• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লক্ষ্মীপুরে সুপারির বাম্পার ফলন

  লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:৩৭
সুপারি
সুপারির বাম্পার ফলন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

লক্ষ্মীপুরে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে এবছর জেলায় উৎপাদিত সুপারির বাজার মূল্য ৩৫০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও লক্ষ্মীপুরে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এ জেলায় কৃষিজমির পাশে কিংবা বাড়ির আঙিনায় সুপারি গাছ রোপণ করে উৎপাদিত হচ্ছে শত শত কোটি টাকার সুপারি। অর্থকরী এ ফসলকে ঘিরে এ অ লে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক নতুন সম্ভাবনা। ছোট বড় মিলিয়ে এ জেলায় বর্তমানে ৬ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। এসব বাগানে এবছর উৎপাদিত হয়েছে অন্তত ১২ হাজার ৪২২ টন সুপারি। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৬৮০ টন, রায়পুর উপজেলায় তিন হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৭৭২ টন, রামগঞ্জ উপজেলায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৩০০ টন, কমলনগরে ৩৭৫ হেক্টর জমিতে ৬০০ টন ও রামগতি উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে ৭০ টন সুপারি উৎপাদিত হয়েছে। ফলে এবছর উৎপাদিত সুপারির বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩৫০ কোটি টাকায়।

মওসুমের শুরু থেকেই সুপারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন হাটবাজারে সুপারি কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। স্থানীয় বাজারে সুপারির চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় চাষেও আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। সুপারি কেনা-বেচার জমজমাট মোকামগুলোর মধ্যে রয়েছে, সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর শহর, দালালবাজার, চররুহিতা, ভবানীগঞ্জ, মান্দারী, দত্তপাড়া, জকসিন, রায়পুর উপজেলা শহর, হায়দরগঞ্জ বাজার, সোনাপুর, দেনায়েতপুর, খাসেরহাট, মোল্লারহাট, মীরগঞ্জ, রামগঞ্জ উপজেলা শহর, কা নপুর বাজার, করপাড়া বাজার ইত্যাদি।

সুপারি ব্যবসায়ী মো. ফজল ব্যাপারী বলেন, মওসুমের শুরুতে প্রতি পোন (৮০টি) পাকা সুপারি ২০০ টাকা দরে কেনা হয়েছে। বর্তমানে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। তবে কাঁচা সুপারি কেনা হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। মওসুমের শুরুতে কাঁচা সুপারির কেনা হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এছাড়াও শুকনো সুপারি প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২৬৫ টাকা দরে কেনা হচ্ছে এই মওসুমে। জেলা সদরের মান্দারী, চন্দ্রগঞ্জ ও দালাল বাজার থেকে সবচেয়ে বেশি সুপারি আমদানি করা হয় বলেও জানান তিনি।

আশু বাবু, করিম খাঁ, ফয়েজ ব্যাপারীদের মতো বড় ব্যবসায়ীরা প্রত্যেকে মওসুমে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকার সুপারি ভিজিয়ে সংরক্ষণ করেন। এছাড়াও পাকা ও শুকনো কোটি কোটি টাকার সুপারি বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করেন বলে জানা গেছে।

দালাল বাজার এলাকার সুপারি চাষী আমান উল্যাহ বলেন, সুপারি চাষ খুবই সহজ। গাছ বড় হওয়া পর্যন্ত একটু খেয়াল রাখতে হয়। এরপর কষ্ট নেই বললেই চলে। তাছাড়া প্রতি বছরই স্থানীয় বাজারে সুপারির ভালো দাম পাওয়া যায়। এখানকার প্রায় প্রত্যেক বাড়ির আঙ্গিনায় সুপারি বাগান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারি গাছে ফুল আসে। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে এ ফুল পাকাপোক্ত সুপারিতে পরিণত হয়। মূলত কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মাসেই সুপারির ভরা মওসুম। এখানকার সুপারির প্রায় ৭০ ভাগ নদী-নালা, খাল-ডোবা, পুকুর ও পানিভর্তি পাকা হাউজে ভিজিয়ে রাখে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আর ৩০ ভাগ সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ ছাড়াও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।

সুপারিগাছ একবার রোপণ করলে তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই টানা ৩৫-৪০ বছর ফলন দেয়। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অন্যান্য ফসলের চেয়ে সুপারিতে বেশি আয় করা যায়। সুপারি বাগানে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কিংবা রোগ-বালাই কম থাকায় কৃষকেরা সুপারি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারির ভালো দাম পেয়ে খুশি এখানকার চাষি, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তবে জেলার কোথাও সুপারির প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র না থাকায় অনেক সময় কৃষকেরা সুপারির ন্যায্যমূল্য থেকে বি ত হন বলেও জানা গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন খাঁন বলেন, এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সুপারি বাগান করার মধ্য দিয়ে এখানকার কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় এবার এ জেলায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এই অ লের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার পেছনে এর অবদান অনস্বীকার্য।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড