• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শিশু হত্যার ছবিটি ভুয়া : চীনকে ক্ষমা চাইতে বলছে অস্ট্রেলিয়া

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:২৩
শিশু হত্যার ছবিটি ভুয়া : চীনকে ক্ষমা চাইতে বলছে অস্ট্রেলিয়া
আফগান শিশুকে হত্যা করছে অস্ট্রেলিয়ার সেনা সদস্য (ছবি : সিনহুয়া)

টুইটারে বেইজিং কর্তৃপক্ষের পোস্ট করা একটি ছবি নিয়ে নতুন করে বিবাদে জড়িয়েছে এশিয়ার পরাশক্তি চীন ও ক্ষমতাধর দেশ অস্ট্রেলিয়া। বিতর্কিত ওই ছবিতে একজন অস্ট্রেলিয় সেনাকে একটি আফগান শিশুকে হত্যা করতে দেখা যায়। যদিও ক্যানবেরা বলছে, ছবিটি আসলে ভুয়া। এ ধরনের ভুয়া ছবি পোস্ট করার জন্য চীনকে ক্ষমা চাইতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, এ ধরনের ঘৃণ্য ছবি টুইটারে শেয়ার করার জন্য চীনের গভীরভাবে লজ্জিত হওয়া উচিত।

বিশ্লেষকদের মতে, এমন এক সময় ঘটনাটি ঘটল যখন দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।

অস্ট্রেলিয় সেনাদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে নিরীহ বেসামরিক মানুষ এবং বন্দিদের হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে এই ছবিতে সেটার উল্লেখ করা হয়েছে।

গত মাসের গোড়ার দিকে এক রিপোর্টে বলা হয়, ২০০৯ এবং ২০১৩ সালের মধ্যে ২৫ জন অস্ট্রেলিয় সেনা ৩৯ জন আফগান বেসামরিক নাগরিক এবং বন্দিকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিল। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এর প্রমাণ মিলেছে। অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্স ফোর্সের (এডিএফ) তদন্তে বেরিয়ে আসা এই তথ্য ব্যাপক নিন্দার ঝড় তোলে। বিষয়টি এখন পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।

আরও পড়ুন : খুন হওয়া বিজ্ঞানীকে দাফনের সময় ভয়ঙ্কর প্রতিশোধের অঙ্গীকার ইরানের

সোমবার (৩০ নভেম্বর) চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিজিয়ান ঝাও একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ান একজন সেনা রক্ত মাখা একটা ছুরি এক শিশুর গলার কাছে ধরে আছে। পাশে দাঁড়ানো শিশুটি একটি ভেড়াকে ধরে আছে। ক্যানবেরার দাবি, এই ছবি বানোয়াট।

অস্ট্রেলিয় সেনাদের বিরুদ্ধে দুই জন ১৪ বছরের আফগান কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যার যে অভিযোগ খবরে এসেছিল। মনে করা হচ্ছে, সেই অভিযোগের কথা আরও তুলে ধরার লক্ষ্যে চীন এই ছবি পোস্ট করেছে।

এডিএফ অস্ট্রেলিয় সেনাবাহিনীর হাতে ‘অবৈধ হত্যার’ এবং বাহিনীর মধ্যে ‘যুদ্ধবাজ সংস্কৃতির নির্ভরযোগ্য প্রমাণ’ পেয়েছে। তাদের রিপোর্টে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, অধস্তন সেনাদের তাদের প্রথম হত্যার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বন্দিদের গুলি করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।

ঝাও-এর টুইটে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয় সেনাদের হাতে বেসামরিক আফগান নাগরিক এবং বন্দিদের হত্যার ঘটনা মর্মান্তিক। আমরা এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের কঠোর নিন্দা জানাচ্ছি। দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আহ্বান জানাচ্ছি।

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিক্রিয়া

অস্ট্রেলিয়া টুইটারকে এই পোস্ট তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। তারা এটাকে ‘ভুয়া তথ্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। মরিসন এই পোস্টটি ‘প্রকৃত অর্থে কদর্য, গভীরভাবে অপমানসূচক ও খুবই আপত্তিকর’ বলে বর্ণনা করেছেন।

আরও পড়ুন : ইসরায়েলি বিমানের জন্য এবার নিজেদের আকাশ খুলে দিল সৌদি

তিনি বলেন, বিতর্কিত এই পোস্ট দেওয়ার কারণে চীন সরকারের লজ্জা করা উচিত। এটি করে বিশ্বের মানুষের কাছে তাদের ভাবমূর্তি ছোট হয়ে গেছে। এটা একটা ভুয়া ছবি এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য এটা চরম অপমানজনক।

তার মতে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য অস্ট্রেলিয়া একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে। এটি যে কোনো গণতান্ত্রিক ও উদারমনা দেশের কাছে কাম্য।

স্কট মরিসন স্বীকার করেছেন যে, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার সম্পর্কে নিঃসন্দেহে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে তিনি বলেছেন, তার মানে এই নয় যে এভাবে সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে।

তিনি চীনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশও অস্ট্রেলিয়ার প্রতি চীনের আচরণের ওপর দৃষ্টি রাখছে।

এই দুটি দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে দুই সম্পর্কে যে বড় ধরনের টানাপড়েন চলছে তা এখন নতুন করে আবার খুবই খারাপ দিকে মোড় নিয়েছে।

আরও পড়ুন : ‘২০ বছর ধরে ফখরিজাদেহকে মারতে চাইছিল শত্রুরা’

গত সপ্তাহে ঝাও বলেন, অস্ট্রেলিয়ার এই যুদ্ধাপরাধের প্রতিবেদনে মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো সব সময় যে বড় বড় বুলি আওড়ায়, তা যে কত বড় ভণ্ডামি তা পুরোপুরি প্রকাশ পেয়ে গেছে।

এই টুইট স্কট মরিসনকে এতটাই ক্ষুব্ধ করেছে যে, তিনি কূটনৈতিক শিষ্টাচার না মেনে এই প্রথম এমন কড়া মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, চীনের লজ্জা পাওয়া উচিত। এই পোস্টকে তিনি জঘন্য ও ঘৃণ্য অপমান হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

চীন এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সম্পর্ক যে কতটা তিক্ত হয়ে উঠেছে এটা তারই আরও একটা ইঙ্গিত। দুই দেশের মধ্যে বাকবিতণ্ডা যেভাবে ক্রমশ বাড়ছে তাতে চীন অস্ট্রেলিয়ার ওপর আর কী ধরনের বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে তা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও অস্বস্তি এখন চরমে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে সমস্যা রয়েছে। কিন্তু এই টুইট সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

দুই দেশের সম্পর্কে এতটা অবনতির কারণ কী?

চলতি বছর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে দ্রুত অবনতি ঘটেছে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মহামারি কীভাবে শুরু হলো, তা নিয়ে অনুসন্ধানের আহ্বানে অস্ট্রেলিয়া নেতৃত্ব দেওয়ার এবং অস্ট্রেলিয়ার বিষয়ে চীনের নাক গলানোর অভিযোগ নিয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে।

আরও পড়ুন : ভারতে ২৬৭ চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ

সাম্প্রতিক কয়েক মাসে চীন বেশ কয়েকটি বাণিজ্য বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে যা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির জন্য বড় রকমের ধাক্কা। এসবের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ওয়াইন, বার্লি এবং গরুর মাংসসহ প্রায় ১২টি পণ্য চীনে আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ এবং কিছু পণ্যের আমদানি বন্ধ করে দেওয়া।

অস্ট্রেলিয়া চীনের এই পদক্ষেপকে অর্থনৈতিক জবরদস্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

নভেম্বর মাসের গোড়ায় অস্ট্রেলিয়ার চীনা দূতাবাস স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর কাছে ১৪টি নীতির একটি তালিকা পাঠিয়ে বলেছে, এসব নীতির ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার পদক্ষেপ দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট করেছে।

এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে চীনা বিনিয়োগ প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত, চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়েকে ফাইভ জি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া থেকে নিষিদ্ধ করা, এবং ‘শিনজিয়াং, হংকং ও তাইওয়ান সংক্রান্ত ঘটনাবলীতে অব্যাহতভাবে উস্কানিমূলক হস্তক্ষেপ’। যদিও অস্ট্রেলিয়া বলছে, তারা তাদের নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন করবে না।

আরও পড়ুন : ট্রাম্পের করোনা উপদেষ্টার পদত্যাগ

সোমবার মরিসন নিশ্চিত করেছেন, চীনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য অস্ট্রেলিয়ার অনুরোধ চীন বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে।

সূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড