• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘অদ্ভুত নিয়তি’-এর ৭ম পর্ব

ধারাবাহিক উপন্যাস : অদ্ভুত নিয়তি

  রিফাত হোসেন

০১ আগস্ট ২০১৯, ১২:২৫
উপন্যাস
ছবি : প্রতীকী

আদিবা আদিত্যর বুক থেকে মাথাটা তুলল। হাত দিয়ে চোখদুটো মুছতে মুছতে যা বলল, তাতে আদিত্য বেশ বড় একটা শকট খেলো। মনে হলো বুকের উপর কেউ বড় একটা পাথর রাখল। একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে আদিত্য। পাশ থেকে শুভ ভয়ঙ্কর এক কৌতূহল নিয়ে বলল, ‘তোদের বাড়ি থেকে বের করে দিছে মানে!’

আদিবা বলল, ‘হ্যাঁ, ছোট কাকা, আমাকে আর মা কে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছে। প্রথমে আমরা যেতে চাইনি, কিন্তু কাকা মাকে অনেক অপমান করে। সেই সাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। তারপর মা আর কোনো উপায় না পেয়ে বলেছে এই বাড়িতে আর থাকবে না। এখন আমি আর মা নানার বাড়িতে থাকি।’

আদিত্য বলল, ‘ছোট কাকা মাকে অপমান করে কোন সাহসে? তাছাড়া বাড়িটা তো বড় কাকার নামে, তাহলে সে কোন অধিকারে তোদের বেরিয়ে যেতে বলে।’

- বড় কাকা কিছুদিন আগে দেশের বাইরে চলে গেছেন। কবে ফিরবেন তা সে নিজেও জানেন না বলেছেন৷ বাবা নেই, সেই সাথে তুইও ওইরকম একটা ঘটনা ঘটিয়ে এখন বাড়ির বাইরে, তাই বড় কাকা বাড়িটা ছোট কাকার নামে লিখে দিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন। ছোট কাকার কাছে শুনেছি বড় কাকা আর দেশে আসবেন না। আর আসলেও অনেক বছর পর৷ বড় কাকা চলে যাওয়ার দু'দিন পর থেকেই ছোট কাকা আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে। মা কিছু বলতে গেলেই ছোট কাকা আমাদের বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। অনেক অপমান করে। অতঃপর মা আর সহ্য করতে না পেরে গতকাল বিকেলে আমাকে সাথে নিয়ে নানাদের বাড়িতে চলে গেছে।

আদিত্য রাগী কণ্ঠে বলল, ‘আমাকে এইসব আগে জানাসনি কেন? তোর সাথে যখন দেখা হলো, তখন তো একবার বলতে পারতি যে কাকা তোদের বাড়ি থেকে বের করে দিতে চায়।’

আদিবা আদিত্যর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ইচ্ছে করেই আমি তোকে কিছু বলিনি। মা চায় না তোর সাহায্য নিতে। তাছাড়া মা মনে করে এইসব কিছুর জন্য তুই দায়ী। মা বলেছে তুই যদি মানুষের মতো মানুষ হতি, তাহলে আজ তাকে কেউ অপমান করতে পারতো না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলার সাহস পেতো না কেউ। আর শুধু মা নয়, আমিও মনে করি তোর জন্য এইসব হয়েছে। সেদিন যদি ওই কাজটা না করতি, তাহলে আর কাকা আমাদের সাথে এইরকম করতো না। তবে কাকাকে কোনো দোষ দিচ্ছি না আমরা, কারণ তিনি যা করছেন তা স্বাভাবিক। একটা খুনি ছেলের মা আর বোনকে বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া মানে বোকামি। কাল তো কাকা এটাও বলেছে যে, টাকার জন্য তোমার ছেলের আমাকে খুন করতে চেয়েছিল। এখন এই বাড়িটা নিজেদের করার জন্য যে তোমরা আমাকে খুন করার পরিকল্পনা করবে না, তার কী গ্যারান্টি আছে। ভাগ্যক্রমে প্রথমবার বেঁচে গেছি বলে যে পরের বারও বেঁচে যাবো এমনটা নয়। তাই আমি রিস্ক নিতে চাই না। একটা খুনি এবং খুনির মা, বোনকে আমি এই বাড়িতে থাকতে দিবো না।’

আদিত্য রাগে ফুঁসছে। ইচ্ছে করছে কাকাকে শেষ করে দিতে। উনার এত সাহস হয় কীভাবে? একটা মানুষ কতটা নীচ হলে এইরকম জঘন্য কাজ করতে পারে। আদিত্য মনে মনে বলল, ‘এবার আমি বুঝতে পারছি কাকা কেন আমাকে মিথ্যে অভিযোগে বাড়ি থেকে বের করল। প্রথমে আমাকে বের করেছে বাড়ি থেকে। এরপর বাড়িটা নিজের নামে করিয়ে নিয়েছে। বড় কাকা স্ত্রী- সন্তান নিয়ে দেশের বাইরে থাকেন। মাঝে মাঝে কিছুদিনের জন্য দেশে আসেন৷ তাই বাড়িটা নিজের নামে করানোর পর যেই না বড় কাকা বাইরে চলে গেছেন, সেই সুযোগে উঠেপড়ে লেগেছিল আমার বোন আর মাকে বাড়ি থেকে বের করতে। এখন তিনি একাই নিজের স্ত্রী নিয়ে পুরো বাড়িটা ভোগ করবেন। খুব গভীর একটা ষড়যন্ত্র করেছিল ছোট কাকা। কিন্তু মিস্টার জাহিদ, সময় একদিন আমাদেরও আসবে। সেদিন তুমি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে অনুশোচনা প্রকাশ করবে। মাফ চাইবে আমাদের কাছে। আজ কিছু বলছি না বলে ভেবো না আমি হেরে গেছি। আমি সেইদিনের অপেক্ষায় থাকবো যেদিন তুমি নিজের ভুল বুঝতে পারবে।’

আদিত্যর ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটল শুভর ডাকে। আদিত্য ফিরে তাকালো শুভর দিকে। শুভ বলল, ‘কি রে, এইসব কী হচ্ছে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কে কাকে খুন করার চেষ্টা করেছে? সব কেমন উলটপালট হয়ে যাচ্ছে।’

আদিত্য শুভর কাছে গিয়ে বলল, ‘অপেক্ষা করুন ভাই। সময় হলে আমি সবটা বলবো আপনাকে।’

আদিত্য আদিবার দিকে তাকিয়ে আবার বলল, ‘কিন্তু তুই এখানে এসেছিস কেন আবার? তুই তো বললি নানার বাসায় গিয়েছিস।’

- হ্যাঁ আমরা নানার বাসায় গিয়েছি। এখানে আমার কিছু বই রয়ে গেছে, সেগুলোই নিতে এসেছি।

আদিবার হাত দু'টো ধরল আদিত্য। করুণ কণ্ঠে বলল, ‘আমি মায়ের সাথে দেখা করতে চাই বোন। প্লিজ আমাকে নিয়ে চল নানার বাড়িতে।’

আদিবা হাত দু'টো ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘অসম্ভব! মায়ের কাছাকাছিও আমি তোকে যেতে দিবো না। এমনিতেই মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তোর নাম শুনলে মা আরও অসুস্থ হয়ে যায়। খাওয়া দাওয়া করে না মা। এইসময় যদি তোকে মায়ের কাছে নিয়ে যাই, তাহলে আর মাকে বাঁচাতে পারব না আমি। মা তোর নাম শুনলেই কেমন যেন করে। তোর জন্য আমি মাকে হারাতে পারব না। তাই বলছি ভুল করেও চেষ্টা করিস না মায়ের কাছাকাছি যাওয়ার।’

আদিত্য রাগী কণ্ঠে চেঁচিয়ে বলল, ‘কেন বুঝতে চাইছিস না আমি কোনো খারাপ কাজ করিনি। এইসব কাকার প্ল্যান। প্রথমে আমাকে আর তারপর তোদের বাড়ি ছাড়া করেছে। এখন সে একা বাড়ির মালিক। কাকা মিথ্যে অভিনয় করেছিল সেদিন। আমার হাতে আজ হয়তো কোনো প্রমাণ নেই। কিন্তু একদিন তোরা ঠিকই সত্যিটা জানতে পারবি। বুঝতে পারবি আসল খারাপ মানুষ কে?’

- আমি এত কিছু বুঝতে চাই না। নিজের চোখে যা দেখেছি, তা ভুলে যেয়ে তোর সাজানো কথা আমি বিশ্বাস করতে পারব না। তোর জন্যই কাকা আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাকার নেই। তাই বলছি, নিজের দোষটা অন্যের কাঁধে দিস না। ভালো থাকিস, আর নিজের যত্ন নিন। আর শুভ ভাইয়া, ওকে একটু ঠিকমতো মেডিসিন খাইয়ে দিও প্লিজ।

- সে নাহয় দিলাম। বাট আমি তো তোদের কোনো কথা বুঝতে পারছি না।

আদিবা কিছু বলল না। মৃদু হাসি দিয়ে উপরে চলে গেল। মিনিট কয়েক পর হাতে কয়েকটা বই নিয়ে নিচে এসে আদিত্যর সামনে দাঁড়াল। আদিত্যর একটা হাত ধরে বলল, ‘এবার অন্তত পাগলামি বাদ দে ভাইয়া৷ একটু ভালো হয়ে বাঁচার চেষ্টা কর। আর আমাদেরও শান্তিতে থাকতে দে।’

আদিত্য আদিবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। আদিবা ও কাঁদছে। শুভ চুপ মরে দাঁড়িয়ে আছে। ওর মাথায় হাজারটা কৌতূহল। কিছুক্ষণ পর আদিবা চলে গেল। শুভ আর আদিত্যও বাইরে চলে এলো। মাথা নিচু করে হাঁটছে আদিত্য। খুব অসহায় লাগছে। চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। চোখের এই জল আটকানোর ক্ষমতা ওর নেই। তাই বিনা-বাধায় চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে।

এভাবেই চলে যাচ্ছে দিন। আদিত্যর জীবনে একাকীত্ব সঙ্গী হয়ে গেছে। বন্ধুবান্ধব কারোর সাথেই যোগাযোগ রাখে না আদিত্য। এমনকি ইরার সাথেও নয়। শুভ অনেক অনুরোধ করে বাইরে কোথাও ঘুরে আসার জন্য, কিন্তু আদিত্য কোথাও যায় না। সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকে। কখনো মায়ের কাছে বকাঝকা খাওয়ার মুহূর্তের কথা মনে করে হাসে, আবার কখনো বোনের সাথে দুষ্টুমির মুহূর্তের কথা মনে করে হাসে। কখনো বা ভালোবাসার মানুষটার সাথে কাটানোর মুহূর্তের কথা ভেবে মুচকি হেসে দেয়। তবে মধ্যরাতটা আদিত্যকে খুব জ্বালাতন করে। সেই সময় মনে পড়ে যায় নিজের অসহায়তার কথা, কাছের মানুষদের অবহেলার কথা। নিজের একাকীত্বের কথা মনে হলে বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে চায়। টপটপ করে চোখে থেকে জল বেরিয়ে আসে। আদিত্য অনেক চেষ্টা করে চোখের জল আটকানোর। কিন্তু তা কখনোই সম্ভব হয়নি! নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। অন্য সবার অবহেলা সহ্য করতে পারলেও কাছের মানুষদের অবহেলা সহ্য করা যায় না। নিজের আপনজন যখন অবিশ্বাস করে দূরে ঢেলে দেয়, তখন আর নিজেকে সামলানো যায় না। নিজের ব্যক্তিত্ব ও কন্ট্রোলের বাইরে চলে যায়। কোনটা ঠিক, আর কোনটা ভুল, তা বুঝার বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। আদিত্য ঠিক সেইরকম পরিস্থিতিতে আছে এখন। মাঝে মাঝে আদিত্যও মনে করে, এই পৃথিবীতে ওর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। সবার কাছে ও মূল্যহীন হয়ে গেছে। নিজের পরিবারের মানুষদের অসুবিধার কারণ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে আত্মহত্যা করা-ও ভালো।

আদিত্য এখন নিজেও বিশ্বাস করে, ওর জন্যই মা আর বোনের এই অবস্থা। ওর মা আগের থেকে আরও অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে । আদিত্য অনেকবার দেখা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আদিবা যখনই ওর মাকে বলে, ভাইয়া তোমার সাথে দেখা করতে চায়। একবারই শুধু কথা বলে চলে যাবে। তখন সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিৎকার করে বলেন ওই ছেলের নামটাও আমি শুনতে চাই না। অস্থির হয়ে উঠেন তিনি। আদিত্য নিজের জীবনকেই এখন ঘৃণা করে। কিন্তু যখনই ভাবে এই জীবন আর রাখবে না। তখনই পাশে এসে দাঁড়ায় শুভ। আদিত্যকে সাপোর্ট দেয়৷ শুভ নিজের অফিস করে, নিজের বিয়ের জন্য কেনাকাটা করে৷ আবার বাড়িতে এসে আদিত্যর পাশে থাকে। ওকে সবসময় সাপোর্ট দেয়। নিজের ছোট ভাইয়ের মতো আদিত্যকে আগলে রাখে। বিয়ের নানান কেনাকাটা করতে শুভ আর ওর বোন যায়। আদিত্যকে অবশ্য সাথে নিয়ে যেতে চায়, কিন্তু আদিত্য কোথাও যেতে চায় না। নিজেকে চার দেয়ালের আড়ালে রাখে সবসময়।

বিকেলে আদিত্য নিজের ঘরের বারান্দায় বসে গিটারে টুংটাং আওয়াজ করছিল। তখনই কলিং বেল বেজে ওঠে। গিটারটা পাশে রেখে দরজা খুলে দিতে যায় ও। দরজা খুলে দেওয়ার পর বাইরে শুভকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয় আদিত্য। অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বলল, ‘ভাই আপনি এইসময় বাড়িতে! আপনার অফিস তো আরো পরে ছুটি হয়।’

শুভ মৃদু হাসি দিয়ে ভিতরে আসে। জামা-কাপড়ের ব্যাগগুলো টেবিলে রেখে সোফায় বসতে বসতে বলল - অফিস থেকে সেই দুপুরের বের হয়েছি। রাতের লঞ্চে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবো। তাই দুপুরে বসের কাছে ছুটি নিয়ে মার্কেটে গিয়েছিলাম। সবার জন্য জামা-কাপড় কিনে এখন বাড়িতে এলাম।

আদিত্য মৃদুস্বরে বলল, ‘ওহ।’

নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য পিছন ফিরল আদিত্য। শুভ ওকে থামিয়ে দিয়ে হাতে কয়েকটা ব্যাগ ধরিয়ে দিলো। আদিত্য বিস্ময়কর দৃষ্টিতে শুভর দিকে তাকাল। শুভ বলল, ‘এগুলো তোর জন্য। এখানে জামা-কাপড়, জুতো সহ প্রয়োজনীয় সব জিনিসই আছে। তাড়াতাড়ি প্যাকিং করে নে সব কিছু।’

- প্যাকিং করে নিবো মানে! কোথায় যাবো আমি?

- বোকার মতো প্রশ্ন করছিস কেন? বললাম না রাতের লঞ্চে গ্রামে যাবো।

- সে তো তুমি যাবে। তাহলে আমি প্যাকিং করে কি করব?

- তুইও আমার সাথে যাবি।

অনুরোধের স্বরে আদিত্য বলল, ‘প্লিজ ভাই, আমাকে মাফ করেন। আমি কোথাও যাবো না। আপনি তো জানেন আমি বাড়ি থেকে বের হই না। আমার ভালো লাগে না এইসব হৈচৈ। তাই বলছি আপনি যান। ততদিন আমি আপনার বাড়ি পাহাড় দিই।’

আদিত্যকে ধমক দিলো শুভ। আদিত্য কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে মাথায় নিচু করে ফেলল। শুভ রাগী কণ্ঠে বলল - ফাজলামি করছিস আমার সাথে৷ আমি গ্রামে যাবো বিয়ে করতে, আর তুই এখানে আমার বাড়ি পাহাড় দিবি। তুই ভাবলি কীভাবে আমি তোকে বাড়িতে একা রেখে চলে যাবো? তোর যে মানসিক অবস্থা, তাতে কখন কি উল্টো পাল্টা করে বসবি। তাছাড়া আমি থাকাবস্থায় মাঝে মাঝে যেই পাগলামি করিস, আমি নিজেই ভয় পেয়ে যাই। আমি চলে গেলে না জানি কি করবি? তাই বলছি, এত কথা না বলে প্যাকিং শুরু করে দে।

- কিন্তু ভাই, আমার কাছে সবকিছুই আছে। তবুও আপনি এতকিছু এনেছেন কেন?

শুভ হাসতে হাসতে বলল, ‘তুই আমার ছোট ভাই। বড় ভাই হিসেবে কিছু দায়িত্ব আমার আছে, তাই না? কিছুদিন পর আমার বিয়ে, এ-উপলক্ষে এগুলো আমি তোকে উপহার দিলাম।’

আদিত্য আর কিছু বলল না। ঘরে গিয়ে জামা-কাপড়গুলো একটা ব্যাগে গুছিয়ে নিলো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো। শুভ আর আদিত্য নামায পড়তে গেল। নামায শেষ করে দু'জনের বাড়িতে এসে তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া করল। শুভ বলল, ‘তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। এখান থেকে বাস স্ট্যান্ডে যাবো, তারপর বাসে করে সদরঘাট। এরপর টিকিট কেটে লঞ্চে উঠবো।’

হাসতে হাসতে শুভ বলল, ‘আমি জানি ভাই। এর আগে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম তোমাদের জেলার কোনো একটা গ্রামে। তাই প্রায় সবই চিনি।’ - ওহ।

অতঃপর দু’জনে রেডি হয়ে রিকশা নিয়ে রওয়ানা দিলো বাস স্ট্যান্ডে। ১০ মিনিটের মতো লাগল স্ট্যান্ডে পৌঁছাতে। বাস স্ট্যান্ডে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য আর শুভ। কিছুক্ষণ পর আদিত্য বলল, ‘এখান থেকে সদরঘাট প্রায় ঘন্টাখানিক এর রাস্তা। আপনি একের পর এক বাস ছেড়ে দিচ্ছেন কেন বুঝতে পারছি না?’

- আরে ভাই, আর একটু অপেক্ষা কর। খুব বেশি সময় লাগবে না। আদিত্য আর কিছু বলল না। একরাশ বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর রিকশা দিয়ে একটা মেয়ে এলো। ওদের থেকে কিছুটা দূরে রিকশাটা থামল। প্রথমে মুখটা অস্পষ্ট থাকলেও মেয়েটা কিছুটা সামনে আসার পর আদিত্য ওর মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলো। মেয়েটাকে দেখেই প্রচণ্ড ঘাবড়ে গেল আদিত্য। ভয়, কৌতূহল আর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল মেয়েটার দিকে৷ নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বেরিয়ে গেল কথাটা, ‘ইরা এখানে!’

ইরা ও আদিত্যর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দৃষ্টিতে আছে আতঙ্ক। ভয়ে ভয়ে শুভর পাশে গিয়ে দাঁড়াল ইরা। আদিত্য মনে মনে ভাবতে লাগল, ‘ইরা এখানে কী করছে? শুভ ভাই তো বলেছিল উনার বোন আসবে। আমাদের সাথে গ্রামে যাবে। কিন্তু ইরা তো শুভ ভাইয়ের বোন নয়। শুভ ভাই বলেছিল উনার বোন হোস্টেলে থাকে। কিন্তু ইরা তো হোস্টেলে থাকে না, ও নিজের বাড়িতে থাকে। তাছাড়া ইরা এখানকার স্থানীয়। ওর বাবা-মা ওর সাথেই থাকে। কিন্তু শুভ ভাইয়ের বাবা-মা তো গ্রামে থাকে। আর উনারা তো এখানকার স্থানীয় নয়৷ ইরা শুভ ভাইয়ের বোন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাহলে কি?’

আতঙ্কে উঠল আদিত্য। ও ভাবছে শুভ ভাইয়ের সাথে যার বিয়ে হচ্ছে, সে ইরা। কিন্তু এটাও সম্ভব নয়, কারণ ইরা আয়ানকে ভালোবাসে। তাহলে শুভ ভাইয়ের সাথে ইরার কীসের সম্পর্ক? ভয়ে ঘামছে আদিত্য। সাথে ইরা ও।

(চলবে...) আরো পড়ুন ‘অদ্ভুত নিয়তি’-এর ৬ষ্ঠ পর্ব - ধারাবাহিক উপন্যাস : অদ্ভুত নিয়তি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড