• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষক নিয়োগে অপপ্রচার : সহকর্মীদের প্রতিবাদ

  বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি

০৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:০৮
বশেমুরবিপ্রবি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ছবি : সংগৃহীত)

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. জিনাত হুদা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদনের মাধ্যমে অভিযোগ করেন যা বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়। প্রকাশিত সংবাদের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে যৌক্তিক ও মানবিক প্রতিবাদ করেছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একাধিক শিক্ষকবৃন্দ।

প্রফেসর ড. জিনাত হুদা যে শিক্ষককে খণ্ডকালীন নিয়োগের অভিযোগ এনেছেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ হতে বিএসএস (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত শিক্ষক এসএসসি (দাখিল) ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এবং অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছিলেন।

নিয়োগ বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ড. জিনাত হুদা তার অনুগত ও মনোনীত যে প্রার্থীকে নিয়োগ না দিতে পারায় এই অভিযোগ এনেছেন তিনি তৎকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জগন্নাথ কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শেষ ব্যাচের ছাত্র এবং পরবর্তীতে আত্তীকরণের সুবিধা পেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজের গ্র্যাজুয়েট হওয়া শিক্ষার্থীকে নিয়োগ প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং নিয়োগ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ ড. জিনাত হুদার মতের সাথে দ্বিমত পোষণ করায় কাউকে নিয়োগ ব্যতিরেকে প্রথম বোর্ডটি বাতিল করা হয়।

পরবর্তী সময়ে অতি সম্প্রতি বশেমুরবিপ্রবি’র রিজেন্ট বোর্ড অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় আবেদনের যোগ্যতা সমসাময়িক ও উন্নত করায় প্রফেসর জিনাত হুদার মনোনীত উক্ত শিক্ষার্থী পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মৌখিক পরীক্ষার কার্ড না পেলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদনের মাধ্যমে (১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮) এই অভিযোগ করেন এবং রিজেন্ট বোর্ডের কিছু সম্মানিত সদস্যগণকে তা অবহিত করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীকে বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষক হিসেবে পাওয়া; উক্ত খণ্ডকালীন শিক্ষকের স্বামী বশেমুরবিপ্রবিতে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রায় দুই বছর মেধাবী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে একই ব্যাচে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় ১ম শ্রেণীতে ৩য় স্থান অধিকারী এবং গোপালগঞ্জের সন্তান; সংশ্লিষ্ট বিভাগে শিক্ষক সংকট; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের অন্য যে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদানের যোগ্যতা থাকা স্বামী-স্ত্রী বশেমুরবিপ্রবিতে একই বিভাগে চাকরি করলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম; গোপালগঞ্জের এমন মেধাবী সন্তানের শিক্ষক হিসেবে বশেমুরবিপ্রবিতে অগ্রগণ্যভাবে সম্মানজনক যোগদানের সুযোগ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তির কারণে উক্ত শিক্ষার্থীকে বশেমুরবিপ্রবি’র মাননীয় উপাচার্য খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।

এ ব্যাপারে ড. জিনাত হুদার অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত একটি তুলনামূলক নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া একজন শিক্ষার্থী যার বাড়ি গোপালগঞ্জ, তাকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রদানের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর অভিযোগ সত্য নয়। তবে, তার পছন্দের মূলত কলেজের গ্র্যাজুয়েট একজন শিক্ষার্থীকে নিয়োগ না দেওয়ায় তিনি আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ ও অপপ্রচার করছেন যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।'

উপাচার্য আরও বলেন, 'অভিযোগকারীর স্বামীও বর্তমানে একজন উপাচার্য এবং সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে যেখানে তার পছন্দের শিক্ষার্থী আবেদনের যোগ্যতা রাখেন না। তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্ড না পেলে কিংবা নিয়োগের জন্য যোগ্য বিবেচিত না হলে তা দোষের হবে কেন?

আরও উল্লেখ্য যে, একই শিক্ষার্থীকে নিয়ে অভিযোগকারী কুয়েটের ও একটি নিয়োগ বোর্ডে গিয়েছিলেন, যেখানে তাকে নিয়োগ দিতে না পেরে নিয়োগ বোর্ড মনোনীত অধিকতর যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিতে তাকে ও জামাত শিবির বলে বোর্ডে অভিযোগ করেছিলেন। এ ব্যাপারে উক্ত ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে কুয়েটের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত মোস্তফা মুকুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান যে, 'আপনি যা শুনেছেন তা সম্পূর্ণ সত্য। প্রফেসর জিনাত হুদা উনার মনোনীত জগন্নাথ কলেজের ওই প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে না পেরে আমাকে জামাত শিবির বানানোর অপচেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমাদের বর্তমান উপাচার্য তখন শুধুমাত্র প্রফেসর জিনাত হুদার কারণে বোর্ড বাতিল করে দেন এবং পরবর্তীতে প্রফেসর জিনাত হুদাকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ বোর্ড থেকেই বাদ দিয়ে দেন।'

বড় দু:খের বিষয় হল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যখন মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত ও উন্নত করার প্রত্যয়ে সম্প্রতি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে সনদ প্রদানসহ প্রচলিত রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন তখন শুধুমাত্র দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে প্রফেসর ড. জিনাত হুদা তারই বিভাগের নিজের মেধাবী শিক্ষার্থীর চাকরি প্রাপ্তির বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ ব্যাপারে উক্ত ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে, 'দাদার বাড়িতে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভাল কোন স্কুল না থাকায় আমার বাবা অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাকে একটি মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেয় যেখানে আমি শুধুমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করি। পরবর্তীতে একটি সরকারি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করি।'

যে শিক্ষার্থী দীর্ঘ সাত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা করে সুনামের সাথে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন, ২০১১-২০১৭ সাল পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আবাসিক ছাত্রী হিসাবে অবস্থান করেছেন, যার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে, হলে, কিংবা বিভাগে কোন আপত্তিকর রিপোর্ট নেই এবং যার পরিবার বিএনপি ও জামাত-শিবিরের রাজনীতির সাথে কোনভাবেই সম্পৃক্ত নন ( উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে প্রত্যয়ন প্রাপ্ত); তেমন একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর সাথে এ ধরনের প্রতিহিংসা পরায়ণতা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে মনে করেন খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং বশেমুরবিপ্রবি’র সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষকবৃন্দ।

তারা মনে করেন, এতে একদিকে উপাচার্য এবং দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। বিভাগের একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডে বিস্মিত হয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকের অনেক সহপাঠী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীসহ বিভিন্ন শিক্ষার্থীবৃন্দ।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড