ফ্রান্সে ইসলাম বিদ্বেষী নতুন আইন পাস

ফ্রান্সে সম্প্রতি চরমপন্থিদের বেশ কয়েকটি হামলার পর ইসলামের উগ্রতাকে দমন করতে একটি বিল পাস করেছে ম্যাক্রোর মন্ত্রিসভা। ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর জোর প্রচেষ্টার পর আসা খসড়া এই আইনটিতে হোম-স্কুলিংয়ের নিয়মকানুন এবং জাতিবিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য রুখতে কঠোরতা আরোপ করবে।

ফ্রান্সে এবং এর বাইরে অনেক সমালোচক তার সরকারকে দুষছেন যে ধর্মকে টার্গেট করতেই এই আইন ব্যবহার করা হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্যাসতেক্স এটিকে 'সুরক্ষা আইন' বলে অভিহিত করেছেন যা মুসলিমদেরকে উগ্রতার হাত থেকে মুক্তি দেবে বলে মনে করেন। খবর বিবিসি নিউজের।

জ্যঁ ক্যাসতেক্স জোর দিয়ে বলেছিলেন, এটি ধর্মের বিরুদ্ধে বা বিশেষ করে মুসলিমদের ধর্মের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়নি। 'প্রজাতন্ত্রের মূলনীতির সমর্থনে' এই আইনটি অনলাইনে হেট স্পিচ বা জাতিবিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য ঠেকাতে বিধি-নিষেধ আরোপ করবে এবং খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার জন্য অন্য মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য জানাতে ইন্টারনেটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করবে।

গত অক্টোবরে শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে শিরশ্ছেদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই আইনকে দেখা হচ্ছে। মহানবীর কার্টুন শিক্ষার্থীদের দেখানোর কারণে এক হামলাকারীর হাতে নিহত হয়েছিলেন ৪৭ বছর বয়সী প্যাটি। তদন্তে বেরিয়ে আসে যে তার বিরুদ্ধে একটি অনলাইন ক্যাম্পেইন বা প্রচারণা চলছিল।

বিতর্কিত এই আইনের অধীনে গোপনে চলা যেসব স্কুল ইসলামি আদর্শ প্রচার করে সেগুলোর উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং হোম-স্কুলিং বা বাড়িতে শিক্ষার বিষয়টির ওপর কড়াকড়ি আরোপ হবে। আইনটি বহুবিবাহের উপরও নিষেধাজ্ঞা দেবে।

আরও পড়ুন : ভারতের আক্রমণের আশঙ্কায় পাকিস্তানে সেনা সতর্কতা

এর আওতায় একাধিক স্ত্রী রয়েছে এমন আবেদনকারীকে ফ্রান্সে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হবে না। যেসব চিকিৎসক মেয়েদের কুমারীত্ব পরীক্ষা করবেন তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা জরিমানা হতে পারে।

মুসলিম সংস্থাগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়ে নতুন নিয়ম আসবে এবং তহবিল পেতে হলে তাদেরকে ফ্রান্সের 'প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধে' সমর্থন করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় পোশাক পরিধানের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটির আওতা বাড়ানো হবে। এই নিষেধাজ্ঞা এখন থেকে যানবাহন কর্মী, সুইমিংপুল এবং মার্কেটে যাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

খসড়া আইনটি এতদিন বিবেচনাধীন ছিল। কিন্তু কথিত ইসলামপন্থিদের সাম্প্রতিক হামলা এটিকে আবারও এটিকে এজেন্ডা হিসেবে উত্থাপিত হওয়ার পেছনে কাজ করেছে। ফ্রান্সে যে তিনটি হামলা অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে প্যাটির হত্যাকাণ্ড তাদের মধ্যে অন্যতম। অক্টোবরে নিসে একটি চার্চে ছুরি হামলায় তিনজন নিহত হয়।

প্যারিসে শার্লি এবদো ম্যাগাজিনের দপ্তরের কাছে সেপ্টেম্বরে ছুরি হামলায় দুইজন গুরুতরভাবে আহত হয়। ২০১৫ সালে এই ম্যাগাজিনের কার্যালয়েই একটি প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা।

আরও পড়ুন : 'কারাবাখ বিজয়' উদযাপনে আজারবাইজানের পথে এরদোগান

সেক্যুলারিজমসহ ফরাসি 'প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধে'র একজন কট্টর সমর্থক প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো। তিনি ইসলামকে সংকটে থাকা ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং শার্লি এবদোর ইসলামের নবীর কার্টুন প্রকাশের অধিকারের প্রতি সমর্থন করেন তিনি।

এর ফলে বেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন ম্যাক্রো। তুরস্কের সাথে সম্পর্কে এরই মধ্যে চিড় ধরেছে এবং প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এই প্রস্তাবনাকে 'খোলা উস্কানি' এবং ম্যাক্রোকে 'মানসিকভাবে অসুস্থ' বলে মন্তব্য করার পর তা আরও খারাপ হয়েছে।

উল্লেখ্য, এবার বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং লেবাননে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কূটনীতিক স্যাম ব্রাউনব্যাকও এর সমালোচনা করে বলেছেন: ‘যখন আপনি কঠোরহস্ত হবেন তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে’।

এবার খোদ ফ্রান্সেও কিছু বামপন্থি রাজনীতিবিদ এই প্রস্তাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন যে এই প্রস্তাবনা মুসলিমদের জন্য অসম্মানজনক হতে পারে। লা ম্যঁদে সংবাদপত্র বলেছে, অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায় যারা হোম-স্কুলিং করে থাকে তারাও এই আইনের বিরোধিতা করতে পারে।

আরও পড়ুন : সংবাদ প্রকাশের জন্য অর্থ নিবে গুগল-ফেসবুক

কিন্তু প্যারিসে থাকা বিবিসি নিউজের প্রতিবেদক লুসি উইলিয়ামসন বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর ওপর চাপও ছিল। ফ্রেঞ্চ সেক্যুলারিজমের নামে ইসলামের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি দেশের অভ্যন্তরে জনপ্রিয় হলেও রাষ্ট্রের জন্য নাজুক অবস্থা তৈরি করতে পারে।