পাক-ভারত সংঘাত : মাশুল গুণছে এয়ার ইন্ডিয়া

পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর করা হামলার পর সে দেশের আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পাক-সরকার। আর এ নিয়ে এখনো চড়া মাশুল গুণে যাচ্ছে ভারতীয় জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স এয়ার ইন্ডিয়া।

দেশটির আকাশসীমা দিয়ে চলাচল করতে না পারায় এয়ারলাইন্সটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। খবর এনডিটিভির।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন সপ্তাহ যাবত পাকিস্তানের আকাশসীমা ভারতীয় বিমানের জন্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে এয়ার ইন্ডিয়ার ইউরোপ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানগুলোকে এখন অনেক পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে।

এতে বাড়তি সময়, জ্বালানি এবং রিফিউয়েলিং স্টপেজের কারণে এয়ার ইন্ডিয়ার ইতোমধ্যে প্রায় এক কোটি ডলারের মতো অতিরিক্ত খরচ হয়েছে, যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, খুব শিগগিরই এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক নাও হতে পারে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে ভারতীয় বিমানের হামলা চালানোর পরের দিন থেকেই এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য বন্ধ হয়ে যায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ আকাশসীমা।

ফলে দিল্লি থেকে তাদের ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানগুলোকে এখন প্রথমে দক্ষিণামুখী হয়ে গুজরাটে প্রবেশ করতে হচ্ছে। এরপর আরব সাগর ও পার্সিয়ান গাল্ফ পাড়ি দিয়ে উড়তে হচ্ছে নিজ গন্তব্যের দিকে। এমনিতেই এয়ার ইন্ডিয়া দীর্ঘদিন যাবত আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। নতুন এই পরিস্থিতিতে তাদের সমস্যা সামনে আরও বেশ অনেকগুণ বেড়ে যাতে পারে।

এয়ার ইন্ডিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপক অশোক শর্মা বলেন, ‘যেহেতু ঘুরপথে যেতে হচ্ছে তাই খরচ তো কিছুটা বাড়বেই। তাছাড়া জার্নির সময়ও স্বাভাবিকভাবে আগের চেয়ে অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে।’

অশোক শর্মা আরও বলেছেন, ‘বেশি লম্বা রুট মানেই বেশি জ্বালানি, যার পুরোটা একবারে ভরে নিয়ে যাত্রা শুরু করাও সব সময় সম্ভব নয়। ফলে রাস্তায় কোনো একটা ট্রানজিট পয়েন্টে নতুন করে তেল ভরার জন্য বিমানকে রিফিউয়েলিং স্টপও নিতে হচ্ছে।’

দিল্লি থেকে এতদিন এয়ার ইন্ডিয়ার যে ফ্লাইটগুলো সরাসরি নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি কিংবা শিকাগোতে যেত সেগুলোকেই এখন জ্বালানি ভরার জন্য থামতে হচ্ছে আমিরাতের শারজাহ অথবা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। আর এতেও প্রচুর ব্যয় বেড়ে গেছে।

এমন কী লন্ডন অথবা প্যারিস থেকে এয়ার ইন্ডিয়ায় চেপে দিল্লি আসতে অতিরিক্ত দু-তিন ঘণ্টা সময় লাগছে। এ বিষয়ে ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব সালমান হায়দার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, ‘পরিস্থিতিটা পাকিস্তানকেও বেশ অসুবিধায় ফেলছে। কাজেই আমরা আশা করছি, এর একটা সমাধান হয়তো খুব শিগগিরই বেরিয়ে আসবে।’

আরও পড়ুন :- পুলিশি হেফাজতে শিক্ষকের মৃত্যু : উত্তপ্ত কাশ্মীর

ভারতের সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ‘পাকিস্তান যখন পূর্ব আর পশ্চিম, দুভাগে বিভক্ত ছিল তখন ভারত তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিলেই তারা বিরাট বিপদে পড়ত।’

তিনি এও বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ সৃষ্টির পর সমস্যাটা সেভাবে হয়নি ঠিকই, তবে আজও ভারত যখন তাদের আকাশসীমা পাকিস্তানের জন্য বন্ধ করে দিচ্ছে, সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া তাদের কাছে বহু দূরের পথ হয়ে যাচ্ছে।’