• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শিশির স্নাত জাহাঙ্গীরনগর!

  আরিফুল ইসলাম আরিফ

০১ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৫৪
জাবি
শীতের জাহাঙ্গীরনগর (ছবি : সংগৃহীত)

‘বৃক্ষের পদতলে জীর্ণ পত্রের অশেষ উৎসব বাতাসে কিসের গন্ধ কাদের সংগীত একদিন ঘুম ভেঙে দেখি এসে গেছে শীত।’

হ্যাঁ, প্রকৃতিতে সত্যিই শীত এসে গেছে। তবে কবির কল্পনার মতো এতো সহজেই শীত আসেনি। সময়ের পরিক্রমায় শীত এসেছে পাঁচ ঋতু অর্থাৎ দশ মাসের বিরতির পর। হেমন্তের বিদায়ী লগ্নে প্রকৃতিতে এখন শীতের হাতছানি। কিন্তু তা যেন বোঝবার উপায় নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন যেন ভরা শীতকাল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি এখানকার অধিবাসীদের অকৃত্রিম ভালোবাসা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক গ্রামে পরিণত করেছে। তাই জাহাঙ্গীরনগরে শীতের আগমন কোনোভাবেই গ্রাম থেকে আলাদা নয়।

সবুজের নৈস্বর্গিক শোভামণ্ডিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শীত আসে চিরচেনা রূপের বাইরে আরও কিছু মুগ্ধতা নিয়ে। আসে অনবদ্য কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে। এবারও সারাদেশের মতোই জাবিতেও শীত এসেছে আগেভাগেই। তবে তাতে ক্যাম্পাসে শীতের যে বর্ণিল রূপ তাতে একটুও ছেদ পড়েনি।

জাবি

মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জাবি

শীত যে আসছে তা বোঝা যাচ্ছে গোধূলীর সোনালী সূর্য অস্ত না যেতেই মাঝারি কুয়াশার চাদরে আকড়ে ধরা প্রকৃতির দিতে তাকিয়ে। হিমেল বাতাসে হাড়ে কাঁপন ধরানো অনুভূতি ক্যাম্পাসবাসীর গায়ে এখনই জড়িয়ে দিয়েছে শীতের গরম কাপড়। তবে মজার ব্যাপর হলো এক্ষেত্রে বয়ষ্কদের চেয়ে ফ্যাশন সচেতন তরুণেরাই বেশি এগিয়ে। কেননা শীতকে শুধু প্রতিরক্ষাই নয় বরং শীতের কাপড়কে কি করে আরও ফ্যাশনেবল করে তোলা যায় সে চেষ্টার অন্ত নেই।

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায়...

‘শীতের বনে কোন সে কঠিন আসবে ব’লে শিউলিগুলো ভয়ে মলিন বনের কোলে আমলকি ডাল সাজল কাঙাল, খসিয়ে দিল পল্লব জাল’

শীতের রুক্ষ আর শুষ্ক প্রকৃতি নাকি রঙ-রূপহীন! অথচ প্রকৃতির প্রাচুর্যতায় ভরপুর এ ক্যাম্পাসটিতে রূপ লাবণ্যের কোনো ঘাটতি হয় না কখনোই। শীতে ক্যাম্পাসটির প্রকৃতি ও পরিবেশ সেজে ওঠে অন্যরকম সাজে।

জাবিতে শীত মানেই জাঁকালো। কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে গুটিসুটি পায়ে শীত আসার শুরুতেই আসতে শুরু করেছে শীতের পাখিরা। সাইবেরিয়ার তীব্র শীত থেকে বাঁচতে প্রতিবছর অতিথি পাখির আসর বসে এখানে। আর লেকগুলোও যেন পাখিদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ছিলো আগে থেকেই। লাল শাপলা হাসিমুখে স্বাগত জানিয়েছে এই অতিথি পাখিদের। সকালে ফুটন্ত শাপলাগুলোতে পাখিদের ল‍ুকোচুরি সে এক অভিভূত করার মতো দৃশ্য। শুধু তাই নয়, শীতে এখানকার ছাত্র-শিক্ষকের সকালের ঘুম ভাঙে অতিথি পাখির কলকাকলিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার’র পেছনের লেক, ট্রান্সপোর্ট সংলগ্ন লেকে এসেছে অন্তত কয়েক হাজার অতিথি পাখি। উপযুক্ত পরিবেশ আর নিরাপদ আশ্রয়ে এসব অতিথি পাখি এখানে নির্ভাবনায় মেতে থাকতে পারছে কলকাকলি ও জলকেলিতে। কেউ আবার ডুব সাঁতারে ব্যস্ত। কখনও কখনও চক্রাকারে উড়ে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাসের মুক্ত আকাশে। কখনোবা এসব পাখি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে খাবার জোগাড় করতে। তাদের এ কার্যকলাপ দেখতে এবং ক্যামেরাবন্দি করতে ক্যাম্পাসের অধিবাসীরা ছাড়াও প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য পাখিপ্রেমী পর্যটকের সমাগম ঘটছে। আসছেন বিদেশি দর্শনার্থীরাও।

জাবি

জীবন্ত হয়ে উঠেছে জাবি

শুধ‍ু পাখি নয়, জাবি’র লেকগুলোতে যেনো ফুলের মেল‍া বসেছে। লেকগুলোতে ফুটেছে সাদা ও লাল শাপলা যা দেখলে যে কারও মনে পড়বে শৈশবের দুরন্তপনার দিনগুলোর কথা, যখন মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে বকুনির ভয়কে উপেক্ষা করে খালে-বিলে কলার ভেলা, তালের ডোঙা অথবা ছোট্ট নৌকায় চেপে শাপলা বা কচুরিপানা ফুল তোলার স্মৃতি! বেগুনি শাপলার সুগন্ধে যে আবেগ আর সম্মোহনী শক্তি রয়েছে তা কেবল বেগুনি শাপলার সংস্পর্শে আসা মানুষই জানেন।

শুধু শাপলাই নয়, জাবি’র লেকগুলোতে ফুটে রয়েছে অসংখ্য কচুরিপানা ফুল। বিশ্ববিদ্যারয়ের ছোট বড় প্রায় ১৫ টারও বেশি লেক রয়েছে। প্রতিটি লেকে লেকে শাপলা আর কচুরিপানা ফুলে একাকার আর এর মাঝে মাঝে পাখিদের লুকোচুরি। সকালের শিশির ভেজা সাদা-হলুদ আর বেগুনি রঙে একাকার হয়ে যায় সেই কচুরিপানা।

জাবিতে শীতের আরেক বড় আকর্ষণ ক্যাম্পাসের পিঠার দোকানগুলো। শীতের পিঠা-পুলির আয়োজনেও পিছিয়ে নেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিঠার দোকানীরা। দুপুরের পর থেকেই রাত পর্যন্ত এসব দোকানে চলে শীতের নানা রকম পিঠা তৈরি। সারাক্ষণ এসব দোকানে ভিড় লেগেই থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা, পরিবহন চত্বর, অমর একুশের পাশে, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হলের মাঝখানের স্বপ্ন চত্বরসহ বিভিন্ন জায়গায় শীতের পিঠা তৈরি ও খাওয়ার ভিড় এতটাই যে, পিঠা পেতে গেলে অর্ডার দিয়ে রীতিমতো আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। শুধু ক্যাম্পাসের অধিবাসীরাই নয়, এই পিঠার টানে ছুটে আসেন সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকার আশপাশের অঞ্চলের মানুষজন।

জাবি

ফুটন্ত সাদা ও লাল শাপলা মনে করিয়ে দিচ্ছে শৈশবের দুরন্তপনার দিনগুলোর কথা

জাবিতে শীত মানেই সাংস্কৃতিক উৎসবের ধুম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, জলসিঁড়ি, আনন্দন, ধ্বনি, গীতনাট, জুডো, জাডস প্রভৃতি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর টানা দুই মাস সাংস্কৃতিক কর্মসূচির ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ ক্যাম্পাসবাসীকে শীতের আগমনী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। যার জন্য ক্যাম্পাসসহ আশেপাশের মানুষ একটি বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।

সন্ধ্যা হলেই হলের গেমরুমে সময় কাটায় শিক্ষার্থীরা। শীতের কারণে শিক্ষার্থীরা টেবিল টেনিস, ক্যারম, দাবা, কার্ড খেলার প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। মেয়েদের হলেও দাবা ক্যারম বা লুডুর মতো বিভিন্ন ইনডোর গেম চলে সময় কাটানোর ব্যবস্থা হিসেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা আকতার বলেন, ‘ক্যাম্পাসের সবুজ গালিচায় বিকেলের আড্ডা আর সন্ধ্যায় শীতের পিঠা খেয়ে হলে ফেরার পর বান্ধবীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটাই। অনেক সময় বিভিন্ন গেম খেলে কেটে যায় শীতের রাতের কিছুটা অংশ।’

অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই শীত মানে ফ্যাশন। রং-বেরঙের ড্রেস পরে সময় কাটানোর সুযোগ বছরের অন্য কোনো ঋতুতে সম্ভব হয়ে ওঠে না। কেউ কেউ আবার ঘুরতে চলে যান একেবারে নেটওয়ার্কের বাইরে। শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যাচমেটদের সঙ্গে নিয়ে দেশের নানা দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করেন। এর ফলে সুন্দর কিছু সময় কাটানোর পাশাপাশি হয়ে যায় নিজের দেশকে জানা ও দেখার কাজটি।

জাবি

সোনালী সূর্য অস্ত না যেতেই মাঝারি কুয়াশার চাদরে জাবি

খেজুরের রস ছাড়া শীতকে যেন কল্পনাই করা যায় না। ক্যাম্পাসে খেঁজুর গাছ থাকলেও তা থেকে রস বের করার ও মতো কেউ নেই। তাই বলে খেঁজুরের রস থেকে বঞ্চিত নয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের গ্রামগুলো থেকে সংগৃহীত টাটকা খেঁজুরের রস পাওয়া যায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্বরে খুব সকালে, যা শীতের আমেজকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে!

তবে আর দেরি কেন? শীতের অনুভূতি পেতে হলে আজই চলে আসুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি ও বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড