• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কৃত্রিম হৃদপিণ্ড যেভাবে কাজ করে

  মো. সাইফুল ইসলাম

১৫ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:২৮
কৃত্রিম হৃদপিণ্ড
যে ব্যক্তির দেহে প্রথম কৃত্রিম হৃদপিণ্ড লাগানো হয়েছিল; (ছবি- সংগৃহীত)

আমরা জানি হৃদপিণ্ড খুবই অত্যাবশ্যকীয় একটি অঙ্গ। এটি ছাড়া আমরা বাঁচতে পারব না। হৃদপিণ্ড বা হার্টকে আবার ভালোবাসার সমার্থকও বলা হয়। শরীরের অভ্যন্তরে থাকা এ অঙ্গটি শরীরের সবকিছুই সচল রাখে।

মূলত হৃদপিণ্ড হচ্ছে একটি পেশিবহুল পাম্প। যা ফুসফুস ও পুরো শরীরের অক্সিজেন ও রক্ত সরবরাহের কাজ করে। বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে স্বাভাবিক মানুষের হৃদপিণ্ড প্রতিদিন ২ হাজার গ্যালন রক্ত পাম্প করে!

অন্যান্য যন্ত্রের মতো মানবদেহের এই যন্ত্রটিও একসময় কার্যক্ষমতা হারাতে পারে। আর এর কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে হতে পারে মৃত্যু। তবে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করে কার্যকারিতা হ্রাস প্রাপ্ত হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনীয়তা মেটানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ২ হাজারের কিছু বেশি হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু সবসময় হৃদপিণ্ডদাতা পাওয়া না যাওয়ায় প্রচুর রোগী মারা যায়। তবে ২ জুলাই, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জিউস হাসপাতাল হৃদপিণ্ডের রোগীদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করে। তারা প্রথম ‘অ্যাবিওকোর’ নামে প্রতিস্থাপনযোগ্য কৃত্রিম হৃদপিণ্ড মানব শরীরে স্থাপন করতে সক্ষম হন।

কৃত্রিম হৃদপিণ্ডের কথা শুনলে মনে হয় কোনো বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনীর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবেই হার্ট ফেইলিয়র হওয়া রোগীদের সংকটাপন্ন অবস্থায়ও কৃত্রিম হৃদপিণ্ড আশার সঞ্চার করছে।

কৃত্রিম হৃদপিণ্ড হচ্ছে একধরনের কৃত্রিম যন্ত্র। যে যন্ত্রটি শরীরের অভ্যন্তরে থাকা মূল হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা না থাকায় এটিকে সরিয়ে নতুন করে বসানো হয়। কৃত্রিম হৃদপিণ্ড কিন্তু আবার কার্ডিয়াক পাম্প নয়। কার্ডিয়াক পাম্প মূলত ভিন্ন ধরনের যন্ত্র। যা হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কার্ডিয়াক পাম্প মাত্র কয়েক ঘণ্টা কার্যকর থাকলেও জানা যায় কৃত্রিম হৃদপিণ্ড সর্বোচ্চ ১৭ মাস পর্যন্ত কার্যকর ছিল।

কৃত্রিম হৃদপিণ্ড শরীরে স্থাপন চিকিৎসাবিজ্ঞানে নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এছাড়াও এই কৃত্রিম হৃদপিণ্ডের প্রতিস্থাপন যথাযথভাবে সফল হলে প্রাকৃতিক হৃদপিণ্ডদাতার প্রয়োজনীয়তাও বহুলাংশে কমে যাবে।

যাই হোক, কৃত্রিম হৃদপিণ্ড কীভাবে মানুষের শরীরের কাজ করে সে সম্পর্কে জানা দরকার।

আমরা জানি, মানব হৃদপিণ্ডে চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে। প্রকোষ্ঠগুলো হচ্ছে–

• ডান অলিন্দ– যা রক্ত সংগ্রহ করে। • ডান নিলয়– এটি রক্ত পাম্প করে ফুসফুসে নিয়ে যায় ও রক্ত অক্সিজেনযুক্ত হয়। • বাম অলিন্দ– এটি অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে বাম নিলয়ে পাঠায়। • বাম নিলয়– বাম নিলয় থেকে রক্ত পুরো শরীরে ছড়িয়ে যায়।

কৃত্রিম হৃদপিণ্ডটির পাম্প করার অংশগুলো মূলত নিলয়ে স্থাপন করা হয়।

অ্যাবিওকোর কৃত্রিম হৃদপিণ্ডটি অ্যাবিওমেড কর্তৃক বিকশিত করা হয়েছিল। যন্ত্রটি হাইড্রোলিক পাম্পের নীতিতে কাজ করে। কীভাবে এটি কাজ করে তা জানার জন্য এই কৃত্রিম হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন উপকরণ সম্পর্কে জানতে হবে।

হাইড্রোলিক পাম্প- কৃত্রিম হৃদপিণ্ড মূলত হাইড্রোলিক পাম্পের নীতি অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। হাইড্রোলিক পাম্প চাপ তৈরি করে তরলের প্রবাহ নিশ্চিত করে।

কপাটিকা- মূল হৃদপিণ্ডের কপাটিকার মতো কৃত্রিম হৃদপিণ্ডেও কপাটিকা থাকে। যা রক্ত প্রবাহকে একমুখী করে।

তারবিহীন শক্তি সঞ্চালন- এখানে দুটি তারের কুণ্ডলী থাকে। একটি অভ্যন্তরীণ ও অপরটি বহিঃস্থ কুণ্ডলী। এই পদ্ধতির কারণে চুম্বকীয় শক্তির মাধ্যমে বাইরের ব্যাটারি থেকে শক্তি অভ্যন্তরীণ ব্যাটারিতে সঞ্চালিত হয়। এই পদ্ধতির সুবিধা হচ্ছে এতে ত্বকে কোনো ছিদ্র করে তার প্রবেশ করাতে হয় না। তাই ত্বকে কোনো প্রদাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

অভ্যন্তরীণ ব্যাটারি- রোগীর পেটের ভেতর একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি স্থাপন করা হয়। যা ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হৃদপিণ্ড চালানোর ক্ষমতা রাখে। সাধারণত স্বল্প সময়ের কাজের জন্য যেমন- গোসলে গেলে বাইরের ব্যাটারির সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে, অভ্যন্তরীণ ব্যাটারি দিয়ে হৃদপিণ্ড কার্যক্ষম থাকে।

বহিঃস্থ ব্যাটারি- এই ব্যাটারি ভেলক্রো-বেল্টের সাহায্যে কোমরে আটকানো থাকে। এই ব্যাটারি ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা শক্তির জোগান দিতে পারে।

কন্ট্রোলার- কৃত্রিম হৃদপিণ্ডের পাম্প করার গতি ও কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের জন্য রোগীর পেটের বাইরে একটি কন্ট্রোলার লাগানো থাকে।

অ্যাবিওকোর কৃত্রিম হৃদপিণ্ড টাইটেনিয়াম এবং প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি প্রায় ৯০০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে।

২ জুলাই, ২০০১ সালে প্রথম যখন কৃত্রিম হৃদপিণ্ড মানব শরীরে স্থাপন করা হয় তখন চিকিৎসকরা ৭ ঘণ্টা সময় নিয়ে অস্ত্রোপচার করেছিলেন। সে সময় মূল হৃদপিণ্ডের নিলয় সরিয়ে কৃত্রিম হৃদপিণ্ড স্থাপনের জন্য শত শত সেলাই দিতে হয়েছিল। প্রয়োজন হয়েছিল অনেক দক্ষ হাত। সে সময় দুই জন প্রধান শল্যচিকিৎসক, ১৪ জন নার্স, পারফিউশনিস্ট, অ্যানেস্থিওলোজিস্ট ও অন্যান্য কর্মীর প্রয়োজন হয়েছিল।

আরও পড়ুন- স্ট্রোক ও হৃদরোগ থেকে মুক্তি পেতে যা করবেন

সেদিন রবার্ট টুলস নামক এক রোগীর শরীরে কৃত্রিম হৃদপিণ্ড স্থাপন করা হয়েছিল। তিনি কৃত্রিম হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পর প্রায় ৫ মাস বেঁচে ছিলেন। এছাড়াও আরও ১০ জন ব্যক্তি এই হৃদপিণ্ড নিয়েছিলেন। তারাও কয়েক মাস সুস্থ থেকে মারা যান।

তবে অ্যাবিওকোর হৃদপিণ্ড তাদের জীবনের আয়ু গড়ে মাত্র ৫ মাস বৃদ্ধি করেছিল। তাহলে একটু ভাবুন, স্রষ্টা প্রদত্ত সুস্থ হৃদপিণ্ড নিয়ে আমরা কতটা সুখে আছি।

সূত্র- সায়েন্স ডেইলি, সায়েন্স.হাউস্টাফওয়ার্ক.কম, সিনকার্ডিয়া.কম

ওডি/এনএম

স্বাস্থ্য-ভোগান্তি, নতুন পরিচিত অসুস্থতার কথা জানাতে অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ পেতেই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ দেবার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড