• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্থাপত্য নির্মাণ শৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন বালাপুর জমিদার বাড়ি

  মনিরুজ্জামান, নরসিংদী প্রতিনিধি

০১ জুলাই ২০১৯, ১২:৫৮
নরসিংদী
বালাপুর জমিদার বাড়ি

বালাপুর জমিদার বাড়ি স্থাপত্য নির্মাণ শৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন। বাড়িটির সৌন্দর্যমন্ডিত বিভিন্ন কারুকাজ ও পারিপার্শ্বিকতা যেকোনো মানুষকে অনায়াসে মুগ্ধ করবে। ঢাকা শহরের অদূরে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীর পাইকারচর ইউনিয়নের মেঘনার কূলঘেষা বালাপুর গ্রামে এ বাড়িটি অবস্থিত।

১৯০৬ সালে জমিদার বাবু কালি মোহন সাহা এ বাড়িটি নির্মাণ করেন। তিনি এই এলাকার বড়বাবু নামে পরিচিত জমিদার নবীন চন্দ্র সাহার ছেলে। ৩২০ বিঘা জমির উপর সুরম্য এ বাড়িটি নির্মিত।

এই বাড়িটিতে রয়েছে একটি তিনতলা ভবন, একটি দোতলা ভবন ও একটি একতলা ভবন। ভবনগুলোতে সর্বমোট ১০৩ টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষই বাবুদের নান্দনিক রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে। ভবনগুলোর মেঝে ও দেয়ালে ব্যবহৃত মোজাইক ও সিরামিকের কারুকার্য খচিত নকশাসহ জানালায় ব্যবহৃত ঢালাইয়ের গ্রীল চোখে পড়ার মতো।

দৈনিক অধিকার

বালাপুর জমিদার বাড়ি

বাড়িটির সামনাসামনি তিনতলা ও দুইতলা বিশিষ্ট সুরম্য অট্টালিকা দুটির দক্ষিণ পাশে একটি বড় মাঠকে ঘিরে রয়েছে একতলা বিশিষ্ট একটি বৃহৎ অতিথিশালা। দূর-দূরান্ত থেকে আগত অতিথিরা এসে এই অতিথিশালাতেই রাত্রি যাপন করতেন।

মাঠের পূর্বদিকে রয়েছে একটি রঙ্গমঞ্চ বা জলসাঘর। বর্তমানে এটি মন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাড়িটির সম্মুখে সুবিশাল প্রবেশ দ্বার পেরিয়েই দেখা মিলে একটি দূর্গা পূজার মণ্ডপের। যেখানে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা বাড়ির বউ-ঝিদের পূজা অর্চনায় ব্যবহৃত শঙ্খ ও ঢাকের বাদ্যে মুখরিত ছিলো।

বাড়িটির ঠিক পশ্চিম দিকে রয়েছে একটি সান বাঁধানো বিশাল পুকুর। এছাড়া বাড়িটির পূর্ব ও দক্ষিণ পাশ ঘিরে রয়েছে শত্রুদের হাত থেকে জমিদার পরিবারকে রক্ষার জন্য সুবিশাল এক পরিখা। এই পরিখাাটি বালাপুর বাজার হয়ে মেঘনা নদীর সাথে সংযুক্ত।

কথিত আছে জমিদারদের দেশ-বিদেশের ব্যবসার কাজে মেঘনা ঘাট হয়ে এই পরিখার মাধ্যমে তাদের বাড়িতে মালামাল আনা নেয়ার কাজ করা হতো। সেকালে জমিদার বাবুদের নামডাক ছিলো দেশজুড়ে। বাবুদের নান্দনিক রুচিশীলতার পাশাপাশি তারা শিক্ষা-দীক্ষায়ও ছিলেন যথেষ্ট তৎপর। যার স্পষ্ট প্রমাণ মিলে বাড়ির পাশে ১৯১৩ সালে বড়বাবু নবীন সাহার নামে প্রতিষ্ঠিত বালাপুর নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়টি দেখে।

দৈনিক অধিকার

বালাপুর জমিদার বাড়ি

এতো কিছু থাকা সত্ত্বেও ১৯৪৭ সনে ভারতবর্ষ ভাগাভাগির সময় নিজেদের সকল সম্পত্তি তাদের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরের নামে উইল করে দিয়ে তারা সপরিবারে ভারতের কোলকাতা চলে যান। কালের বিবর্তনে বাড়িটি এখন জমিদার আমলের নীরব সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এতে এখন ছিন্নমূল কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বর্তমানে বাড়িটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।

এক সময় বিচার-আচার সহ নানা কাজে ব্যস্ত বাড়িটি আজ বিরাণভূমিতে পরিণত হচ্ছে। বাড়িটির সকল সৌন্দর্যকে ঘিরে ধরেছে নানা জাতের গাছপালা ও লতা পাতা। ময়লা আর ধূলা-বালিতে ঢাকা পড়ছে দেয়ালের কারুকার্যমন্ডিত নকশাগুলো। ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ছাদসহ দেয়াল ধসে পড়েছে।

ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়িটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়িটির মমতায় পড়ে আছে ছিন্নমূল কয়েকটি পরিবার।

এলাকাবাসী জানান, সময় পরিক্রমায় সুবিধাভোগীদের লালসার শিকার হয়ে সুবিশাল বাড়িটির অনেক জমিই এখন বেহাত হয়ে গেছে। যেটুকু রয়েছে সেটুকুও নরসিংদীর প্রভাবশালী কয়েকটি মহল কয়েক দফা ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়।

প্রাচীন প্রত্নতত্ত্বের নিদর্শন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থাপনাটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এর থেকে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব পেতো, তেমন অন্যদিকে নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন এ বাড়িটিও রক্ষা পেতো। তারা জমিদারদের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ বাড়িটিকে রক্ষায় সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

ওডি/আরবি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড