• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কমছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ; ত্রাণের জন্য হাহাকার

  নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ জুলাই ২০১৯, ১২:১৩
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রাম বন্যা কবলিত অঞ্চল (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও বেড়েছে দুর্ভোগ। এখনো ঘরে ফিরতে পারছে না বন্যা দুর্গতরা। এ দিকে বানভাসীদের জন্য অপ্রতুল ত্রাণের কারণে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোতে। জামালপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও বাড়ছে দুর্ভোগ। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে বন্যা কবলিতদের। ত্রাণের জন্য হাহাকার সর্বত্র। এ দিকে সারা দেশে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১ জনে। অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা, ব্রক্ষ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে গত সপ্তাহ যাবত বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে এসব অঞ্চলে।

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ঘাঘটের পানি কিছুটা কমলেও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাদুল্লাপুর ও সাঘাটা উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে।

রবিবার (২১ জুলাই) জেলা প্রশাসন দৈনিক অধিকারকে জানান, জেলার এসব উপজেলার ৩৭টি ইউনিয়নের ২৫৩টি গ্রামের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন লাখ ৯৭ হাজার ৯৮ জন মানুষ। কাঁচা রাস্তার ৫১৭ কিলোমিটার ও বাঁধ পাঁচ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে কালভার্ট ধসে গেছে ১৭টি, ফসল নিমজ্জিত রয়েছে ৯ হাজার ৮শ ২১ হেক্টর ও ২৬ হাজার ৪০টি টিউবওয়েল। এছাড়াও ২৯ হাজার ৪১ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৯ হাজার ১৪২টি, আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৬৬টি। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৭১ হাজার ২৪ জন। বন্যার পানিতে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। ৯শ ৫০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জেলার বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসেন আলী জানান, জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ ও সাদুল্লাপুর উপজেলার ধর্মীয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৩শ ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার (২১ জুলাই) ৯টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি ১০১, ঘাঘট ৫৩ ও করতোয়া ৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তার পানি ৫৪ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ দিকে, কুড়িগ্রামে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। বিশাল এলাকা জুড়ে বন্যা হওয়ায় জনপ্রতিনিধিরা পরেছে চরম বিপাকে। তারা পৌঁছাতে পারেনি সবার কাছে। বন্যার ফলে ৫৭টি ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২ লাখ পরিবারের ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ঘর-বাড়িতে পানি উঠেছে প্রায় ২ লাখ। ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর। বন্যায় ৫শ কিলোমিটার রাস্তা, ৪০ কিলোমিটার বাঁধ ও ৪১টি ব্রিজ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬৪ হাজার মানুষ ১৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪টি।

গত শুক্রবার সকাল থেকে নামতে শুরু করেছে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে ১০৯ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে ৮৩ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীল পানি ব্রিজ পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ৫টি ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও স্যালাইন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে বলে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন। বন্যা দুর্গতদের সহযোগিতায় প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ সামর্থ্য অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ করছেন। বেসরকারি এনজিওগুলো এখনো হাত গুটিয়ে বসে আছে। ডোনার সহায়তা না করায় তারা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অপরদিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকে এগিয়ে আসলেও তা একেবারেই নগন্য। ফলে বানভাসীদের মধ্যে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।

অপরদিকে, যমুনা ও ব্রক্ষ্মপুত্রের পানি কমতে থাকলেও জামালপুরে বন্যার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার সাত উপজেলায় ৬২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক ও রেল পথ, তলিয়ে গেছে ২৫ হাজার ৯শত হেক্টর ফসরি জমি। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৩৯ সেন্টিমিটার কমে রবিবার সকালে যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করা জেলার ৬২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাতাল মিল, পুকুরের মাছ, মুরগির খামার, গরুর খাবার, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।

জামালপুর-শেরপুর সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়া যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী, রেল স্টেশনে লাইনে পানি ওঠায়, ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ। বন্যা কবলিত এলাকায় ১১শ ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে, বন্যায় ২ লাখ ৫৬ হাজার পরিবারের ১৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এ দিকে পানি কমলেও শুকনো খাবারের তীব্র অভাবের পাশাপাশি শিশু খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি এবং গোখাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ৬০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছে ৪২ হাজার ৭৩০ জন বানভাসী মানুষ। মেডিকেল টিম দেওয়া আছে ৮০টি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত ত্রাণের পরিমাণ ৯শ ৫০ মেট্রিন টন চাল, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১৭ লাখ ৩০ হাজার নগদ অর্থ।

ওডি/এসজেএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড