• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ (২৩তম পর্ব)

  রিফাত হোসেন

২২ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:৪১
গল্প
ছবি : প্রতীকী

লোকটা হঠাৎ ওঠে দাঁড়াল। কোনোদিকে না তাকিয়ে চলে গেল সেখান থেকে। সায়েমের কাছে মনে হলো লোকটা বিরক্ত হয়েই চলে গেল। শুধুশুধু বৃষ্টির মধ্যে এতক্ষণ বসে থাকবে কোন পাগলে? যদিও লোকটা একটা উদ্দেশ্য নিয়েই এখানে বসেছিল। কিন্তু সায়েম তো তার উদ্দেশ্য আগেই ধরতে পেরেছিল। সেজন্য সায়েম তাকে সফল হতে দেয়নি।

লোকটা চলে যাওয়ার পর সারা এবার সায়েমের চোখের দিকে তাকালো। কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল সায়েমের ভ্রু-জোড়ার দিকে তাকিয়ে। একদম স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সারা। সায়েমের ভ্রু-জোড়া থেকে বৃষ্টির পানি পড়ছে টপটপ করে। ফরসা কপালের নিচে এইরকম কালো কুচকুচে ভ্রু-জোড়া দেখলে যে কারোর জন্যই প্রেমে পড়া বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। সারার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হলো। আবারও নতুন করে সায়েমের ভ্রু-জোড়ার প্রেমে পড়ে গেল। সারা যতক্ষণ সায়েমের ভুরুর দিকে তাকিয়ে ছিল, ওর মনে হচ্ছিল এখুনি ঝাঁপিয়ে পরে সায়েমের ভ্রু খেয়ে ফেলবে৷ সায়েম নড়েচড়ে বসাতে সারা সেদিকে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। কিছুক্ষণ নীরবতা দু'জনের মাঝে। সায়েম মুচকি হেসে দিয়ে দূর রাস্তার দিকে তাকিয়ে কফির চাপে ঠোঁট ছোঁয়াল। সারা আর লোভটা সামলাতে পারল না। কফির কাপের অপর প্রান্তে ঠোঁট ছোঁয়াল। সায়েম চমকে উঠলেও মুখ সরিয়ে নিলো না। দু'জনেই একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। দু'জনের ঠোঁটের দূরত্ব ছোট্ট কাপটার এপার-ওপার। দু'জনের ঠোঁটই ক্রমশ আকর্ষণ করছে দু'জনকে। ইচ্ছে করছে একে অপরের ঠোঁট স্পর্শ করতে। কিন্তু না, সবকিছুর মাঝে একটা বাধা থাকে। এই কাজটার মাঝেও একটা বাধা আছে। উঁহু, এই কফিটা বা কফির কাপটা ওদের ঠোঁট মিলিত হওয়ার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এর থেকেও বড় একটা বাধা আছে। সেটা ওদের জানা। এই বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা করাটাই বিপদজনক।

সারা নিজের ঠোঁটটা সরিয়ে নিলো। মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল ওর। এত কাছাকাছি এসেও সায়েমের ঠোঁট স্পর্শ করতে পারল না। নিজের মনে মনে বলল, ‘কি এমন হতো এই বাধাটা না থাকলে?’

উত্তরটা কেউই দিলো না। কারণ প্রশ্নটা ও নিজের মনকেই করেছে। আর মন সব প্রশ্নের উত্তর দেয় না। কিছু কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে যায় সঠিক সময়ের জন্য। এই প্রশ্নটাও ঠিক তাই হলো। এড়িয়ে গেল। সায়েম কিছুটা অনুমান করতে পারল সারার খারাপ লাগার কারণটা। তাই একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। এরপর হঠাৎ করেই সারার গালে একটা চুমু দিয়ে বাস স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে শুরু করল। ঘটনাটা বুঝতে কিছু মুহূর্ত সময় লাগল সারার। এরপর যখন বুঝতে পারল, তখন গালে হাত বুলিয়ে সায়েমের দিকে তাকালো। সায়েম স্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছে। কোনোদিকে তাকাচ্ছে না একবারের জন্যও। সারা আর সময় নষ্ট না করে কফির বিল মিটিয়ে দৌড়ে সায়েমের কাছে এলো। নিঃশব্দে স্ট্যান্ডের দিকে হেঁটে যেতে লাগল দু’জন।

সায়েম আর সারা বাস থেকে নামল। পাশাপাশি হাঁটছে দু'জনেই। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। নিঃশব্দে হাঁটছে শুধু। মাঝে মাঝে সারা নিজের গালে হাত বুলাচ্ছে। সায়েম আড়চোখে তা দেখেও না দেখার ভান করছে। বাড়ির কাছে চলে আসার পর সিঁড়ি দিয়ে পাশাপাশি উঠতে লাগল ওরা। একতলা থেকে দু'তলায় উঠার পর সারা হঠাৎ নিজের একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘আমার হাতটা একটু ধরবেন সায়েম।’

সায়েম সারার হাত ধরে মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ‘আপনাকে একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম।’

সারা মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘জ্বি বলুন।’

সায়েম সারার হাতে হালকা চাপ দিয়ে বলল, ‘কফির দোকানে ছাতার আড়ালে একটা লোক ছিল, সেটা নিশ্চয়ই দেখেছেন?’

- হ্যাঁ। বেশ অদ্ভুত লোকটা। কেমন যেন সন্দেহজনক।

- হ্যাঁ। উনি আমাদের অফিস কলিগ। সাদাত ভাই।

সারা থেমে গেল। সায়েমের দিকে তাকিয়ে অবিশ্বাসের স্বরে বলল, ‘কি বলছেন এইসব? উনি কীভাবে হতে পারে? উনার তো ওখানে থাকার কোনো কথাই ছিল না। কারণ আরো ঘন্টাখানিক আগে তিনি অফিস থেকে বের হয়েছিল। আমি নিজেই উনাকে দেখেছিলাম বেরিয়ে যেতে।’

সায়েম হেসে দিয়ে বলল, ‘আমি পুরোপুরি শিওর যে, ওটা সাদাত ভাই ছিল। আমরা যখন অফিস থেকে বের হচ্ছিলাম, তখনই তাকে ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি৷ সে অবশ্য বুঝতে পারেনি আমি তাকে দেখে ফেলেছিলাম।’

- কিন্তু তিনি এইরকম কেন করবে? তাছাড়া আমরা তো লুকিয়ে ছিলাম না ওই চায়ের দোকানে৷ উনি নিশ্চয়ই আমাদের দেখেছে৷ তাহলে উনি আমাদের দেখেও না দেখার ভান করে আলাদা বসেছিল কেন?

- কারণটা হলাম আমি। উনি আমার উপর নজর রাখছিলেন। বেশ কয়েকদিন ধরেই আমার মনে হচ্ছিল অফিসের কেউ আমার উপর নজর রাখছে। কিন্তু আমি তাকে ধরতেই পারছিলাম না। তবে যতবারই নজর কারীকে দেখার জন্য আশেপাশে তাকিয়েছি আমি। ততবারই এই সাদাত ভাইয়ের সাথে চোখাচোখি হয়েছে। লোকটা আমার সাথে চোখাচোখি হলেই মৃদু হাসি দেয়। তার সেই হাসির রহস্য আমি এতদিন বুঝতে না পারলেও আজ বুঝতে পেরেছি। ১০০% শিওর হওয়ার জন্যই আমরা ওইরকম কাক ভেজা হয়ে কফি খেয়েছি। আমরা নাহয় মুহূর্তটাকে আকর্ষণীয় করার জন্য বৃষ্টিতে ভিজে কফি খেয়েছি। কিন্তু ওই লোকটা কোন দুঃখে বৃষ্টিতে ভিজে কফি খেতে এলো? পাশেই তো ভালো কফি হাউজ ছিল। আর তিনি নিশ্চয়ই এতটাও গরীব নন যে, ভালো একটা জায়গায় বসে কফি খেতে পারবে না। সুতরাং যা বুঝার আমি বুঝতে পেরেছি।

- আপনাকে নজরে রেখে উনার কি লাভ?

- সেটা এখন বুঝিয়ে বলতে পারবো না। পরে সঠিক সময় এলেই বলব।

সারা কিছু বলল না। আবারও হাঁটতে লাগল।

নিজের ঘরে এলো সায়েম। ড্রয়িংরুমে রাফাকে দেখতে না পেয়ে প্রথমে ভেবেছিল ওর ঘরে আছে। কিন্তু ও ঘরে এসে দেখে রাফা নেই। নিশ্চয়ই ইতির ঘরে আছে। সায়েম এইসব আর না ভেবে ঘরের দরজাটা আটকে দিলো৷ ভেজা শার্ট-প্যান্ট ছেড়ে কোমড়ে একটা তোয়ালে পেঁচিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হঠাৎ কি ভেবে যেন ঠোঁটের হাত বুলালো। আর মনে পড়ে গেল গত কাল রাতের ঘটনা৷ সেই সাথে মনে পড়ল কফির দোকানের ঘটনাটা। এই ঠোঁটই সারাকে আলতো করে স্পর্শ করেছিল। সারা খুব লজ্জা পেয়েছিল। সায়েম নিজেও কিছুটা লজ্জা পেয়েছিল বটে, তবে প্রকাশ করেনি৷ রাফা সেদিন বলেছিল লজ্জা অপ্রকাশিত রাখার জন্য অদ্ভুত এক ক্ষমতার প্রয়োজন। সায়েমের বিশ্বাস ওর মধ্যে সেই ক্ষমতা আছে৷ নাহলে ওভাবে সারাকে চুমু দেওয়ার পর লজ্জা না পেয়ে থাকতে পারতো না ও।

রাফার কথা মনে পড়তেই পিছন ফিরলো সায়েম। আর তখনই দেখল একজন অর্ধনগ্ন যুবতী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। নিজের অজান্তেই সায়েমের মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো ‘ওয়াও’ শব্দটা। সায়েমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অর্ধনগ্ন যুবতী মেয়ের শরীরের মোহতে পড়ে গেল। কিন্তু প্রোক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ বন্ধ করে পিছনে ঘুরল। মুখে বিরক্তির একটা ভাব এনে বলল, ‘এইসব কি হচ্ছে রাফা? তুমি তোয়ালে পরে আমার সামনে এলে কেন? আর আমার বাথরুমেই বা কেন গিয়েছিলে গোসল করতে?’

রাফার কোনো সাড়া পেলো না সায়েম। নিস্তব্ধ আর থমথমে হয়ে গেল ঘরটা। সায়েম আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো। সামনে থাকা আয়নার দিকে চোখ পড়তেই দেখল রাফা ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর পাশে। হাঁটু থেকে বুক পর্যন্ত একটা তোয়ালে পেঁচানো। ভেজা চুলের পানি উন্মুক্ত শরীরে বেয়ে পড়ছে। সায়েমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ রাফা জড়িয়ে ধরল ওকে। দু'জনের ভেজা শরীর একত্র হয়ে গেল। সায়েমের ভেজা আর উন্মুক্ত বুকে হাজারো চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগল রাফা। ওকে শক্ত করে দুই হাতে জাপটে ধরে রেখেছে। সায়েম যেন কেঁপে উঠল। রাফা সায়েমের পিঠ খামচে ধরে ঘন ঘন নিশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘নিজের বউকে এভাবে লুকিয়ে দেখার কি আছে? আমাকে বললে তো ফ্রিতে লাইভ দেখিয়ে দিতাম।’

সায়েমের হুশ ফিরে এলো। এক মিনিট লাগল কি হচ্ছে সেটা বুঝতে। হঠাৎ ধাক্কা দিয়ে রাফাকে সরিয়ে দিলো। রাফার হাতটা ধরে মোচড় দিলো৷ ব্যথায় ডুকরে কেঁদে উঠল রাফা৷ হাতটা এখনো ফুলে আছে। কিন্তু সেদিকে সায়েমের খেয়াল নেই৷ একটা হাত দিয়ে রাফার হাত জোরে চেপে ধরে, আরেকটা হাত দিয়ে রাফার গালে পরপর কয়েকটা থাপ্পড় মেরে দিলো। এরপর রাগে কটমট করতে করতে বলল, ‘প্রায় অধিকাংশ পুরুষরাই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে নারীর শরীরের মোহতে বিভোর হয়ে যায়৷ কিন্তু সেটা ততক্ষণই, যতক্ষণ তার হিতাহিতজ্ঞান না থাকে। সুতরাং আমি তোমার শরীরের দিকে ক্ষণিকের জন্য তাকিয়েছে বলে এই নয় যে আমি তোমার শরীর লাইভ দেখার আগ্রহ প্রকাশ করছি। এই ধারণা তোমার ভুল। আর আজ যেটা করলে, সেটা একদমই ঠিক করোনি। এর ফল তোমাকে ভুগতে হবে।’

সায়েম আর দাঁড়াল না ওখানে। রেগে-মেগে বাথরুমে এসে দরজাটা জোরে লাগিয়ে দিলো। রাফা চমকে উঠল। আয়নার দিকে তাকালো অসহায়ের দৃষ্টিতে। হাতের ব্যথাটা কয়েকগুণ থেকে কোটি কোটি গুণ বেড়ে গিয়েছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ওর।

প্রায় ১০ মিনিট পর সায়েম গোসল করে বের হয়ে দেখে রাফা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। রাফাকে দেখে মেজাজটা আবার বিগড়ে গেল। সায়েম বিছানার উপর থেকে শুকনো একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে আবারও বাথরুমে গেল। তোয়ালে ছেড়ে ওগুলো পরে বের হলো। কোনো কথা না বলে ড্রয়িংরুমে এলো। ইতির ঘরে গিয়ে দেখল, ইতি বিছানায় বসে আছে চুপ করে। সায়েম ওর পাশে বসে বলল, ‘কি রে এভাবে বসে আছিস কেন? আর কখন এলি?’

ইতি সায়েমের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিলো। এরপর মুরুব্বিদের মতো করে পা উঠিয়ে বসল ভালো করে। গম্ভীরমুখে বলল, ‘এইমাত্র এলাম। ভাইয়া তোমার সাথে একটা জরুরি ব্যাপারে কথা আছে।’

সায়েম আগ্রহী হয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, বল।’

- আমাকে চট্রগ্রাম যেতে হবে অফিস থেকে। অফিসের গাড়ি দিয়েই যাবো।

সায়েম চোখ বড় বড় করে বলল, ‘তাই নাকি? দু'দিন হলো অফিসে জয়েন করেছিস। এর মধ্যেই অফিস ট্যুর।

- এটা ঠিক ওইরকম ট্যুর না ভাইয়া। অফিসের একটা নতুন প্রজেক্টের জন্য যেতে হবে। আমাদের এমডি স্যারও যাবেন সাথে। আমার সিনিয়র আর জুনিয়র মিলে অনেকেই যাবে। আর বেশিরভাগই মেয়ে। আজকে মিটিং হয়েছে। সবার সাথেই আলাপ হলো।

সায়েম চিন্তিত গলায় বলল, ‘কতদিনের জন্য ওখানে যাবি? থাকতে পারবি তো?’

- থাকতে হবে না একদিও। কালকে তো শুক্রবার। শনিবার সকালে এখান থেকে রওয়ানা দিবো। কখন পৌছাবো সেটা জানি না। বাট ওখানে রিসোর্টের ব্যবস্থা করাই থাকবে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাকিসব কাজ শেষ করে আবার ব্যাক করব। পরেরদিন সকালে বা খুব ভোরে এখানে চলে আসবো।

- ওহ্। তাহলে তো সমস্যা নেই। ঠিক আছে যা। তবে তোর বসের নম্বরটা আমাকে দিয়ে যাস।

- আচ্ছা।

ইতি একবার ভাবল রোদের কথাটা বলবে। আবার ভাবল, "রোদের কথা বললে ভাইয়া সারাক্ষণ চিন্তা করবে। তাছাড়া মিস্টার চৌধুরী না গেলে কিছুটা ভয়ে ভয়ে আমাকে থাকতে হতো। কিন্তু তিনিও যখন যাচ্ছে, তাহলে আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। আর ওই মেয়ে দু'টোকে তো বলাই আছে। ওরা এক মিনিটের জন্যও আমাকে চোখ হারা করবে না। বাথরুমে গেলে ওরা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে। তবুও আমাকে একা ফেলে যাবে না কোথাও। হারামজাদা রোদ আমার কিচ্ছু করতে পারবে না। কাছে এলে আবারও জায়গামতো কিক মারবো। সায়েম চলে এলো ইতির ঘর থেকে।

রাতের খাবার খাচ্ছে সবাই। রাফা আর ইতি একপাশে, তার উল্টো পাশে বসে আছে সায়েম। খাওয়াদাওয়ার শেষ পর্যায়ে ইতি বলল, ‘ভাইয়া, রাফা কী আমার ঘরে থাকবে আজ রাতে?’

সায়েমের বলতে ইচ্ছে করছিল, ‘কোনো ঘরে থাকবে না ও। ঘরে থাকার মতো যোগ্যতা ওর নেই৷ ওকে রাস্তায় থাকতে দে।’

কিন্তু না, সায়েম কথাটা বলল না। কিছু একটা ভেবে বলল, ‘সেটা ওকেই জিজ্ঞেস কর। আমি কীভাবে বলব ও কোন ঘরে থাকবে? ওর যেখানে ইচ্ছে হবে সেখানেই থাকবে।’

সায়েমের কথা শুনে ‘থ’ মেরে বসে রইল রাফা আর ইতি। ওরা কেউই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না সায়েম এ'কথা বলছে। সায়েম ওদের চোখেমুখের অবস্থা দেখে মুখটা আড়াল করে মৃদু হাসি দিলো। খাওয়া শেষ করে বসা থেকে ওঠে নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগল। মনে মনে বলল, ‘রাফা ভাবছে তখন ওকে ওই অবস্থায় দেখে আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি। মেয়েরা যে এত বোকা কেন হয় আমি বুঝতে পারি না। হা হা হা।’

রাত ১.০২ বাজে। সায়েমের পাশে শুয়ে আছে রাফা। সায়েম একপাশ হয়ে রাফার দিকে তাকালো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রাফার দিকে। মনে মনে বলল, ‘রাফা, তোমার বাইরেটা খুবই মায়াবী। অথচ ভিতরটা শয়তানিতে ভরপুর। বাট মাই বেস্ট ফ্রেন্ডের ডেয়ার সিস্টার, তোমার দিন তো শেষ। খুব শীঘ্রই তোমার খারাপ সময় আসতে চলেছে। আমি তো তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াবোই।’

সায়েম রাফার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাফার ফোনটা হাতে নিলো। এরপর ফোনটা নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো। সকালে রাফার ফোনের অটো কল রেকর্ডের অপশন অন করে রেখেছিল। এখন সব রেকর্ড সায়েম শুনবে। মূলত এই কারণেই রাফাকে নিজের ঘরে থাকতে দেওয়া। সায়েম আর সময় নষ্ট না করে রেকর্ডগুলো খুঁজে বের করল। একটা মাত্র রেকর্ড আছে এখানে। তাও আবার সকালের সেই নম্বরটা থেকে। সায়েম মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ‘এটাই তো আমার প্রয়োজন ছিল। এবার আমি ওদের পরবর্তী প্ল্যান সম্পর্কে জানতে পারব। ওরা কার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে সেটা জানা আমার প্রয়োজন। হয় আমার, আর নাহয় সারার। তবে সারা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ সারা রাফার শত্রু হয়ে গেছে।’

অতঃপর রেকর্ড অন করল সায়েম। কিন্তু যেটা শুনল, সেটার জন্য ও একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। একেবারে থতমত খেয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। ফোনটা নামিয়ে রাফার দিকে তাকালো। রাফার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি দেখতে পেলো সায়েম। কিন্তু ও বুঝতে পারল না এটা রাফার জেগে থাকা হাসি, নাকি ঘুমের ঘোরের হাসি।

(চলবে...)

আরো পড়ুন ২২তম পর্ব- ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড