ধর্ম ও জীবন ডেস্ক
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মিল্লাতু ইবরাহিম তথা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আদর্শের গুরুত্ব বোঝাতে যেয়ে বলেন,
وَمَن يَرْغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلَّا مَن سَفِهَ نَفْسَهُ ۚ وَلَقَدِ اصْطَفَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا ۖ وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ
‘নির্বোধ ছাড়া ইবরাহিমের আদর্শ হতে আর কে বিমুখ হবে? পৃথিবীতে তাকে আমি মনোনীত করেছি; পরকালেও সে সৎ কর্মপরায়ণদের অন্যতম।’ [সুরা বাকারা, ২ : ১৩০] এখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মর্যাদা ও তাঁর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করছেন, যা তিনি তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে দান করেছেন এবং এ কথাও পরিষ্কার করে দিচ্ছেন যে, ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আদর্শ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। কোন জ্ঞানীজন থেকে এটা কল্পনাও করা যায় না। কারণ, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাওহিদ তথা একত্ববাদের ইমাম ছিলেন। তিনি তাওহিদকে শিরক হতে পৃথককারী ছিলেন। বরং তিনি প্রত্যেক মুশরিক ও শিরককে এবং কৃত্রিম মাবুদকে আন্তরিকভাবে ঘৃণা করতেন এবং তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন।
আর এ জন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সমগ্র মানবজাতির প্রতি এ আদেশ করেছেন যে, তারা প্রত্যেকেই যেন মিল্লাতু ইবরাহিম তথা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আদর্শের অনুসরণ করে। তিনি বলেন,
قُلْ صَدَقَ اللَّهُ ۗ فَاتَّبِعُوا مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
‘বলো, আল্লাহ সত্য বলেছেন। সুতরাং তোমরা একনিষ্ঠ ইবরাহিমের আদর্শ অনুসরণ করো। আর সে মুশরিকদের দলভুক্ত ছিল না।’ [সুরা আলি ইমরান, ৩ : ৯৫]
মিল্লাতু ইবরাহিমের অনুসরণের বিষয়টা শুধুমাত্র সাধারণ মানুষদের জন্যই নয়; বরং উম্মতের নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিও নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা, তিনিও যেন মিল্লাতু ইবরাহিমের অনুসরণ করেন। তিনি বলেন,
ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
‘এরপর আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করলাম, তুমি একনিষ্ঠ ইবরাহিমের আদর্শ অনুসরণ করো। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।’ [সুরা আন-নাহল, ১৬ : ১২৩]
নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) সকল নবি ও উম্মতের নেতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি মিল্লাতে ইবরাহিমের অনুসরণ করতে আদিষ্ট হয়েছেন। যাতে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান স্পষ্ট হয়। অবশ্য নীতিগত দিক দিয়ে সকল নবির দীন একই ছিল। যাতে তাওহিদ, রিসালাত ও পরকাল ছিল মৌলিক বিষয়। তবে নবিগণের শরিয়তের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা ছিল।
আজ ইহুদি, খৃস্টানরাও যদি হিদায়াত পেতে চায়, সঠিক পথের উপর আসতে চায়, তাহলে তাদেরকেও মিল্লাতু ইবরাহিম তথা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আদর্শের অনুসরণ ছাড়া তারা কিছুতেই হিদায়াত পাবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
وَقَالُوا كُونُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ تَهْتَدُوا ۗ قُلْ بَلْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
তারা বলে, ‘ইহুদি বা খৃষ্টান হও, সঠিক পথ পাবে।’ বলো, ‘বরং একনিষ্ঠ হয়ে আমরা ইবরাহিমের আদর্শ অনুসরণ করব। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।’ [সুরা বাকারা, ২ : ১৩৫]
এই আয়াতে মূলত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইহুদি-খৃস্টানদের পারস্পরিক ঝগড়ার আলোচনা করেছেন। তারা এই ঝগড়াগুলো করতো কারা হিদায়াতের উপর রয়েছে, সঠিক পথের উপর রয়েছে এ বিষয়কে কেন্দ্র করে। প্রত্যেকের দাবি ছিল যে, তোমরা আমাদের অনুসারী হয়ে যাও তাহলে তোমরা হিদায়াত পাবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদের ঝগড়ার বিষয়টা তুলে ধরেছেন সাথে সাথে তাদের ঝগড়ার মীমাংসা করে দিয়েছেন এ কথা বলে যে- না, ইহুদি হলেও তোমরা হিদায়াত পাবে না,খৃস্টান হলেও তোমরা হিদায়াত পাবে না। তোমরা হিদায়াত পাবে যদি সঠিকভাবে মিল্লাতু ইবরাহিমের অনুসরণ করতে পারো।
লেখক : মাওলানা আবদুল্লাহ আল-মামুন খতিব, বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদ, খুলনা।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড