আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের একটি রেলস্টেশনে বাবার চায়ের দোকানে কাজ করতেন। একথা তিনি এবং তার দল বহুবার বলেছে। যদিও সে ব্যাপারে কোনো তথ্য ভারতীয় রেলওয়ের কাছে নেই বলে জানা গেছে।
তথ্যের অধিকার আইন অনুযায়ী রেলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে দামোদর দাসকে (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাবার নাম) ওয়াডনগর রেলস্টেশনে চায়ের দোকানের লাইসেন্স কবে দেওয়া হয়েছিল এবং সে সংক্রান্ত কোনো নথি পাওয়া যাবে কি না।
ভারতের আইন সংক্রান্ত সংবাদ দেয় এমন একটি নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট 'লাইভ ল' জানিয়েছে যে, হরিয়ানার এক আইনজীবী পবন পারিখের এই আবেদনের উত্তরে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন বলেছে, অনেক পুরনো ঘটনা এটি এবং রেলের আহমেদাবাদ বিভাগের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই।
এই প্রথম নয়, এর আগেও রেল বিভাগ জানিয়েছিল যে স্টেশন চত্বর ও ট্রেনে উঠে চা বিক্রি করার জন্য নরেন্দ্র মোদীকে কোনো লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল কি না, তা নিয়ে কোনো তথ্য রেলের কাছে নেই।
আরও পড়ুন : মুসলমানরাই আমিরাতকে বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি দেবে বলছে ইরান
কংগ্রেস সমর্থক ও সমাজকর্মী তেহসিন পুণাওয়ালা তথ্য অধিকার আইনে ওই প্রশ্ন করেছিলেন।
'প্রধানমন্ত্রীর বাবার কি কোনো চায়ের দোকানই ছিল না?'
প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক বন্ধু এবং গুজরাটের প্রবীণ সাংবাদিক সতীশ মোরির কথায়, রেলের কাছে এই তথ্য না থাকাই স্বাভাবিক, কারণ ওয়াডনগর গ্রামের স্টেশনে ওরকম কোনো দোকানই ছিল না।
তার মতে, যে দোকানটি তার বাবা চালাতেন, সেটি একটি চায়ের ঠেলাগাড়ি আর সেটাও থাকত স্টেশনের বাইরে। পরে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে স্টেশনের কাছেই রাস্তার ওপরে একটা ছোট দোকান করেন মোদীর বাবা।
আরও পড়ুন : পাল্টাপাল্টি সামরিক মহড়ার ঘোষণা তুরস্ক-গ্রিসের
মোদীর চায়ের দোকান নিয়ে প্রশ্ন এর আগেও উঠেছে। কেউ কেউ বলেছেন, যে সময়ে মোদী ওয়াডনগরে বড় হয়েছেন, সেই সময়ে নাকি ওই স্টেশনটাই ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর জীবনীকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, মোদীর ছোটবেলা নিয়ে গবেষণা করতে তিনি যখন ওয়াডনগরে ২০১২ সালে গিয়েছিলেন। তখন তিনিও খোঁজ করেছিলেন মোদীর বাবার চায়ের দোকানটির।
ওই স্টেশনে তিনিও দোকানটির সন্ধান করতে পারেননি। যদিও স্থানীয়রা তাকে স্টেশনের সামনে একটা ছোট গলিতে খুবই ছোট একটা দোকান দেখিয়ে বলেছিল যে সেটাই মোদীর বাবার দোকান ছিল।
আরও পড়ুন : পাল্টাপাল্টি সামরিক মহড়ার ঘোষণা তুরস্ক-গ্রিসের
নীলাঞ্জন আরও বলেন, ইংরেজিতে যাকে আমরা কিয়স্ক বলি, সেরকমই দোকান ওটা। ওখানকার মানুষ আমাকে বলেছিল যে, সেই দোকানে নিমকি আর বিস্কুট জাতীয় খাবার থেকে শুরু করে সেলাইয়ের সূচ - সবই পাওয়া যেত। সঙ্গে চাও বিক্রি হতো।
তার ভাষায়, 'গ্রামের দোকানে যেরকম হয় - একই দোকানে সব কিছু পাওয়া যায়। কিন্তু তার বাবার ওই দোকানে চা বিক্রি থেকে বোধহয় খুবই কম আয় হতো।
তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলছিলেন, যে সময়ে মোদী ওয়াডনগরে বড় হচ্ছেন, তখন খুবই ছোট একটা ছোট গ্রাম ছিল সেটা। মিটার গেজ রেল লাইনের একটা স্টেশন ছিল। দিনে একটা কি দুটো ট্রেন দাঁড়াত।
আরও পড়ুন : লেবাননে ফসফরাস বোমা হামলা চালাল ইসরায়েল
নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, কতজন লোকই বা নামত সারা দিনে! তাই চা বিক্রিটা খুবই একটা ছোট অংশ ছিল বলেই আমার মনে হয়েছে, কিন্তু সেই ভাবমূর্তিটাই তিনি এবং তার দল ব্যবহার করেছে।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, কারণ আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতাদের ছোটবেলাটা যদি খুব দারিদ্রের মধ্যে কেটে থাকে, সেটা একটা বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত হয়।
তার মতে, মনমোহন সিংও খুবই সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন, অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন, কিন্তু তিনি সেই ইতিহাস নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করতে কাজে লাগাননি। মোদীর ক্ষেত্রে তিনি এবং তার দল মনে করেছে, ইমেজ তৈরির জন্য এটাকে ব্যবহার করা যেতে পারে, তাই করেছে।
আরও পড়ুন : যুদ্ধবিমান কিনতে না দেওয়ায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কে ছেঁদ আমিরাতের!
নরেন্দ্র মোদীর চা বিক্রি করা নিয়ে এর আগেও যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই তার পড়াশোনার ডিগ্রি নিয়েও একাধিকবার সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিরোধী দলগুলো।
ওই প্রশ্নের মুখে বিজেপির তৎকালীন সভাপতি অমিত শাহ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানে যে স্নাতক ডিগ্রি পেয়েছিলেন, সেটা দেখান। কিন্তু সেই ডিগ্রি জাল বলে অভিযোগ করে বিরোধী দলগুলো।
আরও পড়ুন : হামাসের আক্রমণ থামাতে এবার কাতারের পথে ইসরায়েলি কমান্ডার
আবার গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'এন্টায়ার পলিটিকাল সায়েন্স' বা সম্পূর্ণ রাষ্ট্রবিজ্ঞান নামের যে বিষয়ে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান বলে বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছিল, সে রকম নামের কোনো বিষয় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে কবে থেকে পড়ানো শুরু হল, সেই প্রশ্নও করেছিল বিরোধীরা।
যদিও সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে কোনো ডিগ্রি জরুরি নয় বলেও মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড