• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাহাড়ে ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা 

  মো. আব্দুর রহিম, বান্দরবান

১৭ মে ২০১৯, ১৭:২৩
ধান
ক্ষেতে ধান তোলার কাজ করছে শ্রমিকরা ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের বিক্রিছড়ার মেহ্লাউ পাড়াতে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছিলেন কৃষক উসিং হাই মারমা। ধানের দাম নিয়ে কথা বলতে গেলেই তাঁর চোখে মুখে চরম হতাশা ভেসে ওঠে। কারণ ধান চাষ করে এখন আর মজুরি পোষাতে পারছেন না তিনি লাভ তো দুরের কথা।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সকালে বান্দরবান সদর উপজেলার বিক্রিছড়া মেহ্লাউ পাড়ার গ্রামে সরজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলে শোনা যায় এমন হতাশার কথা।

কৃষিবিদদের মতে, দেশে ধানের দাম এভাবে চলতে থাকলে কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারাবে। কৃষি কাজের শ্রমিকদেরও দৈনিক মজুরি ৭শ টাকা ও কৃষকদের ধান চাষে অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় তারা পোষাতে পারছেন না বলেই তাদের এই দূর অবস্থা।

এদিকে, জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে লামা, আলীকদম, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, থানছি ও সদর উপজেলার এলাকা গুলোতেও দেখা গেছে একই। কৃষকরা জানায়, মাঠে কাজ করার জন্য শ্রমিক পাওয়া খুবই কষ্টদায়ক। শ্রমিক যদিও পাওয়া যায় তাহলে একজন কৃষি শ্রমিকের মজুরি দৈনিক অন্তত ৭শ টাকা। এই টাকার পরেও একজন কৃষি শ্রমিককে দুপুরে খাবার ও ২ প্যাকেট আকিজ বিড়ি দিতে হয়। হিসেব করে দেখা যায় একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি এক মণ ধানের চেয়েও বেশি খরচ পড়ে।

রাজবিলা ইউনিয়নের কৃষকরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর যাবত ধানের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু মধ্য স্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণে অনেকেই গত মৌসুমে উৎপাদিত ধান এখনো বিক্রি করতে পারেননি। আবার ধান বিক্রি করতে বাড়ি থেকে বাজার পর্যন্ত যে পরিবহন খরচ দিতে হয় সেটিও আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।

কৃষক উসিং হাই মারমা ও মো. শাহ আলম জানিয়েছেন, ধানের মণ ৫৪০ টাকা হলেও একজন কৃষকের মজুরি ৭০০ টাকা। এ জন্য আমরা ধান চাষ করে আর পোষাতে পারছি না। ধান চাষ নিয়ে আমারা পারিবারিক ভাবে খুবই কষ্ট আছি। এখন আর আগের মতন দিন মজুরও পাওয়া যায় না। তারা বলেন, যদি ধানের মণ ৮০০ টাকাও হতো আমরা পাহাড়ের কৃষকরা কিছুটা হলেও বাঁচতাম।

কুহালং ইউনিয়নের বিক্রিচড়ার কৃষক উবাচিং মারমা জানান, এক বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রয় ১৪ হাজার টাকা। সে জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে ২০ মণের মতো। প্রতি মণ ৬০০ টাকা করেও বিক্রি করলে তাঁর আয় হবে মাত্র ১২ হাজার টাকা।

বাজালিয়ার রাইস মিল মালিক মাহামুদুল হক জানান, আমার রাইস মিলে প্রতিমাসে ৯শ থেকে এক হাজার মণ ধান মিলিং বা মাড়ার কাজ হয়। বর্তমানে প্রতি মণ ধানের ধাম চলছে ৫শ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। হিসেব করলে ধানের চেয়ে কৃষকের মজুরি বেশি হওয়ায় কৃষকরা আমাদের কাছে অভিযোগ করলেও আমাদের কিছু করার থাকে না।

এ বিষয়ে বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক দৈনিক অধিকারকে বলেন, এবার বান্দরবানে বোরো ধানের মধ্যে উদপাদন রয়েছে ২ প্রকার ধান উপসি ব্রি-১৮, ব্রি-৭৮, ব্রি-৬৯, ব্রি-৮১, জাতের ধান। এছাড়া হাইব্রিডের মধ্যে হিরা, টিয়া, সেরাসহ বিভিন্ন জাতের ধান এই বছর ভালোই ফলন হয়েছে।

তিনি বলেন, এবছর বোরো মৌসুমে পুরো জেলায় ৬২ হাজার ৫৯ হেক্টর জমিতে ২৬ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। জেলায় বর্তমানে ধানের দাম ৫শ থেকে ৫শ ৫০ টাকার মধ্যে উঠানামা করছে।

সরাসরি খাদ্য বিভাগ যদি কৃষকের কাছে ধান কিনে এবং সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ করে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চাল রপ্তানি করে তাহলে দেশের কৃষকরা বাঁচবে বলে মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

ওডি/এসএএফ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড