• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাণ্ডুলিপির কবিতা

হারানো পা অথবা ঝলসে যাওয়া নূপুর

  বঙ্গ রাখাল

০৮ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:০৪
ছবি
প্রচ্ছদ : কাব্যগ্রন্থ ‘লন্ঠনের গ্রাম’

হারানো পা অথবা ঝলসে যাওয়া নূপুর

আমার দীর্ঘদিন ধরে এক অসুখ, পায়ের কাছে কুয়াশার মেঘ হামাগুড়ি খায়, সন্ধ্যা তারারা চোখের কার্নিশে জমা করে মৃতের ধবলজোসনা তবুও আমি আজ ছায়ামুখি মৃত মানুষ। জিন্দার শরীরে মুর্দার বেশ ধরে নীরব গাছের মতো নিখোঁজ চোখে তোমার পানে চেয়ে থাকি, এলোমেলো বাতাস আজ বখাটে বালিকা সেজে নগ্নতাকে নখে করে উড়ে যায় স্তব্ধতার দেহে। বেড়ে ওঠা স্তন দুটো চরের কাছে লাভ-ক্ষতির দিনে উপমার লাগাম ধরে টানে... তোমার গন্ধমাখা চুলে হাত রেখে আজো খুঁজে ফিরি, গাঙ্গের কূলে হারিয়ে ফেলা সময়...তোমার লাল পেড়ে শাড়িতে বেশ ভালো মানায়, পায়ে নূপুর। যে রাতে চাঁদ উঠে ডুবে যায় সে রাতেই হারিয়ে গেল কামিজের শূন্যফল, পা-এক মৃত শরীর... নরম আলোয় ঝুলে থাকে শূন্যতার পাপেট।

নিষিদ্ধ ফুল

আঙ্গুল মেপে চলে আঙ্গুলের দূরত্ব। শয্যার পাশে আঙ্গুলের মাঘীচাঁদ চোখ বুজে খুঁজে নেয়-দীর্ঘ কালো ফসিলের হাড়। অসমাপ্ত কুনোবুড়ির হাতে রাখা কদমেরচিঠি- রাস্তার চৌদিকে প্রহরীর নির্জীব বিষণ্ণসন্ধ্যা ছুঁয়ে যায় বুড়োদের শেওলাশরীর।

রাস্তার মোড়ে রাত্রির শবদাহ পথ ধরে হেঁটে যায় গোধূলির পরিজাত শিথানের বালিশ, লজ্জাদের ধুলো... মৃত্তিকার পদচ্ছাপ জলকেলি করে মিয়াবাড়ির বন্দেগাছ। ঝিনাইদহের পায়রারা উড়ে যায় বৃন্দাবনের কারাগারে...অগ্নিঘুম শুকিয়ে গেলে অরণ্য পার করে বিবর্ণ সময়। গ্রামের এক আলাভোলা ছেলে রাত গভীর হলে ক্ষয়প্রাপ্তদেহে নিষিদ্ধ ফুলের ঘ্রাণ মাখে...

পাখি রাজ্যে সকলেই পাখিচাতক

গন্ধময় পৃথিবীর কোলের কাছে প্রেমিকার নিটোল বিষণ্ণবোধ। জানালার শরীরে এক ক্ষুধার্ত নাবিকের আর্তনাদ। রোগশয্যায় শোনালেন- বেদনার কারণ- পাখিরাজ্যে সকলেই পাখির চাতক। মধ্যবর্তী শরীর রাস্তা মাপে ধানের চিরধরা মাঠে, প্রাচীন দূরবর্তী পাঠশালায় যাচ্ছে রাজন্যঘোড়া, অবগুণ্ঠনে পাতালের মাদি ছাগলের দল দৃষ্টিমান্দাসে রমণী সাজে- পুকুরের বাঁশঝাড়ে কানাকুয়ার পিছনফেরাভোর।

মাদুরে মোড়ানো দেহ টুকরো করে কাটা, মাটিরঘ্রাণ এতো সুন্দর কেন? বিরহের রাত বিপ্লব দেবে দৃষ্টির পূর্ণতায় ... রোমালে থাকে কৃষকের রক্ত ঘামের ঘ্রাণ

অন্ধতা গভীর হলেই দীর্ঘশ্বাস অভিমান জড়ানো বুকে ঢেলে দেয় ক্লান্তির ট্রেন, দৃশ্যেরবুনট চোখের কার্নিশে কুয়াশাউঠোন জুড়ে খেয়ে নেয় ধানের দরদী আদর। শালিকের তেড়ে আসা পিঁপড়াজীবন দাঁড়িয়ে থাকে কুমার নদের মাঝিদের বুকের কাছে, চোখের পাতায়...কুমারের মৃৎপাত্রে জমা হয় কৃষকমাটির মাংস পোড়া রোমালে ঘ্রাণ।

জন্মসূত্রে তোমায় শস্যকামী বলে জানি... তুমি ধূলোমেঘ চাষার অবারিত স্বপ্নের ক্ষেতপোড়াধান...

মুগ্ধ নির্জতায়- হোসেন লিপি

কামারশালার নিভন্ত যৌবনে যে কবি বুনে যায় মুক্তিযুদ্ধের গান তাঁর কবিতা খাতায় জমা হয় বিসর্জনের চরিত্র। কখনো পাড়ার বউরা মাথার ঘোমটা তুলে যশোদার ছেলের হাতের কাছে রেখে যায় লোবানের ঘ্রাণ। সম্রাট ঘুমায়- আমলকী বাগান নিমজ্জিত হয়। একদা মাঠের সোনালী আঁশ বুকে রেখে বুক সাধুহাটির মানুষদের হয়ে বিনিদ্রায় কাটায় রাত। রাত নিজের মানচিত্রকে চিনিয়ে দেয়। গায়েনের মুখে বিমর্ষস্বদেশ। পাণ্ডুল হয়ে আছে মাটির উত্তপ্ত পৃথিবীবায়ু।

ভেতরে ভেতরে গহীন হাহাকার। ক্ষয়ে যায় জুতার তালু। নতমুখে যে কবি নাগরিক আলোয় দেখে নেই- সন্ন্যাসীমুখ। বদলের হাওয়ায়- কখনো কখনো বদলে দেয় প্রিয় বধূর উন্নাসীচোখ। গত রাতেও জেগে জেগে গল্পের প্লট সাজিয়ে ধানচারারা আগাম বার্তা পাঠায় মরালের কাছে- কী করে আয়নায় দেখা যাবে মুখ? মরালের জ্বর। কফিনে মোড়া গল্প আড্ডায়, শোনা যায় ডাক- হোসেন, হোসেন, হোসেন...

গ্রাম

সীমানার চৌদিকে ভাঙ্গা ত্রাস দাঁড়িয়ে আছে নিঝুম বৃষ্টির অন্ধ বধিরতাকে মাতার প্রাচীনমাদুলি সঙ্গী করে। কিছু দূর এগিয়ে গেলেই পড়ো মাঠ, ধূ ধূ জমিন, পড়ে থাকে বুকে শতবর্ষী শূন্যতা আর কৃষক রক্তবীজ দ্বৈরথে রেখে হৃদয়ে রোপে মহাজানিক দুঃখ। জীবনের একটি সময়, একটি রাত পোয়াতি হলে পাখির ডানায় ঝরে গরিবিচিঠি- ভাষার সঙ্গে বাক্যের জোনাই রক্ত ঢালে শতাব্দী বাসর।

মুখোমুখি আমি তুমি দাঁড়িয়ে ধুলো ওড়ার রৌদ্রে কাঁপনে মুহুর্তে ভীষণ যন্ত্রণা বুকে অন্ধ অবিশ্বাস

ব্যথিত করে ভাতঘুমে ছেড়ে আসা ধানের প্রহরশোভিন গ্রাম।

শীতবুড়ি মৃতের ঘুম ঘুমিয়ে ছিল

সন্ধ্যারাত পার হতেই পায়ের নিচেই ধানের মলিন শৈশব -উচ্ছ্বাসের বিছানা মেলে ধরে। সোনাবউ মুগ্ধতার পুতুল হয়ে হাঁস পুষে রাখে চোখের পাতায় আর আগুনের জলে পাখিপাড়া কুমারি হয়ে নদীতে সাঁতরে মরে।

এতো এতো চিত্র, এতো এতো অনুভূতি সবই মিছা কথা- কহনের মানুষ নাই ফাঁসির সেলে যে মেয়েটা ধর্ষিত হয় সেও নাকি বিছানায় শুয়ে মাসিকের রক্ত চেখে ছিল আর শীতেরবুড়ি দৃশ্যের সাঁতার কেটে রোদ্দে দাঁড়িয়ে বেওয়ারিশ লাশদের কফিন গুনতে গুনতে মৃতের ঘুম ঘুমিয়ে ছিল...

এসব গেল ছাই চাপা আগুনের গল্প এবার বিশুদ্ধ ঈশ্বরদের গল্প শুনতে শুনতে বিবস্ত্র হলো- কতিপয় নারীর অসমাপ্ত দৃশ্যের পাইথন।

আরও পড়ুন- পিতলি ঘড়ার বর্শ্যি দেড় টাহা দাম

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড