• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দাড়ি নিয়ে বিবিসির প্রতিবেদন : প্রথাগত ইসলাম বিদ্বেষের জঘন্য উদাহরণ

  মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির

০৫ মে ২০১৯, ১৩:৫৪

দাড়ি ইসলামের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমলি সুন্নাহ। দাড়ি পুরুষত্বের প্রতীক। আইনগতভাবে একমুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। নবীপ্রেমিক মুসলিম পুরুষরা দাড়িকে নিজেদের জন্য গৌরবের ব্যাপার মনে করেন। যদিও প্রাচীনকাল থেকেই দাড়ি পুরুষত্বের প্রতীক বলে বিবেচিত ছিল, আর তাই প্রতিটি সভ্যতায়ই পুরুষরা দাড়ি রাখত, কিন্তু মুসলিমের হৃদয়ে দাড়ির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে কেবলমাত্র এটি নবীজির সুন্নাহ হওয়ার কারণে। না কোনো বৈজ্ঞানিক উপকারিতার কারণে আর না কোনো আইনি চাপে, মুসলিমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দাড়ি রাখে কেবলই রাসুলের সুন্নাহকে ভালোবেসে।

সম্প্রতি বিবিসি দাড়ির ব্যাপারে অপ্রমাণিত, তথ্যহীন ও উদ্ভট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিবিসি শিরোনাম করেছে— ‘কুকুরের পশমের চেয়েও পুরুষের দাড়িতে ভয়ঙ্কর জীবাণু!’ আর যায় কোথায়, ইসলামবিদ্বেষী মিডিয়াগুলো সাথে সাথে লুফে নিল প্রতিবেদনটি। একটু যাচাই করার সময়ও তাদের হলো না। লিপ্ত হয়ে গেল প্রথাগত ইসলাম বিদ্বেষ চর্চায়। তো আসুন, একটু তলিয়ে দেখি বিবিসির সেই প্রথাগত ইসলাম বিদ্বেষের নমুনা।

সুইজারল্যান্ডের হার্সল্যান্ডেন নামক ক্লিনিকের প্রধান গবেষক আন্দ্রিয়াস গাটজেইট ১৮ জন পুরুষের দাড়ির নমুনা এবং ৩০টি কুকুরের পশমের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেন, ১৮ জন পুরুষের প্রত্যেকের দাড়িতেই নাকি উঁচুমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, যে ৩০টি কুকুরের নমুনা পরীক্ষা করেছেন তিনি, তাদের মধ্যে ২৩টির পশমে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ছিল। বাকি সাতটি কুকুরের পশম ছিল পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত। আঁন্দ্রিয়াস গাটজেইট, যিনি হার্সল্যান্ডেন ক্লিনিকে ঐ গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন, বিবিসিকে বলেন—‘আমরা যা পেয়েছি তাতে বলা যায় যে, দাড়িওয়ালা মানুষের চেয়ে কুকুর বেশি ব্যাকটেরিয়া মুক্ত।’

কিন্তু প্রশ্ন হলো, ব্যাকটেরিয়া মাত্রই কি ক্ষতিকর কিছু? আপনি জেনে অবাক হবেন যে, আমাদের দেহে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন কোষ রয়েছে। এই ৩ ট্রিলিয়ন কোষের চেয়েও বেশি পরিমাণে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া। ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের মুখগহ্বর, অন্ত্র, মূত্রনালি, ত্বকসহ আরও বিভিন্ন স্থানে থাকে। এগুলোকে নরমাল ফ্লোরা বলা হয়। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলো অন্ত্রে থাকা অবস্থায় অন্ত্রের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু সেই ব্যাকটেরিয়া কোনোভাবে মুত্রনালিতে প্রবেশ করলে সেখানে রোগ তৈরি করতে পারে। ব্যাকটেরিয়াগুলো স্বস্থানে থেকে বরং আমাদের উপকার করে। সুতরাং, কোনো স্থানে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু থাকলেই সেটা ক্ষতিকর এমন নয়। তবে অন্য স্থানে গেলে তা ক্ষতি করতে পারে। এই হচ্ছে মূল বিষয়।

কিন্তু এটাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হলো, যেন পুরুষের দাড়িতে ব্যাকটেরিয়া থাকায় তাতে এমন জীবাণু থাকে, যা কুকুরের পশমেও থাকে না।

অথচ দেখুন—বিবিসি অনলাইনে ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ‘Are beards good for health?’ শিরোনামে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে— ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের মাইক্রোবায়োলজিস্ট ড. এ্যাডাম রবার্টসের কাছে গবেষকেরা দাড়ি শোষণযুক্ত যন্ত্রের সাহায্যে কিছু অংশ পাঠিয়েছিলেন। ড. এ্যাডাম দাড়ি থেকে প্রাপ্ত ত্বকের কেটে যাওয়া অংশের মাইক্রোবস থেকে ১০০ এর বেশি ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করেন। এর মধ্যে একটি ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে যা আমাদের ইনটেস্টাইনে (পাকস্থলির নিচে ছোট অংশ-ক্ষুদ্রান্ত্র) পাওয়া যায়। এ্যাডাম জানান যে, ব্যাকটেরিয়াটি মল থেকে এসেছে মনে করার কোনো কারণ নেই। দাড়িতে এ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার প্রাপ্তি খুবই স্বাভাবিক এবং এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। খুবই মজার ব্যাপার হলো দাড়িতে যে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে তা অন্য ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। ব্যাকটেরিয়াকে আমাদের শত্রু হিসেবে ধরা হলেও এগুলো সেরকম নয়। দাড়ির মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে নিজেদের সংখ্যা কমিয়ে থাকে। এরা সেখানে খাদ্য, রিসোর্স ও স্পেসের (নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য জায়গা) জন্য লড়াই করে। এ্যাডাম বলেন, দাড়ির মধ্যে থাকা মাইক্রোবস টক্সিন উৎপাদন করে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করছে। [১]

যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে সম্প্রতি এ নিয়ে গবেষণা চালানো হয়। ‘জার্নাল অব হসপিটাল ইনফেকশনে’ প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, দাড়িওয়ালাদের চেয়ে বরং দাড়ি কামানো পুরুষের মুখেই বেশি রোগ-জীবাণু পাওয়া গেছে। গবেষকরা বলছেন, মেথিসিলিন-রেসিস্ট্যান্ট স্ট্যাফ অরিয়াস (এমআরএসএ) বলে যে জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী, সেটি দাড়িওয়ালাদের চেয়ে দাড়ি কামানোদের মুখে তিন গুণ বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে। এর কারণ কী? গবেষকরা বলছেন, দাড়ি কামাতে গিয়ে মুখের চামড়ায় যে হালকা ঘষা লাগে, তা ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাঁধার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। অন্য দিকে দাড়ি সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে। আর বাস্তবেও আমরা দেখতে পাই, যারা শেভ করে তাদের স্কিনে বেশি ইনফেকশন হয় এবং ব্রণের প্রবণতাও বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দাড়ি থাকলে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি (ইউ ভি) ত্বকের সেভাবে ক্ষতি করতে পারে না, যতটা ক্লিন শেভ থাকলে করে থাকে। আর এ কথাও নিশ্চয় সবাই জানেন যে, ‘ইউ ভি’ রশ্মির সংস্পর্শ থেকে ত্বক যত দূরে থাকবে, তত ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পাবে।

মি. আন্দ্রিয়াস গাটজেইটের গবেষণার আরেকটি দিক হলো, তিনি যে ১৮ জন পুরুষের দাড়ির নমুনা সংগ্রহ করেছেন, পুরুষগুলো কি মুসলিম ছিল, না অমুসলিম? কারণ, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬’তে দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘দাড়ি রাখার উপকারিতা’ নামে একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল। সেখানে মুসলিম ও অমুসলিমের দাড়ির মধ্যে পাঁচটি পার্থক্যের কথা বলা হয়েছে। যার তৃতীয়টি হচ্ছে, মুসলিমদের দাড়ি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য ওজু করার সময় খিলাল করার ফলে পরিষ্কার থাকে। আর অমুসলিমের দাড়ি এমনটা না করার দরুণ প্রায়শই জীবাণুযুক্ত থাকে। মি. আন্দ্রিয়াস গাটজেইটের গবেষণার মূল রহস্য সম্ভবত এখানেই।

প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যখ্যা, সমাজের কোন অমীমাংসিত বিষয়ে ধর্মতত্ত্ব, হাদিস, কোরআনের আয়াতের তাৎপর্য কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সর্বপরি মানব জীবনের সকল দিকে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে লিখুন আপনিও- [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড