• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ (২৪তম পর্ব)

  রিফাত হোসেন

২৪ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:৩২
গল্প
ছবি : প্রতীকী

অতঃপর রেকর্ড অন করল সায়েম। কিন্তু যেটা শুনল, সেটার জন্য ও একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। একেবারে থতমত খেয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। ফোনটা নামিয়ে রাফার দিকে তাকালো। রাফার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি দেখতে পেলো সায়েম। কিন্তু ও বুঝতে পারল না এটা রাফার জেগে থাকা হাসি, নাকি ঘুমের ঘোরের হাসি।

সায়েম রাফার কাছে এলো। রাফাকে টেনে বসিয়ে দিলো। রাফা ঘুমের ভান করে সায়েমের কাঁধে মাথা রাখল। সায়েম ওর কাঁধ থেকে মাথাটা সরিয়ে দিয়ে রাগী কণ্ঠে বলল, ‘রাফা নাটক বন্ধ করে আবার প্রশ্নের উত্তর দাও। আমি যে তোমার ফোন চেক করব সেটা তুমি জানতে, তাই না? সেজন্য সব কল রেকর্ড ডিলিট করে দিয়ে একটা গানের রেকর্ড করে রেখে দিয়েছিলে।’

রাফা ঘুমন্ত কণ্ঠে একটা শব্দ করল শুধু। সায়েম বলল, ‘ফাজলামি বন্ধ করে আমার উত্তর দাও রাফা। নাহলে তোমার ১৩ টা বাজিয়ে দিবো।’

রাফা এক চোখ মেলে বলল, ‘এখন তো ১.০০টা বাজে। ১৩টা তো অনেকক্ষণ আগে পেরিয়ে গেছে। এত দেরি করলে কেন বলো তো? আবার কালকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

রাগে সায়েমের রক্ত মাথায় ওঠে গেল। রাফাকে ওয়ার্নিং দিয়ে বলল, ‘শেষ বারের মতো বলছি ফাজলামি না করে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।’

এক চোখ খোলা রেখেই রাফা বলল, ‘কে তুমি।’

- সায়েম।

- সেটা আবার কোন শালা?

সায়েম বিরক্তিকর মুখে বলল, ‘তোমার বর।’

রাফা হঠাৎ তড়িঘড়ি করে সোজা হয়ে বসল। সায়েমের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সত্যি বলছ। তার মানে স্বীকার করছ তুমি আমার বর। ওয়াও, দ্যাটস গ্রেট। উম্মম্মাহ সুইটহার্ট।’

সায়েম বিব্রত হলো। কিন্তু পরক্ষণেই প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল, ‘থাপ্পড়িয়ে দাঁত ফেলে দিবো। বল কি প্ল্যান করছ তোমরা? কার ক্ষতি করার চেষ্টা করছ? সত্যি বলছি রাফা, সারার কিছু হলে আমি তোমাকে ছাড়বো না।’

রাফা হেসে দিয়ে বলল, ‘পাগল নাকি? মানুষ কি কখনো তাদের সিক্রেট প্ল্যান কাউকে বলে। বিশেষ করে যখন প্ল্যানটার সাথে সেই ব্যক্তিটির সম্পর্ক খুবই গভীর?’

সায়েম কৌতূহলী হয়ে বলল, ‘কি বলতে চাচ্ছা তুমি?’

- আমি এটাই বলতে চাচ্ছি যে, আমরা কি প্ল্যান করেছি সেটা তোমাকে বলব না। কখনোই না। সময় মতো হয়তো তুমি নিজেই বুঝতে পারবে।

- বাট ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে যাবে।

- ঠিকই বলেছ৷ ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে যাবে।

- আমি তো সেটা হতে দিবো না রাফা। তুমি বলবে নাকি আমি তোমাকে বাধ্য করব?

- তুমি আমাকে বাধ্য করবে! হাসালে মিস্টার সায়েম। ভুলে যেও না আমি সবসময় তোমার এক লাইন উপর দিয়ে চলি। তুমি যেটা করবে বলে ভাবো, আমি সেটা অলরেডি করে ফেলি। কি আর করবে তুমি? খুব বেশি হলেও আমাকে অত্যাচার করা ছাড়া কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু আমাকে অত্যাচার করে তুমি যাবে টা কোথায়? আমি তো তোমার বিরুদ্ধে স্ত্রী নির্যাতনের মামলা করব।

- হোয়াট?

- ইয়েস মাই ডেয়ার স্বামী। সুতরাং থাপ্পড় না দিয়ে একটু ভালোবাসা দাও। তোমার এই শক্ত হাত দিয়ে আমার গালে দাগ না বসিয়ে, তোমার নরম ঠোঁট জোড়া দিয়ে আমার ঠোঁটে দাগ বসাও।

সায়েম রাফাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। রাফা বিছানায় শুয়ে হাসতে লাগল। সায়েম ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, নোংরামির একটা লিমিট থাকা দরকার রাফা। তুমি খুব ভালো করেই জানো তুমি আমাকে পাবে না। তবুও তুমি নিজের শরীর দেখানোর চেষ্টা কর আমাকে। আমার সাথে নোংরামির চেষ্টা কর। আত্মসম্মান বলে যে তোমার মধ্যে কিছুই নেই, সেটা আমি ভালো করেই জানি। কিন্তু শত হলেও তুমি একটা মানুষ। আর প্রতিটি মানুষের মধ্যেই বিবেক বলে একটা জিনিস থাকে। আমার সন্দেহ হয় তোমার ভিতরে এই বিবেকবোধ আছে কি-না।’

রাফা হেসে দিয়ে বলল, ‘তুমি যখন সারা আপুকে জড়িয়ে ধর, তখন কিছুই হয় না। যখন তার সাথে চুমোচুমি কর, তখনও কিছুই হয় না। তোমরা করলে সব ঠিকঠাক, আর আমি করলেই নোংরামি। আমি আত্মসম্মানহীন। আমি বিবেকহীন। তাই না মিস্টার সায়েম? আচ্ছা বলতে পারো, কীসের ভিত্তিতে তুমি এত শিওর হচ্ছ যে, তোমার আর সারা আপুর বিয়ে হবে? আমি তোমাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ করছি সায়েম, সারা আপুকে আর তোমাকে আমি এক হতে দিবো না। এর জন্য যতটা নৃশংস আমাকে হতে হয়, আমি হতে রাজি আছি।’

- আমি তোমাকে জেলে ঢুকিয়ে ছাড়বো।

- আমাকে জেলে ঢুকানোর মতো প্রমাণ কি আছে তোমার কাছে? ওহ হ্যাঁ, আমার ফোনটা তুমি নিয়ে যাও। এই ফোন কল রেকর্ডটাই তো তোমার একমাত্র প্রমাণ এখন, তাই না? যাও যাও এটা পুলিশের হাতে তুলে যাও। পুলিশ এটা শুনে বলবে, কি মিস্টার সায়েম, বউকে জেলে ঢুকানোর প্রমাণের জায়গায় আপনি সানি লিওনের নাম শোনাচ্ছেন আমাদের।

সায়েম আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না ওখানে। দরজাটা আটকে দিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে এলো। বাকি রাতটা এভাবেই নির্ঘুমে ছটফট করতে করতে কাটালো।

শুক্রবারের দিনটা বাড়িতেই কাটলো ওদের। আজ শনিবার। ইতি সেজেগুজে হাজির হয়েছে ড্রয়িংরুমে। সায়েম ড্রয়িংরুমেই ছিল। ইতিকে দেখে বলল, ‘সাবধানে যাস। আর তোর বসের নম্বর দে।’

ইতি মিস্টার চৌধুরীর নম্বর দিলো সায়েমকে। সায়েম বলল, ‘আর একটা নম্বর দে। এটা যদি বন্ধ পাই, তাহলে ওটায় ফোন দিতে পারব। কারণ যেখানে যাচ্ছিস, সেখানের অবস্থা কেমন সে তো আমি জানি না। তোর নম্বর ও ফোন না ঢুকলে এটায় দিতে পারব। কিন্তু এটায় যখন ঢুকবে না, তখন কি করব আমি? বুঝতেই পারছিস এই প্রথম তুই আমার চোখের আড়ালে কোথাও যাচ্ছিস। তোর কিছু হলে আমিও ফিনিশ।’

ইতি এক মিনিট চুপ থাকল। তারপর কিছু একটা ভেবে রোদের নম্বরটা দিয়ে দিলো। রোদের নম্বর অফিসে জয়েনিং এর দিনই নিয়েছিল। কিন্তু এই পর্যন্ত কাজে লাগেনি একবারও। ইতি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর সায়েম চেয়ারে বসে নম্বর দু'টোর দিকে তাকালো একবার। হঠাৎ একটা নম্বরের দিকে এর চোখটা স্থির হয়ে গেল। হার্টবিট থমকে গেল কিছু মুহূর্তের জন্য। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল স্ক্রিনে থাকা নম্বরটার দিকে। হঠাৎ দরজার দিকে তাকিয়ে ভ্রু-কুঁচকে বলল, ‘কার নম্বর এটা? কোথায় যেন দেখেছিলাম মনে হচ্ছে। যদিও অনেক নম্বরই আছে, যার দুই তিনটা ডিজিট ব্যতীত অন্যগুলো মিলে যায়। কিন্তু এটা কার নম্বরের সাথে মিলে যাচ্ছে?’

সায়েম ফোন রেখে দিয়ে নিজের চুলগুলো খামচে ধরল। স্মৃতি শক্তিতে অনেক চাপ দিয়েও কোনো লাভ হলো না। কিছুতেই মনে পড়ল না এই নম্বরটা কার নম্বরের সাথে মিলে যাচ্ছে। একসময় ব্যর্থ হয়ে ওঠে দাঁড়াল ও। কাল রাতেও সায়েম ড্রয়িংরুমে শুয়েছিল। সেই রাতের পর থেকে সায়েম আরো বেশি করে রাফাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে। কিন্তু অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে হলে ঘরে যেতেই হবে। তাই সায়েম আবার কোনো দ্বিধা না করে ঘরে গেল। ঘরে গিয়ে দেখল রাফা গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে বিছানায়। ইতি আজ তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেছে। সেজন্য রাফাকে আজ আর ডাকেনি। আর এই মেয়েটাও নিজে থেকে ওঠেনি। সায়েমের খুব রাগ হলো। যে ব্যক্তি নিজের ঘরে আসতেও সংকোচবোধ করে, তার থেকে অভাগা আর কে আছে পৃথিবীতে। সায়েম মনে করে ও সেই অভাগা। নাহলে নিজের ঘরে আসতে হলে এত ভাবতে হতো না। কিন্তু রাফাকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাকই হলো সায়েম। সাধারণত রাফা এইসময় শুয়ে থাকে না। সকাল হলেই নানানরকম কাণ্ড করে বাড়ির মাতিয়ে রাখে৷ কিন্তু আজ একদম চুপচাপ। কয়েক মিনিটের জন্য সায়েমের মনে হলো বাড়িতে ও ছাড়া কেউ নেই। রাফাও নেই বাড়িতে। কিন্তু না, রাফা শুয়ে আছে ওর সামনে। একদম গুটিশুটি মেরে। সায়েমের মনে হচ্ছে রাফা মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে। ও ভয়ে ভয়ে বিছানায় ওঠে রাফার পাশে গিয়ে বলল, ‘রাফা।’

রাফা কোনো সাড়া দিলো না। সায়েম লক্ষ্য করল রাফা ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছুটা ‘হা’ করে নিশ্বাস নিচ্ছে। সায়েমের ভয়টা যেন বেড়ে গেল কয়েকগুণ। ঝুঁকে রাফার দুই গালে হাত দিলো। আর তখনই হাতে প্রচণ্ড গরম তাপ অনুভব করল। সায়েম যেন আতঙ্কে উঠল রাফার গালে হাত দিয়ে। পুরো শরীরের দিকে ভালো করে তাকালো একবার। রাফা আধো-আধো চোখে তাকিয়ে আছে সায়েমের দিকে। সায়েমের মনে হচ্ছে রাফার শরীর খুবই দূর্বল। ও রাফার পিছনে হাত দিয়ে রাফাকে বসানোর চেষ্টা করল। রাফা সায়েমের গলা জড়িয়ে ধরে বাথরুমের দরজার দিকে হাত তাক করে দেখালো। সায়েমের আর বুঝতে বাকি রইল না কী হয়েছে। রাফা নিশ্চয়ই অনেকক্ষণ সময় নিয়ে গোসল করেছে। যার ফলস্বরূপ ওর জ্বর এসেছে। এখনো সেই ভেজা জামা-কাপড় পরে আছে। সায়েমের ইচ্ছে করছে রাফার গালে কয়েকটা থাপ্পড় দিতে। এই মেয়ের সবসময়কার ফাজলামি ওকে বিরক্ত করে তুলেছে৷ কিন্তু আজ কেন জানি কষ্ট হচ্ছে ওর।

সায়েম রাফাকে বলল, ‘তুমি একটু অপেক্ষা কর। আমি গাড়ি ঠিক করে আনছি। তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।’

রাফা সায়েমের হাতটা ধরে বলল, ‘ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না সায়েম। আমাকে আধ ঘন্টা সময় দাও। আমি জানি এর মধ্যেই আমার জ্বর চলে যাবে। তুমি তো জানো আমার প্রতিদিন নিয়ম করে জ্বর আসে। আসলে যখনই বৃষ্টিতে ভিজি, তখনই জ্বর হয়। আজ বৃষ্টিতে ভিজিনি অবশ্য, তবে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে গোসল করেছি। এইসবের জন্য আমি নিজেই দ্বায়ী।’

- আর এই যে ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছ, এর কারণ কী?

- আমার শ্বাসকষ্ট এর রোগ আছে। এটা ঠিক রোগ বলা যায় না৷ কারণ জ্বর এলেই এই শ্বাসকষ্ট হয়। কখনো বেশি, কখনো কম। তবে নো চিন্তা, জ্বরের সাথে সাথে এটাও চলে যাবে।

- তাহলে কী ডাক্তারের কাছে যাবে না?

- না।

- কিন্তু এইসব করে কী প্রমাণ করতে চাচ্ছ তুমি? তুমি কী ভাবছ তোমার কষ্ট দেখে আমার করুণা হবে? আমি তোমাকে কাছে টেনে নিবো। কিন্তু এটা তো তোমার ভুল ধারণা। আন্তরিকতা থেকেই তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথাটা বলেছি মাত্র।

রাফা সোজা হয়ে বসল। পায়ের নিচে থাকা কাঁথাটা শরীরে পেঁচিয়ে নিলো।হাত দিয়ে কপালের সামনে এসে যাওয়া ভেজা চুল সরিয়ে দিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে সায়েমের চোখের দিকে তাকালো। এরপর মৃদু হাসি দিয়ে বলল, ‘রাফা কারোর করুণা নেয় না মিস্টার সায়েম। রাফা নিজের জিনিস, নিজেই অদায় করে নেয়।’

সায়েমের মনে হলো হঠাৎ করেই যেন রাফা সুস্থ হয়ে গেল। শরীরের সেই দূর্বলতা কেটে গেল মুহূর্তের মধ্যেই। এটা কী সায়েমকে দেখানোর জন্য, নাকি আসলেই ও সুস্থতা অনুভব করছে সায়েম বুঝতে পারল না৷ তবে ওর খুব রাগ হচ্ছে এখন৷ রাফার জন্য যে খারাপ লাগাটা তৈরি হয়েছিল মনের ভিতর, সেটা হুট করেই রাগে পরিনত হলো।

রাফার দিকে কিছুক্ষণ রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আলমারির কাছে গেল সায়েম। জামা-কাপড়ের বের করে বাথরুমে চলে গেল। সায়েমের অবস্থা দেখে রাফা ফিক করে হেসে দিলো। কিন্তু মাথাটা একটু বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছিল, সেজন্য বসে না থেকে শুয়ে পড়ল আবার।

বেশ কিছুক্ষণ আগে ইতি চট্রগ্রাম রিসোর্টে পৌঁছেছে। ফ্রেশ হয়ে, খাওয়াদাওয়া করে এখন মিটিংরুমে বসেছে। ওর পাশে বসে আছে রোদ। মিটিং শুরু হতে আরো বেশ কিছুক্ষণ দেরি হবে। এতক্ষণ এখানে বসে থাকার কোনো মানেই হয় না। তবুও বসে থাকতে হচ্ছে। রুমে শুধুমাত্র ওরাই কয়েকজন বসে আছে। ইতি আড়চোখে রোদের দিকে তাকালো। রোদ একদম চুপচাপ বসে আছে। ইতি মনে মনে বলল, ‘মিটিংয়ে আগে কী সব বসরা'ই এভাবে চুপচাপ বসে থাকে, নাকি এই লোকটাই চুপচাপ আছে শুধু।’

একজন লোক ভিতরে এলো হঠাৎ। ইতি একটু নড়েচড়ে বসল। কেমন যেন লাগছে ওর। প্রথম অভিজ্ঞতা কি-না। ইতি লক্ষ্য করল লোকটা ওর কাছে এসেই থেমে গেল। ইতি ওঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম।’

লোকটা হেসে দিয়ে বলল, ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। আপনি ইতি, রাইট?’

লোকটা ওর নাম জানে। কিন্তু কীভাবে? ইতি অবাক হলেও এই প্রশ্নটা করল না। প্রশ্নটা করা হয়তো বোকামি হয়ে যাবে। ওরা এদের অফিসে এসেছে। ওদের সব ডিটেইলস নিশ্চয়ই আছে এনাদের কাছে৷ এটা ভেবে কিছু না বলে মাথা নাড়ল শুধু। কিন্তু এরপর লোকটা যেটা বলল, সেটার শোনার পর বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলো ইতি। লোকটা বলল, ‘অগ্রীম অভিনন্দন। এবং অগ্রীম শুভ কামনা ইতি। আপনার নতুন জীবন সুখের হোক।’

ইতি এবার সরাসরি প্রশ্ন করল, ‘আপনার কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না স্যার।’

লোকটা রোদের দিকে তাকালো৷ ইতিও তাকালো রোদের দিকে। রোদ ইশারায় লোকটাকে চুপ করতে বলল। রোদের নির্দেশ অনুযায়ী লোকটা ইতির সামনে থেকে সরে গিয়ে একটা চেয়ারে বসল। এরপর যে কয়জন রুমে এসেছে, সবাই ইতিকে অভিনন্দন আর নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা জানাচ্ছে। ইতি কিছুতেই বুঝতে পারছে না এইসব কী হচ্ছে৷ কিন্তু আস্তে আস্তে ওর মনের ভিতর ভয় বাসা বাধছে৷ ওর ইচ্ছে করছে সায়েমকে একবার ফোন দিতে। বাইরে থাকা অবস্থায় ফোন দিয়েছিল একবার। তবুও আবার কথা বলছে ইচ্ছে করছে৷ সেই সাথে রোদের ব্যপারটি। কিন্তু ফোন তো বন্ধ করা আছে৷ আর বসের কড়া নির্দেশ মিটিং শেষ হওয়ার আগে ফোন চালু করা যাবে না।

- ফাহাদ স্টপ দ্যা কার।

ফাহাদ সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করল সাথে সাথে। সায়েমের হঠাৎ এইরকম কথা শুনে ‘হা’ হয়ে গেল সবাই। পিছনের সিট থেকে আবির আর জয় বলে উঠল - "গাড়ি থামাতে বললি কেন?"

সায়েম রাগী কণ্ঠে জানালা দিয়ে রাস্তার অপজিট পাশে ইশারা করে বলল, ‘ওদিকে তাকিয়ে দেখ।’

সায়েমের কথানুযায়ী সবাই জানালা দিয়ে তাকালো। ফাহায় বিস্ময়ের গলায় বলল, ‘অবিশ্বাস্যকর।’

(চলবে...)

আরো পড়ুন ২৩তম পর্ব- ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড