ধর্ম ও জীবন ডেস্ক
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
«قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ فَرَأَى الْيَهُودَ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ ، فَقَالَ : مَا هَذَا ؟ قَالُوا : هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ ، هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ ، فَصَامَهُ مُوسَى ، قَالَ : فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ ، فَصَامَهُ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ».
‘নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন (মুহাররমের দশ তারিখ) সিয়াম পালন করে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই দিনটির তাৎপর্য কী? তারা বলল, ‘এটি একটি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাইলকে দুশমনের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন। তাই মুসা আলাইহিস সালাম এ দিনে সিয়াম পালন করেছেন।’ নবিজি বললেন, ‘মুসার অনুসরণের ক্ষেত্রে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার।’ এরপর তিনি নিজে সিয়াম পালন করেছেন এবং অন্যান্যদের সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ১৮৬৫]
এই বর্ণনায় এসেছে, هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ ‘এটি উত্তম একটি দিন।’ সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় আছে,
هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ أَنْجَى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ
‘এটি মহান একটি দিন। এই দিনে আল্লাহ তায়ালা মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর উম্মতকে রক্ষা করেছিলেন আর ফিরাউন ও তার সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।’ [মুসলিম, আসসাহিহ : ১১৩০]
বুখারির বর্ণনা, فصامه موسى ‘মুসা আলাইহিস সালাম সিয়াম পালন করেছেন।’ ইমাম মুসলিম আরেকটু বর্ধিতাকারে বর্ণনা করেছেন, فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا فَنَحْنُ نَصُومُهُ ‘এরপর মুসা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সিয়াম পালন করেছেন, তাই আমরাও এই দিনে সিয়াম পালন করি।’ বুখারির অন্য বর্ণনায় আছে, وَنَحْنُ نَصُومُهُ تَعْظِيمًا لَهُ ‘আমরা তার সম্মানার্থে সিয়াম পালন করি।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ৩৯৪৩]
ইমাম আহমাদ সামান্য বর্ধিতাকারে বর্ণনা করেছেন,
«وَهُوَ الْيَوْم الَّذِيْ اسْتَوَتْ فِيْهِ السَّفِيْنَةُ عَلَى الْجُوْدِي فَصَامَهُ نُوْحٌ شُكْراً»
‘এই দিনে নুহ আলাইহিস সালামের কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল, তাই কৃতজ্ঞাতার্থে নুহ আলাইহিস সালাম সেদিন সিয়াম রেখেছিলেন।’ [আহমাদ, আলমুসনাদ : ৮৭০২; সনদ দুর্বল]
বুখারির বর্ণনায় এসেছে, وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ ‘এবং তিনি সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।’ বুখারির অন্য বর্ণনায় এসেছে, فَقَالَ النَّبِيُّ لأَصْحَابِهِ أَنْتُمْ أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْهُمْ، فَصُومُوا তিনি সাহাবিদেরকে বললেন, ‘মুসা আলাইহিস সালামকে অনুসরণের ক্ষেত্রে তোমরা তো তাদের চেয়ে বেশি হকদার। সুতরাং তোমরাও সিয়াম পালন করো।’
জাহিলি যুগে আশুরার সিয়াম
আশুরার সিয়ামের প্রচলন নবুওয়াত-পূর্ব জাহিলি যুগেও আরব সমাজে ছিল। আম্মাজান আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
«َ إِنَّ أَهْل الْجَاهِلِيَّةِ كَانُوا يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ...»
‘জাহিলি যুগের লোকেরা আশুরার দিনে সিয়াম পালন করত...।’
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘কুরাইশরা আশুরার সিয়ামের ক্ষেত্রে সম্ভবত পূর্ববর্তী শরিয়ত, যেমন ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ওপর নির্ভর করত। এটা প্রমাণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরতের পূর্বে মক্কায় থাকাবস্থায় আশুরার সিয়াম পালন করতেন। হিজরতের পর দেখতে পেলেন মদিনার ইহুদিরা এ দিনটি উদযাপন করছে। এর কারণ সম্বন্ধে তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা উপরোল্লিখিত হাদিসে বর্ণিত উত্তর দেয়। তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিগণকে এই দিন উদযাপনের ক্ষেত্রে ইহুদিদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দেন। যেমনটি আবু মুসা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে,
كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَعُدُّهُ الْيَهُودُ عِيدًا ‘আশুরার দিনকে ইহুদিরা ঈদ হিসেবে গ্রহণ করেছিল।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ২০০৫]
সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,
كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ يَوْمًا تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَتَتَّخِذُهُ عِيدًا ‘আশুরার দিনটাকে ইহুদিরা অনেক সম্মান করত, এই দিনটাকে তারা ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করেছিল।’ [মুসলিম, আসসাহিহ : ১১৩১]
সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে,
كَانَ أَهْلُ خَيْبَرَ يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ يَتَّخِذُونَهُ عِيدًا وَيُلْبِسُونَ نِسَاءَهُمْ فِيهِ حُلِيَّهُمْ وَشَارَتَهُمْ
‘খায়বারের অধিবাসী (ইহুদিরা) আশুরার দিনে সিয়াম পালন করতো, এদিনকে তারা ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেছিল। তারা এ দিন নিজ স্ত্রীদেরকে নিজস্ব অলঙ্কারাদি ও বিশেষ একধরনের ব্যাজ পরিধান করাত।’ তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম মুসলিমদেরকে বললেন, ‘তোমরা এ দিনে সিয়াম পালন করো।’ [মুসলিম, আসসাহিহ : ১১৩১]
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবিদেরকে এদিনে সাওম পালন করার নির্দেশ দানের বাহ্যিক কারণ হচ্ছে, ইহুদিদের বিরোধিতা করা। যেদিন তারা ঈদ উদযাপন করে ইফতার করবে সেদিন মুসলিমগণ সিয়াম রাখবে। কারণ ঈদের দিন সিয়াম পালন করা যায় না। [আসকালানি, ফাতহুল বারি থেকে সংক্ষেপিত]
চলবে ইনশাআল্লাহ।
মূল (আরবি) : শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ
বঙ্গানুবাদ : মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড