• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

এমপি আসলামের কথা শোনেনি বিআইডব্লিউটিএ

  মনিরুল ইসলাম মনি

০৪ মার্চ ২০২০, ১৯:৪৮
আসলামুল হক
পাওয়ার প্ল্যান্টে উচ্ছেদ অভিযানের সময় ঘটনা স্থলে যান সংসদ সদস্য আসলামুল হক (ছবি : দৈনিক অধিকার)

রাজধানীর বসিলা সেতুর পশ্চিমে বুড়িগঙ্গার তীরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দেন ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক। কিন্তু তার নির্দেশ না মেনেই উচ্ছেদ কাজ অব্যাহত রাখে বিআইডব্লিউটিএ।

বুধবার (৪ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে তা বন্ধের নির্দেশ দেন প্রভাবশালী এই এমপি।

এ সময় এমপি আসলামুল উচ্ছেদ অভিযানের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, যৌথ জরিপের কাগজ দেখিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরির সময় বিআইডব্লিউটিএ আমাকে একটি অনাপত্তিপত্র দিয়েছিল। কিন্তু তারাই আবার বিনা নোটিশে আমার জায়গার স্থাপনা উচ্ছেদ করছে।

এমপির এমন অভিযোগ সত্য নয় উল্লেখ করে ঘটনাস্থলেই বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদী বন্দর) এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, এমপি আসলামুল হককে যে জায়গা ব্যবহারের অনাপত্তি দিয়েছেন, সেই জায়গা বাদ দিয়ে আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছি।

এর আগে মঙ্গলবার (৩ মার্চ) বসিলার চর ওয়াসপুরে উচ্ছেদের শুরুতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন মাইশা পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেডের মালিক এমপি আসলামুল হক। তার স্থাপনা বৈধ বলে তিনি দাবি করেন। তবে আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করবেন জানিয়ে তিনি ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান।

বুধবার (৪ মার্চ) সকাল থেকে পুনরায় একই স্থানে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। সকাল সাড়ে ১০টায় আবারও সেখানে উপস্থিত হন সাংসদ আসলামুল হক। পরে সাড়ে ১১টার দিকে তিনি অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুর রহমান হাকীমের সঙ্গে কথা বলেন।

পরে জরিপের ব্যাপারে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন, এমপি আসলামুল হক। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৭ দিন বা ২২ দিনে তারা (বিআইডব্লিউটিএ) যে জরিপটি সম্পন্ন করেছিল আমি সেটি দেখতে চেয়েছি। তারা কিন্তু আমাদেরকে সেটি দেখাচ্ছে না। সেই জরিপে আমাদের এই অংশটি নেই।

তিনি আরও বলেন, সুতরাং একটি প্রতিষ্ঠান যেহেতু আমাকে অনাপত্তিপত্র দিয়ে এটি নির্মাণ করার অনুমতি দিয়েছেন, সেখানে আবার হঠাৎ করে এটিকে উচ্ছেদ করার এই পরিকল্পনা কেন করল, সেটাই বুঝলাম না। মন্ত্রণালয় থেকে জরিপ করলেন। সেই জরিপটা দিয়েই তো আমাকে উচ্ছেদ করতে হবে। যদি সেখানে অবৈধ থাকে।

বিআইডব্লিউটিএ কোনো নোটিশ না দিয়ে উচ্ছেদ করছে জানিয়ে এমপি আসলামুল বলেন, উচ্ছেদ করে ফেলেছে এটাই শেষ নয়। উচ্ছেদের আগে তারা আমার প্রতিষ্ঠানকে কোনোই নোটিশ দেয়নি। জরিপের কাগজ দিয়ে আমাকে মেপে বুঝিয়ে দিতে হবে। আমি এটার স্থায়ী সমাধান চাই।

দেশের সংবিধান অনুযায়ী ভূমিদস্যুরা জনপ্রতিনিধি হতে পারবেন না। উচ্ছেদকৃত জায়গা অবৈধ দখল প্রমাণিত হলে এমপি পদ থেকে আসলামুল হক পদত্যাগ করবেন কী না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি যখন প্রমাণ হবে, তখন দেখা যাবে। আগে জরিপটা হোক। আমি এই প্রশ্নের উত্তর এখন দেব না।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিকার চাওয়ার আভাস দিয়ে এমপি আসলামুল হক বলেন, আমি প্রতিকার তো চাইতেই পারি। সকল মন্ত্রণালয়ে আমি প্রতিকার চাইতে পারি।

এদিকে, বুধবার (৪ মার্চ) নদী উদ্ধারের ১৯তম দিনে ২ হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের দুটি পাকা ব্যাংক প্রটেকশন, ১ হাজার রানিং ফুট আকারের তিনটি পাকা দেয়াল, ১০টি অন্যান্য স্থাপনাসহ মোট ১৫ টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পাশাপাশি অপসারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার ঘনফুট মাটি ও বালি।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুর রহমান হাকীমে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করছি। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন সিএস নকশা অনুযায়ী যে পরিমাণ জমি অবৈধভাবে নদীর জায়গা দখল করেছে তা উচ্ছেদ করার জন্য। আমাদের সার্ভে টিম সিএস নকশা অনুযায়ী দাগ দিয়ে গেছে। আমরা সে অনুযায়ী উচ্ছেদ করছি। আমাদের যখন সার্ভে হয়, পরিমাপের সময় উনি (আসলামুল হক) উপস্থিত ছিলেন।

নদী দখলের কারণে এমপি আসলামুল হকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে সরাসরি মামলার কথা বলা না থাকলেও আইন অনুযায়ী, দখল উচ্ছেদ এবং উদ্ধারে ব্যয়ের অর্থ দখলদারের থেকে আদায় করার বিধান রয়েছে।

এ ব্যাপারে সংস্থাটির যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদী বন্দর) এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, এ জায়গাটি কিন্তু নালভূমি। জলাধার আইন ২০০০ অনুযায়ী, নদীর জায়গা বা নালভূমি ভরাটের কোনো সুযোগ নেই। এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। পাশাপাশি ১৯৯৫ সালের পরিবেশ আইন অনুযায়ী নদীর জায়গা ভরাট করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মাইশা পাওয়ার মালিক সাংসদ আসলামুল হকের দাবি, তিনি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। এ বিষয়ে আরিফ উদ্দিন বলেন, আমরা যে জায়গাটির ছাড়পত্র দিয়েছি। সেটি এর আওতাভূক্ত নয়। আমরা ফার্নিশ ওয়াল আনার জন্য একটি পাইপলাইন জেটির ছাড়পত্র দিয়েছি মাত্র। কিন্তু সেটি এই বর্ধিত অংশে নয়। এই বর্ধিত এলাকা তিনি নতুন করে ভরাট করেছেন।

আরও পড়ুন : মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ আউয়ালের

তিনি আরও বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত সমন্বিত কমিটির সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তের আলোকেই এটিকে চিহ্নিত করা হয়। যার কারণে গত মঙ্গলবার থেকে আমরা এখানে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বুড়িগঙ্গা নদীর তৃতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু (বসিলা ব্রিজ) সংলগ্ন চরওয়াসপুর এলাকার মাইশা পাওয়ার প্ল্যান্টের একটি অংশে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। সংস্থাটি জানায়, মাইশা পাওয়ার প্ল্যান্ট দৈর্ঘ্যে ১৫০ ফুট ও প্রস্থে ১ হাজার ফুট পর্যন্ত হারে মোট ৫ একর নদীর জায়গা দখল করেছে। দখল করা জায়গা উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান চলমান রাখবেন বলে জানান তারা।

ওডি/এমআই/টিএএফ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড