ইউক্রেন ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞার পথে বাইডেন, পাল্টা হুঁশিয়ারি পুতিনের

বিতর্কিত ইউক্রেন ইস্যুসহ পূর্ব ইউরোপে নিরাপত্তা নিয়ে টেলিফোনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত আড়াইটার কিছু পরে উভয় নেতা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ফোনে আলাপ করেন।

এ সময় ইউক্রেন ইস্যুতে প্রয়োজন হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অবশ্য বাইডেনকে উদ্দেশ্য করে পাল্টা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

তিনি বলেছেন, মস্কোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তা বিশাল ভুল হবে। এতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হবে। শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি নিউজ, বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

গণমাধ্যমগুলো বলছে, ইউক্রেনের সীমান্তের কাছে রাশিয়ার সাম্প্রতিক সৈন্য সমাবেশকে ঘিরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও উদ্বেগের মাঝেই যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকালে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বৈশ্বিক এই দুই পরাশক্তি দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি ইউক্রেনকে নিয়ে এই সংকট আরও গভীর হয়েছে; কেননা ক্রেমিলন নিরাপত্তার বর্ধিত নিশ্চয়তা চাইছে এবং তার দাবিকে জোরাল করতে পরীক্ষামূলকভাবে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

মূলত রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের অনুরোধের প্রেক্ষিতেই ফোনালাপটি আগামী ১০ জানুয়ারি জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার আগেই অনুষ্ঠিত হলো। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, বৃহস্পতিবারের এই ফোনালাপ ওয়াশিংটন সময় বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে শুরু হয়। যা শেষ হয় দীর্ঘ ৫০ মিনিট পর। মস্কোতে সে সময় প্রায় মধ্যরাত। এই দুই নেতার মধ্যে চলতি মাসে এটিই ছিল দ্বিতীয় ফোনালাপের ঘটনা।

আরও পড়ুন : তাইওয়ান স্বাধীনতা চাইলে ‘চূড়ান্ত পদক্ষেপ’ নেবে চীন

বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপের পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কোনো অবনতি ঘটলে কিংবা ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া আক্রমণ চালালে মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে ওয়াশিংটনের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে; বৃহস্পতিবারের ফোনালাপে বাইডেন তা আবারও নিশ্চিত করেছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ হবে ‘বিশাল ভুল’ এবং এটি রুশ-মার্কিন সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি করবে বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।

রুশ প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকফ দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের (নিষেধাজ্ঞা আরোপ) পদক্ষেপ দুই দেশের সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে ভাঙ্গন ধরাবে। তার ভাষায়, এটি হবে বড় ধরনের ভুল যার পরিণতি হবে মারাত্মক।

মস্কো পরিষ্কার করে বলেছে, ইউক্রেনকে কখনোই সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাশিয়া লিখিতভাবে চায়। এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক এই প্রদেশে ন্যাটোর সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করা হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি চায় রুশ কর্তৃপক্ষ। অবশ্য জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, রাশিয়ার এই দাবিগুলো কখনো কার্যকর হতে পারে না।

অবশ্য বৃহস্পতিবারের এই ফোনালাপের আগেই হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, ফোনালাপে ইউক্রেন সংকট নিরসনে পুতিনকে কূটনৈতিক পথ খোলা থাকার কথাই মূলত জানিয়ে দেবেন জো বাইডেন। কিন্তু রাশিয়ার এসব দাবি আগামী মাসে জেনেভা বৈঠকে আলোচনা করা হবে এবং এটি এখনো পরিষ্কার নয় যে, সংকট সমাধানে বাইডেন পুতিনকে ঠিক কি ছাড় দিতে পারেন।

আরও পড়ুন : সমুদ্রে ভাসতে থাকা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে ইন্দোনেশিয়া

এ দিকে গুরুত্বপূর্ণ ওই ফোনালাপের আগে নববর্ষ এবং ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একটি বার্তা পাঠান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অন্যান্য নেতাকে পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তার সঙ্গে এটিও ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

ওডি/কেএইচআর