• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হংকংয়ে বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৪৪
হংকংয়ে পুলিশ মোতায়েন
হংকংয়ের সড়কে বিক্ষোভ দমনে পুলিশের শক্ত অবস্থান। (ছবিসূত্র : ইয়াহু নিউজ)

ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলের দেশ হংকংয়ে গণতন্ত্রকামীদের সরকার বিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনের পর অবশেষে বাতিল হলো বিতর্কিত আসামি প্রত্যর্পণ বিল। যদিও এর পরও বিমানবন্দর লক্ষ্য করে উত্তেজিত জনতার এই বিক্ষোভ দমনে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে গোটা দেশে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করেছে প্রশাসন।

এর আগে গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দেশটির চীনপন্থি শাসক ক্যারি ল্যাম এক টেলিভিশন ভাষণে আকস্মিকভাবে বিতর্কিত বিলটি পুরোপুরি বাতিলের ঘোষণা দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের মতে, প্রশাসনের উদ্যোগটি নিহাতই সামান্য এবং এর জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই এটি এখন আর যথেষ্ট নয়।

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দেশটির চীনপন্থি সরকার সকল গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদ সমাবেশ বন্ধ করে একটি কার্যকরী আলোচনায় বসার আহ্বান জানায়।

গত জুনে শুরু হওয়া দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে নেতৃত্ববিহীন এই আন্দোলন মূলত অনলাইনের মাধ্যমে আয়োজন করা হয়। যার অংশ হিসেবে গত শনিবার স্থানীয় সময় বিকালে বিমানবন্দর চত্বরে বিক্ষোভ আয়োজনের জন্য অনলাইনে বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হয়।

মূলত এসবের প্রেক্ষিতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সকল বাস, ফেরি ও রেল স্টেশনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এসব দেখে মনে করা হয় এবারের বিক্ষোভ প্রতিহত করতেই প্রশাসন এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।

ক্যারি ল্যাম

হংকংয়ের চীনপন্থি শাসক ক্যারি ল্যাম। (ছবিসূত্র : সিনহুয়া)

এ দিকে গত বুধবার এক টেলিভিশন ভাষণে ক্যারি ল্যাম বলেছিলেন, 'জনগণের উদ্বেগের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একমত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। এই বিক্ষোভে হংকংয়ের জনগণ দুঃখ পেয়েছে। যে কারণে বর্তমানে দেশ একটি চরম বিপদজনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সরকার বা সমাজের প্রতি যে অসন্তোষই থাকুক না কেন, সমাধানের পথ সহিংসতা হতে পারে না।'

ক্যারি ল্যাম তার ভাষণে আরও বলেছেন, 'বর্তমানে সহিংসতা বন্ধ করা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং সামাজিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সরকার সহিংসতা ও অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে কঠোর হবে।' তাছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি তিনি নিজেও বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের মাধ্যমে সরাসরি জনগণের সঙ্গে কথা বলে তাদের উদ্বেগ জানার চেষ্টা করবেন।'

অপর ক্যারি ল্যামের এই ঘোষণাকে ভুয়া এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণা বলে এরই মধ্যে অবহিত করেছেন গণতন্ত্রপন্থি রাজনীতিবিদ উই চি ওয়াই। তার মতে, 'আমরা অবশ্যই পুলিশি বর্বরতা থামাতে সক্ষম হব। নয়তো বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।' তাছাড়া দেশটির গণতন্ত্রকামী অ্যাকটিভিস্ট জোসুয়া ওয়াং ধারাবাহিক টুইট বার্তায় বলেছেন, 'সব দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এই সরকার বিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।'

এর আগে গত ১৫ জুন হংকংবাসীর ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বিতর্কিত এই বিলটি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম। তবে কেবল স্থগিত নয়, বিলটি সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে পরবর্তীতে আন্দোলন শুরু করে দেশটির গণতন্ত্রকামী লাখো জনতা। মূলত এসবের প্রেক্ষিতে গত ৯ জুলাই বিলটি মৃত বলে দাবি করেন তিনি।

গণতন্ত্রকামীদের অভিযোগ, বেইজিংপন্থি এই শাসকের প্রস্তাবিত এই বিলে সন্দেহভাজন অপরাধীকে চীন এবং তাইওয়ানে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে দেশের আইনকে দুর্বল এবং মানবাধিকার হরণ হবে।

তারা মনে করছেন, বিলটি পাস হলে তা হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পাবে। তাই দেশের স্বার্থে বিলটি পুরোপুরি বাতিল করাই সরকারের জন্য উত্তম।

হংকংয়ে বিক্ষোভ

হংকংয়ের সড়কে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ করছেন জনগণ। (ছবিসূত্র : এনবিসি নিউজ)

প্রায় ১৫০ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের অধীনে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় অঞ্চলটি শক্তিশালী চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক এই দিবসটির ২২ বছর পূর্তিতে গত ১ জুলাই আন্দোলনে সড়ক অবরোধ করেন গণতন্ত্রকামী লোকজন। প্রতি বছরের এই দিনে কর্মকর্তারা এক দিকে সরকারি ভবনগুলোতে উৎসব পালন করেন আর অপর দিকে গণতন্ত্রকামীরা অবস্থান নেন রাজপথে।

দীর্ঘদিন যাবত হংকং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও ২০৪৭ সাল থেকে অঞ্চলটিকে স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দেয় দেশটি। এর আগে গত মাসেও চীনপন্থি এক বিল নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলের এই দেশ।

মূলত চীন এবং তাইওয়ানে আসামি প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত একটি বিলের বিপক্ষে তখন গোটা দেশে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে আন্দোলনকারীদের মূল ক্ষোভ দাঁড়ায় চীনের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে।

আরও পড়ুন :- ফের বিদেশি ট্যাংকার আটক করল ইরান

বেইজিংয়ের দুর্বল আইন ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ডের কারণে হংকংয়ের সাধারণ মানুষ সেখানে কাউকে ফেরত পাঠাতে চাইছেন না। তাদের মতে, পার্লামেন্টে বিলটি পাস হলে তা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে চীনা হস্তক্ষেপের সুযোগ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে।

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড