• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘হৃদয়ের টানে ফিরে আসি বার বার’

  মামুন সোহাগ

১৭ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৫১
সরকারি তিতুমীর কলেজ
সরকারি তিতুমীর কলেজ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

দফায় দফায় ছুটি। আঙুল গুণে খুব সহজেই বলা যাবে আটমাসের অধিক সময় দেশের সব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। ঠিক তেমনিভাবে রাজধানীর তিতুমীর কলেজ ও বন্ধ ঘোষণা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কলরব শূন্যতায় প্রাণ হারিয়ে খাঁ খাঁ করছে গোটা ক্যাম্পাস। ক্লাস, পরীক্ষা, প্রশাসনিক কার্যক্রম, শিক্ষার্থীদের আড্ডার মুখরতার সেসব দৃশ্য চোখে মেলানো ভার।

টালমাটাল করোনাতেও প্রিয় ক্যাম্পাসকে ভেবে শিক্ষার্থীরা বারবার ফিরে আসছে ক্যাম্পাসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ছাত্র সংসদ, শহীদ বরকত মিলনায়তন, নতুন ভবনের বারান্দা, ফুটওভার ব্রিজে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রিয় মানুষটার মুখ চেয়ে বসে থাকা, বিজ্ঞান ভবনে ঢুকতেই থমথমে পরিবেশ, সাতসকালে সোনার বাংলা গেয়ে ক্লাসে প্রবেশ করা সব যেন এখন ভাসা ভাসা স্মৃতি।

সুসময়ে মরিচা পড়েছে! তাতে কি? তবুও ক্যাম্পাসের টানে প্রায়শই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি চোখে মেলে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়া শুভ্রা চৌধুরী বলেন, বর্ষা শেষ হয়ে এখন শীতের অপেক্ষা। কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে যাবে প্রিয় ক্যাম্পাস। আমরা আসব না? হুট করেই তাই চলে আসা। মাঝখানের সেই রাস্তা, দু’পাশের গাছ, কলেজের মাঠ আর কংক্রিটের বিল্ডিং, সবই ঠিকঠাক। তবুও কী যেন নেই! আসলে নেই সেই হই-হুল্লোড় আর খাতা কলমের ব্যস্ততা। আশা করি এই খারাপ দিন কেটে যাবে শীঘ্রই। করোনার কুয়াশা কেটে যাবে। আমরা আবারও ক্যাম্পাসে ফিরব, দল বেঁধে।

ক্যাম্পাসের সংগঠনগুলোর সরব উপস্থিতি চোখে মেলে অনলাইনে। সংগঠনগুলোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অফিসিয়াল পেজ-গ্রুপ থেকেই নিয়মিত গানে সুর তোলা, কুইজ প্রতিযোগিতা, নাট্যকর্মশালা, অনলাইন টকশো সবই যেন হচ্ছে। ক্যাম্পাসের জলপাই গাছে থোকা থোকা জলপাই পাড়তে কত শিক্ষার্থীরাই ঢু-দিচ্ছে কলেজে। অনেকে আচার বানিয়ে তা সংগ্রহ করে রাখছে গ্রামে থাকা বন্ধুটার জন্য।

করোনার মাঝেও ক্যাম্পাসের চিরচেনা মুখ দেখতে ছুটে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী (ছবি : দৈনিক অধিকার)

প্রত্যহ ক্যাম্পাসের পরিচিত সুর ছাত্রলীগের ঝাঁঝালো স্লোগান। সেসব বন্ধ থাকলেও ক্যাম্পাসের সক্রিয় এই রাজনৈতিক দলটি নানা সেবামুখী কাজে সহযোগিতা করছে কলেজের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের। গোটা ক্যাম্পাসের প্রতিনিধিত্ব করা একমাত্র ফেসবুক অনলাইন প্লাটফর্ম তিতুমীরিয়ান গ্রুপেও নিয়ম করে আয়োজন হচ্ছে ফটো কনটেস্ট, লেখালেখিসহ ক্যাম্পাস স্মৃতিচারণের নানা আয়োজন।

টানা বন্ধের ভেতরে একটু খানি ক্যাম্পাসে আসলে যেনো স্বস্তি খুঁজে পায় তরুণপ্রাণ শিক্ষার্থীরা। তবে ক্যাম্পাসটির চলমান শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছাড়াও সাবেক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। সাত বছর পর ক্যাম্পাসে পা রাখা শামিম চৌধুরী বিশাল বলেন, যেখানেই যেই অবস্থানে থাকি না কেন, তিতুমীরের ক্যাম্পাস আমায় সবসময় টানে। দীর্ঘ সাত বছর বছর পর সেদিন ক্যাম্পাস থেকে ঘুরে এলাম। হুদয়ের টানে ফিরে আসি বার বার। আর আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি আপন আলয়ে ফিরে এসেছি। সেই শহীদ মিনার, চিরচেনা ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, মিলনায়তন সব যেনো আমাকেও বুকে টেনে নিল।

করোনার লম্বা ছুটিতে ক্যাম্পাসের নির্মাণাধীন দশতলা অ্যাকাডেমিক ভবন দু'টি এবং ছেলে-মেয়েদের জন্য হোস্টেলের নির্মাণ কাজও অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। নির্মাণ শ্রমিকরা আশা নিয়ে বলেন, নতুন বছরের শুরুতেই আশা করি ভবনগুলো ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠবে।

আরও পড়ুন : চিন্তাশীল তরুণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘মিনি ইয়্যুথ পার্লামেন্ট’

ক্যাম্পাসের দীর্ঘ বন্ধের সময় নিয়ে তিতুমীর কলেজ অধ্যক্ষ মো. আশরাফ হোসেন ভারাক্রান্ত হয়ে বলেন, এতোটা সময় কখনো শিক্ষার্থীদের চোখে না দেখে থাকতে পারিনি। মাঝে মাঝে মন খারাপ হয় কলেজে এসে। আগে রুমে একটু পরপরই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আসত। নানা প্রয়োজনে আলাপ হতো। এখন মাঝেমাঝে কাজের প্রয়োজনে যা আসি তাতেও একলা বসে থাকতে হয়। এভাবে আর কতদিন! তবুও এই দুঃসময়ে আমাদের সকলকে ঘরবন্ধী থাকতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে বের হলে যেন আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীরা সকলেই মাস্ক ব্যবহার করে সেটাই কাম্য।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী, তিতুমীর কলেজ।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড