• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কালের আবর্তে জৌলুস হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প

  আরিফুর রহমান, ঢাকা প্রতিনিধি

০১ জুলাই ২০১৯, ১৪:১৫
কুমার
মাটির তৈরি তৈজসপত্র বানাতে ব্যস্ত কুমার (ছবি : দৈনিক অধিকার)

কালের আবর্তে জৌলুস হারাচ্ছে সাভার ও ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প। বেঁচে থাকার তাগিদে চৌদ্দ পুরুষের ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন জীবন সংগ্রামে পোড় খাওয়া এ পেশার শিল্পীরা। নগরায়নের ফলে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প। সংকীর্ণ হচ্ছে এ শিল্পের স্থায়ীত্বের পথ। একদিকে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাব পাশাপাশি যান্ত্রিক যুগের বৈল্পবিক পরিবর্তনে হুমকির মুখে পড়েছে এ শিল্প।

শতবর্ষী এ মৃত শিল্পের তৈরি হাড়ি, পাতিল, ফুলের টব, মাটির ব্যাংক, ডাইনিং টেবিল, টালি, টাইলসসহ হরেক রকমের চোখ ধাঁধানো তৈজসপত্র দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকলেও তথাকথিত আধুনিকতার ছোয়ায় দৈনিন্দন জীবনে ব্যবহার্য অবকাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মৃৎ শিল্পীরা। কম চাহিদা, আয়ের সঙ্গে ব্যায়ের অসঙ্গতি আর জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন তারা।

সাভার ও ধামরাইয়ের বিভিন্নস্থানে ঘুরে দেখা গেছে আগে যেখানে সহস্রাধিক মৃৎ শিল্পী ছিল আজ সেখানে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা কমে প্রায় ২০০ তে দাঁড়িয়েছে। এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের প্রায় সবাই ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। তাদের মধ্যে কেউ কেউ চলে গেছেন পাশ্ববর্তী দেশে। আবার কেউ বা জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের জন্য এ পেশা ছেড়ে সম্পৃক্ত হয়েছেন শিল্প কারখানার চাকরিসহ অন্যান্য যান্ত্রিক পেশায়। এমন একটা সময় ছিল যখন পেশার সঙ্গে জড়িতদের জীবনমান ছিল উন্নত। তারা জীবন ব্যবস্থার চাকচিক্যে ঝুঁকতো এ পেশায়। আদি পেশা হওয়ায় অনেকে এ পেশা নিয়ে গর্ব করতো। মাটির তৈরি তৈজসপত্রের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় এ পেশার মাধ্যমে স্বচ্ছলভাবেই জীবন ধারণ করতে পারতেন মৃৎ শিল্পীরা। দেশের অধিকাংশই স্থানে মানুষ মাটির বাসনে ভাত খেতেন। হাড়ি-পাতিল, লবণ বাটি ঘরের চালের ছাউনি। প্রায় সবই ছিল মাটির।

ধীরে ধীরে দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার করা জিনিসপত্রের মধ্যে আধুনিকতার ছোয়ায় মৃৎ শিল্পের চাহিদা হ্রাসের পাশাপাশি স্টিল, প্লাস্টিকসহ কাঠ ও বাঁশের তৈরি আসবাবপত্রের দিকে মানুষের ঝুঁকে পড়ায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে এ পেশাজীবীরা। টানাপোড়েন এ অবস্থার দোলাচলে কেউ কেউ চলে গেছেন দেশের বাহিরে অন্য কোনো দেশে, কেউ যোগদান করেছেন সরকারি কিংবা বেসরকারি পেশায় আবার কেউ জড়িয়েছেন যান্ত্রিক শিল্পকারখানার পেশায়।

পৌর সভার ভাগুলপুর এলাকার মৃৎ শিল্পীরা বংশ পরম পরায় কুমার সত্তর উর্ধো নীপেন চন্দ্র পাল জানান, বাপ-দাদার চৌদ্দ পুরুষের ব্যবসা ছিল মাটির হাড়ি পাতিল তৈরী করা। তাদের বাড়িকে লোকেরা কুমার বাড়ি বলেই ডাকত। তাদের পাড়াকে মানুষ পালপাড় বলে আজও ডাকে। নৌকাযোগে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করতেন মাটির তৈরি তৈজস পত্র। এককালে এ জিনিসপত্রের চাহিদা ছিল অনেক। কালের পরিক্রমায় আজ বলতে গেলে তা শুন্যের কোঠায়। চাহিদা কমে যাওয়ায় এ পেশায় আজ টিকে থাকাই দায় হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন এ পেশা হারিয়ে যাবে।

অপর কুমার শুভাস পালের বয়স প্রায় ৬৮ বছর বলে জানান তিনি। তার তিন ছেলের মধ্যে একজন এ পেশায় আছেন। অপর দুজন গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার ভাইও এ পেশায় ছিলেন। ভাইপোরা কেউই এ পেশায় যুক্ত নন।

ধামরাই পৌর শহরের পাল পাড়ার বাসিন্দা ৭৫ বছরের নিবাস পাল জানান পয়েলা বৈশাখে মাটির খাবারের বাসন বানানোর ওয়ার্ডার পড়ে। তখন প্রতিবছরই পাঁচ’শ থেকে ছয়’শ বাসন তৈরি করেন তিনি। এ ছাড়া সারা বছর ওয়ার্ডার ছাড়া তেমনটা মাটির বাসন তৈরি করা হয় না। ফুলের টব, শোপিস, ছোট খাট খেলনা সামগ্রী মাটির ব্যাংক ইত্যাদি তৈরি করছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ পেশার শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে এখনই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। দেশে বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করে মাটির জিনিস পত্রের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে জন সাধারনকে প্রদর্শন করতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের ভর্তূকি বা বিনা সুদে লোন দিতে পারে ব্যাংকগুলো। তা না হলে এ মৃৎ শিল্প ইতিহাসে পরিণত হবে।

ওডি/এসজেএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড