মাহবুব নাহিদ
কলকাতার সল্ট লেকের স্টেডিয়ামে হাজার হাজার ভারতীয় দর্শকদের নীরব করে দিয়ে বাংলাদেশকে ১-০ গোলের লিড এনে দিলেন সাদ উদ্দিন। কেঁপে উঠেছে পুরো বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ভারতের সাথে জিততে জিততে ড্র হয়ে গেলো। শেষ মুহূর্তে হারা আমাদের জন্য একটা নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে, হোক তা ক্রিকেট কিংবা ফুটবল। এবার বাংলাদেশ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলছে।
কয়েকদিন আগে এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন কাতারের সাথে ২-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু হারলেও জয় করেছে বাংলাদেশের কোটি ভক্তের হৃদয়। কাতারের মতো দলে সাথে লড়াকু মনোভাব দেখিয়ে বাংলাদেশ জানান দিয়েছে যে আমরাও পারি। জিতে গিয়েছিল ভারতের সাথেও। ওদের মাঠ থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে আসাও কম কথা নয়। আর দুইটি পেনাল্টি না পাওয়ার আক্ষেপ থেকেই যাবে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এখনো বেশ কয়েকটি খেলা বাকি রয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের বর্তমান পারফর্মেন্সে খুশি পুরো দেশ। এই এগিয়ে যাওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান কোচ জেমি ডে এবং দলের কাপ্তান জামাল ভুঁইয়া, সাথে অন্যান্য সবার দারুণ একটা যোগাযোগ।
কোনো খেলায়ই একদিনে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। তিল তিল করে গড়ে ওঠে একটা দল। বাংলাদেশ দল ইদানীং এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা স্বপন দেখা শুরুও করেছি। তবে এই এগিয়ে যাওয়ার পথে বহু বাধা অতিক্রম করতে হবে। পাড়ি দিতে হবে অথৈ সাগর। লড়াই করতে হবে বুক চিতিয়ে। বাংলাদেশ বিশ্বকাপের প্রাক বাছাই খেলার সময়ই মাঠে দর্শক আসা শুরু করেছে। আর এখন তো ভরে যায় গ্যালারী। দর্শক মাঠমুখী হলে এমনিতেই খেলায় একটা আলাদা মাত্রা পেয়ে যায়।
বাংলাদেশের মানুষ যে ফুটবল প্রেমী তা বিশ্বকাপের সময় টের পাওয়া যায়। আমাদের দেশে যে পরিমাণ বিদেশী পতাকা ওড়ে তা দিয়ে বোঝা যায় ফুটবল আমাদের কাছে কতটা প্রিয়। আবার সেই সকল ফুটবল প্রেমীদের মাঝে যে দেশের ফুটবলও আছে এবার টের পাওয়া গেলো। আসলে কি মানুষের আগ্রহ দিয়ে কিছু হয়? সত্যি কথা বলতে অনেক কিছুই হয়। কারণ মানুষের ভালোবাসা সাথে নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এতদূর এসেছে আজ। যেহেতু মানুষের ভালোবাসা আজও ফুটবলের প্রতি আছে তাই ফুটবল কর্তাদের উচিত ফুটবল নিয়ে ভাবা। একটা সিস্টেম ব্যাহত হলে সেটা তো সিস্টেমের দোষ না, আমাদের উচিত আমাদের ফুটবল কে নতুন করে ঢেলে সাজানো। একদম গোঁড়া থেকে সাজিয়ে আসতে হবে। বয়স ভিত্তিক দলের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। জেলাভিত্তিক টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিত্তিক খেলা আয়োজনেও ভালো ফলাফল আসে। কেন্দ্রীয়ভাবে একটা ফোর্স থাকবে যারা সারাদেশ থেকে খেলোয়াড় খুঁজে খুঁজে আনবে। সেখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির দল থাকবে, তাদের আলাদা আলাদা ট্রেনিং হবে। আর আমাদের মধ্য থেকে বেছে বেছে কিছু ভালো খেলোয়াড় বিদেশী ভালো ভালো ক্লাবে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো উচিত। অবশ্য চাইলেই বিদেশী ক্লাবের একাডেমী আমাদের দেশেই করা সম্ভব। আর এদের হাতে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প ধরিয়ে দিতে হবে।
এই ধরণের কার্যক্রমের অনেক কিছুই আমাদের দেশে রয়েছে কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকলে আসলে কোনো কিছুই সফল হবে না। আমাদের প্রয়োজন বেশি বেশি স্টেডিয়াম তৈরি করা। খেলার জায়গা না থাকলে খেলোয়াড় তো তৈরি হবে না। সামনে আমাদের দেশে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল সহ বড় দলের খেলা হবার কথা আছে। এই ধরণের খেলায় অবশ্যই খেলার সাথে সংশ্লিষ্ট সবার আহ্রফ বাড়াবে।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের মূল সমস্যা হয়ে দাড়ায় ফিটনেস নিয়ে। তাই আর যাই হোক আমাদের ফিটনেস নিয়ে প্রচুর কাজ করতে হবে। অবশ্য আমরা যতোই বিভিন্ন সিস্টেমে আগানোর কথা বলি তাতে কোনো কাজ হবে না যদি না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এতে হাত না দেয়। আর যারা ফুটবল নিয়ে কাজ করে তাদের জ্ঞানও আমাদের চেয়ে বেশি আছে।
উন্নতি করার জন্য তারা আমাদের চেয়েও ভালো কিছু ভাবতে পারবে। সবার আগে উচিত তাদের স্বদিচ্ছা এবং যথাযথ উদ্যোগ। তারা যদি একদম ঢেলে সাজানোর জন্য মাঠে নেমে পড়ে তাহলে সাপোর্ট দেয়ার জন্য বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমী মানুষ প্রস্তুত আছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড