• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আমানতদারিতা : আপনার ঈমানের পরিচয়

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:৪২
Amanah_odhikar
ছবি : প্রতীকী

আমানতদারিতা বা বিশ্বস্ততা এক অনুপম বৈশিষ্ট্য। আমানতদার ব্যক্তিরা সর্বসমাজেই প্রসংশিত। আমানতদারিতা হলো, ঈমানের পূর্ণতার মাধ্যম, উত্তম আখলাকের পরিচয়। আমানতদারিতা সমাজকে কল্যাণ ও বরকতে ভরে তুলে। আমানতদার লোক আল্লাহর প্রিয়, মানুষেরও প্রিয়। এটি কুরআনে বর্ণিত মুমিনদের কাঙ্ক্ষিত গুণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ ‘এরা (মুমিনরা) হলো সেই সমস্ত লোক যারা আমানতের প্রতি লক্ষ্য রাখে এবং স্বীয় অঙ্গীকার হেফাযত করে।’ [সুরা মুমিনুন, ২৩ : ৮] إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُكُمۡ أَن تُؤَدُّواْ ٱلۡأَمَٰنَٰتِ إِلَىٰٓ أَهۡلِهَا ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, আমানতসমূহ তার যথার্থ পাওনাদারদের নিকট প্রত্যার্পণ করে দিতে।’ [সুরা নিসা, ৪ : ৫৮]

নবিজ (সা.) ছিলেন শ্রেষ্ঠ আমানতদার ব্যক্তি। তৎকালীন আরবে, যখন আমানতদারিতার কোনো বালাই ছিল না তখন তিনি ‘আল-আমিন’ তথা ‘বিশ্বস্থ’ উপাধী লাভ করেছিলেন। এই গুণের কারণে নবিজির দাওয়াত খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল চারিদিক। দাওয়াত কবুল না করলেও অন্তত তারা নবিজির কথা শুনতে সমবেত হত, কারণ তারা জানতো, তিনি আর যাই হোক মিথ্যা বলবেন না, প্রতারণা করবেন না। তারা তাদের সহায়-সম্পত্তিও নবিজির কাছে আমানত রাখতো। যখন নবিজি (সা.) হিজরতের আদেশ পেলেন, তাঁর কাছে যত আমানত রাখা ছিল সব তিনি প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দিলেন। অথচ তারা ছিল কাফির, নবিজির শত্রু। শত্রুর সহায়-সম্পত্তি হাতের নাগালে পেয়েও অন্যায়ভাবে গ্রহণ করেননি। কারণ, কাফির হলেও আমানত তার হকদারদের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে দেয়া কর্তব্য। হাদিসে এসেছে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ مَا خَطَبَنَا نَبِىُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ قَالَ لاَ إِيمَانَ لِمَنْ لاَ أَمَانَةَ لَهُ وَلاَ دِينَ لِمَنْ لاَ عَهْدَ لَهُ

আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে এরূপ উপদেশ খুব কমই দিয়েছেন, যাতে একথাগুলি বলেননি যে, ‘যার আমানতদারিতা নেই তার ঈমান নেই এবং যার অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দীন-ধর্ম নেই।’ [আহমাদ, আলমুসনাদ : ১২৪০৬]

আমানতদারিতা একটি ব্যাপক ব্যাপার। জীবনের সর্ব ক্ষেত্রেই এর বিস্তৃতি রয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে একনিষ্ঠতার সাথে ইবাদত আল্লাহর আদেশাবলি পালন করা, নিষেধ থেকে বেঁচে থাকা, হালাল-হারাম মেনে চলা, লেনদেনে, চলনে-বলনে আল্লাহর সীমারেখা মেনে চলা এসবই আল্লাহর সাথে আমানতদারিতার অংশ। পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনেও আমানতদারিতা রক্ষা করা জরুরি। আমানতদারিতা রক্ষা না করাকে মুনাফিকির নিদর্শনরূপে সাব্যস্ত করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে :

‘মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি : কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, যখন তার কাছে কোনো বস্তু আমানত রাখা হয় খিয়ানত করে।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ৩২]

দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিতিশীল এই পরিস্থিতিতে যদি রাষ্ট্রযন্ত্র আল্লাহর নাযিলকৃত আমানত কুরআন ও সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করা হয়, প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমানতদার যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদান করা হয়, নিরাপত্তা বিভাগ যদি তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমানত মনে করে পালন করে, মোটকথা প্রতিটি মানুষ যদি আমানতদারিতার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে, তাহলেই আশা করা যায় শান্তি, সমৃদ্ধি ফিরে আসবে ইনশাআল্লাহ।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড