• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রোকেয়া দিবসের ভাবনা

ক্যাম্পাসের বাসের নাম হোক রোকেয়ার গ্রন্থের নামে

  মেরিনা আক্তার

০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:০৫
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস (ছবি : সংগৃহীত)

ব্রিটিশ-ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিশিষ্ট বাগ্মী ও ইন্দো-অ্যাংলিয়ান কবি ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম নির্বাচিত মহিলা সভাপতি ‘সরোজিনী নাইডু’ রোকেয়া সাখাওয়াতকে লিখেছিলেন, “কয়েক বছর ধরে দেখছি সে আপনি কি দুঃসাহসের কাজ করে চলছেন। মুসলিম বালিকাদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের জন্য আপনি যে কাজ হাতে নিয়েছেন এবং তার সাফল্যের জন্য দীর্ঘকালব্যাপী যে কাজ হাতে নিয়েছেন, তা বাস্তবিকই বিস্ময়কর।”

নারী-পুরুষের সমকক্ষতার যুক্তি দিয়ে নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় আহ্বান জানিয়ে তার লেখনী ‘মতিচূর’ প্রবন্ধগ্রন্থে শিক্ষার অভাবকে নারীপশ্চাদপদতার কারণ বলেছেন কলমের কালিতে শক্ত হাতে। তার লেখা সুলতানার স্বপ্ন নারীবাদী ইউটোপিয়ান সাহিত্যের ক্লাসিক নিদর্শন বলে বিবেচিত হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। বাংলার নারীদের মধ্যে তিনিই প্রতিবাদী কলম ধরেন, সেটা যেন কলম নয় কলুষিত সমাজের এক মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে।

নারীকে পণ্যকরণের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাতে তার লেখার মধ্যে অনেক ধরন খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও আজ নারীজাগরণের কথা বলে অনেকেই নারীকে পণ্য হিসেবেই সহজাত আকারে তুলে ধরছেন; যেটা বেগম রোকেয়ার দেখানো শিক্ষার তুলে ধরা পথ নয়।

এক দিকে নারীর সম্মান বৃদ্ধি নিয়ে টকশোতে তুমুল আলোচনা অন্য দিকে বিজ্ঞাপনের মডেল সেজে অন্য আমি ভগিনীর গান। ৯ ডিসেম্বর তার জন্ম ও মৃত্যুদিবস। একটা রক্ষণশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তার লেখনীতে ঘোষিত হয়েছিল মানুষ হিসেবে ভগিনীদের আত্মসম্মান ও নিজস্ব অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার কথা। যা নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখাতেই।

সেই ১৮৮০ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বেগম রোকেয়ার দেখানো পথে কতটা এগিয়েছি আমরা! নাকি নিজের মত করেই চালিয়ে যাচ্ছি নারী শিক্ষার এরুপ ভাব? যে নারীর দেখানো পথেই আজকের নারী জাগরণ ও টেকসই উন্নয়নের স্বপ্ন দেখি তাকে নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রোকেয়া হল’ থেকে শুরু করে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া ‘বেগেম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যলয়’, রংপুর। যা বলতে গেলে কাজের থেকে নামেই বেশি পরিচিত!

খুব অবাক লাগে, একটা বিশ্ববিদ্যালয় যখন হলো একজন মহীয়সী নারীর নামে অথচ তার নামটাই পেলো না পরিপূর্ণতা। এই যেমন- নামের আগে ‘বেগম’ শব্দটি খুব কমই খুঁজে পাওয়া যায়। আবার তার নামের বানান ছিল অধিকাংশ স্থানে ‘রোকেয়া খাতুন’ এবং ইংরেজিতে তিনি নামের বানান ‘ROQUIAH KHATUN’; যা তিনি নিজে লিখতেন। পরিবারের লোকেরা ডাকতেন ‘রুকু’ বা ‘রকু’ বলে, যা পরে অনেক ব্যক্তিগত চিঠিপত্রেও দেখতে পাওয়া যায়।

যাই হোক সে সব পরের কথা, তার নামে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনন্ত আর কিছু না থাক অন্তত একটা বিভাগ থাকার প্রয়োজন ছিলো। যে বিভাগটির নাম হতে পারতো ‘রোকেয়া স্টাডিজ’। হতে পারতো ‘রোকেয়া গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামে একটি একটা গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান। অন্তত ‘রোকেয়া ফোরাম’ নামেও কিছু একটা হওয়া উচিত ছিলো বৈকি! বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি ভবনের নামও কী ‘মতিচুর ভবন’ হওয়া উচিত ছিলো না? আর একটু হালকা করে বলতেই পারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোর নামও কিন্তু বেগম রোকেয়ার গ্রন্থগুলোর নামে হতে পারে। যেমন- মতিচুর, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী,চাষার দুক্ষু, লুকানো রতন। কৃষ্ণচূড়া রোডে রঙিন বাসগুলোর সাথে নামগুলো কিন্তু বেশ মানাতো!

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এত বছর পরেও একজন মহীয়সী নারীকে নিয়ে যতটুকু না আমরা গীত গেয়ে যাচ্ছি; তা অনেকটা ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নাই’-এর মত। অর্থনীতির মুক্তির স্বপ্নে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনেক। আর সেটা যদি একটা মহীয়সী নারীকে নিয়ে হয় তাহলে কিছুটা হলেও আমাদের দায়বদ্ধতা থাকে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জন করে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে আমরাই কেবল রোকেয়া-রোকেয়া বলে গলা ফাঁটিয়ে যাচ্ছি। অথচ রোকেয়া মানে নারী শিক্ষা, রোকেয়া মানে নারী জাগরণ, রোকেয়া মানে টেকসই উন্নয়নের কৌশল!

আগামীকাল সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এই মহীয়সী নারীর জন্ম ও মৃত দিবস, পরিবর্তনের আশায় পালিত হোক টেকসই উন্নয়ন ধারার পোক্ত ‘বুনিয়াদ’।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

ওডি/এমআই

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড