• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

যে কারণে পাকিস্তানে যেতে চায় না ক্রিকেটাররা

  ক্রীড়া ডেস্ক

২৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৪:১১
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল (ছবি : সংগৃহীত)

বাংলাদেশের আসন্ন পাকিস্তান সফর নিয়ে গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানান, পাকিস্তানে খেলার ব্যাপারে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার পাশাপাশি খেলার পরিবেশও চায় বিসিবি। তিনি এটাও বলেছেন শুধু টি-টুয়েন্টি খেলতেই পাকিস্তানে যেতে চায় বাংলাদেশ। গতকাল (বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর) বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও বলেন, টেস্ট নয়, আপাতত পাকিস্তানে টি-টুয়েন্টিই খেলতে চায় বাংলাদেশ।

পাপন সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসলে বাংলাদেশ দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারই পাকিস্তান সফরে যেতে রাজি নয়। যে কয়জন আগ্রহী, তারাও শুধু টি-টুয়েন্টি খেলতে চান; টেস্ট নয়। ক্রিকেটারদের পাশাপাশি বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফের সদস্যরাও পাকিস্তান সফরে যেতে নারাজ। তবে বিসিবি টি-টুয়েন্টি সিরিজের জন্য দল পাঠাতে রাজি। নিজেদের ভাবনার কথাটা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়েও দিয়েছে বিসিবি।

বিসিবি টি-টুয়েন্টি খেলতে দল পাঠাতে রাজি বটে। তবে সেটা ক্রিকেটারদের ইচ্ছার ওপর। নাজমুল হাসান পরিষ্কার করেই বলেছেন, ক্রিকেটাররা যদি যেতে রাজি হয়, তবেই দল পাঠানো হবে। না চাইলে নয়। পিসিবিকে ঠিক কী বলা হয়েছে, তাও গণমাধ্যমের সামনে ব্যাখ্যা করেছেন নাজমুল হাসান, ‘আমরা বলেছি টি-টুয়েন্টি খেলতে যাব। চেষ্টা করছি টি-টুয়েন্টির দল পাঠাতে। তবে ওরা (ক্রিকেটাররা) যদি যেতে রাজি হয়…।’

পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে ক্রিকেটারদের ইচ্ছাই চূড়ান্ত বলেও জানিয়েছেন নাজমুল হাসান, ‘এটা শুধু বোর্ডের ব্যাপার না। বোর্ডের বাইরেও অনেক কিছু আছে। খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফরা যদি সবাই রাজি হয়, আমরা যদি ভালো একটা দল পাঠাতে পারি, তবেই যাব।’

সফরের বিষয়ে সরকারি ছাড়পত্রের বিষয়েও কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি, ‘দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে সরকারি ছাড়পত্র। প্রত্যেকটা জায়গা থেকে ছাড়পত্র দরকার। ইতোমধ্যে আমরা একটা জায়গা থেকে ছাড়পত্র পেয়েছিও। আশা করছি, হয়তো দু-একদিনের মধ্যেই অন্য জায়গাগুলো থেকে ছাড়পত্র পেয়ে যাব। সব জায়গা থেকে ছাড়পত্র পেয়ে গেলেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।’

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার টিমবাসে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ঘরের মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারছিল না পাকিস্তান। বড় কোনো দলই পাকিস্তান সফরে যেতে রাজি হচ্ছিল না। ফলে পাকিস্তান নিজেদের হোম সিরিজগুলো খেলে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে গিয়ে। অবশেষে পাকিস্তানের সেই নির্বাসন কাটতে শুরু করেছে। সেই শ্রীলঙ্কাই পূর্ণ সফরে করে এসেছে পাকিস্তানে। টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজ খেলে শ্রীলঙ্কানরা নিরাপদে বাড়িও ফিরে গেছে।

টাটকা এই উদাহরণের ভিত্তিতেই বাংলাদেশকে সফরের ব্যাপারে জোর তাগিদ দিচ্ছে পাকিস্তান। লঙ্কান দলকে রাষ্ট্রপ্রধানের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ দলকেও সেরকমই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু পিসিবির সেই প্রতিশ্রুতির পরও বাংলাদেশ দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার এবং কোচিং স্টাফের সদস্যরা পাকিস্তান সফরে যেতে অনাগ্রহী।

ক্রিকেটাররা কেন পাকিস্তান সফরে যেতে রাজি রাজি নন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নাজমুল। বলেছেন পরিবারের সদস্যদের শঙ্কার কারণেই ক্রিকেটাররা অনাগ্রহী, ‘আমরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলেছি। কথা বলে বুঝেছি, কিছু কিছু খেলোয়াড় যেতে চায় না। আবার কেউ কেউ যেতে রাজি। তবে স্বল্প সময়ের জন্য। আমি জানতে চেয়েছিলাম কেন তারা যেতে রাজি নয়? একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। একটা বিষয় হচ্ছে, ক্রিকেটারদের পরিবার। ওদের বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনরা খুবই চিন্তিত এবং উৎকণ্ঠিত পাকিস্তান সফর নিয়ে।’

আরেকটি বিষয়ও উঠে এসেছে। খেলার উপযুক্ত পরিবেশ। এই বিষয়টি অবশ্য আগের দিনই নিশ্চিত করেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন। জানিয়েছেন, পাকিস্তান সফরে যাওয়া মানেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বন্দি। চারদিকের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে ক্রিকেটারদের মনে হতেই পারে, তারা যুদ্ধের ময়দানে খেলতে এসেছেন! এমন দমবন্ধ করা নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে খেলার মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হবে বলেও মনে করছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা।

এ ব্যাপারে বিসিবি সভাপতিও বলেছেন, ‘এমন দমবন্ধ পরিবেশে কত দিন থাকা যায়? যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের অনেকেই বলেছে, লম্বা সময়ের জন্য তারা পাকিস্তান যেতে রাজি নয়। এ কারণেই আমরা শুধু টি-টুয়েন্টি খেলতে যেতে পারি। যাতে এক সপ্তাহের মধ্যেই সফর শেষ হয়ে যায়। এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে আমাদের সাহায্য করতে পারে।’

বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানে টেস্ট খেলতে না চায়, তাহলে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্ট হারানোর শঙ্কা আছে। শোনা যাচ্ছে, পিসিবি বিষয়টি আইসিসিকে জানাবে। তবে নাজমুল হাসান পয়েন্ট হারানোর ব্যাপারে মোটেই চিন্তিত নন, ‘আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত না। সিদ্ধান্তটা আমাদের নিতে হবে। সিদ্ধান্তটা নেবে বাংলাদেশের বোর্ড ও খেলোয়াড়েরা। তারা তাদের পক্ষ থেকে বলেছে। কিন্তু আমাদের চিন্তা করতে হবে আমাদের দল নিয়ে, কোচিং স্টাফদের নিয়ে। আমরা বলছি না যে, যাব না। যেহেতু প্রথমবারের মতো (নির্বাসন প্রক্রিয়া শুরুর পর) যাচ্ছি, কাজেই ক্রিকেটারদের মধ্যে শঙ্কা থাকতেই পারে। এ ব্যাপারে ক্রিকেটারদের জোর করার প্রশ্নই ওঠে না।’

ওডি/এনএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড