• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গবির মাঠে নেই আগের সেই ছন্দ

  মো. আশিকুর রহমান

২৬ অক্টোবর ২০২০, ১৩:৩২
গবির মাঠ
গবির মাঠে নেই আগের সেই ছন্দ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

স্মৃতির ভেলায় রেড সিগনাল হয়ে থাকবে করোনা ভাইরাস। ২০২০ সালটা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতেই পারে। করোনা ভাইরাস নামক ভয়াল দানবের করাল গ্রাসে দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতিসহ ক্রীড়াঙ্গনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও আজ স্থবির হয়ে পড়েছে। যেখানে গত বছরও ক্রীড়াঙ্গন ছিল উৎসবমুখর।

ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলার নলাম এলাকায় অবস্থিত ক্রীড়াঙ্গনের এক উজ্জ্বলদীপ্ত নাম গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। যেটি সারা বাংলাদেশ ব্যাপী আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়ে দুইবারের চ্যাম্পিয়নসহ নারীদের ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবলেও চ্যাম্পিয়নের শিরোপা ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। গবির যেই মাঠ সর্বদা ছিল খেলোয়াড়ে পরিপূর্ণ, সেই মাঠটি আজ করোনা ভাইরাসের কারণে খেলোয়াড় শূন্য। এই মাঠে এখন আর বল গড়ায় না, ঘাসগুলোও অনেক লম্বা লম্বা হয়ে গেছে। চারদিকে যেন এক ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।

গত বছর এই সময় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছিল উৎসবমুখর। কিন্তু আজ গবির খেলার মাঠে নেই সেই আগের ছন্দ। নিস্তব্ধ মাঠটি যেন ফিরে পেতে চাচ্ছে তার পুরনো রূপ।

এ বিষয়ে কথা হয় গণ বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড় মো. জাকির হোসেন রনির সাথে। আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা যারা খেলোয়াড় আছি, সকলেই নিয়মিত অনুশীলন করতাম। অ্যাকাডেমিক ভবনের ভেতর থেকে ফুটবলে লাথি দেওয়ার শব্দ শোনা যেত। আমাদের ফুটবল দলের কোচ জনাব হাবিব উদ্দিন স্যারের খেলোয়াড়দের নির্দেশনা দেওয়ার চিৎকারের আওয়াজ শোনা যেত বহু দূর হতেই। খেলাধুলায় মত্ত হয়ে ছিল ক্যাম্পাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও।’

‘সবকিছু মিলিয়ে গত বছরের এই দিনগুলো ছিল আনন্দঘন, উৎসবমুখর। আর আজ এই দিনে আমরা খেলোয়াড়রা সবাই নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছি। এখন আর মাঠে যাওয়া হচ্ছে না। সবাই পথ চেয়ে বসে আছি কবে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে! কবে ক্যাম্পাস আবার শিক্ষার্থীদের কোলাহলে ভরে উঠবে! কবে আবার মাঠ খেলোয়াড়ে পরিপূর্ণ হবে! কবে আবার বল নিয়ে নিজের শৈলীগুলো উপস্থাপন করব! আবার গোলপোস্টে সাদা ঝকঝকে জাল দুটো দেখতে পারব। আবার দুটি দলে বিভক্ত হয়ে টানা ৯০ মিনিট বল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করব! আবার কবে খেলার মাঠটি ফিরবে তার পুরনো রূপে? আল্লাহ যেন আবার সবকিছু আগের মতো করে দেয়, সবকিছু আবার চলুক তার আপন গতিতে। খেলার মাঠ আবার ফিরে পাক তার পুরনো রূপ, মাঠে চলুক সেই ছন্দময়, গতিময় ফুটবল।’

সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় খেলোয়াড়দের গবির সুবিশাল মাঠ মিস করার মাত্রা যেন অনেক গুণ বেশি। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিস করে না এমনটা কিন্তু নয়। গবিতে খুব কম শিক্ষার্থীই রয়েছেন যারা এই মাঠের প্রেমে পড়েনি! কথা হয় গবি ক্যাম্পাসের অন্যতম অলরাউন্ডার মেয়ে খেলোয়াড় ছন্দা রানি সরকারের সাথে। সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, আমার প্রাণ প্রিয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ। সেখানে গেলে মন ভালো হয়ে যায়, খেলার ইচ্ছে জাগে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ সত্যি অনেক অসাধারণ। আমার চোখে দেখা অনুযায়ী সেরা মাঠ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ। অনেক সুন্দর খেলার জায়গা। আমার দেখা মতে, এত বড় পরিপূর্ণ মাঠ আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নাই। এই বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ যে দেখবে সেই প্রেমে পরে যাবে, খেলার জন্য ব্যাকুল হয় পড়বে।’

ছন্দার ভাষায়, ‘এই মহামারি করোনা ভাইরাসের জন্য আমরা আজ আমাদের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। মাঠকে অনেক মিস করি। আবার খেলতে যাব কবে সেই আশায় দিন কাটছে। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা হয় যে মাঠে দৌড়ে চলে যাই। কিন্তু এই মহামারির জন্য ঘরবন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে।’

একই বিষয়ে কথা হয় বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও গবি ফুটবল টিমের অন্যতম আরও একজন ফুটবলার মো. আশরাফুল ইসলাম রাতুলের সাথে। তিনি জানান, ‘গত বছরের এই দিনগুলি ছিল স্বপ্নের মতো। খেলা, ভালোবাসা, আনন্দ আরও কত কি! বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে জয়লাভ করার আনন্দ সাথে শিক্ষকদের ভালবাসা।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গত চারটি বছর আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশের হয়ে পরপর চার বছর খেলার এই অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। সবাইকে খুব মিস করছি। বিশেষ করে আমার সেই প্রিয় খেলার মাঠটিকে। আর ২০২০ সালের শুরুটা খুব ভালোই ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে পাঠানো হয় রেফারি কোর্স করার জন্য। তারপর থেকে সবই যেন ছন্নছাড়া। আজ শুধু মিস করার খাতায় রয়ে গেছে আমার প্রিয় সেই মাঠ, খেলার আমেজ আর হাজারও স্মৃতি। মন ছুটে যেতে যাই সেই মাঠে।’

আরও পড়ুন : স্কুল-কলেজ খুললেই সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিন

করোনার কারণে খেলোয়াড়সহ সকল শিক্ষার্থীই আজ সাত মাসেরও বেশি সময় ক্যাম্পাসের বাইরে। অতি দ্রুত মহামারি কাটিয়ে গবি ক্যাম্পাসের সবুজ মাঠটি ফিরে পাবে তার নতুন প্রাণ, এমনটায় প্রত্যাশা সকলের।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড