• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ইবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত

নতুন কমিটি নাকি পুনর্বহাল?

  আবু সালেহ শামীম

২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৩৭
ছাত্রলীগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ (ছবি : সংগৃহীত)

নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের ২৯ অক্টোবর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর গত তিন মাস ধরে স্থবির ইবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম। গত ২৬ জানুয়ারি সারাদেশে ছাত্রলীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি।

তবে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মৌখিক অনুমতি সাপেক্ষে কয়েকদিন কার্যক্রম পরিচালনা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এরপর থেকে ইবিতে দৃশ্যত ছাত্রলীগের কোনো কার্যক্রম না থাকায় ছাত্রলীগ কর্মীদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

এ দিকে কমিটি পুনর্বহাল হবে নাকি নতুন কমিটি দেওয়া হবে সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কমিটির স্থগিতাদেশ পাওয়ার পর থেকেই কর্মীদের মাঝে যেমন হতাশা বিরাজ করছে, ঠিক তেমনি আলোচনা ও সমালোচনাও চলছে ব্যাপক। একদিকে স্থগিতাদেশ প্রাপ্ত কমিটি অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে কমিটি পুনর্বহালে ব্যাপারে তদবির করছেন বলে বলে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ইবি শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো হল- দীর্ঘ দেড় বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতেই এককভাবে ক্ষমতা হস্তগত করে রাখা, বিভিন্ন বিষয়ে ইবি প্রশাসনকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাপ প্রদান করা, বাংলাদেশ সরকার মাদক কারবারির সঙ্গে যুক্ত ও নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করলেও ইবির হলগুলোতে মাদকের আখড়া বানানো এবং অবৈধভাবে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে পুলিশের কাছ থেকে মাদকসহ আটক হওয়া মাদকসেবী ও ইভটিজিংকারীদের ছিনিয়ে নেওয়া, দলীয় অপর পক্ষের কর্মীদের মারধর করা, টর্চার সেল গঠন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা। এর সঙ্গে টেন্ডার বাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও অনলাইন পত্রিকায় অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং ইবি শাখা ছাত্রলীগের ওপর স্থগিতাদেশ দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

যদিও ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম বরাবরই আনিত অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করে আসছেন এবং কমিটি পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন। তারা দাবি করেন যে, দীর্ঘদিন ইবির হলগুলো শিবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আমাদের সময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় সম্পূর্ণ শিবির মুক্ত হয়েছে এবং হলগুলো এখন সম্পূর্ণ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে।

অপরদিকে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ সূত্রে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এহেন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে এই কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি দেওয়ার ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন ইবি শাখার ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতা। তারা স্থগিতাদেশ প্রাপ্ত ইবি শাখা ছাত্রলীগের প্রতি ক্ষোভও প্রকাশ করেন।

গত ২৭ জানুয়ারি একটি অনলাইন পোর্টালে 'ছাত্রলীগের কার্যক্রম নেই ইবিতে, হতাশ নেতাকর্মীরা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা শেয়ার করে নতুন কমিটির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে ও স্থগিতাদেশ কমিটির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে একটি স্ট্যাটাস দেন ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কুষ্টিয়া সদর থানা শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আনিচুর রহমান আনিস।

দৈনিক অধিকারের পাঠকদের সুবিধার্থে তার স্ট্যাটাসটি পুরোপুরি তুলে ধরা হল-

'যারা ছাত্রলীগকে বাপের সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলকে যারা মাদকের আখড়া বানিয়েছিল, তাদের হাত থেকে ছাত্রলীগকে মুক্তি দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ। আশা করছি খুব শিগগিরই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস মুক্ত, মাদক মুক্ত তরুণ নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছাত্র সমাজের রাজনৈতিক চর্চা করার সুযোগ তৈরি করে দেবে'।

এ বিষয়ে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, 'ইবি শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, তা যদি সত্য হয়, তবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইমেজের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাকর হবে। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই–বাছাই করে বিবেচনা করবেন। এবং ইবিতে ছাত্রলীগের অচলাবস্থা কাটিয়ে তোলার জন্য খুব দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে আর বেশি কালক্ষেপণ না করে, উক্ত কমিটি বাতিল করে যত দ্রুত সম্ভব নতুন কমিটি দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।

ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘আমি আশা করি কেন্দ্রীয় কমিটি দ্রুত যথোপযুক্ত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে সংগঠন এমন বেহাল অবস্থা থেকে মুক্তি পায়'।

বিশেষ সূত্রে জানা যায়, মাঝখানে তথা গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি অনুষ্ঠিত হওয়ায়, নির্বাচনি প্রচারণা ও আনুষঙ্গিক কারণে এ বিষয়ে ততটা মাথা ঘামাতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ইবি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে আমি জানি না বা এ বিষয়ে আমার কোনো মতামত নেই। স্থগিত কমিটি এখন বাতিল হবে না পুনর্বহাল হবে এ বিষয়েও জানিনা। তবে কেন্দ্রীয় কমিটি যদি আমাকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয় অবশ্যই আমি দায়িত্ব পালন করব।

প্রতিবেদনটি লেখার সময় ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছ বক্তব্য নেওয়ার জন্য কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সঙ্গে দৈনিক অধিকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনেকগুলো গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয় এবং অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার জন্য আমরা তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেই। ইতোমধ্যে আমরা তদন্তকারী কমিটির কাছ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পেয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সবদিক বিবেচনা করে কমিটি পুনর্বহাল করা হবে না নতুন কমিটি দেওয়া হবে, সে বিষয়ে অতি শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড