অন্তরা অন্তু
গত বছরে ভাবলাম এই সামারে কোথাও যাই। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে আর ভিসাজনিত জটিলতা কম যে দেশ মনে হলো সেটা হলো দুই মহাদেশের নগর ইস্তাম্বুল। এই নগরীর মানুষের উপার্জনের সিংহভাগ আসে পর্যটকদেরকে বিভিন্ন সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাই এরা পর্যটকদের খুবই সমীহ করে, তাছাড়া সবাই কম বেশি ভালোই ইংরেজি পারে, তাই কোনো প্রকার অসুবিধা ও হয় না।
কেউ যদি যান ইস্তাম্বুল এ যে দর্শনীয় স্থানগুলো না দেখলেই নয় সেগুলো হচ্ছে-
সুলতান আহমেদ মসজিদ/ নীল পাথরের মসজিদ/ব্লু মস্ক :
১৬০৯ সালে নির্মিত হওয়ার পরও দেখলে মনে হবে কোনোভাবেই এর বয়স ১০০ বছরের বেশি নয়। এখানে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিষেধ আছে। যেমন নামাজের সময় দর্শনার্থী প্রবেশ করা যাবে না। আর জামা কাপড় মসজিদে প্রবেশের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু শালীন হতে হবে। তবে কর্তৃপক্ষ থেকে পোশাকের ব্যবস্থা আছে। চাইলে কেউ নামাজও পড়তে পারবেন। সবকিছুরই সুব্যবস্থা আছে।
হাজিয়া সোফিয়া/আয়া সোফিয়া :
এই স্থাপনা যেন দুই ধর্মের মানুষের জন্য এক মিলন স্থল (খ্রিস্ট ও ইসলাম ধর্মাবলম্বী)। এত সুন্দর এর ভেতরের ঝাড়বাতিগুলো যেন কোনো অনুষ্ঠানের জন্য সাজানো হয়েছে। উপরে ওঠার জন্য কোনো সিঁড়ি নেই বরং পাথরের ঢালু পথ। এখানে যেমন আছে বড় ক্রুশবিদ্ধ যিশু তেমনি ক্যালিগ্রাফিতে লেখা 'আল্লাহ্' এর নাম। তবে এই স্থাপনা এখন কোনো ধর্ম চর্চার জন্য ব্যবহৃত হয় না। বরং পর্যটকদের কাছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক উদাহরণ।
বসফোরাস প্রণালী :
এই প্রণালীটিই মূলত ইউরোপ অংশকে বিভক্ত করেছে এশিয়া অংশ থেকে। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে আমি বলব এই প্রনালীতে যে লঞ্চ ভ্রমণগুলো হয় সেগুলোতে যাওয়ার জন্য। কারণ পুরোনো সব স্থাপনা গড়ে উঠেছে এই প্রনালীকে কেন্দ্র করে, তাই সেগুলো দেখা যায়।
দুই ধরনের লঞ্চ ভ্রমণের ব্যবস্থা আছে। একটি হচ্ছে আপনি শুধু পর্যটক হিসেবে ভাড়া করতে পারেন, আরেকটি হচ্ছে যেটা ইস্তাম্বুল এর মানুষ প্রতিদিন তাদের যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করে। আমি দ্বিতীয়টি নিতে উৎসাহিত করব।তা তে খরচ অনেক কম আর দ্রুত সবকিছু দেখা যায়। পুরো ভ্রমণ শেষ হতে ২ ঘণ্টার মতো লাগে।
গ্র্যান্ড বাজার :
কিছু কিনেন বা নাই কিনেন তবু আমি বলব একবার ঢু মারতে। কী নেই সেখানে! পুরো যেন রংয়ের মেলা। তবে ঝাড়বাতি, কার্পেট আর সোনার গহনা যদি কেউ আসলেই কিনতে চান তাহলে এই জায়গার তুলনা নেই। সব হাতে তৈরি কার্পেট আর ঝাড়বাতি এর কারুকাজ দেখলে মাথা নষ্ট হওয়ার জোগাড়। তবে একদামে কিছুই কিনবেন না। কারণ, একদাম বলে সেখানে কিছু নেই। আপনার দামাদামির সব অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।
মশলার বাজার/স্পাইস বাজার :
দুনিয়ার সব ধরনের মশলাই পাবেন। অনেক প্রকারের চা, তেল, চাকভাঙা মধু, কেশর, ওষুধি তেল সব পাবেন। দুটি জিনিস কিনতে ভুলবেন না। এক, "টার্কিশ ডিলাইট" আর "বাকলাভা”। যে দোকান থেকে কিনবেন যদি বলেন এটি আপনি অন্য দেশে নিয়ে যাবেন তাহলে ওরা সুন্দর করে ভ্যাকুয়াম প্যাকেট করে দিবে।
আর খাবারের কথা কি বলব। আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন খাদক। ওদের কাবাব, মিটবল, মাছের স্যান্ডুইচ, হরেক রকমের মিষ্টি খেতে খুবই সুস্বাদু আর অনেক "ফ্রেশ"। তাই কব্জি ডুবিয়ে খেয়েছি আর তিনদিনে আমার ওজন কম করে হলেও ৫ কেজি বেড়েছে। তাই যদি যান আমি বলব, খান আর উপভোগ করুন এই শহরের মনোরম দৃশ্য (যদিও এখনকার রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে যাওয়ার আগে অবশ্যই খোঁজ নিয়ে যাবেন)।
তবে অন্যান্য দিক দিয়ে ইস্তাম্বুল খুবই শান্ত শহর। মানে চুরি, ছিনতাইয়ের ভয় নেই। রাতের বেলাও খুব নিরাপদ। আমরা রাত ১টার সময় খাবার খেয়ে হাঁটতে হাঁটতে হোটেলে ফিরেছি কোনো সমস্যা হয়নি।
বি.দ্র. ইস্তাম্বুল এর রাস্তায় তাজা ফলের রস পাওয়া যায়, ওরা একধরনের লোহার যন্ত্রের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে ফল থেকে রস বের করে। সেটা অবশ্যই পান করে দেখবেন একবার, এরপর আর বোতলের কেনা জুস বা মেশিনে বানানো জুস ভালো লাগবে না।
খরচ : আমার আসলে আলাদা আলাদা করে হিসেব মনে নেই। কারণ, ওই দিকটা আমার উত্তমার্ধ দেখেছিল। আর ভিসার প্রসেসিং খুব সহজ। অনলাইনেই পাওয়া যায়। তারপর এয়ারপোর্টে সিল দিয়ে দেয়। আর হোটেল চার দিন তিন রাতের জন্য খরচ ২১,০০০ টাকা ছিল। কারণ, এপ্রিল আসলে টুরিস্ট সিজন না। এর চাইতে সস্তাতেও পাওয়া যায়।
আমরা যে হোটেলে ছিলাম সেটা থেকে আয়া সোফিয়া, বসফোরাস, ব্লু মস্ক ৫-১৫ মিনিটের হাঁটা পথ। তাই দাম একটু বেশি ছিল। তবে আমি বলব এটাই ভালো কারণ এয়ারপোর্ট এর পাশের হোটেলগুলো অনেক সস্তা, তবে ট্যাক্সি ভাড়া দিতে দিতে আর যাওয়া আসা করতে করতে আর কোনো মজা থাকবে না।
যাই হোক সব মিলিয়ে (বিমান ভাড়া, খাবার, হোটেল, বাস আর লঞ্চ ট্যুর, টুকটাক শপিং মিলিয়ে খরচ পড়েছিল ১ লাখ ২০ হাজারের মতো)। তবে শপিং খুব সাবধানে করবেন। পুরো দেশি পদ্ধতিতে দামাদামি করতে হবে কিন্তু!
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড