দায়িত্বে কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মেনে চলছে সবাই, বাংলাদেশের মত বিয়ে, উৎসব, অনুষ্ঠান বা লোকালয়ে ঘোরাঘুরি করছে না কেউ। সব কিছুই কম বেশি খোলা আছে এখানে এখনও যেমন, মুদি দোকান, নার্সারি এবং স্কুল আর ফার্মেসি।
দূরপাল্লার বাস ট্রেন চলছে, শহরের সিটি সার্ভিসও চলছে তবে সতর্কতার সঙ্গে। সকল সরকারি তো বটেই, বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক নেয়া হয়েছে সরকারের আওতায়।
সরকার এবং আমরা সবাই যদি প্রথম থেকে গুরুত্ব দিতাম হয়ত এমনটি হত না। তবে যেমন করে চায়না, সাউথ কোরিয়া, সিংগাপুর রুখেছে তেমন করে সবাইকে রুখতে হবে করোনাকে।
আমাদের কাছে সরকারের অনুরোধ আমরা যেন নিজ বাসায় অবস্থান করি। শুধু মাত্র দরকারে বাইরে যাই। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি নাগরিকের যখন যা লাগে তার জন্য দেয়া নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
যারা অফিস আদালত কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজে নিয়োজিত, অসুস্থ হলে কারও কাজে যেতে হবে না।
ভয় নেই, সবার একাউন্টে মাসিক বেতনের টাকা পৌঁছে যাবে। শুধু তাই নয় যারা বাসাভাড়া নিয়ে বসবাস করছে, সেই ভাড়াও সরকার বহন করবে প্রয়োজনে। আমাদের ভালো রাখাই সরকারের কাজ।
করোনা আজ পুরো দুনিয়ার এক আতংকের নাম সে ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা দরকার।
বাংলাদেশ ভালো থাকুক, সেটা কে না চায়! আমাদের সর্বস্ব সেখানেই। এসব ভাইরাস ব্যাক্টিরিয়ার নাশকতা সম্পর্কে কিছুটা জানি। স্বচক্ষে ইউরোপের দুর্গতিও দেখছি। দেশের সবাই সতর্ক হোন, সরকারকে বলব প্রবাসীদের নিয়ে তামাশা না করে সবার দিকে কড়া নজর দিন। দেশে করোনা শুরু হলে শেষ করা কঠিন হবে। তারপর হাসপাতালগুলো কোনোভাবেই ম্যানেজ করতে পারবে না।
করোনাভাইরাস আমাদের এ শিক্ষাই দিচ্ছে যে, স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের যতদূর সম্ভব স্বনির্ভর হতে হবে। সামগ্রিকভাবে জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে আরও সুলভ করা সম্ভব, তা নিয়েও সক্রিয়ভাবে চিন্তা-ভাবনা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সে ক্ষেত্রে সারা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে করোনার মোকাবেলা করতে প্রস্তুত করা হোক। দেশের সমস্ত ক্যান্টনমেন্টগুলোতে এখনই তাঁবুর মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা শুরু করা হোক। দেশ রক্ষার্থে বাংলাদেশ আর্মীকে করোনার রোগীদের যত্ন নেয়ার কাজে ব্যবহার করা আশু প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
আমেরিকার মত শক্তিশালী দেশও এ যুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করতে পারল না! তাই বেছে নিয়েছে রেসপেক্ট। সবাই তার নিজ নিজ জায়গা থেকে নিয়ম কানুনের প্রতি, পরস্পরের প্রতি রেসপেক্ট দেখান, রেসপেক্ট করুন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড