মাহবুব এ রহমান
শরতের শেষ! এমন দিনেও দু’দিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি। ভয় আর শঙ্কায় সবাই। এত্তোদিনের আকাঙ্ক্ষিত সে দিনেও যদি বৃষ্টি থাকে! কিন্তু সে আশঙ্কাই বাস্তবে রূপ নিল। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) নৌ শাখা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ঠিকই বৃষ্টি হানা দিল। সকাল থেকেই ফোটায় ফোটায় ঝরছে বৃষ্টি।
আকাশের এ কান্না থামার কোনো ফুরসতই নেই। তবুও বসে নেই কেউই। সকাল ৭টা বাজতেই আইন অনুষদ প্রাঙ্গনে নবীন প্রবীণদের ঘটতে থাকল সমাবেশ। লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই সারাদিনের প্রোগ্রাম শিডিউল, প্রাইজবন্ড এবং খাবারের কুপন সংগ্রহ করছেন। কুপন সংগ্রহ শেষে পরিবেশিত হলো সকালের নাস্তা। নাস্তা শেষে সবাই গাড়িতে করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বেলুন উড়িয়ে শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন রজতজয়ন্তী উৎসবের।
তখনও ফোটা ফোটা বৃষ্টি ঝরছেই। কিন্তু এমন আনন্দের দিনে কেউ কি আর থেমে থাকতে চায়! পরে সেখান থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ মোড় প্রদক্ষিণ শেষে এসে থামে আইন অনুষদ প্রাঙ্গনে। শোভাযাত্রা শেষে আইন অনুষদ অডিটোরিয়ামে শুরু হয় প্রাক্তন ক্যাডেট আন্ডার অফিসারগণের স্মৃতিচারণ পর্ব। স্মৃতিচারণ শেষে বর্তমান ও প্রাক্তন ক্যাডেট আন্ডার অফিসারদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বিএনসিসি নৌ শাখার বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান প্রফেসর ড. এম তৌহিদ হোসেন চৌধুরী।
দুপুরের খাবারের বিরতির পর প্রধান অতিথিকে গার্ড অব অনার প্রধান শেষে শুরু হয় আলোচনা সভা। একে একে বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, বিশেষ অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি তিন শাখার সমন্বয়ক লে. কর্ণেল প্রফেসর ড. এম শফিকুল আলম। অতিথিবৃন্দকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়ার মাধ্যমেই শেষ হয় এ পর্ব।
সন্ধ্যা সাতটায় আবার শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নৌ শাখার ক্যাডেটবৃন্দের পাশাপাশি গান, নাচ ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সাথে কৌতুক পরিবেশন করেন মিরাক্কেল তারকা খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াকুব রাসেল। মাহবুব এ রহমান ও পিংকী চক্রবর্তীর যৌথ সঞ্চালনায় পুরো অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাখা প্রধান প্রফেসর ড. এম তৌহিদ হোসেন চৌধুরী।
বিএনসিসির একজন নবীন ক্যাডেট হয়েও শুরুতেই এমন অনুষ্ঠান পাওয়াটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। এমন জমকালো আয়োজন হবে আসলে কল্পনাও করিনি। প্রাক্তন সদস্যদের সাথে মিলিত হতে পেরেছি, তাদের সাথে কথা বলে অনুপ্রাণিত হয়েছি এবং বিএনসিসি সম্পর্কে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। সকালের শুরুতে র্যালিতে যোগদান, বিকালে আলোচনা সভা ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব মিলিয়ে পুরো দিনটি আমি দারুণ উপভোগ করেছি। এভাবেই অনুষ্ঠান নিয়ে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন ২০১৭-১৮ সেশনের ক্যাডেট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মোস্তারী। আরেকজন নবীন ক্যাডেট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী এইচ এম ইরফান এলাহি জানান, এমন অনুষ্ঠান হবে, তা শুনার পর থেকে আমি এ দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। যদিও হালকা বৃষ্টি ছিল কিন্তু নতুন এবং পুরাতনদের এ মিলনমেলায় বৃষ্টিটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। দারুণ উপভোগ করেছি দিনটি।
প্রাক্তন ক্যাডেট আন্ডার অফিসার সন্তোষ কুমার চাকমার কাছে প্রোগ্রাম সম্পর্কে অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল বিএনসিসি নৌ শাখার রজতজয়ন্তী পালন করার। আজকে তা বাস্তবায়িত হলো। সত্যিই নতুন-পুরাতনদের মিলনমেলা দেখে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে। মনে হচ্ছে, একটু সময়ের জন্য হলেও ফিরে গিয়েছিলাম সেই অতীতে।
প্রথমেই আমি নৌ শাখার নতুন এবং পুরাতন সকলকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের অনেক চেষ্টা এবং আন্তরিকতার কারণে এমন সুন্দর একটি আয়োজন করতে পেরেছি। পাশাপাশি আশাকরি ভবিষ্যতেও সবাইকে সবসময় পাশে পাবো। অনুষ্ঠান নিয়ে এভাবেই তার মন্তব্য পেশ করেন, বিএনসিসি নৌ শাখা প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক, প্রফেসর ড. এম তৌহিদ হোসেন চৌধুরী।
বিএনসিসি নৌ শাখা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু করে। এবারে পঁচিশ বছর পূর্তিতে ‘এসো প্রাণের টানে, মিলনের পানে’ এ স্লোগানে রজতজয়ন্তী উদযাপন করলো শাখাটি। পাশাপাশি রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ‘নোঙর’ নামে একটি সাময়িকীও বের হয়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড