• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘অদ্ভুত নিয়তি’-এর ৮ম পর্ব

ধারাবাহিক উপন্যাস : অদ্ভুত নিয়তি

  রিফাত হোসেন

০৩ আগস্ট ২০১৯, ১৫:২৬
উপন্যাস
ছবি : প্রতীকী

আতঙ্কে উঠল আদিত্য। ও ভাবছে শুভ ভাইয়ের সাথে যার বিয়ে হচ্ছে, সে ইরা। কিন্তু এটাও সম্ভব নয়, কারণ ইরা আয়ানকে ভালোবাসে। তাহলে শুভ ভাইয়ের সাথে ইরার কীসের সম্পর্ক? ভয়ে ঘামছে আদিত্য। সাথে ইরাও।

দু'জনের একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকা, আর দু'জনের চোখেমুখে বিস্ময় দেখে শুভর মনে এক অজানা কৌতূহল চলে গেল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে দু'জনকে উদ্দেশ্য বলল, ‘তোরা একে অপরের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?’

আদিত্য শুভর দিকে তাকিয়ে ইরাকে দেখিয়ে বলল, ‘উনি কে?’

হাসি দিয়ে শুভ বলল, ‘ওর নাম ইরা। ও আমার বোনের ফ্রেন্ড। তবে আমি ইরাকেও নিজের বোন ভাবি। আমার বোন, জ্যোতির সাথে ও মাঝে মাঝে আমার সাথে দেখা করতে আসতো। সেখান থেকেই পরিচয়। আমাকে নিজের বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করে। আমিও নিজের বোনের মতো স্নেহ করি ওকে। আজ ও আমাদের সাথে যাবে।’

আদিত্য মাথা নিচু করে অস্পষ্ট কণ্ঠে বলল, ‘ওহ্।’

শুভ ইরার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুই একা কেন? জ্যোতি কোথায়?’

- ও আসছে।

কিছুক্ষণ পরেই জ্যোতি চলে এলো। আদিত্যর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল জ্যোতি। জ্যোতি যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না আদিত্যকে এখানে দেখতে পেয়েছে। শুভ আদিত্যকে পরিচয় করিয়ে দিলো ওদের সাথে। জ্যোতি মাঝে মাঝে আড়চোখে আদিত্যর দিকে তাকাচ্ছে। ইরা ফোন হাতে কারোর হাতে ম্যাসেজিং করছে। ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও খুব ব্যস্ত এখন। কিন্তু জ্যোতির দৃষ্টি আদিত্যর দিকে। জ্যোতি যখন শুভর মুখে শুনল যে, আদিত্য ওদের সাথে বিয়েতে যাচ্ছে। তখন থেকে জ্যোতির মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে। ওর কাছে সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে মাথার ওপরের এই আকাশটা বাস্তব নয়। আশেপাশের মানুষজন, বাস স্ট্যাণ্ডের পাশে খালি জায়গায় থেমে থাকা কিছু বাস, ওর সামনের আদিত্য নামের আকর্ষনীয় মানুষটা, এইসবই কাল্পনিক। কিছুই বাস্তব নয়। সব কিছু স্বপ্ন। এক্ষুনি ঘুম ভেঙে যাবে আর দেখবে ও হোস্টেলের সেই শক্ত বিছানার গড়াগড়ি খাচ্ছে। কিংবা খাটের নিচে ওপর হয়ে শুয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো, ছোট্ট কাঁথাটা শরীরে না পেচিয়ে পা দিয়ে ফুটবলের মতো গোল বানাচ্ছে।

এগুলো জ্যোতির প্রতিদিনের কাজ। যা ও এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কল্পনা করছে। রোজ একটা করে ছেলে ওর স্বপ্নে আসে। তবে ঘুম ভেঙে যাওয়ার সাথে সাথে তারাও চলে যায়। স্বপ্নের সেই ছেলেগুলোকে বাস্তবে কখনোই দেখেনি জ্যোতি। কিন্তু আদিত্যকে ও প্রথমেই সামনা-সামনি দেখেছে। তারপর থেকে ওর স্বপ্নে আদিত্য ছাড়া অন্য কেউ আসেনি। অবশ্য না আসাটাই স্বাভাবিক। কারণ স্বপ্নে যারা আসে, বাস্তবে তাদের দেখা পাওয়া যায় না। সকালে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর জ্যোতি স্বপ্নের সেই ছেলেকে গালাগালি করতো। ও বলতো, শালার এত সুন্দর সুন্দর ছেলেরা কেন যে স্বপ্নে আসে? এরা স্বপ্নে আসে বলেই বাস্তবে আর এদের দেখা পাই না। খুব করে ইচ্ছে করে এই ছেলেগুলোর মধ্যে যে কোনো একটাকে প্রথমে বাস্তবে দেখব, তারপর থেকে স্বপ্নে আসলেও সমস্যা নেই। কিন্তু না, এরা আগেই স্বপ্নে চলে আসে। তাই আর বাস্তবে এদের দেখা মিলে না।

জ্যোতি আদিত্যকে প্রথম দেখেছিল ক্যাম্পাসে। সেদিন এক দৃষ্টিতে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে ছিল ও। নিজের মনে মনে বিড়বিড় করে বলছিল, ‘প্লিজ আল্লাহ এখন সময়টা কিছুক্ষণের জন্য থামিয়ে দাও। আমি মুগ্ধ হয়ে ওকে শুধু দেখব কিছুক্ষণ।’ পরক্ষনেই আবার জ্যোতি ভাবে, ‘সময় তো আর আমার কথায় চলে না। আর আমি চাইলেই আল্লাহ থামিয়ে দিবেন না। সব কিছুর তো একটা নিয়ম আছে, নাকি?’ জ্যোতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বিড়বিড় করে বলে, ‘প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ আল্লাহ, এটা যেন স্বপ্ন না হয়।ছেলেটাকে পরে নাহয় আবার স্বপ্নে দেখিও৷ কিন্তু এখন এটাকে বাস্তবে রূপ দাও প্লিজ।’

আল্লাহ সেদিন ওই সময়টাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ওই ছেলেটাকে মুগ্ধ হয়ে দেখবার মতোই সৌভাগ্য ওকে দেয়নি। পরে ও জানতে পারে ছেলেটার নাম আদিত্য। ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু, ইরার বয়ফ্রেন্ড। ইরার প্রতি খুব রাগ হয়েছিল সেদিন, কিন্তু বেস্টফ্রেন্ড বলে কিছু বলতে পারেনি। এরপর থেকে প্রতিদিন আদিত্যকে স্বপ্নে দেখতো জ্যোতি। তবে বাস্তবে সবসময় আদিত্যর থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করতো। ভালো করে তাকাতোও না আদিত্যর দিকে।

শুভর কথায় জ্যোতির ভাবনায় ছেদ পড়ল। শুভ বলল, ‘দাঁড়িয়ে আছিস কেন? গাড়ি এসে গেছে, তাড়াতাড়ি উঠ।’

শুভ আর আদিত্য প্রথমে গাড়িতে উঠে। এক শাড়িতে চারটা সিট দেখে শুভ আর আদিত্য পাশাপাশি বসে পড়ল। জ্যোতি আর ইরা এখনো বসেনি। ইরা নিজের ব্যাগটা উপরে রাখছে। তখন জ্যোতি শুভকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ভাইয়া, ব্যাগটা একটু উপরে রেখে দে প্লিজ।’

শুভ বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। নিজের সিট থেকে সরে এসে জ্যোতির হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে উপরে রাখল। সেই সুযোগ ধপাস করে জ্যোতি আদিত্যর পাশে বসে পড়ল। হতভম্ব হয়ে গেল আদিত্য। আড়চোখে একবার ইরার দিকে তাকাল। ইরাও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ইরা নিজের সিটে বসে পড়ল। শুভ কিছু না বলে ইরার পাশে বসল৷ আদিত্য নিজের মনে মনে বলল, ‘আল্লাহ! এই মেয়ে এমন কেন? বড় ভাইয়ের সামনে ধুম করে অপরিচিত একটা ছেলের পাশে বসে পড়ল। একটুও ভয় করল না মেয়েটার।’

আদিত্য কিছু না বলে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল। জ্যোতি আদিত্যর দিকে আরও কিছুটা চেপে বসলো৷ তারপর আদিত্যর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘এই যে মি:, এবার তো একটু জ্বলে উঠুন। ঠিক যেমন টিউভ লাইট কিছুক্ষণ অফ থেকে হুট করে জ্বলে উঠে, আপনিও তাই করুন প্লিজ। আর সেদিনের হিসেব তো আমি গ্রামে গিয়ে নিবো।’

আদিত্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জ্যোতির দিকে তাকাল। ভয়ে ভয়ে বলল, ‘মানে?’

- সেদিন আমাকে অপেক্ষা করিয়ে আপনি আসেননি। আমি আপনার জন্য সেই বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি।

- আমার একটা কাজ ছিল তাই আসতে পারিনি। তাছাড়া আমি আপনাকে একবারও বলিনি আমি আসব। তাই আপনি আরো দু'টো কিংবা তিনটে বিকেল অপেক্ষা করলেও আমার কিছু আসে যায় না।

জ্যোতি রাগী কণ্ঠে বলল, ‘শুধু অপেক্ষা করুন। গ্রামে পৌঁছেই আপনাকে আমি মজা দেখাবো। তখন দেখবো কার কী যায় আসে আর আসে না!’

কৌতূহলী কণ্ঠে আদিত্য জিজ্ঞেস করল, ‘কী করবেন আপনি?’

জ্যোতি হাসতে হাসতে বলল, ‘আপনাকে হাফ প্যান্ট পড়িয়ে গ্রামের চার রাস্তার মোড়ে দাঁড় করিয়ে রাখবো। তারপর বলল, নাচ শালা।’

জ্যোতির কথা শুনে আদিত্যর চোখ কপালে ওঠে গেল। দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যাচ্ছিল। মনে মনে বলল, ‘কী ডেঞ্জারাস মেয়েরে বাবা! হয় এই মেয়ের মানসিক কোনো সমস্যা আছে। আর নাহয় এই মেয়ে সন্ধ্যাবেলায়ই উল্টো পাল্টা কিছু খেয়ে ফেলেছে। নাহ্, একে আর ঘাটানো যাবে না। শেষে এই গাড়িতেই না আবার বাড়াবাড়ি কিছু করে বসে। তখন ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করতে হবে।’

জ্যোতি মিটমিট করে হাসতে লাগল, আর আড়চোখে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে রইল। আদিত্য জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা। জ্যোতি আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সেদিন যেটা বলেননি, আজকে সেটা বলবেন?’

আদিত্য অন্যদিকে ঘুরেই বলল, ‘কী?’

- যেটা শোনার জন্য সেদিন বিকেলে লেকের পাড়ে অপেক্ষা করেছিলাম।

- আমি কিছু বলতে পারব না।

জ্যোতি করুণ কণ্ঠে বলল, ‘কিন্তু কেন?’

- কারণ ওটা আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা। যা আমি কারোর সাথে শেয়ার করতে পারব না।

- তাহলে সেদিন ইরাকে বলতে চেয়েছিলেন কেন?

আদিত্যর বলতে ইচ্ছে করছে যে, ‘ আমি ইরাকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসার মানুষের কাছে নিজের সব ব্যক্তিগত কথা বলা যায়। তাই আমি ওকে সেদিন বলতে চেয়েছিলাম।’

কথাটা বলতে যেয়েও বলতে পারল না আদিত্য। চুপ করে সেই বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল৷ জ্যোতি বলল, ‘কী হলো থেমে গেলেন কেন? বলুন।’

পরপর কয়েকবার কথাটা বলল জ্যোতি। কিন্তু আদিত্য কোনো প্রতিউত্তর দিলো না। সামনের সিট থেকে শুভ বলল, ‘জ্যোতি, ওকে এত জ্বালাতন করিস না। ও এমনিতেই অসুস্থ। কিছুতেই আমাদের সাথে আসতে চাচ্ছিল না। আমিই জোর করে নিয়ে এসেছি।’

আদিত্যর উপরের রাগটা জ্যোতি শুভকে দেখিয়ে বলল, ‘উঁহু, তুই আমাদের বিরক্ত করছিস কেন? আমাদের মাঝে আসবি না তুই। দেখছিস না সেই কখন থেকে চুপ করে বসে আছে শুধু। একটা মানুষ সবসময় এভাবে চুপ করে থাকে কীভাবে বুঝিনা?’

শুভ হাসতে হাসতে বলল, ‘সবাই তো আর তোর মতো না। যে সারাদিন শুধু বকবক করবে।’

- চুপ থাক তো ভাইয়া।

- ও এমনিতেই চুপচাপ থাকে। ওকে বিরক্ত করিস না প্লিজ। বাড়িতে গিয়ে কথা বলিস। এখন ওকে একটু শান্তিতে থাকতে দে।

জ্যোতি কিছু বলল না। সবাই একসময় চুপ হয়ে গেল। সদরঘাট পৌঁছে চারজন গাড়ি থেকে নামলো। যার যার ব্যাগ হাতে নিয়ে ভিতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। কিছুদূর যাওয়ার পর শুভ সবাইকে একটু অপেক্ষা করতে বলে ও টিকিট কাটতে গেল। আদিত্য আর জ্যোতি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। আর ইরা ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অবশ্য ওর চোখ দু'টো ফোন স্ক্রিনের দিকে। হঠাৎ জ্যোতি ইরাকে উদ্দেশ্যে করে বলল, ‘আচ্ছা ইরা, তোদের কী ব্রেকআপ হয়ে গেছে?’

অবাক কণ্ঠে ইরা বলল, ‘কেন?’

- তাহলে আমার লাইনটা ক্লিয়ার হয় আরকি।

আরো অবাক হলো ইরা। চোখেমুখে একরাশ কৌতূহল নিয়ে জ্যোতির দিকে তাকিয়ে রইল। আদিত্য একবার ইরার দিকে তাকাচ্ছে, আবার জ্যোতির দিকে তাকাচ্ছে। ও ঠিক বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে এইসব। তবে ওর মনে খুব আতঙ্ক৷ জ্যোতি যদি উল্টো পাল্টা কোনো কথা বলে ফেলে আর সেই কথা যদি ইরা শুভ ভাইকে বলে দেয়, তাহলে ভয়ঙ্কর খারাপ কিছু একটা হয়ে যাবে। শুভ ভাই ওকে শুধু শুধু ভুল বুঝবে৷ জ্যোতিকে থামাতে হবে। ওর মাথা ঠিক নেই। পুরোপুরি পাগল না হলেও অর্ধেকটা পাগল তো হবেই।

আদিত্য কিছু বলার আগেই ইরা জ্যোতিকে প্রশ্ন করে, ‘তোর লাইনটা ক্লিয়ার হবে মানে?’

জ্যোতি কোনো দ্বিধা না করে মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ‘ইয়ে মানে, তোর সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেলে উনার সাথে আমি প্রেমটা শুরু করতে পারব আরকি।’

ইরা চোখ বড় বড় করে জ্যোতির দিকে তাকালো। আদিত্য মাথায় হাত দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রইল। ইরা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল, ‘তোর মাথা ঠিক আছে তো?’

জ্যোতি বিরক্তিকর কণ্ঠে বলল, ‘সবসময় আমাকে এই প্রশ্নটার সম্মুখীন হতে হয় কেন?’

- কারণ আমরা জানি তুই একটা পাগলী। তোর মাথায় অনেক সমস্যা আছে।

জ্যোতি হো হো করে হাসতে লাগল। ইরার গালদুটো টেনে ধরে বলল, ‘জানিসই যখন আমার মাথায় সমস্যা আছে, তাহলে জিজ্ঞেস করিস কেন? মুখে কোনো কথা না বলে চুপচাপ শুধু দেখে যা।’

ইরা জ্যোতির হাত দু’টো ছাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘ধুর! তোর সাথে আর কথাই বলব না। বজ্জাত মেয়ে একটা।’

ইরা আর এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে টিকিট কাউন্টার এ চলে গেল। শুভকে বল, ‘আর কতক্ষণ লাগবে ভাইয়া?’

- এইতো হয়ে এসেছে। চল এবার।

সবাই মিলে লঞ্চের কাছে গেল। দু’টো কেবিন বুক করেছে শুভ৷ একটা ওর আর আদিত্যর জন্য। আরেকটা জ্যোতি আর ইরার জন্য। ব্যাগগুলো জায়গা মতো রেখে শুভ বল, ‘রাতের খাবারটা সেরে নেওয়া যাক এবার।’

- ওকে চল।

চারজন মিলে লঞ্চের ভিতরের একটা দোকানে গেল। বেঞ্চে বসে টুকটাক কিছু খাবার খেয়ে নিলো সবাই। শুভ বলল, ‘এবার কেবিনে যা তোরা। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়।’

জ্যোতি লাফ দিয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়াল। সবাই অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। জ্যোতি বলল, ‘এতদিন পর গ্রামে যাচ্ছি। তাছাড়া সামনের তোর বিয়ে। এই আনন্দেই তো আমার বেশ কিছুদিন ঘুম আসবে না। তাছাড়া এই রাতেরবেলা লঞ্চের ছাদে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থেকে প্রকৃতির শীতল হাওয়া গায়ে না মেখে ওই পায়রার খুপে গিয়ে ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করার মতো বোকা মেয়ে আমি নই।’

পাশ থেকে ইরা বলল, ‘আবার শুরু হয়ে গেল তোর পাগলামি। আচ্ছা, একটু শান্তিতে থাকতে পারিস না৷ সবসময় এত লাফালাফি করিস কেন তুই? সারাক্ষণ লাফালাফি, শয়তানি না করে একটু শান্ত হয়ে বসতে তো পারিস। বড় তো আর কম হলি না, এই ছুটোছুটি, পাগলামি এবার একটু অফ কর। কখনো দু'মিনিটের জন্য চুপচাপ থাকলে আবার চার মিনিটের জন্য চেঁচামেচি শুরু করে দিস৷ বাচ্চাদের মতো এদিক ওদিক ছুটে বেড়াস। কখনো আবার এটা খাবি, ওটা খাবি বলে বায়না ধরিস৷ কিছু বলতে গেলেই ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিস৷ এইরকম কেন তুই?’

ইরা একনাগাড়ে অনেকটা রাগ দেখিয়ে কথাগুলো বলল। কিন্তু জ্যোতি তেমন কোনো রিয়াক্ট করল না। আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘নতুন প্রেমে পড়লে এমনটাই হয়। কখনো উদাসীন হয়ে একাকী দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কখনো-বা বাচ্চাদের মতো পাগলামি করতে ইচ্ছে করে। ওদের মতো ছুটোছুটি করতে বা বায়না ধরতে ইচ্ছে করে। ভয়ঙ্কর এক ভোরের সকালে উনার হাত ধরে কুয়াশা গায়ে মাখতে ইচ্ছে করে। আবার মধ্যরাতে উনাকে জড়িয়ে ধরে জ্যোৎস্না স্নান করতে ইচ্ছে করে৷ প্রেমে পড়ার পরের সময়টায় মানুষ নিজের কন্ট্রোলে থাকে না। আসলে দোষটা আমাদের নয়। দোষটা হলো প্রেম নাকম জিনিসটার। যা নিজের অজান্তেই আমাদের মনে গেঁথে যায়।’

জ্যোতি কথা শেষ করে সবার দিকে তাকালো। সবাই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে৷ সবার চোখেমুখে সাংঘাতিক কৌতূহল। কথাগুলো বলে জ্যোতি নিজেই হতভম্ব হয়ে গেছে। লজ্জায় মাথা নিচু করে রইল। শুভ বলল, ‘ এইসব কী বলছিস তুই? আর প্রেমে পড়েছিস মানে! কার প্রেমে পড়েছিস তুই?’

আমতাআমতা করে জ্যোতি বলল, ‘না মানে। আসলে ভাইয়া আমি তোর কথা বলছিলাম। তুই নতুন বিয়ে করবি। ভাবীর সাথে প্রেম করবি। তাই আমি তোর হতে বলে দিলাম।’

- আমার ইচ্ছেগুলো তুই কেন বলবি? তাছাড়া তুই তো আদিত্যর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললি।

- আরে উনি সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, তাই উনার দিকে তাকিয়ে বলেছি। তুই কিংবা ইরা দাঁড়িয়ে থাকলে তোদের দিকে তাকিয়ে বলতাম কথাগুলো।

শুভ কী বুঝল সে নিজেও জানে না। ইরা সব বুঝতে পেরেছে, তবে কিছু বলছে না। আদিত্য মিটমিট করে হাসতে লাগল।

(চলবে....) আরো পড়ুন ‘অদ্ভুত নিয়তি’-এর ৭ম পর্ব - ধারাবাহিক উপন্যাস : অদ্ভুত নিয়তি

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড