• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

৯১ এর ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়

২৮ বছরেও আতঙ্ক কাটেনি উপকূলবাসীর

  আরিফ সবুজ, নোয়াখালী

২৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:৪৬
ঘুর্ণিঝড়ে
৯১ এর প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড়ে ঘর হারানো মানুষ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

স্মরণাতীত কাল হতে অসংখ্য ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছে বঙ্গোপসাগরের মেঘনা নদীর মোহনায়। যতদূর জানা যায়, তাতে দেখা যায় উপকূলীয় জনপদ অসংখ্যবার প্রাকৃতিক ছোবলের শিকার হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমগ্র উপকূল। ঘূর্ণিঝড়ও জলোচ্ছ্বাস পাশাপাশি কখনো আবার ভূমিকম্পের মতো মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে উপকূলীয় এ অঞ্চলে।

তেমনি এক ঘটনা ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ‘ম্যারি এন’ নামে ১৯৯১ সালের এই দিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চল। ভয়াবহ সে দিনের ২৮ বছর অতিবাহিত হলেও আজও সে দুর্বিষহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলের বাসিন্দাদের। আজ থেকে ২৮ বছর আগে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছিল স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। রাতের অন্ধকারে মুহূর্তের মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল উপকূলীয় এলাকা।

২৩ এপ্রিল সকালের দিকে লঘুচাপ হিসেবে ধরা পড়ে এটি। যার অবস্থান ছিল ভারতের আন্দামান সাগর ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর। এরপর থেকে এটি ধীরে-ধীরে শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। ২৫ এপ্রিল সকালের দিকে এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। ২৭ এপ্রিল সকালে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। সে দিন মধ্যরাতেই এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। ২৮ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে এটি হারিকেন শক্তি সম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় বলে জানান এ ঘটনার প্রত্যক্ষ মো. রবিউল হোসেন।

এ দিন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। এ উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিঝুম দ্বীপের সব মানুষই জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিল। পুরো দ্বীপাঞ্চল ঘূর্ণিঝড়ের ছোবলে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছিল। এতে বিধ্বস্ত হয় পুরো উপকূলীয় অঞ্চল। যেখানে সেখানে পড়েছিল লাশ, রাস্তা জুড়ে ছিল উপড়ে পড়া গাছ, ঘর-বাড়িগুলো দুমড়ানো-মোচড়ানো, আর লাশের পচা গন্ধ বাতাসটাকে ভারী করে তুলছিল।

ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস প্রায় ২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস নিয়ে রাত প্রায় বারোটা নাগাদ উপকূলে আছড়ে পড়ে হারিকেনের শক্তিসম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড়। মূলত বিকাল থেকে বইতে থাকা দমকা বাতাস প্রবল এক ঝড়ের আভাস দিচ্ছিল।

বর্তমানে নদী ভাঙনের কারণে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর বাড়ি করলেও সে সময় নোয়াখালীর হাতিয়ায় নিজের বাড়িতে ছিলেন বিবি হাজেরা। তখন বয়স ছিল তার ৫০ বছর। সে জানায় তাদের ঘরটা প্রচণ্ড জোরে কাঁপছিল। ঘরে শশুর শাশুড়িসহ ২০-২৫ জন মানুষ ছিল তারা। বেশির ভাগ ছোট বাচ্চা। আমরা সবাই শুধু আল্লাহকে ডাকছিলাম। মনে হচ্ছিল ঘরের নিচে পড়ে মরে যাব। মৃত্যু কী জিনিস সেটা ওই দিন অনুভব করলাম, বলছিলেন বৃদ্ধা হাজেরা বেগম।

জানা যায়, ভেলার মতো ভেসে গিয়েছিল অগণিত মানুষ। সেদিন প্রিয়জন হারিয়ে আজো কাঁদছেন অনেক স্বজন। নোয়াখালীর উপকূলসহ দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা ১২ ফুট পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল বিভিন্ন এলাকা। সরকারি হিসাবে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় প্রাণহানি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার লোকের। তবে, বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা হবে দ্বিগুণ। সেদিন ঝড়ের প্রভাবে মারা যায় ২০ লাখ গবাদি পশু। গৃহহারা হয়েছিল হাজার হাজার পরিবার। বিনষ্ট হয়েছে শত কোটি টাকার সম্পদ। স্বজন হারানোর বেদনায় এখনও কাঁদে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বাসিন্দারা।

হাতিয়া উপজেলা স্থানীয় সরকারও প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পূর্বে হাতিয়ায় অতি অল্প পাকা রাস্তা ছিল। ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের পর হাতিয়ায় সারা বিশ্ব মানবতার বিবেক দ্বীপাঞ্চলের মানুষগুলোর জন্য আপ্লুত হয়। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বিশ্ব সমাজ। হাতিয়ায় গড়ে উঠে বিভিন্ন আধুনিক অবকাঠামো। আধুনিক হাতিয়ার ফুস ফুল খ্যাত ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাকা রাস্তাটিও ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ হাতিয়াবাসী পেয়েছ বলে অনেকের বিশ্বাস। ঘূর্ণিঝড়ের এক বছর পর হাতিয়া দ্বীপে ৪০ কিলোমিটার পাকা রাস্তার উপস্থিতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবিশ্বাস্যই বটে।

এছাড়াও বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে এ অঞ্চল। তন্মধ্যে ১৯৯১ সালের পর ১৬ মে ১৯৯৫, ২ আগস্ট থেকে ৫ আগস্ট ১৯৯৬, ঘূর্ণিঝড় ‘হেলেন’ ১৯ মে ১৯৯৭ সালে, ২৮ অক্টোবর ২০০০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ও ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর এবং ২৫ মে ২০০৯ সর্বশেষ ১১ অক্টোবর ২০১২ সালে আঘাত হানে।

তবে ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর ২৮ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও উপকূলীয় এলাকা গুলোতে আজ পর্যন্ত কোনো টেকসই ভেড়ি বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ।

ওডি/এএসএল

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড