• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফেনীর ঐতিহ্যবাহী চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ

  ইউসুফ আলী, ব্যুরো প্রধান (ফেনী)

৩১ আগস্ট ২০২১, ১১:১৩
ফেনী
চাঁদগাজী ভূঞা জামে মসজিদ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ফেনী জেলার প্রাচীন স্থাপত্যগুলোর মধ্যে অন্যতম ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ছাগলনাইয়া উপজেলার চাঁদগাজী ভূঞা জামে মসজিদ। চাঁদগাজী ফেনীর পূর্বভাগে ছাগলনাইয়া ও ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে একটি বহুল প্রচলিত জনপদ।

মুঘল আমলে চাঁদগাজী ভূঞা ছিলেন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ও জমিদার। তিনি ছিলেন বার ভূঞাদের কোন এক বংশের উত্তরসূরি । চাঁদগাজী ভূঞা মেঘনা তীরবর্তী অঞ্চল থেকে লোক লস্কর নিয়ে এখানে আসেন এবং বসতি স্থাপন করেন।

মোঘল রাজত্বকালে চাঁদগাজী ভূঞা ত্রিপুরা রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এখানে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অন্য এক মত অনুযায়ী, তিনি ছিলেন একজন সাধক পুরুষ। চাঁদগাজী ভূঞা ফেনীর পূর্বাঞ্চলে ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে একজন সামন্ত শাসক বা জমিদার ছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

তাঁর নামানুসারে ছাগলনাইয়া উপজেলা সদরের অদূরে চাঁদগাজী বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ৪শ বছর আগে ১১২২হিজরী (তথা ১৭১২-১৩খ্রী:) স্থানীয় মহামায়া ইউনিয়নে মাটিয়াগোদা গ্রামে চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদটি নির্মাণের সমাপ্তি-কাল হিসাবে উল্লেখ রয়েছে।

মুসলমানেরা তাঁদের ধর্মীয় প্রয়োজনে নব বসতি অঞ্চলে মসজিদ নির্মাণ করতো। মাটিয়াগোদা গ্রামের চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ সম্ভবত ফেনী অঞ্চলের প্রাচীন পাকা মসজিদ। তবে সে সময়ে একটি পাকা মসজিদ নির্মাণ ছিল বিরাট ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

মধ্যযুগীয় রীতি অনুযায়ী নানা কারুকার্য খচিত চাঁদগাজী ভূঞা জামে মসজিদটি চুন, সুড়কী ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইট দিয়ে তৈরি, মসজিদের দেওয়ালগুলো বেশ চড়া। ২৮ শতক জমির ওপর নির্মিত এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট এবং উচ্চতা ৩৫ ফুট। মসজিদের ছাদের ওপর তিনটি গম্বুজ এর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ । গম্বুজও প্রবেশ পথের নির্মাণ কৌশল অনেকটা কুমিল্লার শহরের সুজা বাদশা মসজিদের মত।

মসজিদের পাশেই ১৮ শতক জায়গায় একটি দিঘী খনন করেন চাঁদগাজী ভূঞা। স্বচ্ছ পানির দিঘীটি প্রাচীন এ মসজিদকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দিয়েছে নতুন মাত্রা।

মসজিদে প্রবেশের জন্য প্রাচীন কারুকার্য খচিত দরজা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখন তিনটি কাঠের দরজা রয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করলে প্রাচীন ঐতিহ্যের সকল চিহ্ন পাওয়া যায়। মসজিদটিতে কয়েকশ মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। কিন্তু সংস্কারের অভাবে প্রাচীন এ স্থাপত্য বিলুপ্ত হওয়ার পথে।

এছাড়া মসজিদের দেয়ালে অসংখ্য ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান স্থানীয়রা।

১৯৮৭ সালেল ১লা অক্টোবর প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকারের গেজেটে দেখা যায়, সরকার চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদকে প্রত্নসম্পদ আইন বলে সংরক্ষিত করেছে।

১৯৯২ সালে প্রাচীন স্থাপত্য হিসেবে ঢাকা কেন্দ্রীয় জাদুঘর থেকে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করে মসজিদটির কিছু-কিছু অংশের সংস্কার করা হয়। কিন্তু অর্থ সঙ্কটের কারণে মসজিদটির পুরো সংস্কার সম্ভব হয়নি।

বর্তমানে প্রাচীন এ মসজিদকে ঘিরে বেশ কয়েকটি ধর্মীয় শিক্ষালয় এখানে গড়ে উঠেছে। এর আগে মক্তবে পড়ে এলাকার ছেলে-মেয়েরা ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করলে ও ১৯৮২ সালে চাঁদগাজীর বংশধররা মসজিদের পাশে চাঁদগাজী ভূঁঞা দারুল কুরআন নামে একটি নুরানি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন।

এছাড়াও চাঁদগাজী ভূঁঞার নামে এ এলাকায় চাঁদগাজী বাজার, চাঁদগাজী ইসলামিক পাঠাগার, চাঁদগাজী স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

চাঁদগাজী ভূঁঞার সপ্তম বংশধর ষাটোর্ধ্ব মুফতি মাওলানা আব্দুল গনি ভূঞা বলেন, নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রাচীন এ মসজিদটি। এলাকার ঐতিহ্য রক্ষার্থে এটির সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।

আরও পড়ুন : স্বাক্ষর জাল করে টাকা আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালিম ভূঞা বলেন, মসজিদটি সংস্কারে আমরা নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ঐতিহ্য রক্ষার্থে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

ওডি/এফই

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড