• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লবণ তৈরির মাঠ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত লবণ চাষিরা

  শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম

১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:৪৬
চট্টগ্রাম
লবণ তৈরির মাঠ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ লোকের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ লবণ চাষের ওপর নির্ভরশীল। শীতের মৌসুমে বাঁশখালীর উপকূলে চলছে লবণ উৎপাদনের ধুম। এখানকার লবণ চাষিরা দিনের পুরোটাই সময় ব্যয় করছেন লবণ উৎপাদনে।

ভোরে সূর্য ওঠার সাথে সাথে লবণ চাষিরা মাঠ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় দিচ্ছে। সকাল থেকেই সন্ধ্যাবিধি বিরতিহীনভাবে মাঠে কাজ করে চাষিরা। এতে পুরাদস্তুর সময় দিচ্ছে দিনমজুরসহ চাষিদের সন্তানেরা। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চিংড়ির ঘের গুটিয়ে লবণের ব্যাপক উৎপাদনের লক্ষ্যে লবণ চাষিরা মাঠেই সময় পার করছে।

তবে, চলতি বছরে বেশকিছু জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে আছে। লবণের দাম কম থাকায় উপকূলের অনেক লবণ চাষি তাদের চাষের পরিমাণ কমিয়ে আনছে। একমাত্র জীবন জীবিকার মাধ্যম হিসেবে শীতের মৌসুমে উপকূলের চাষিরা লবণ চাষের জন্য মাঠ প্রস্তুতিতে সময় দিচ্ছে দিনব্যাপী।

পুরোদমে মাঠ প্রস্তুতির কাজ চলছে বাঁশখালীর লবণের মাঠগুলোতে। গত অর্থ বছরে লবণের উচিত মূল্য না পাওয়াতে মজুদ রেখেছে অনেক লবণ। তবে, ইদানিং লবণের মূল্য পাওয়ায় চাষিদের লবণ উৎপাদন করতে উৎসাহ বেড়ে গেছে। ফলে চাষিরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে লবণ মাঠ তৈরির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তারা মজুদকৃত লবণ বিক্রির পাশাপাশি লবণ মাঠ তৈরিরও কাজ করে যাচ্ছে নিরলস পরিশ্রমে।

আরও পড়ুন : স্বাধীনতার নৃশংসতার সাক্ষী জামিজুরী বধ্যভূমি

বিগত দিনের উৎপাদিত লবণগুলো মজুদদাররা পাইকারি হারে ৪ থেকে ৫ টাকা কেজি মূল্যের জায়গায় এখন খুচরা বাজারে ১০ থেকে ১৫ টাকার ওপরে বিক্রি করছে। পাইকারি বাজারও বেশ চড়া। এই দাম বাড়ার ঘটনায় চাষিদের মুখে দেখা দিয়েছে এক টুকরো হাসি।

ছনুয়া, শেখেরখী, সরল উপকূলীয় লবণের কিল্লায় চাষিদের মজুদকৃত লবণ বিক্রির ধুম পড়েছে সর্বত্র। বর্তমানে লবণ চাষিরা প্রতিমণ লবণ পাইকারি দরে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করছে এমনটি জানান সংশ্লিষ্ট লবণ চাষিরা।

উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে দেশের কক্সবাজার এবং খুলনার পর চট্টগ্রামের একমাত্র বাঁশখালীতেই লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। বাঁশখালীতে পুইছড়ি, ছনুয়া, শেখেরখীল, গন্ডামারা, চাম্বলের ডিপুটিঘোনা, শীলকুপের পশ্চিম মনকিচর, সরল, মিনজির তলা, কাথরিয়া, খানখানাবাদ (আংশিক) এলাকায় লবণের ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও এখানকার প্রায় কয়েক হাজার লবণ চাষি লবণ উৎপাদনের কাজে মাঠে নেমেছেন।

এখানকার চাষিরা মোটামুটি পর্যায়ে লবণের দাম পেলেও এবং চাহিদা কম থাকায় বেশ কিছু লবণ ব্যবসায়ী লবণ মজুদ করে রাখে। সম্প্রতি সময়ে এই লবণের দাম হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিদের মজুদকৃত লবণ বিক্রির ধুম পড়ে গেছে তাদের মাঝে।

আরও পড়ুন : রেল স্টেশনে নেই মাস্টার, ৩ মাস ধরে ঝুলছে তালা

এ ব্যাপারে ছনুয়া ইউনিয়নের ছেমটখালীর এক লবণ ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, কানি প্রতি জমিতে লবণ উৎপাদন করতে শ্রমিকসহ যে পরিমাণ খরচ হয় তা দিয়ে আমাদের সন্তুষ্টজনক আয় হয় না। গত মৌসুমে উৎপাদিত লবণের সিংহভাগ লবণ মজুদ করে রেখেছে লবণ চাষিরা। ইদানিং লবণের দাম একটু বৃদ্ধিতে চাষিরা তাদের মজুদকৃত লবণ চড়া দামে বিক্রি করছে। সামনে এই দাম স্থায়ী নাও থাকতে পারে এই আশঙ্কায় চাষিরা তাদের মজুদকৃত লবণ তড়িগড়ি করে বিক্রি করে দিচ্ছে।

তাছাড়া প্রান্তিক চাষিদের মাথায় থাকে নানা ঝামেলা। জমির মালিকের কাছে জমির লাগিয়দ পরিশোধের বিষয়টিও তাদের মাথায় রেখে কাজ করতে হয়। তাদের প্রতিজনের কাছে ৪ থেকে ৫ কানি পরিমাণ জমি লবণ চাষের আওতায় থাকে। আর এই লবণ মাঠকেই পুঁজি করে চলে তাদের সংসার।

শেখেরখীল এলাকার লবণচাষি ছৈয়্যদ নুর, মোজাফ্ফর, কালাম, নুরুল ইসলামসহ একাধিক লবণ চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ যদি বিরাজমান থাকে তবে আমরা বিগত সময়ের চেয়ে আশানুরূপ লবণ উৎপাদন করতে পারব। যদি শেষ পর্যন্ত এই দাম অব্যাহত থাকে তাহলে বাঁশখালীর উপকূলীয় কয়েক সহস্রাধিক লবণ চাষি তাদের পরিশ্রমের সুফল পাবে এই আশা তারা রাখছে।

সংশ্লিষ্ট লবণ চাষিদের অনেকে বলেন, সরকার যদি বাঁশখালী উপকূলীয় অঞ্চলের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর জীবিকার একমাত্র মাধ্যম লবণ শিল্পকে দেশের সর্বত্র রপ্তানিতে সহযোগিতা করেন তাহলে এখানকার লবণ চাষিরা আরও বেশি উপকৃত হবে এবং কাঙ্ক্ষিত মানের দাম পাবে। তারা এই লবণ শিল্প রক্ষা এবং মানসম্মত লবণ উৎপাদনে সরকারকে আরও বেশি মনযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।

ওডি/আরবি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড