কুলেন্দু শেখর দাস, সুনামগঞ্জ
মেঘালয়ের পাহাড়ের পাদদেশ থেকে নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে রূপলাবণ্যে পর্যটকের আকর্ষণ করা সেই যাদুকাটা নদীর পাড়ে এখন শত-শত ড্রেজার মেশিন। নদীর ৫টি স্পটে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী চক্র নদীটি দখল করে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করছে।
হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিজিবি ক্যাম্পের পাশে লাউড়েরগড় এলাকার ধু-ধু বালুচরে বিশায় এলাকাজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে দিন-রাত। ড্রেজারে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু।
জানা যায়, এক সময় এ নদীতে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করতেন হাজারও শ্রমিক। ফলে উজান থেকে নেমে আসা বালু-পাথর উত্তোলনের পাশাপাশি নদীর নাব্যতা বজায় থাকতো। নদীর ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হতো শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা।
এ দিকে এ নদীর নীল ও স্বচ্ছ জলে মন জোড়াতো হাজার হাজার পর্যটকের। ড্রেজার ও বোমা মেশিনের তাণ্ডবে কর্মস্থল হারিয়ে শ্রমজীবীরা এখন বিপাকে। একই সঙ্গে হুমকিতে রয়েছে নদীর দুই পাড়ের বাড়িঘর ও স্থাপনা।
অন্যদিকে এক রিট পিটিশনে হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়- যাদুকাটা নদীতে কোনো ধরনের যান্ত্রিক মেশিন দিয়ে বালি পাথর উত্তোলন করা যাবেনা। ছোট সেলু মেশিন ব্যবহার করে পানির পাইপ দিয়ে সেচের কাজ করা যাবে ও দেশীয় প্রযুক্তিতে বেলছা, কোদাল দিয়ে বালি পাথর উত্তোলন করা যাবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ৫টি স্পটে ভাগ হয়ে তাদের নির্ধারিত চাঁদা দেওয়া শর্তে শ্রমিকদের ড্রেজার ও বোমা মেশিনে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজে লাগাচ্ছে। আর এসব কিছু হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন করে। এই চক্রটি নদীর তীরে শতাধিক ড্রেজার ও বোমা মেশিন বসিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফুট গর্ত করে বালু ও পাথর তুলছে। নদীর তীরবর্তী শাহ আরেফিন (রহ) এর আস্তানার পশ্চিম পাশে ও বারেকের টিলার পূর্বপাড়ে জেগে উঠা তীরে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। গভীর গর্তে শ্রমিদের নামতে বাধ্য করা হচ্ছে।
নদীর তীরে শতাধিক ড্রেজার ও বোমা মেশিন (ছবি- দৈনিক অধিকার)
স্থানীয় লাউড়েরগড় কোয়ারী ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি শাহজান মিয়া জানান, বালু-পাথর বহনকারী প্রতিটি ট্রলি থেকে ট্রিপপ্রতি ২শ টাকা নেওয়া হয়। প্রতিদিনের এসব টাকার ভাগ দেওয়া হয় স্থানীয় প্রশাসনকে। এছাড়া কিছু সংবাদমাধ্যম কর্মীও এ ভাগের অংশ পাচ্ছে। তিনি আরও জানান, এ সিন্ডিকেটের মূল হোতারা হলেন- পোড়ান লাউর গ্রামের খাজা মাঈনুদ্দিন, শাহজাহান মিয়া, আক্কাস মিয়া, লোহাজুরী ছড়ার পাড় গ্রামের মোস্তফা মেম্বার, হেলাল উদ্দিন, বিল্লাল হোসেন, রমিজ উদ্দিন, নুরু মিয়াসহ ১৫ থেকে ২০ জনের একটি চক্র। তাদের নিয়ন্ত্রণে বোমা মেশিন ও ড্রেজার চলে দিন-রাত।
এ বিষয়ে সমিতির সহ-সভাপতি খাজা মঈনুদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি আমাদের নির্ধারিত সাংবাদিক ছাড়া অন্য কোনো সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেই না। আপনাদের যা ইচ্ছা করতে পারেন। সবকিছু ম্যানেজ করেই আমরা ব্যবসা করি। তবে এ বিষয়ে সংবাদ না করতে হুঁশিয়ার করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, ড্রেজার ও বোমা মেশিনে বালু-পাথর উত্তোলন অবৈধ। দেশীয় পদ্ধতিতে কেবলমাত্র ফাজিলপুর খোয়ারী থেকে বালু উত্তেলনের অনুমতি দিয়েছে সরকার।
তিনি আরও জানান, যারা এ অবৈধ কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড