• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুসংস্কারের আবর্তে সফর মাস : করণীয় ও বর্জনীয় (১ম পর্ব)

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

০২ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:৫৩
Old_arab
ছবি : প্রতীকী

হিজরি সনের দ্বিতীয় মাস ‘সফর’। আরবি ‘সিফর’ মূল ধাতু থেকে উদ্ভূত হলে ‘সফর’ মানে হলো শূন্য, রিক্ত। আর ‘সাফর’ ক্রিয়ামূল থেকে উৎপন্ন হলে অর্থ হবে হলুদ, হলদেটে, তামাটে, বিবর্ণ, ফ্যাকাশে, ঔজ্জ্বল্যশূন্য, দীপ্তিহীন, রক্তশূন্য ইত্যাদি। আরব দেশে সে সময় সফর মাসে খরা হতো এবং খাদ্যাভাব ও মন্দা দেখা দিত। মাঠঘাট শুকিয়ে বিবর্ণ তামাটে হয়ে যেত। ক্ষুধার্ত মানুষের চেহারাগুলো রক্তশূন্য ও ফ্যাকাশে হয়ে যেত। আর তাই এ মাসকে ‘সফর’ মাস বলা হয়।

জাহিলি যুগে সফর মাস

জাহিলি যুগে আরবরা এই মাসটিকে দুঃখ-কষ্টের মাস মনে করত। তারা মনে করতো, এ মাসে কোনো কল্যাণ নেই, শুধুই অকল্যাণের মাস এটি। এমনকি তারা এ মাসের চাঁদ দেখা থেকে পর্যন্ত বিরত থাকত এবং দ্রুত মাস শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করত। এ মাসে তারা সফরে বের হওয়াকে খারাপ মনে করতো। তাদের প্রধান বাণিজ্যিক সফর ছিল শীতকালে। যখন এই শীতকাল পড়ে যেত সফর মাসে, তখন তারা পড়ে যেত বিপাকে। বাণিজ্যিক যাত্রাও থামিয়ে রাখা যায় না, আবার সফর মাসে ভ্রমণও করা যায় না। তখন তাদের গোত্রনেতারা এক সাথে বসে সফর মাসকে পিছিয়ে দিতো। অর্থাৎ মুহাররম মাসের পরে এবার রবিউল আউয়াল মাস আসবে, তারপর সফর মাস গণনা করা হবে। তারা মনে করতো, তাহলে আর যাত্রাটা সফর মাসে হলো না, রবিউল আউয়াল মাসে হলো। তাদের এহেন কাজের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা আয়াত নাযিল করলেন :

إِنَّمَا النَّسِيءُ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْرِ يُضَلُّ بِهِ الَّذِينَ كَفَرُواْ

‘এই মাস পিছিয়ে দেয়ার কাজ কেবল কুফরির মাত্রা বৃদ্ধি করে, যার ফলে কাফিররা আরও মারাত্মক গোমরাহিতে পতিত হয়।’ [সুরা তাওবা, ৯ : ৩৭]

ইসলামে সফর মাস

সমস্ত দিন, ক্ষণ, মাসই কল্যাণময়। কিছু কিছু দিন বা সময় আছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু কোনো দিন বা ক্ষণের সাথে অকল্যাণের কোনো সম্পর্ক নেই। অকল্যাণের সম্পর্ক মানুষের আমলের সাথে। ইসলাম সমস্ত জাহিলিয়াতের মূলে কুঠারাঘাত হেনেছে। অজ্ঞতা, মূর্খতা ও কুসংস্কারের মূলোৎপাটন করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোন অশুভ-অযাত্রা নেই, কোন ভূত-প্রেত বা অতৃপ্ত আত্মা নেই এবং সফর মাসের অশুভত্বের কোন অস্তিত্ব নেই।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ২১৫৯, ২১৬১, ২১৭১, ২১৭৭]

তিনি আরও বলেছেন, ‘কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শিরক, কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শিরক।’ [আবু দাউদ, আসসুনান : ৩৯১০]

শুভ-অশুভ খোঁজা হিন্দুদের রীতি। পঞ্জিকার যাত্রা শুভ না নাস্তি, এগুলো হিন্দুইজম থেকে নেয়া। ইসলাম এধরনের কুসংস্কারে বিশ্বাস করে না। এ কথা সত্য যে, হিন্দুইজমের প্রভাবে আজকে বহুসংখ্যক মুসলিমও এধরনের কুসংস্কারে বিশ্বাস করে। যেমন কেউ কোনো কাজে ব্যর্থ হলে বলে উঠে ‘আজ কার মুখ দেখে যে ঘর থেকে বের হয়েছি!’ পেছন থেকে কেউ ডাকলে অমঙ্গল মনে করে, অনেকে মুহাররম মাসে বিয়ে করাকে অশুভ মনে করে, এগুলোর সাথে ইসলামের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম এগুলোকে জাহিলিয়্যাহ, অজ্ঞতা, মূর্খতা হিসেবে আখ্যায়িত করে।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড