রহমান মৃধা
বিদেশে অধ্যয়ন (study abroad) ছাত্রজীবনের এক বিশেষ আকাঙ্ক্ষা যা শুধু বাংলাদেশিদের নয়, এ স্বপ্ন রয়েছে বিশ্বের সকল দেশের শিক্ষার্থীদের।
টিনেজ বয়সে ড্রাইভিং লাইসেন্স (১৬-১৮ বছর বয়সসীমার মাঝে) নেয়া, অন্য দেশে গিয়ে তাদের ভাষায় পড়াশোনা করা, সেই দেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করা, তাদের খাদ্য খাবার এবং ট্র্যাডিশনের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, সব মিলে নতুন এক উত্তেজনা পূর্ণ জীবন যা শুধু “full of excitement”- এ ভরা। একদিকে নিজের প্রিয়জন, স্বজন এবং দেশ ছাড়ার আশঙ্কা, অন্যদিকে নতুন কিছু পাওয়ার প্রতীক্ষা, যা এক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এ শুধু অনুভবের মাঝে এক অনুভূতির প্রতিচ্ছবি।
জানিনা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আবেগ প্রবণতা কেমন বর্তমান সময়ে। তবে ইউরোপের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব খুবই আনন্দের। সুইডিশ শিক্ষার্থীরা আমেরিকায় পড়াশুনো করতে পছন্দ করে। এদের ইংরেজি ভাষার ওপর ভাল দক্ষতাসহ এর অ্যাকসেন্ট সুন্দর। এরা আমেরিকার অনেক কিছুই পছন্দ করে। যেমন হলিউডের বিলাসবহুল গ্ল্যামার জীবন তার মধ্যে অন্যতম।
সর্বোপরি নৌকায় করে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ১৮০০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ১৯২০ এর দশকের গোড়ার দিকে সুইডেন থেকে উত্তর আমেরিকায় প্রায় ১.৫ মিলিয়ন সুইডিশ দেশ ছেড়ে মূলত যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছিল। ধীরে ধীরে অভিবাসীদের প্রায় এক পঞ্চমাংশ সুইডেনে ফিরে আসে। তারপরও মাইগ্রেশনের কারণে অনেকের পূর্বপুরুষরা সেখানে রয়ে গেছে যা সুইডিশ নতুন প্রজন্মদের আগ্রহের আরেকটি কারণ।
সুইডেনে যারা ন্যাশনাল লেবেলে খেলাধুলা করে তারা আমেরিকান স্কলারশিপ নিয়ে কলেজ জীবনের ৩-৪ বছর পার করার একটি ভালো সুযোগ পায়। খেলাধুলোর সঙ্গে প্রশিক্ষণের একটি ভাল ব্যবস্থাও রয়েছে। আমার ছেলে এবং মেয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধু্লা বেছে নিয়েছে বিধায় তাদের জন্য আমেরিকার স্কলারশিপ দরজা খোলা রয়েছে।
ছেলে জনাথান তার সুযোগ ইচ্ছে করে না করেছে কয়েক বছর আগেই। কিন্তু আজ মেয়ে জেসিকা কলেজ থেকে বাড়িতে এসেই তার বৃত্তির (scholarship) ব্যবস্থা হয়েছে আমেরিকায় জানালো। সে এর ওপর বেশ আগ্রহ দেখিয়ে সেখানে পড়াশোনা করবে বলে আমাকে রাজি করানোর চেষ্টা করে। আমি বিষয়টির ওপর তেমন আগ্রহ না দেখানোর কারণে সে বেশ মনক্ষুন্নও হয়েছে এবং নানা ধরনের যুক্তি দেখিয়েছে।
আমি মনে করি জেসিকা বাড়িতে থেকেই স্টকহোমের কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কেনো তাকে আমেরিকায় যেতে হবে? সে আমাকে নানাভাবে মোটিভেট করতে উঠেপড়ে লেগেছে। যেমন বলেছে, বাবা তুমিও তো বাংলাদেশ ছেড়ে সুইডেনে পড়তে এসেছিলে? ও বুঝতে পারছে না বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট সুইডেন থেকে ভিন্ন। তবে সে জানে তার বাবার দেশ গরীব কিন্তু তার ধারণা শিক্ষায় তার বাবার দেশ অনেক ভালো। তা না হলে আমি কিভাবে সুইডেনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি বা আমার বড় ভাই এখানকার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর ইত্যাদি।
সে এও বলছে আমি যখন সকল সুবিধা পেয়ে পড়াশোনার সঙ্গে টেনিস খেলারও সুযোগ পাচ্ছি, কেন তুমি না করছো? জেসিকার কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে সমস্যা হচ্ছে স্বত্বেও কেনো যেন মনে হচ্ছে সুইডেন ছেড়ে কেন আমেরিকায় লেখাপড়া করতে যাওয়া?
হয়তবা যেভাবে আমি স্বপ্নের জাল বুনেছিলাম বিদেশে অধ্যয়ন করার জন্য, সেও তেমনি করে ভাবছে। তবে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে তুলনা করলে জেসিকা এবং আমার সময়ের মাঝে। যেমন আমি তার মত করে ঐ বয়সে বিশ্ব ভ্রমণ করিনি যা সে করেছে টেনিস খেলার মধ্য দিয়ে। তার বয়স যখন মাত্র ছয় দিন সেই থেকে আমেরিকা ভ্রমণ করে আসছে সে। আজ অবধি কতবার সেখানে আসা যাওয়া করেছে তার কোন হিসাব নেই। তারপরও কেনো বিদেশে অধ্যয়ন! জেসিকার চিন্তা-চেতনা আমাকে মনে করিয়ে দেয় সেই ১৯৮৫ সালের স্মৃতি। আমিও তো সব ছেড়ে একদিন স্বপ্ন দেখেছিলাম উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ যাত্রার। হয়তবা আমার মত করে তারও মনে ধরেছে কল্পনার এক স্পর্শ যা তাকে একজন আদর্শ এবং বিশ্ব নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড