ধর্ম ডেস্ক
প্রতি বছর রমজানের মুবারাক মাস আসে প্রতিটি দিবা-নিশি রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আমাদের মাঝে। কিন্তু সে ফল্লুধারা থেকে আমরা বঞ্চিত হই গুটি কয়েক ফুরুয়ী/গৌণ নফল, মাযহাবী ও লা-মাযহাবী বিতর্ক নিয়ে। যেমন সিয়ামের নিয়ত পড়া আর করা নিয়ে। ইফতারের দুমিনিট আগে আর পাছে নিয়ে। তারাবি ও তাহাজ্জুদ নিয়ে। কিয়ামুললাইল/তারাবি আট না বিশ?
অথচ এ মাসের এতটা মূল্যের কারণ কী? তা থেকে উভয় ফের্কার লোক অধিকাংশ আমরা উদাসীন! পুরো মাসটির মূল্যই কুরআন নাযিলের মাস হওয়ার কারণে (২বাকারাহ ১৮৩)। এ মাসে আল্লাহর হাবীব (সা.) আল্লাহ পাকের নির্দেশে কীভাবে রাতের আধিকংশ সময় সলাতের মধ্যে তারতিলসহ আল-কুরআনের তেলাওয়াত করে সেহারীর সময় শেষ হওয়ার উপক্রম হত।
সে সুন্নাহর নমুনাস্বরূপ কিছু সহীহ হাদীস নিম্মে আমরা তুলে ধরলাম। একটু ভেবে দেখবেন আমাদের উভয় দলের সাথে তার দূরতম কোনো মিল আছে কি? তারাবির সলাত নিয়ে বিতর্ককারী লা-মাযহাবী ভাইগণ বলে থাকেন, তারাবি ও তাহাজ্জুদ একই সলাত। আর বুখারীর হাদীসকে প্রধান্য দেন বিধায় আমরা তাদের প্রকাশনা (তাওঃ পাবঃ) বুখারি তাহাজ্জুদ অধ্যায় হাদীসগুলো নিয়েছি এবং প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি নফল সলাত তারাবি/তাহাজ্জুদে আট এবং বিশে রাকাআতে 'ই' লাগিয়ে উভয় দল চরম বাড়াবাড়ি করছে বলে মনে হয়। আসুন আমরা দেখি নবী (সা.) এর সুন্নাহ এক্ষেত্রে কী বলে-
প্রশ্ন- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সলাত কিরূপ ছিল এবং রাতে তিনি কত রাকাআত সলাত আদায় করতেন?
উত্তর- ‘আয়শাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা তের রাকাআত সালাত আদায় করতেন, যার ভেতর আছে বিতর এবং ফজরের দু’ রাক‘আত (সুন্নত)। (মুসলিম ৬/১৭, হাঃ ৭৩৮) (আধুনিক প্রকাশনী- ১০৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৭৪)
সম্মানিত পাঠক উল্লিখিত হাদীস দিয়ে আট রাকাআত তারাবি/ তাহাজ্জুদ প্রমাণ করতে হলে বারো মাস বিতর সলাত মাযহাবীদের মত তিন রাকাআত মানতে হয়। কিন্তু আমাদের লা-মাযহাবী ভাইগন তা মানতে নারাজ! তাদের দৃষ্টিতে বিতর সলাত এক প্রধান্যপ্রাপ্ত অতঃপর ৩,৫,৭,৯।
তাহলে বলুন উক্ত আইশা (রা.) বর্ণিত ১৩ হাদিস দিয়ে কীভাবে ৮ রাকাআত প্রমানিত হয়? তাদের ভাষ্যমতে বিতর এক হলে তারাবি ফজরের ২ ছাড়া ১০ রাকাআত প্রমানিত হয় যা মক্কা মদিনার দুই ইমামের ১০+১০ = ২০ এর সাথে সাদৃশ্য বলে মনে হয়।واللہ اعلم
প্রশ্ন- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সলাত কিরূপ ছিল এবং রাতে তিনি কত রাকাআত সালাত আদায় করতেন?
উত্তর- মাসরূক (রহ.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি ‘আয়শাহ্ (রাযি.)-কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ফজরের দু’ রাক‘আত (সুন্নাত) বাদে সাত বা নয় কিংবা এগার রাকাআত। (মুসলিম- ৬/১৭, হা- ৭৩৮) (আধুনিক প্রকাশনী- ১০৬৮)
সম্মানিত মুসলিম ভাই, আমাদের লা-মাযহাবী ভাইগণ বুখারী আয়শা (রা.) বর্ণিত ১১ ও ১৩ হাদীস দিয়ে নিজেদের পক্ষে খুব দলিল দেন অথচ সহীহ বুখারির বরং মুত্তাফাক আলাইয়ের একই আয়শা (রা.) ৬+১ = ৭ রাকাআতের উল্লিখিত হাদিসখানা কি তারা দেখে না? নাকি দলীয় গোড়ামির ফলে এমনটা করে ?
প্রশ্ন- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সলাত কিরূপ ছিল এবং রাতে তিনি কত রাকাআত সলাত আদায় করতেন ?
উত্তর- ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) বলেন, একজন জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাতের সালাতের পদ্ধতি কী? তিনি বললেন, দুই দুই রাকাআত করে। আর ফজর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলে এক রাকাআত মিলিয়ে বেতর করে নিবে। (৪৭২) (আধুনিক প্রকাশনী- ১০৬৬)
এ হাদীস কি তারাবি/তাহাজ্জুদ ৮ নাকি ২০ রাকাআত তা সিমাবদ্ধ করে না অনিদৃষ্ট প্রমাণ করে? তাহলে কেন ৮/২০ নিয়ে কেন এত বাড়াবাড়ি? এগুলো করে দ্বীনের কী ফয়দা হচ্ছে? নাকি প্রতিবছর মাসজিদে মুসলিমদের কলহ বৃদ্ধি পাচ্ছে?
হায়! দলাদলি আর কলহপ্রিয়দের হাত থেকে আল্লাহ পাক আপনি উম্মাহকে রক্ষা করুন।
চলবে...
লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ, প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ মুসলিম উম্মা ফাউন্ডেশন।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড