সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
প্রশ্নটি শুনে চমকে উঠলেন নিশ্চয়ই? সেটাই স্বাভাবিক। আর যাই হোক, কেউ চাইবেন না যে তার হার্ট অ্যাটাক হোক। আপনার হৃদপিণ্ডের কোন সমস্যা নেই এই ভেবে স্বস্তি পাচ্ছেন? ভয়ের ব্যাপার হল, সুস্থ হৃদপিণ্ডের ক্ষেত্রেও হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। আর এই হার্ট অ্যাটাককে বলা হয়- ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’।
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক কী?
একজন মানুষের হৃদপিণ্ডের রক্ত পরিবাহী ধমনীগুলোতে বাধা সৃষ্টি হলে সেগুলো কাজ করতে পারে না। অক্সিজেন এবং পুষ্টিও পৌঁছায় না ঠিকভাবে। তখন হার্ট অ্যাটাকের উৎপত্তি হয়। সাধারণত, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগে রোগীর মধ্যে সর্দি, অতিরিক্ত ঘাম এবং বুকব্যথা অনুভব করেন। অন্যদিকে, সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের সময় এমন কিছুই অনুভব করেন না আক্রান্ত ব্যক্তি। হুট করেই তার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়।
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?
হার্ট অ্যাটাক এবং সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক— দুটোরই কারণ এক। বছরের পর বছর আমাদের হৃদপিণ্ডের ধমনীগুলোর চারপাশে কোলেস্টেরল ও চর্বির স্তর জমতে থাকে। এরপর একদিন হুট করে সেগুলো ধমনীতে প্রচণ্ড চাপ প্রদান করে এবং রক্তপ্রবাহ বন্ধের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক হয়।
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ কত?
আমরা অনেকেই এ ব্যাপারে না জানলেও সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ অনেক বেশি। সমস্ত হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে শতকরা ৫০ শতাংশই সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক। এক্ষেত্রে, যথাযথ চিকিৎসার অভাবে কিছু না বুঝেই মৃত্যুও হয় রোগীর। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগারের পরিমাণ বেশি থাকায় তাদের স্নায়ু কম কাজ করে। ফলে, সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক তাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আমার সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক আছে কিনা কীভাবে জানবো?
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের চিহ্ন খুবই কম। এক্ষেত্রে, আপনার পিঠ, চোয়াল, বাহুতে ব্যথা হতে পারে। অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে যাওয়া, তন্দ্রাভাব, পেট বা বুক জ্বালা করা— এগুলোকে খুব সাধারণ ব্যাপার হিসেবে গ্রহণ করলেও এগুলো সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের নিদর্শন। অনেকে এই চিহ্নগুলোকে গ্যাস্ট্রিক হিসেবে ধরে নেন। তবে আপনার শরীরকে যেহেতু সবচাইতে ভালো আপনিই জানেন, তাই শরীরে যেকোনো পরিবর্তন হলেই চিকিৎসকের কাছে চলে যান। অন্তত, এক্ষেত্রে ঝুঁকি নেওয়াটা একেবারেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
দ্রুত চিকিৎসকের কাছে না গেলে ফলাফল কতটা ভয়াবহ হবে?
শুনতে ভয়ঙ্কর মনে হলেও, এই চিহ্নগুলো যদি সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের জন্য হয়, তাহলে এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এ ব্যাপারে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কীভাবে সাহায্য করবেন?
একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আপনার হৃদপিণ্ডে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের নিদর্শন দেখলে এর কারণগুলো— অর্থাৎ, বাড়তি চর্বি, কোলেস্টেরল ইত্যাদি কমিয়ে নেবেন। এছাড়াও, আপনার হৃদপিণ্ডের ধমনীগুলোতে রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিত করে হার্ট অ্যাটাককে থামাবেন।
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে আমি কী করতে পারি?
ব্যাপারটা যেহেতু আপনার নিজের শরীর কেন্দ্রিক, তাই এক্ষেত্রে আপনারও অনেক বেশি করণীয় আছে। ভাবছেন, কী কী করবেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রথমত, সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের কোন নিদর্শন দেখলেই চিকিৎসকের কাছে চলে যান এবং ধমনীতে কোন ব্লক আছে কিনা সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
দ্বিতীয়ত, উচ্চ রক্তচাপ, বাড়তি কোলেস্টেরল, ধূমপান, অতিরিক্ত মেদ ইত্যাদি অনেক কারণ কাজ করে হার্ট অ্যাটাকের পেছনে। সেগুলোকে চিহ্নিত করুন এবং একটু একটু করে এই নিদর্শনগুলোকে আপনার দৈনন্দিন জীবন থেকে দূর করার চেষ্টা করুন। চিকিৎসক যে ওষুধ দেবেন তা নিয়মিত সেবন করুন।
এবং সর্বশেষে, খাবার এবং শরীরচর্চার দিকে খেয়াল রাখুন। শরীরচর্চা করেন না এমন ব্যক্তিরা অতিরিক্ত ওজন আছে, অথচ শারীরিক পরিশ্রম করেন এমন ব্যক্তির চাইতে তিনগুণ বেশি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে থাকেন।
তো? কী ভাবছেন? এই নিদর্শনগুলো আপনার শরীরে আছে কি? যদি এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে দেরি না করে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে চলে যান আর সুস্থ জীবন যাপন করুন।
মূল লেখক : টে লেসলি, কার্ডিওলোজিস্ট, মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল
আরও পড়ুন : যে কারণে ডায়েট প্ল্যানে রাখবেন এই 'সুপার ফ্রুটগুলো'
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড